ঃঃঃঃ চল বহুদূরে...নির্জনে আড়ালে লুকোই...ঃঃঃ মাত্র ১৫ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন তিনি। ভুগছিলেন হূদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে। এ অসুস্থতা নিয়ে আট দিন গাধার পিঠে চড়ে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি। কিন্তু হেরাত ম্যাটারনিটি হাসপাতালে পৌঁছার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু হয় তার। এভাবেই আফগানিস্তানে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী গর্ভাবস্থায় ও সন্তান প্রসবকালীন নানা জটিলতায় মারা যান।
‘তিনি এসেছিলেন একেবারে শেষ মুহূর্তে। তাই আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। তিনি ছিলেন প্রায় অচেতন অবস্থায়। ’ বলছিলেন সুমাইয়া নামের মাত্র ২১ বছর বয়সী হাসপাতালের একজন ধাত্রী।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত আফগানিস্তানের দুর্দশা নিরসনে সম্প্রতি সারা বিশ্ব থেকে আসা রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদেরা মিলিত হয়েছিলেন জার্মানির বন সম্মেলনে।
আফগানিস্তান সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্রোহ ও সহিংসতার পাশাপাশি দেশটি এখন সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চল।
আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা মাতৃস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এতে সারা দেশে যোগ্য ধাত্রীর সংখ্যা ৪০০ থেকে তিন হাজারে উপনীত হয়েছে এবং জরুরি প্রসবকালীন সেবার পরিধিও বিস্তৃত হয়েছে।
‘আমরা হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছি। এ কৌশলগুলো ভালো কাজ দিয়েছে।
এ দেশের নারীদের জীবনে ও তাঁদের পরিবারে এগুলো একটি পরিবর্তন আনতে পারে’—কথাগুলো বলেন জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সুরাইয়া দলিল। তিনি আরও বলেন, ‘এ অর্জনগুলো ধরে রাখাই হবে এখনকার বড় চ্যালেঞ্জ। ’
ওয়ার্ল্ড ভিশনের মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং মেডিসিন্স সা ফ্রতিয়ার্স (এমএসএফ) নতুন মায়েদের সাহায্য-সেবা করার জন্য নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। সুমাইয়াও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশনের কাছ থেকে।
কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, ২০১৪ সাল নাগাদ আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো সেনাদের প্রত্যাহার হলে তাদের সঙ্গে এসব সাহায্য-অনুদানও আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।
এতে গত এক দশকে স্বাস্থ্যসেবায় আফগানিস্তানের সামান্য যে উন্নতি হয়েছে, তাও আবার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর দেশটিতে সরকারি সাহায্য এতই অপ্রতুল যে বিদেশি সাহায্য ছাড়া ধাত্রী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নিরাপত্তার অজুহাতে দাতারাও দেশটি ছেড়ে যেতে পারে। ২০০৪ সালে দাতাগোষ্ঠী এমএসএফের পাঁচজন সদস্য নিহত হওয়ার পর আফগানিস্তানে তাদের কর্মক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তারা আবার আফগানিস্তানে ফেরে।
আফগানিস্তানে প্রচুর কাজ করেছেন সারাহ পিকওয়ার্থ নামের একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, পর্যাপ্ত তহবিল ছাড়া এখানে পরিবর্তনের গতি হবে খুবই মন্থর। আর অর্থসংকট নানা ক্ষেত্রে অসাধারণ সব উন্নয়নকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
হেরাতের ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস (আইএইচএস) গত সাত বছরে ২৫৬ জন ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে অবশ্য ওয়ার্ল্ড ভিশনের মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অবদান রয়েছে।
দূরবর্তী, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে বাছাই করা করা শিক্ষার্থীদের ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবে হেরাতে যদি আবারও সহিংসতা শুরু হয়, তাহলে এসব পরিবার তাদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষণ বাদ দিয়ে বাড়িতে ফেরত নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপরও নির্ভর করছে মাতৃস্বাস্থ্য এবং ধাত্রীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি।
আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো প্রসূতি মায়েদের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে। কারণ, দেশটিতে সামান্য কিছু মানুষেরই গাড়ি আছে।
সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা নাজুক এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাও দুর্বল। আর গাড়ির যাত্রীদের দিকে সন্ত্রাসীদের বন্দুকের নল সব সময় তাক করা থাকলে চলাচল ব্যবস্থা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
তালেবান জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত হওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা নারী শিক্ষা এবং তাদের স্বাধীন চলাচলের ঘোরবিরোধী। তালেবানদের কারণে প্রসূতির মৃত্যুর হারেও ওপর আবারও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
ধাত্রী প্রশিক্ষকেরা বলেছেন, তালেবানদের কারণে সম্ভাবনাময় নারী ধাত্রী এবং চিকিত্সকদের একটি প্রজন্ম ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছেন। আর পুরুষ চিকিত্সকদের মাধ্যমে নারীদের চিকিত্সা করা নিষিদ্ধ হওয়ায় নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেক বেড়েছে।
আফগানিস্তানের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অর্থ। ২০১৪ সালের পর আফগান বাজেটে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ঘাটতি পড়বে। দেশটির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সেবা খাতে তাদেরকে ওই অর্থ ব্যয় করতে হবে।
এ ঘাটতি পূরণে তারা বিদেশি সাহায্যের ওপরই নির্ভর করছে।
একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র অর্ধেকের মতো আফগান বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে এবং কেবল এক-পঞ্চমাংশ আফগান স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করে। আইএইচএসর উপপরিচালক ডা. এহরারি বলেছেন, পরবর্তী পাঁচ দফা ধাত্রী প্রশিক্ষণ শেষ করার জন্য অর্থই প্রধান প্রতিবন্ধক। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণটা কঠিন কিছু নয়, কিন্তু তহবিলের ব্যবস্থা করাটাই কঠিন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।