shamseerbd@yahoo.com
অফিস থেকে নীচে নামতেই টের পেলাম তুমুল দমকা হাওয়ার নাচন উঠেছে। উপায় নেই দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া । প্ল্যানিং টীম এর উপর মেজাজটা একটু খারাপ হল- শেষ মুহুর্তে ইমার্জেন্সী ওয়ার্কটা বাদ দেয়ায় আমি না পারলাম বাসায় যেতে না কাজটা হল । সাথে ছিল বন্ধু কলিগ জামাল ভাই। বছরের প্রথম বৃস্টিতে ভিজব, তা হলনা কাঁধের ব্যাগের জন্য।
বৃস্টি ছটা কমার সাথে সাথে জামাল ভাই প্রস্তাব দিলেন আপনেরত আর বাসায় যাইয়া কোন কাম নাই, আমার সাথে এক জায়গায় চলেন। আমিও ভাবলাম কথাত সত্য, জীবনে সময় পার করা নিয়েই কথা, পার করে দিই কিছু সময়।
গুলশান এক নং এ আলিশান এক বাসার দরজায় কড়া নাড়লাম আমরা, জামাল ভাইর চাচার বাসা। বিশাল ড্রইয় রুম এর সামনে দাঁড়িয়ে জামাল ভাই জুতা খুলছেন দেখে অনিচ্ছা সত্বেও আমাকে তা করতে হল। কোন বাসায় জুতা খুলে ঢুকাটা আমার খুব অপছন্দের কাজ ।
তবুও করতে হল। পরে বুঝলাম না ঠিকই আচে, কারন আমরা ড্রইং রুম পেরিয়ে আরও ভিতরের একটি রুমে গেলাম। চারিদিকে নানা বই ছিটানো চড়ানো। আভিজাত্যের অত ঝলকানি না থাকলেও অভিজাত ভাবটা বুঝাই যাচ্ছিল।
নিউইয়র্কের সেন্ট এলিজাবেথ স্কুল & কলেজ থেকে ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা লাভ করে আমেরিকাতে ফটোগ্রাফির নিজস্ব ব্যবসা আরম্ভ করেন।
আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে জামাল ভাইর চাচার উপর- তাকে নিয়ে লেখা বই এর মুখ বন্ধ পড়তে পড়তে । সত্তর পেরোনো চাচার সাথে পরিচয় হল। ফটোগ্রাফির কোন কথা কিন্তু হলনা। আমার অনুসন্ধিৎসু চোখ ঘরের দেয়ালে ঘুরতে থাকে। নানা ফটোগ্রাফ, কোনটাই ফটোগ্রাফি নিয়ে নয়, সবগুলোতেই তিনি এবং কোন না কোন অনুস্ঠানের ।
একটা ডিজিটাল ব্যানার দেখে থমকে গেলাম " পরানের বান্ধব রে বুড়ী হইলাম তোর কারনে" খ্যাত শেখ ওয়াহিদ এর গীতি সমগ্র এর প্রকাশনা উৎসব । একি ইনিইত জামাল ভাই এর চাচা।
হালকা কথার পর তিনি নিজ মনেই পান চিবুতে থাকেন, আমি আর জামাল ভাই কথা বলে যাই। হঠাৎ হন্তদন্ত মালীর আগমন। স্যার ঝড়ে কয়েকটা আম পড়ছে গাছ থেকে, এই যে এই গুলি।
তিনি তৎক্ষনাৎ নির্দেশ দিলেন লবণ মরিচ সহ টুকরো করে দেয়ার জন্য। টক জিনিসের প্রতি আমার তেমন দুর্বলতা না থাকলেও জিভে জল আসাটা ঠেকানো গেলনা, খেয়ে নিলাম কাঁচা আমের টুকরা। পান সহ এই জিনিস খেতে কেমন হবে সামনে একদিন ট্রাই করে দেখতে হবে।
আপ্যায়ন এর বিস্ময় সবে শুরু। কিছুক্ষন পর একজন নিয়ে আসল সীসা !!! চাচা সুখ টান দেয়া শেষ করলে জামাল ভাই বললেন আবার ফ্রেশ করে এনে দিতে।
