আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন-বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই: সন্ধ্যা ভাষায় একটি লোকগান

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ ঘরে বসে একটা লোকগান শুনতে পাচ্ছি। জানালার ওপারে, বহু নীচে, মালিবাগ মোড়ে বিকট আওয়াজে বেজে চলেছে কাঙালিনী সুফিয়ার গান: নিতাইগঞ্জ ডাইনে রেখে/সাধের নৌকা দিলাম ছেড়ে গো। / এবার নিতাইগঞ্জ বামে রেখে/ ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই।

কি এর মানে? বাংলা লোকগানের মানে সহজে বোঝা যায় না বলেই এই প্রশ্ন। প্রথম লাইনটি (নিতাইগঞ্জ ডাইনে রেখে/সাধের নৌকা দিলাম ছেড়ে গো। ) যাও-বা বোঝা যায়, কিন্তু পরের লাইনটিতে (এবার নিতাইগঞ্জ বামে রেখে/ ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই। ) শুনে বড় ধন্ধ লাগে। কি এর মানে? ঢাকার নদীতে (গাঙে) নৌকা কে ডোবাচ্ছেন? কেনই-বা ডোবাচ্ছেন? উত্তর সহজে পাওয়া যায় না বলে মন অস্বস্তিতে ভরে ওঠে।

বাংলা লোকগানের মানে বোঝা সহজ নয় কেন? এইসব ভাবনায় অস্থির হয়ে একবার পিছন ফিরে বাংলার ধূসর অতীতের দিকে তাকাই। আবছা কি সব যেন মনে পড়ে যায়। বইয়ের তাক থেকে হুমায়ুন আজাদ -এর একটি জনপ্রিয় বই তুলে নিই। দেখি যে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন, ‘বাঙলা ভাষার প্রথম বইটির নাম বেশ সদূর রহস্যময়। বইটির নাম চর্যাপদ।

... চর্যাপদ কতগুলি পদ বা কবিতা বা গানের সংকলন। এ -কবিতা গুলো লিখেছিলেন ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল কবি। যাঁদের ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না। যাঁরা ঘর চান নি, বাড়ি চান নি। সমাজের নিচুতলার অধিবাসী ছিলেন আমাদের ভাষার প্রথম কবিকুল।

... এ-কবিতাগুলো সহজে পড়ে বোঝা যায় না; এর ভাষা বুঝতে কষ্ট হয়, ভাব বুঝতে হিমশিম খেতে হয়। কবিরা আসলে কবিতার জন্য কবিতা রচনা করেন নি; এজন্যই এত অসুবিধা, পদে পদে পা পিছলে পড়ার সম্ভাবনা । আমাদের প্রথম কবিরা ছিলেন গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধক। তাঁদের সংসার ছিল না। তারা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের।

সে-তত্ত্বগুলো তাঁরা কবিতায় গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে একমাত্র সাধক ছাড়া কেউ তাদের কথা বুঝতে না পারে। ’ (লাল নীল দীপাবলী। পৃষ্ঠা ২০-২১) আমার মনে হল যিনি ‘কোন-বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ গানটি লিখেছেন তিনিও তাঁর এই গানে কোনও এক নিগূঢ় তত্ত্বের কথা বলেছেন। যা আমি বুঝতে পারছি না। আমি তো সাধক নই, সাধুসন্তদের তত্ত্বদর্শনের ব্যাপারে কৌতূহল বোধ করি মাত্র।

কাজেই ভাবি যে, নিতাইগঞ্জ কোথায়? নারায়নগঞ্জ সদরে নিতাইগঞ্জ নামে একটি এলাকা আছে বৈ কী। গীতিকার কি সেই নিতাইগঞ্জের কথা বলছেন? হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে তা তিনি সরাসরি বলেছেন না। বলছেন প্রতীক ব্যবহার করে । কেননা, ‘কোন-বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ এই গানের অত্যন্ত আকর্ষনীয় সুর কিংবা পপুলার বিটের আড়ালে হাজার বছরের পুরনো প্রতীকবাদী সন্ধ্যা গান উঁকি দেয় বলেই মনে হয় আমার।

