যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে. ১।
ব্যাচেলার মানেই যত ঝক্কি ঝামেলা। যত দোষ আছে সব ব্যাচেলারদেরই। কোন দোষ না করেও আমরা তাই দোষী। বিশেষ করে যখন বাড়ি ভাড়ার জন্য আমাদের রীতিমত যুদ্ধ করতে হয় তখন বোঝা যায় কি পরিমাণ অসহায় আমরা।
এইবার আসি আসল প্রসঙ্গে।
ঘটনার শুরু ঈদের ২ দিন আগে। আমি, রাজু, ইরাম এই ৩ জন মিলে সেদিন একটু রাত করে বাড়ি ফিরেছিলাম। তাও আবার রাত ১ টার পর। রাত যখন ১১ টা তখন বাড়িওয়ালা দরজা বন্ধ করে দেন।
কেউ বাহিরে থাকুক আর না থাকুক এটা তার প্রতিদিনের রুটিন। ডুপ্লিকেট কোন চাবিও দেয়া হয় নি আমাদের। আর তাই ১১ টার মধ্যে বাসায় না ঢুকতে পারলে আমাদের সেদিন অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
এমনিতেই ঈদের আগের দিন। এতদিন অফিস আর ইউনিভার্সিটি থেকে ছুটি পাওয়া যায় নি কাজের চাপে।
তাই ছুটি পেয়েই আমরা গিয়েছিলাম শপিং করতে। আর তাই এই বিপত্তি। এদিকে দরজা বন্ধ পেয়েই আমার মেজাজ সেদিন চরমে উঠলো। ইচ্ছে করেই জোরে জোরে মেইন দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। আমার সঙ্গে থাকা রাজু আর ইরাম তো ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা।
এই অবস্থায় তাদেরকে অভয় দেয়ার কোন ইচ্ছেই আমার ছিল না।
অবিরাম ধাক্কাধাক্কির শব্দে বাড়িওয়ালার মেয়ে উপর থেকে উকি দিল। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ সে করলো না। রাস্তার আলো এবং তার রুমের আলো দেখে বুঝে গেলাম সে বেশ চিন্তিত আমাদেরকে নিয়ে। তার এত চিন্তা করার কোন কারণ আমি বুঝতে পারলাম না।
এত সহানুভুতি আমি অন্তত তার কাছ থেকে আশা করি নি। যাই হোক, খানিক বাদে বাড়িওয়ালা পুরো বাসা মাথায় তুলে আমাদের ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে দরজা খুললেন।
বাড়িওয়ালাঃ কি ব্যপার? এভাবে ধাকাচ্ছো কেন? আদব কায়দা কি সব ঝেড়ে ফেলে দিয়েছো?
আমিঃ দরজা খুলছিলেন না তো, তাই একটু জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছিলাম।
বাড়িওয়ালাঃ বলি, এটা কি তোমার মগের মুল্লুক নাকি? যখন খুশি আসবে আর যখন খুশি যাবে!
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম সে সময় ইরাম আমাকে কোন মতে থামিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে তবেই বাসায় ঢুকতে পারলো।
২।
২ দিন পর সকাল ১০ টা,
আমি ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ মোবাইলের বিরক্তিকর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। এই সময়ে সাধারণত আমি ঘুম থেকে ঊঠি না। তারপরও উঠতে হল এই কলের জন্য। মোবাইলে স্ক্রীণে দেখলাম কে ফোন করেছে।
কিন্তু নম্বরটা পরিচিত মনে হল না। ফোন ধরতেই
ওপাশ থেকেঃ হ্যালো, ভাল আছেন? (মেয়েলী কন্ঠ)
আমিঃ ভালো। কিন্তু আপনি কে?
ওপাশ থেকেঃ আপনি আমাকে চিনলেও চিনতে পারেন।
আমিঃ (মেজাজ তখন সপ্তমে) এখন আমি কি করতে পারি?
ওপাশ থেকেঃ কিছুই করতে হবে না আপাতত।
আমিঃ ধুর! যত্তসব।
ওপাশ থেকেঃ (নিরবতা)
আমিঃ রাখলাম আমি। এভাবে ফোন দিবেন না আর।
ফোন রেখেই মোবাইল বন্ধ করে রাখলাম।
৩।
সেদিন রাত ১১ টা ৩০ মিনিট,
ক্লাসে আগামীদিন বিশাল একটা প্রোজেক্ট জমা দিতে হবে।
আর সেটার কাজ করছিলাম বসে বসে। সেই সময় আবার শব্দ করে মোবাইলের চিৎকার। নম্বর অপরিচিত হওয়ায় ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করলো না। তাই সাইলেন্ট রেখে আবার নিজের কাজে মননিবেশ করলাম। কিন্তু অনবরত ফোন আসা শুরু করলো।
আর তাই না ধরে পারলাম না।
ওপাশ থেকেঃ কি ব্যপার? ফোন ধরতে কি খুব কষ্ট হয় আপনার?
আমিঃ আপনি! আবারো ফোন দিয়েছেন?
ওপাশ থেকেঃ কি করছেন? আপনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি?
আমিঃ (বিরক্ত হয়ে) আপনি কি চান? আর আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
ওপাশ থেকেঃ আপনার সাথে ফেন্ডশিপ করতে চাই।
আমিঃ ভাল কথা। কিন্তু এখন আমার সময় নেই। আমি কাজ করছি।
ওপাশ থেকেঃ জানি, আপনি কাজ করছেন। আর যেই কাজটা করছেন সেটা আগামীদিন জমা দিতে হবে না। স্যার ২ দিন পিছিয়েছেন।
আমিঃ (অবাক হয়ে) কি! আপনি জানলেন কি করে?
