আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেসিনরা বেড়াতে গিয়েছিলো

'আপা জেসিনকে কি এবার স্কুলে ভতর্ী করবেন?' 'না। কি করে করবো, ওর অসুখটাতো সাড়ছেই না। ওর বাবা তো বড় বড় ডাক্তার দেখালো। লাভ হয়নি। আমি এক পীর সাহেবকে দেখিয়েছি।

তিনি বলেছেন ওর উপর জ্বীনের আছর আছে। কিন্তু জেসিনের বাবা এসব বিশ্বাস করেনা। তাই পীর সাহেবের তাবিজটাও মেয়েটার গলায় ঝুলাতে দিলো না। আপনার ছেলেরা কোথায়?' 'রাসেল ,ফয়সাল ঘুমাচ্ছে। পরীৰা দিয়ে এসে গোসল করে দু'জনই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রান্না শেষ হলে ওদের ডেকে তুলবো। ' 'আমিও জেসিনকে নিয়ে ওর দাদার বাড়ি যাবো ভাবছি। বার্ষিক পরীৰ্যার ছুটিটা কাটিয়ে আসি। এমনিতেতো বেড়ানো কম হয়। ওর বাবা এলে দেখি কি বলে।

ওর তো আবার সব কিছু হুলস্থুল। মন মেজাজ ঠিক থাকলে দেখা যাবে রাতেই কুমিলস্না রওনা হয়ে গেছে। জেসিন আর ফয়সালের মা পাশাপাশি দু'টি চারতলার তিনতলায় ভাড়া থাকেন। ফয়সালদের বিল্ডিংয়ের তিনদিকেই বাড়ান্দা। এত বড় বাড়ান্দা এখনকার দিনে কেই বানায়না।

এ বিল্ডিংটা মোটামুটি পুরনো। ফয়সালের মা'র সবকিছু অসময়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলেদের স্কুলে দিয়ে এসে আরেক দফা ঘুমান। স্কুল থেকে ছেলেদের নিয়ে আসে ওদের বাবা। ওদের বাবা কলেজের অংকের প্রফেসর।

ছেলেদের নিয়ে এসে তিনি দরজায় টোকা দিলে ফয়সালের মা ঘুম থেকে ওঠেন। দরজা খুলে বাথরম্নমে চলে যান। গোসল সাড়েন। এরপর বাড়ান্দায় চুল আচড়াতে আচড়াতে জেসিনের মা'র সাথে গল্প করেন। জেসিনের মা'র সারাৰন কাটে রান্না বান্নায়।

পাকের ঘরে তাকে দিনের বেশিরভাগ সময় দেখা যায়। সূযোগ পেলেই তিনি নানা ধরনের রান্না বান্না করছেন। অন্যকাজ কখন করেন তা এক রহস্য। তবে ফয়সালের মা'র যতই সবকিছু অসময়ে হোক দুপুর এগারোটার দিকে তিনি অবশ্যই বাড়ান্দায় আসবেন। জেসিনের মা'র সাথে আধঘন্টা গল্প করবেন।

আড্ডার সময় বাড়বে কিন্তু কমবে না। তারপর যাবেন নিজের রান্না চড়াতে। আড্ডার সিডিউল ঠিক রাখার ব্যাপারে তিনি সিরিয়াস। জেসিনদের পাকের ঘর দিনের বেলায়ও অন্ধকার হয়ে থাকে। নতুন দিনের বাড়ি।

আলো বাতাস কম। লাইট জ্বালিয়ে রান্না করতে হয়। আজ ফয়সালের মা আড্ডা দিতে এসে দেখেন পাকের ঘর অন্ধকার। কিছুৰন ডাকাডাকি করার পর মনে হলো জেসিনের মা হয়তো জেসিনদের দাদার বাড়ি চলে গেছেন। আগের রাতে যাওয়ার কথা ছিলো।

তিনি নিজের রান্না করতে গেলেন। ফয়সালের বাবা আজ এক হালি ইলিশ মাছ এনেছে। যখন যে মাছ সসত্দায় পাওয়া যায় তিনি তা গাদা ভরে নিয়ে আসেন। বাজারে মাছ কোটার লোক আছে। চলিস্নশটা টাকা দিলে তারা এক হালি মাছ সুন্দর করে কেটে দিতো।

কিন্তু তিনি মাছ না কেটেই বাসায় এনেছেন। এখন ফয়সালের মাকে-ই মাছ কুটতে হবে। বিরক্তি নিয়ে মাছ কাটা শেষ করলেন ফয়সালের মা। প্রতিটা মাছ আট টুকরো করলেন। মাথাটা আলাদা।

তাদের চারদিনের খাবার। তিনটি মাছ তিনটি পলিথিনে ভরে রেখে দিলেন ফ্রীজে। একটা মাছের টুকরো ভেজে ফেললেন। মাছের তেলে কড়াই ভরে গেছে। আর গন্ধে ভরে গেছে ঘরটা।

ছেলেরা গোসল সেড়ে বই পড়ছে। ফয়সালের বাবা ছাত্রী পড়াতে বসেছেন। ভাজা মাছগুলি তরকারিতে ছেড়ে ফয়সালের মা অভ্যাসবশত: আবার গেলেন বাড়ান্দায়। এবার জেসিনের মাকে বাড়ান্দায় দেখা যাচ্ছে। 'কিছুৰন আগে এসে খুঁজে গেলাম।