কাজেই আজও আমরা অগ্রহায়ণের রৌদ্রের ভিতর নিতাইগঞ্জের পাটের গুদামের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই ভেবে শিহরণ বোধ করতে পারি যে কাঙালিনী সুফিয়ার ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ গানটিতে বাংলার হাজার বছরের লোকায়ত ভাবদর্শন নিহিত! এবং আমাদের মনে বাংলার সেই ভাবকথার রহস্যের উদঘাটনের ইচ্ছা জাগতেই পারে। কিন্তু, তার আগে গানটির কথা জেনে নেওয়া যাক : ঘুমাইয়া ছিলাম, ছিলাম ভালো/ জেগে দেখি বেলা নাই কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই/ ও বন্ধুরে ... নিতাইগঞ্জ করব বাসা/ মনে ছিল দারুন আশা গো এবার ছয় ডাকাতে চুক্তি করে/ আশার মুখে দিল ছাই। নিতাইগঞ্জ যাবার আশে/ দাঁড়াইয়াছি রাস্তার পাশে আরে গাড়িতে চড়ব/ টিকিট কাটব গত্তি (!) মাসুল কিছু নাই। নিতাইগঞ্জ ডাইনে রেখে/সাধের নৌকা দিলাম ছেড়ে গো। এবার নিতাইগঞ্জ বামে রেখে/ ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই।

এবার দেখি এই জনপ্রিয় লোকগানটির প্রকৃত মর্ম কিছু হলেও বোঝা যায় কিনা- ঘুমাইয়া ছিলাম, ছিলাম ভালো/ জেগে দেখি বেলা নাই কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই/ ও বন্ধুরে ... এই লেখার সূচনায় হুমায়ুন আজাদ- এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছি যে: ‘আমাদের প্রথম কবিরা ছিলেন গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধক। ’ কাজেই গানটির গোড়ার কথাগুলি উপলব্দি করতে বৌদ্ধদর্শনের দিকে একবার ফিরে তাকানো যাক। বৌদ্ধধর্মে সচেতন অবস্থায় থাকার বিশেষ এক অর্থ রয়েছে। জগৎ সংসারে অধিকাংশ মানুষ অচেতন মোহেঘোরে পড়ে থাকে। তারপর সে একসময় সচেতন হয়ে ওঠে।

সে বোধি লাভ করতে চায়, অর্থাৎ সে আলোকিত হতে চায়, জীবন ও জগতের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্দি করতে চায়। সে মোক্ষ লাভ করতে চায়। ধরা যাক -গৌতম বুদ্ধ রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে পথে নেমেছেন। ঠিক তেমনি একজন কেউ, ধরা যাক 'কোন বা পথে নিতাইগঞ্জ যাই' গানটির গীতিকার, তিনি অসচেতন ছিলেন, ঘুমিয়ে ছিলেন, ঘুমিয়ে থেকে ভালোই ছিলেন, কেননা, অচেতন থাকলে অস্তিত্বের যন্ত্রণা বিদ্ধ করে না, সেই গীতিকার এখন জেগে উঠে দেখলেন যে হাতে বেশি সময় নেই (বেলা নেই), তিনি নিতাইগঞ্জ যেতে চান। কিন্তু, নিতাইগঞ্জ কোথায়? নিতাইগঞ্জ করব বাসা/ মনে ছিল দারুন আশা গো এবার ছয় ডাকাতে চুক্তি করে আশার মুখে দিল ছাই।

নিতাইগঞ্জের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন-সেটি যে এক বিশুদ্ধ স্থান, সেটি বোঝা যায়। সেখানে যাওয়ার আশা সচেতন জেগে-ওঠা গীতিকারের। কিন্তু, সে আশা পূর্ণ হল না। কেন? ‘এবার ছয় ডাকাতে চুক্তি করে আশার মুখে দিল ছাই। ’ ছয় ডাকাত আসলে কাম-ক্রোধ-লোভ ইত্যাদি ছয় রিপু।

