শুভ্রার মনটা আজকে বিশেষ রকমের ভাল। সে বুঝতে পারছে আজকের দিনটা তার অন্য দশটা দিনের মত কাটবে না। মন ভাল বা খারাপ যাই থাকুক না কেন রোহানের লিখা বইটা সে সবসময় সাথে রাখে। বইটা যে সে এখন পর্যন্ত কতবার পরেছে তার হিসাব আইনস্টাইনও করতে হিমশিম খেত। আর পরবে নাই বা কেন, বইটাতে যেন শুভ্রার জীবন বৃত্তান্ত লিখা।
শুভ্রা মনে করে রোহান ছেলেটা সত্যিই ভাগ্য পরতে জানে। তা না হলে এমন একটা বই লিখল কিভাবে?!?
রোহান শুভ্রাকে পছন্দ করে সেই স্কুল থেকে। তার এই পছন্দ যে কখন ভালবাসায় রুপ নেয় সেটা রোহান নিজেও বলতে পারে না। যদিও রোহান নিজেকে ভীতু মানতে নারাজ তবুও সে তার ভালবাসার কথাটা কখনই শুভ্রাকে বলতে পারেনি। তারা একই স্কুলে পরত, পাশাপাশি বাসায় থাকতো, রাস্তায়-টিচারদের বাসায় কত দেখা হতো তবুও বলতে পারত না।
কিন্তু রোহানের মনে একটা বিশ্বাস কাজ করতো যে শুভ্রাও তাকে পছন্দ করে। রোহানের কিছু বলতে না পারার মূল কারন ছিল তার বন্ধু মহল। রোহানের মতে তার বন্ধুদের দলটা ছিল একটা full pachage। সেখানে ভাল-খারাপ,লাফাঙ্গা-আতেল,স্বার্থান্বেষী ইত্যাদি সবই ছিল। আর সে কিছু না করতেই তার নামে অনেক উরা-খবর ছড়াত তাই কিছু করলে না জানি কি হয়...এই আতঙ্কেই সে কিছু করতো না।
দেখতে দেখতে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তারা কলেজে উঠল। রোহান অন্য জায়গায় চলে গেল। নতুন বন্ধু,নতুন পরিবেশ সে খুব enjoy করতো কিন্তু দিন শেষে তার শুভ্রাকে ঠিকই মনে পড়তো। আর তখনই তার সচাইতে খারাপ লাগত যখন সে ভাবত, ‘যাকে আমি এত ভালবাসি...তার আমাকে নিয়ে কোনো মাথাব্যাথাই নেই!!’ এরপরে রোহান খুব চেস্টা করতো শুভ্রার সাথে যোগাযোগ করতে এবং স্বাভাবিক ভাবেই মাধ্যম হিসেবে বেছে নিল বন্ধুদের। আর যথারীতি কাজের চাইতে অ-কাজটাই তারা বেশি করে দিল।
এই ঘটনার পর থেকে রোহান তার আগের আর কোনো বন্ধুকে বিশ্বাস করে না। তার দুঃখগুলোও কারো সাথে শেয়ার করে না। শুভ্রাকে ভুলে থাকার জন্যে সে নিজেকে খুব ব্যস্তও রাখার চেষ্টা করতো। কিন্তু চাইলেই কি আর পারা যায়?!? তারপরে রোহান শুরু করলো ফটোগ্রাফি। সারাদিন কলেজ,বন্ধু-বান্ধব আর ফ্রী হলেই চলতো ধুমসে ছবি তুলা।
অনেকটা নেশায় পরিনত হল। তার বন্ধুগুলাও ছিল অনেক ভাল। বন্ধু মানে সে যা বুঝত তাই...আর যা দেখে এসেছে তার বিপরীত!! আর শুভ্রার ব্যাপারটা সে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিল। রোহান ভাগ্যে খুব বিশ্বাস করে। তার মতে ভাগ্য সাথে না থাকলে শতচেষ্টা করেও কিছু পাওয়া যায় না।
আর চিন্তা করলো ভাগ্য সাথে থাকলে তার জীবন-পথে শুভ্রা আবার আসবে... আর সেই দিনটার জন্যে সে অপেক্ষা করবে তার সাধ্যের শেষ বিন্দু পর্যন্ত। তারপর থেকে শুভ্রার কথা মনে পরলেও আর আগের মত খারাপ লাগত না। কারন রোহান সবসময় নিজের দৃঢ় মনের পরিচয় দিতে পছন্দ করতো।
অবশেষে অনেক দিন পরে শুভ্রার সাথে রোহানের যোগাযোগ হল। এত দিনে শুভ্রা সবই জেনেছে।
কিন্তু ভাবে কখনও প্রকাশ করে না। রোহানের একটা অতি আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। সে মানুষের মনের চিন্তা-ভাবনা খুব ভাল ধরতে পারে এবং ধারনার ভিত্তিতে সে অনেক কিছু বলে দিতে পারে। কিন্তু শুভ্রার ব্যাপারে তার কোনো কিছুই কাজে দিল না। কিন্তু এইবার তার আত্মবিশ্বাসের পারদ অকারনেই ১০৮ ডিগ্রিতে উঠে গেল।