জামাল ভাই দুটান দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন, আমি কিছুটা বিস্মিত , বর্ষীয়ান একজনের সামনে এভাবে সীসা টানা ঠিক হবে কিনা ভেবে। জামাল ভাই জানালেন ব্যাপারনা, চাচাকে এটা তিনিই এনে দিয়েছেন, তার আগমনেই এটা জ্বলে শুধু । এক্স লাউন্জে পকেটের টাকায় এই সুগন্ধী ধোঁয়া গিলে তেমন কোন মজা পাইনি, আজ বিনে পয়সায় গিলতে আর সমস্যা কোথায়। ভাবনার কাজ বাদ দিয়ে আমি টেনে নিলাম সুগন্ধী ধোঁয়া । সিগারেটের তৃষ্ঞা কি আর এতে মেটে, তবুও টেনে চললাম, শেষ হল, আবার এল ।
জামাল ভাই এনে দিলেন তার চাচার গীতি সমগ্র । ধোঁয়া গলধঃকরনের পাশাপাশি পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম।
আমার মাটির গাছে লাউ ধরেছে
লাউ যে বড় সোহাগী
আমার লাউ এর পিছে লাগছে বৈরাগী । । - আরে এই গানের রচয়িতা দেখি আমার সামনেই বসে আছেন।
পরানের বান্ধবরে-বুড়ী হইলাম তোর কারনে-- কাঙ্গালীনি সুফিয়ার বিখ্যাত এই গানের রচয়িতাএই শেখ ওয়াহিদুর রহমান। ডলী সায়ন্তিনীর কোন বা পথে নিতাই গঞ্জ যাই- তার রচয়িতা ও এই ভদ্রলোক।
বয়সের ভারে ন্যূজ হলেও আজও পরিচালনা করে চলেছেন পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল সিরামিকস সহ নানা প্রতিষ্ঠান । পরিবার পরিজন সবাই বিদেশে পাড়ি জমালেও তিনি পড়ে আছেন তার গানের জগৎ আর বাউলদের নিয়ে -
এই জীবনে যে সাধ মিটাতে পারিনি
সে সাধ জেগেছে গানে । ।
---------------
নানান বরণ গাভীরে ভাই
একই বরণ দুধ
জগত ভ্রমিয়া দেখিলাম
একই মায়ের পুত । ।
বিয়ানীবাজারের সেই তরুন যে একদা বড়ই রসিক ছিলেন টের পেলাম তার গানের ডালিতে-
কিতা ভাইছাব কিলান আছইন
বাড়ির হগ্গল ভালানি
সিলেট থাকি দেখতে আইলাম
খবর বারতা পাইছনি।
বালিকা বধুঁর পীড়নের কথা লিখেছেন-
আগে দুইটা বিয়া করছে
বাল বাচ্চা নাই
আমি হইলাম নাবালিকা
কেমনে রাত কাটাই । ।
দেবর ভাবীর প্রেমের রসালো উপস্হাপন-
কিতা ভাবি কিলান আছ/ শরীর গতর ভালানি
আগের মতন খাওয়া দাওয়া / এখন করতায় পারনি ।
কিতা করমু ও দেওর ভাই/ বেদন কি আর বুঝবায়নি
কান্দি কান্দি রাত কাটাই/ ঘুম ছাড়া যায় রজনী ।
মামী ভাগনের প্রেম নিয়ে লিখেছেন-
ভাগনের সাথে প্রেম করিয়া/ জাত-কূল মান যায় চলিয়া
ভাগ্নের বাঁশীর সুর শুনিয়া/ ঘরে থাকা হল দায় । ।
ননদ ভাবীকে নিয়ে লিখেছেন-
অন্তর আমার কান্দে সইগো/ অন্তর আমার কান্দে
শ্বশুর বাড়ী গিয়া পরলাম/ কাল ননদির ফান্দে ।
।
অথবা-
বন্ধু আইসো নদীর ঘাটে
সূর্য গেলে পাটে..........। ।
.................................................