রিপুর প্রবল তাড়নায় মোক্ষে পৌঁছনো যাচ্ছে না। দূরবীন সাঁইয়ের গান স্মরণ করি- নামাজ আমার হইল না আদায় আল্লা ... রিপুর তাড়নায় যে মোক্ষে পৌঁছনো যাচ্ছে না-এই কথাটাই প্রতীকে বলা হচ্ছে। কেন? হুমায়ুন আজাদ এর লেখায় আবার ফিরে যাই। ‘... আমাদের প্রথম কবিরা ছিলেন গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধক। তাঁদের সংসার ছিল না।

তারা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের। সে-তত্ত্বগুলো তাঁরা কবিতায় গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে একমাত্র সাধক ছাড়া কেউ তাদের কথা বুঝতে না পারে। ’ ... ধরা যাক আমরা আজ এই অগ্রহায়ণের রোদে নারায়নগঞ্জের নিতাইগঞ্জের ট্রাক টার্মিনালের পাশ দিয়ে হাঁটছি। আর মধ্যযুগের চর্যাপদের সেইসব সহজযানী কবিদের কথা ভাবছি। আর ভাবছি সেই গীতিকার-সাধকের কথা যিনি আবহমান বাংলার একই ভাবধারায় অবস্থান করে ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন।

নিতাইগঞ্জ যাবার আশে/ দাঁড়াইয়াছি রাস্তার পাশে আরে গাড়িতে চড়ব/ টিকিট কাটব গত্তি মাসুল কিছু নাই। রাস্তা অর্থ পথ। পথ- এর একটি প্রতিশব্দ হল: মার্গ। গৌতম বুদ্ধ যে পথে নেমে সাধনার মাধ্যমে মোক্ষ অর্জনের জন্য আটটি ‘মার্গ’ (পথ) নির্দেশ করেছেন- সেসব ইতিহাস আমরা জানি। আমাদের নারায়নগঞ্জের গীতিকার-সাধকটি সেই বিশুদ্ধ স্থানে পৌঁছবার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

গাড়ি হচ্ছে "যান"। বৌদ্ধধর্মে কয়েকটি যানের (সম্প্রদায়) উদ্ভব হয়েছিল। (১) মহাযান। (২) হীনযান। (৩) বজ্রযান।

(৪) কালচক্রযান। (৫)সহজযান ইত্যাদি। বাংলার গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধকগণ ছিলেন সহজযানপন্থী। কিন্তু, যে পথে তিনি যাবেন সে পথে যাওয়ার যোগ্যতা (গত্তি মাসুল) অর্জিত হয়েছে কিনা সাধকের সে নিয়েও ঘোর সংশয় রয়েছে। সেই জন্য আর্তনাদ- ‘আরে গাড়িতে চড়ব/ টিকিট কাটব গত্তি (!) মাসুল কিছু নাই।

’ এর মানে গাড়িতে চড়ার টিকিটের টাকা নেই। মানে তিনি নিজেকে যথেষ্ট তৈরি করেননি। নিতাইগঞ্জ ডাইনে রেখে/সাধের নৌকা দিলাম ছেড়ে গো। এবার নিতাইগঞ্জ বামে রেখে/ ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই। গাড়িতে যাওয়ার টিকিটের অভাবেই কি নৌকায় যাওয়া? নাকি নৌকার প্রতীকটি লোকায়ত গানে বহুল ব্যবহৃত বলেই নৌকার উল্লেখ? ... "মনের মানুষ" চলচ্চিত্রের অবিস্মণীয় নৌকার দৃশ্যও মনে পড়ে যায়।

