আজ হলো সেই কালরাত্রি...বিজয় লগ্নে জাতির স্বপ্ন নি:চিহ্ন করে দিতে পাক হানাদার আর রাজাকাররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
আজ শহীদ বুদ্বিজীবী দিবস। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের দেশ পেলাম তাদের প্রতি জানাই সালাম ও শ্রদ্ধা।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী নিধন ইতিহাসের নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। জাতি যখন বিজয়ের খুব কাছে সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ধরে ধরে হত্যা করে। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইন-জীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
১২ ডিসেম্বর সেনা সদর দফতরে আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেন তিনি। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। যদিও এর আগেই সারাদেশেই শুরু হয়ে গেছে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ। ১০ ডিসেম্বর এই আলবদর বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায় দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন ও পিপিআই-এর চিফ রিপোর্টার সৈয়দ নাজমুল হককে। অবশ্য, ২৫ মার্চ ১৯৭১ কালো রাতেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের নিধন এবং তা' চলে যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে।
এমনকি ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় লাভের পরেও বুদ্ধিজীবীদের নিধন অব্যাহত থাকে। যেমন ডঃ মনসুর আলীকে হত্যা করা হয় ২১ ডিসেম্বর আর চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নিখোঁজ হন ৩০ জানু ১৯৭২।
ঢাকায় এই হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় এবং ক্রমে তা সমগ্র দেশে বিশেষতঃ জেলা ও মহকুমা শহরে সমপ্রসারিত হয়। হত্যাকারীরা বুদ্ধিজীবীদের গেস্টাপো কায়দায় ধরে নিয়ে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে কোন বিশেষ ক্যাম্পে বা বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়েছে। শহরে জারিকৃত কারফিউয়ের সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর চালানো হয়েছিল নির্মম অত্যাচার।
বেয়নেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করা হয়েছিল।
ঢাকা শহরের দু'টি বধ্যভূমির মধ্যে একটি ছিল মোহাম্মদপুরের কাছে রায়ের বাজারের জলাভূমি, অপরটি ছিল মিরপুরে। এ দুটি বধ্যভূমিতে ডোবা, নালা ইটের পাঁজার মধ্যে অসংখ্য মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব মৃতদেহের অধিকাংশের চোখ কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল, হাত পেছন দিক থেকে বাঁধা। এসব মৃতদেহের মাথায় ও পিঠে বুলেটের চিহ্ন ছিল।
আর সারা দেহে ছিল বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন।
যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেনঃ এ এন এম মুনীর চৌধুরী, ড. জিসি দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, আবদুল মুকতাদির, এস এম রাশীদুল হাসান, ড. এন এম ফয়জুল মাহী, ফজলুর রহমান খান, এ এন এম মুনীরুজ্জামান, ড. সিরাজুল হক খান, ড. শাহাদাত আলী, ড. এম এ খায়ের, এ আর খান খাদিম, মোঃ সাদেক, শরাফত আলী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুম, হবিবর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, ড. আবুল কালাম আজাদ। সাংবাদিক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুলস্না কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, শেখ আবদুল মান্নান (লাডু), সৈয়দ নজমুল হক, এম আখতার, আবুল বাসার, চিশতী হেলালুর রহমান, শিবসদন চক্রবর্তী, সেলিনা পারভীন। এছাড়া শিল্পী আলতাফ মাহমুদ, মেহেরুন্নেসা, দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহাসহ আরো অনেক নাম রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।