ফুলের কলি শুকিয়ে যায়
সখি প্রেমের পরশ না পাইলে...
আধ্যাত্মিক ভাব দেখতে পাই যখন পড়লাম-
আজরাঈল দেখিয়া আত্মা / কাঁপিলো রে
পিঞ্জিরা ছাড়িতে পাখি/ ছট-ফটাইলোরে । ।
...............
আমার মাঝে থাকে যে জন/ আমারই হইয়া সুজন
আমারে ছাড়িয়া আবার/ শূন্যে উড়াল দেয় সে জন । ।
বাউল ভাবনা প্রকাশ পায়-
থাকতে ভবে দয়াময়/ ধনী-গরীব কেমনে হয়
বাচ্চা কোলে রাস্তা ঘাটে-ভিক্ষা কেন করতে হয় । ।
প্রেমের খেলা বিধির লীলা/ এটা কিন্তু মিথ্যা নয়
প্রেম তরঙ্গে না খেলিলে/ স্রস্টার সৃস্টি বৃথা রয় ।
।
দন্ড বলে খন্ড করে / বিধির বিধিন দেখতে পাই
আমার আমার বলছে সবাই/ মাটির কনা শেষ বেলায় । ।
যার ভাবে যার মন মজেছে / সেই ভাবই তার স্বর্গ হয়
আমার মনে যা কিছু চায়/ কেন এতে বাধা রয় । ।
প্রেম দেখি তার ছত্রে ছত্রে-
আর কতকাল ওগো সখি / থাকবো প্রেমের অপেক্ষায়
প্রেমেরই বিরহের আগুন / জ্বলে অন্তরায়.
চাঁদ উঠিলে সাগর জলে/ তাতে জোয়ার হয়
প্রেমের কাছে সকল প্রলয়/ সেত কিছু নয় । ।
নুপুর পায়ে ঐ সুন্দরী/ বাঁকা চোখে কেন চায়
আমায় যদি ভাল লাগে/ দূরে কেন কাছে আয় । ।
আরও এক প্রস্হ খাওয়া দাওয়া শেষে উঠব তখন দেখি একে একে এলেন কয়েকজন বাউল ।
জামাল ভাই বললেন এখন গানের আসর বসবে । ইচ্ছা হলেও আর থাকার উপায় নেই, রাত হয়ে গেছে। আরেকদিন যেতে হবে, এই বলে বিদায় বেলায় তার লেখা গানের সব সংকলন গুলো সাথে নিয়ে ফিরলাম, ওজনটা মোটেও কম নয়।
এক পশলা বৃস্টি শেষে হিমেল বাতাস চারদিকে। রিক্সায় চেপে বসলাম ।
আকাশে মেঘ আর ষোড়শী চাঁদের লুকোচুরি । কবি সঙ্গ ত্যাগ করে চলে আসলেও আমার মনে দেখি কবিতা ভর করতে চাইছে। মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লেখা শুরু করলাম-
মেঘে ঢাকা চাঁদ
বীষন্ণ আকাশ
উদাসী মন
একাকী সারাক্ষন।
তুমি একা জানি এখন
আমিও যে তাই
বৃষ্টি আর হিমেল বাতাস
তোমায় কি ছুঁয়ে যায়।
সারাটি দিন অবহেলায়
পার করে দিলে হায়
একটুও কি ভাবনি তুমি
দিন আমার কি করে যায়।
উদাসী মন
একাকী সারাক্ষন
দিন গুলো মোর
থমকে যায় যখন তখন । ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।