ওপাশ থেকেঃ (অট্টহাসি)
কিছু না বলেই ফোনটা রেখে দেয়ার শব্দ হল।
৪।
সকাল ৯ টা,
তড়িঘড়ি করে স্যার এর রুমে প্রোজেক্ট নিয়ে প্রবেশ করলাম। স্যার আমাকে এই সময়ে আসতে দেখে বেশ অবাক হল। আমি যখন প্রোজেক্ট জমা দিবো তখন স্যার আমাকে বললেন ২ দিন পর জমা দিতে। আমি হতচকিয়ে গেলাম স্যার এর কথা শুনে। উনি জানালেন স্টুডেন্টদের সুবিধার কথা ভেবেই ডেট পিছানো হয়েছে।
স্যার এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই অপরিচিত নম্বর থেকে যিনি ফোন করেছেন উনি কি করে জানলেন এই কথা? আমি কিছুতেই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলাম না। মোবাইল বের করে সেই নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম। কিন্তু সিমটা বন্ধ পেলাম।
এর কিছুক্ষণ পরেই সেই নম্বর থেকে ফোন এলো।
আমিঃ হ্যালো, আপনি কি করে জানলেন খবরটা?
ওপাশ থেকেঃ আমি তো আগেই বলেছিলাম। বিশ্বাস হল এবার?
আমিঃ (মুচকি হেসে) হ ম ম, হল। তা আপনি কে এইবার আমাকে বলেন।
ওপাশ থেকেঃ আমি আপনার শুভাকাঙ্খী। এতটূকুই বলতে পারি।
আমিঃ এত রহস্যের কি আছে?
ওপাশ থেকেঃ সেটা বুঝবেন না।
আমিঃ আপনাকে সামনা সামনি দেখতে চাই।
ওপাশ থেকেঃ তাহলে পিছনে ঘুরুন।
আমিঃ (পিছনে ঘুরে) কৈ, কেউ তো নাই।
এই সময়ে ফোন কেটে গেল।
আমি চেষ্টা করেও আর লাইন পেলাম না।
৫।
ভোর ৬ টা,
ফোন বেজে উঠলো। ধরতেই
ওপাশ থেকেঃ জানি ঘুমুচ্ছেন আপনি। তারপরও ফোন দিলাম।
আমিঃ (ঘুম ঘুম চোখে) ও আপনি? তা, কি মনে করে?
ওপাশ থেকেঃ আজকে আপনাদের বাড়িওয়ালা আসবেন বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা বলতে। তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিন।
আমিঃ (তড়াক করে উঠে) বলেন কি? তা আপনি জানলেন কি করে?
ওপাশ থেকেঃ আমি জানি।
আমিঃ কিন্তু কেন?
কোন কথা না বলেই ফোন রেখে দেয়ার শব্দ পেলাম।
সকাল ১০ টা ৭ মিনিট,
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললাম।
খুলে অবাক হওয়ার আর বাকি থাকলো না। বাড়িওয়ালা আর তার বউ আমার সামনে দাঁড়ানো।
বাড়িওয়ালাঃ দেখো বাবা, তোমাদের তো বাসাটা ছেড়ে দিতে হবে।
আমিঃ কিন্তু আংকেল, কেন?
বাড়িওয়ালাঃ আসলে আমার বড় ছেলে বিদেশ থেকে ফিরছে। তার ইচ্ছে এখন থেকে দেশেই থাকবে আমাদের সাথে।
তাই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।
আমিঃ আংকেল, আপনি বলেছেন। এখন তো আর না করা যায় না। ঠিক আছে। আমাদের এই সপ্তাহটা সময় দিন।
বাড়িওয়ালাঃ ঠিক আছে। দিলাম।
তাঁরা চলে যাওয়ার পর আমি যতটা না অবাক হয়েছি বাড়ি ছাড়ার কথা শুনে ততটাই বেশি অবাক হয়েছি সেই অপরিচিত ফোন কলের মালিকের কাজকারবার দেখে।
৬।
শতবার চেষ্টা করেও তাকে যখন পাচ্ছিলাম না তখন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম।
কিন্তু নতুন বাসা নেয়ার পর আবার সেই নম্বর থেকে ফোন এল একদিন।
ওপাশ থেকেঃ নতুন বাসা নিয়েছেন?
আমিঃ আচ্ছা, আপনি কি করে বুঝে যান সব?
ওপাশ থেকেঃ আমি তো আগেই বলেছি যে আমি আপনার শুভাকাঙ্খী।
আমিঃ আমাদের কি কখনও পরিচয় বা দেখা হবে না?
ওপাশ থেকেঃ হয়তো বা না! এভাবেই চলুক।
ফোন রেখে দেয়ার শব্দ পেলাম ওপাশ থেকে
এরপর থেকে সেই ফোন আমার জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে ধরা দিল। আমি যেকোন কাজ করার আগে সেই ফোন কল পাই।
আমাকে কি করতে হবে বা কি করলে ভাল হয় কিংবা কোনটায় মন্দ হবে সবকিছু এখন সেই রহস্যময়ীই বলে। আমি বাধ্য ছেওলের মত শুনে যাই তার বাণী।
এভাবেই চলছে আমার জীবন। হয়ত এভাবেই চলবে বাকিটা জীবন।
বিঃদ্রঃ এটি ১টি কাল্পনিক গল্প।
বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।