আপনি নেই। রান্নাঘর অন্ধকার। আমি ভাবলাম জেসিনদের দাদার বাড়ি চলে গেলেন কিনা। ' 'না আমি বাড়িতেই আছি। ইলিশ মাছ রান্না করছিলেন নাকি?' 'হ্যা।

কিভাবে বুঝলেন?' 'যা গন্ধ বের হয়েছে। এমনিতেই বুঝা যায়। ' 'আপনি কি রান্না করছেন?' 'আমিও আজকে ইলিশ মাছ খাবো। ' 'হা হা হা হা। তাহলে তো গন্ধটা আপনার দিক থেকেও আসতে পারে।

' 'না গন্ধ আপনার দিক থেকেই আসছে...' জমে গেলো দু'জনের আড্ডা। আধঘন্টা জমিয়ে আড্ডা দিয়ে ফয়সালের মা ফিরলেন। তরকারি হয়ে এসেছে। লবনটা দেখে নিলেন। না ঠিক আছে।

ফয়সালের বাবার ছাত্রীদের ব্যাচ পড়ানো শেষ হতে হতে দু'টা বাজবে। ব্যাচ শেষ করে ফয়সালের বাবা খাবেন। ফয়সালের মা-ও খাবেন তখন। কিন্তু দুপুরে আজান দেয়ার সাথে সাথে ফয়সালদের ৰুধা পেয়ে যায়। ওরা ৰুধা সহ্য করতে পারে না।

রাসেল, ফয়সাল দু'ভাইকে ডেকে খেতে দিলেন ওদের মা। খেয়ে দু'ভাই ঘুমাতে গেলো। ব্যাচ পড়ানো শেষ হলে খেতে বসলো ফয়সালের বাবা-মা। ফয়সালের বাবার পেস্নটে মাছ দিতে গিয়ে মনে হলো মাছ এক টুকরো কমে গেছে। ফয়সালের মা কিছু না বলে রান্না ঘরে গিয়ে গুনে আসলেন।

ফয়সালের না বলে মাছ নেয়ার অভ্যাস আছে। খাওয়ার সময় ও-ই বোধ হয় এক টুকরো বেশি নিয়েছে। কবে যে ঠিক হবে ছেলেটা। ও চাইলে কি তিনি দিতেন না? দু'দিন পরে ফয়সালদের পরীৰা শেষ। ছুটিতে ছেলেগুলি নানাবাড়ি যাওয়ার বায়না ধরেছে।

ফয়সালের মা'র বাড়ি মনিকগঞ্জে। অনেকদিন যাওয়া হয় না। ফয়সালের বাবা প্রথমে আপত্তি করলেও পরে রাজি হলেন। বুধবার সন্ধা থেকে শুরম্ন হলো ব্যাগ গোছানো। রাতে খুশিতে দু'ভাইয়ের ঘুম আর ধরে না।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটা বেজে গেলো ব্যাগ গোছানো শেষ করতে করতে। ফয়সালের বাবা একটা ট্যাঙ্কি্যাব নিয়ে আসলেন। ওরা নেমে গিয়ে ট্যাঙ্ িক্যাবে উঠলো। এসময় আরেকটি ট্যাঙ্ িক্যাবে এসে নামলো জেসিন, জেসিনের মা বাবা। জেসিনকে নিয়ে ওরা প্রায়ই ভোরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে এ সময়ে চলে আসে।

'কি জেসিনের মা সকাল সকাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে আসলেন নাকি? বলেও গেলেন না। হাসতে হাসতে বললেন ফয়সালের মা। 'না আপা জেসিনের দাদার বাড়ি গিয়েছিলেন। আপনাকে না বলে গেলাম। ' 'আমাকে বলে গেলেন কখন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ফয়সালের মা।

'কেন তিনদিন আগে। আমরা তো এ কয়দিন জেসিনদের দাদার বাড়ি ছিলাম। ' 'তিনদিন আগে? বলেন কি? তাহলে এ কয়দিন আমি কার সাথে কথা বললাম। ইলিশ মাছ ভাজলো কে। কে গল্প করলো আমার সাথে...' কথা শেষ করতে পারলেন না ফয়সালের মা।

অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন। বাসায় ফিরিয়ে এনে মাথায় পানি ঢালা হলো। ডাক্তার এলো। ঘন্টা খানেক পরে চেতনা এলেও প্রচন্ড জ্বর এসে গেলো শরিরে। আট-দশদিন রইলো শরির কাঁপানো জ্বর।

ফয়সালের বাবার আনা ইলিশ মাছের টুকরো ঐ কয়দিন কম পড়েছে। কোনদিন এক টুকরো কম কোনদিন দু'টুকরো। এক প্যাকেট ইলিশ মাছ রাখা ছিলো ফ্রিজে। তাও পাওয়া গেলো না। শুধু পলিথিনের প্যাকেটটা পাওয়া গেলো জেসিনদের রান্না ঘরে।

# শরীফ উদ্দিন সবুজ ৭-১২-২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.