যা হোক। সাধক-গীতিকার নিতাইগঞ্জ ডাইনে রেখে সাধের নৌকা ছেড়ে দিলেন বটে ... কিন্তু - এবার নিতাইগঞ্জ বামে রেখে/ ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই। এই শেষ চরণে পৌঁছে আমরা একেবারে স্তব্দ বিমূঢ় হয়ে যেতে বাধ্য। কেননা, ‘ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই’ -এই লাইনের প্রকৃত অর্থ কি? গীতিকার কি ঢাকা শহরকে লোভ ও লালসা চরিতার্থ করার নগরী মনে করেন? (যে শহরে ড.মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী কিংবা দেহঘড়ির আবদুর রহমান বয়াতীদের মতো জ্ঞানী সাধকগণ শেষ জীবনে করুণ পরিস্থিতির সম্মূখীন হন?) ... বড় নির্মম এই ঢাকা শহরের পাঁকে পড়ে ঢাকা শহরের দুর্গন্ধময় কালো পানির নদীতে অভিমান করে তার নৌকা ডুবিয়ে দিচ্ছেন। (মূল গানে তিনি নৌকা ডোবানোর কথা দুইবার আর্তনাদ করে গেয়েছেন: ঢাকার গাঙে নাও ডুবাই ...নাও ডুবাই) ... তিনি ঢাকা শহরের ফাঁদে পড়ে মোক্ষে পৌঁছতে পারছেন না।

সেই আশাও করেন না। এখানেই তার আক্ষেপ। আর এই আক্ষেপই তিনি প্রতীকের আশ্রয় নিয়ে গানের সুরে বলছেন। প্রতীক ব্যবহারের কারণে গানের শরীরে এক ধরণের সন্ধ্যার আবছায়া তৈরি হয়েছে । যে সন্ধ্যাভাষায় হাজার বছর আগে বাংলার গৃহহীন বৌদ্ধ বাউল সাধকগন গান করতেন ।

কিন্তু, সন্ধ্যা ভাষা কাকে বলে? বাংলাপিডিয়ায় মহাম্মদ দানীউল হক লিখেছেন: ‘সন্ধ্যা ভাষা বাংলা ভাষার উদ্ভব যুগের এক প্রকার প্রহেলিকাবৎ দ্ব্যর্থক শব্দযুক্ত ভাষা। সুকুমার সেনের মতে সন্ধ্যা ভাষা হল: যে ভাষায় অভীষ্ট অর্থ বুঝতে হয় অনুধাবনের মাধ্যমে অথবা যে ভাষার ভাবার্থ বিশেষভাবে গুপ্ত তা-ই সন্ধ্যা ভাষা। ’ আজহার ইসলাম লিখেছেন: ‘চর্যাকাররা সহজযান ধর্মমতে দীক্ষিত ও সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিত ছিলেন। তান্ত্রিক যোগসাধনা তাঁদের ধর্মমতের বৈশিষ্ট্য । চর্যাপদে এই সাধনার কথা হেঁয়ালিপূর্ণ ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে।

ফলে দেশজ ভাষায় রচিত হলেও চর্যাপদের মূল ভাবের মর্মোদ্ঘাটন দুরূহ ব্যাপার। এ কারণে পন্ডিতগণ এই ভাষাকে ‘আলো-আধাঁরি’ বা সন্ধ্যা ভাষা নামে অভিহিত করেন। ’ (বাংলাপিডিয়া) এখন আমরা নিশ্চিত যে- যিনি ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’ এই গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন তিনি একজন বড় মাপের দার্শনিক কবি এবং সুরকার। যদিও তাঁর নাম আমরা জানতে পারিনি। দু-এক জায়গায় ফোন করে বা ইন্টারনেট ঘেঁটেও পাইনি।

বুঝলাম যে এই দার্শনিক-সংগীতজ্ঞকে কখনও টিভির টকশোতে দেখা যাবে না। কারণ ‘সমাজের নিচুতলার অধিবাসী ছিলেন আমাদের ভাষার প্রথম কবিকুল। ’ ... কাজেই অগ্রহায়ণের এই মিষ্টি রোদের ভিতরে নিতাইগঞ্জের তোলারাম মোড়ে দাঁড়িয়ে পোড়া ডিজেলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বাংলার এই সব সাধক কবিদের হৃদয়ের প্রসারতা অনুধাবন করে আমাদের শরীর শিহরণে কেঁপে উঠতেই পারে ... ডলি সায়ন্তিনীর কন্ঠে Click This Link এমপি থ্রি (ডলি সায়ন্তিনীর কন্ঠে ) http://www.mediafire.com/?15p1rpqgjj4lask ড. মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী স্মরণে এবং আবদুর রহমান বয়াতীর সুস্থতা কামনা করে এই লেখাটি উৎসর্গ করলাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।