এবং সেটা স্বাভাবিকে নামানোর কাজটা শুভ্রা নিজেই মেয়েসুলভ ভঙ্গিতে আরেক বন্ধুর মাধ্যমে করে দিল। আবার হতাশ হতে হল রোহানকে। এবার দুঃখটা যেন একটু বেশিই। হঠাৎ সে বুঝতে পারলো তার জীবনযাত্রা আর স্বাভাবিক নেই। বন্ধু-আড্ডা-গান-ফুর্তি সবই চলে কিন্তু কোনোটাতেই তার আর মনোযোগ নেই।
হীনমন্যতা তাকে করাল গ্রাস করেছে। সবকিছুর পাশাপাশি শুভ্রার সাথেও তার যোগাযোগ চলছিল। আস্তে আস্তে তা আরো গভীরও হলো। রোহানের স্বভাবসুলভ হাঁসি-ঠাট্টার কারনে সবাই তাকে খুব পছন্দ করতো। শুভ্রারও মনের অজান্তেই রোহানের প্রতি একটা ভাল লাগা কাজ করলো।
কিছুদিন পর সে তা বুঝলেও গোপন করে গেল। এমনি করেই এক বছর পার। রোহানের মতে ঐ বছরটা তার জীবনের সবচাইতে খারাপ বছর। ঐ বছরে তার একমাত্র অর্জন সে তার শুভ্রার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে। এইটা ছাড়া তার ভাণ্ডারে আছে বিশাল একটা ‘শুন্য’!! যেকোনো কাজে সে পরিশ্রম করলেও মন দিতে পারতো না।
ফলাফলস্বরূপ HSC তে খারাপ Result এবং ভাল কোথাও ভর্তি হতে না পারা। অথচ কষ্ট সে কম করেনি। রীতিমতো ভাগ্যকে দোষ দিতে দিতে সে অস্থির। কোনোরকমে একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই সিদ্ধান্ত নিল ফটোগ্রাফি বাদ দিয়ে লেখালেখি শুরু করবে। শুভ্রাকে নিয়েই সে লিখবে।
কিন্তু যেই ব্যক্তি বই খুব একটা পড়তই না সে লিখবে কিভাবে? অবশেষে তার আবেগ-অনুভূতি মিশিয়ে একটা বই লিখল। ‘শুভ্রার খোঁজে পথচলা’ । বইটাতে তার আগের সবা ঘটনার সাথে ছিল তার মনের ক্যানভাসে আকা ভবিষ্যৎ! তার পরিচিত এক প্রেস থেকে ফটোগ্রাফি করে কামানো নিজের টাকায় বইটার ২০০ কপি ছাপালো। বইটার প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে সবই তার নিজের করা। শুভ্রার জন্মদিনে তাকে বইটা উপহার দিবে বলে ঠিক করলো।
দুই সপ্তাহ আগে থেকেই সে সাহসও সঞ্চয় করতে থাকল। শেষপর্যন্ত শুভ্রার জন্মদিনে বইটা সে দিল। কিন্তু বইটা খুলে নাম দেখার পরে শুভ্রা কোনো কথা না বলেই সেদিন চলে গেল। পরের দিন রোহান বাকি কপিগুলো তার বন্ধুদের দিয়ে দিল। শুভ্রা বইটা পরার ঠিক পাঁচ দিন পরে রোহানকে ফোন দিয়েছিল।
অতঃপর সবকিছুই ঘটলো রোহান তার বইতে যেমনটা লিখেছিল তেমন।
বারান্দায় রকিং চেয়ারটাতে বসে শুভ্রা বইটা আরেকবার পড়ে ফেললো। ১১৮ পৃষ্ঠার বইটা এখন সে বিদ্যুৎ গতিতে পরতে পারে। ইদানিং তাদের দিনগুলো প্রত্যাশার চাইতেও ভাল কাটছে। যদিও রোহান মনে করে এই আনন্দ আর বেশিদিন থাকবে না।
কিন্তু শুভ্রা বলে দিন তার মত যাক আমরা আমাদের মত থাকি। রোহান ফটোগ্রাফিটাও আবার শুরু করেছে। রোহানের মতে তার এখনের ছবিগুলো আগের চাইতেও অনেক ভাল। কফি খেতে খেতে শুভ্রা রোহানের ম্যাসেজ পেলো। রোহান নিচে তার বাইকটা নিয়ে অপেক্ষা করছে।
শুভ্রা এমনিতে বাইকে চড়তে ভয় পেলেও রোহানের পিছনে বসতে সে কোনো ভয় পায় না। আজ তারা দুজন ঘুরতে যাবে ...... দু’চোখ যেদিকে জায়...অজানায়,অস্থির যাত্রায়...ভালবাসার প্রান্তরে...!!
Moral:
১. কাওকে ভালবাসলে সাহস নিয়ে বলে ফেলুন। আপনার এই মূল্যবান কাজটা আপনার কোন ক্লোজ ফ্রেন্ডও করে দিতে পারবে না।
২. বন্ধুদেরকে বিশ্বাস করুন তবে অন্ধের মত নয়।
৩. নিজের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখুন।
____________________________________________________________________________________________________
ধৈর্য নিয়ে লিখাটা পরার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। আমার প্রথম লিখা। পরে যদি বোরিং লেগে থাকে তাহলে আমি খুবি দুঃখিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।