জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প আরবি মাস শুরু হয় চাঁদের হিসেবে। চাঁদ পৃথিবীকে কখনো ২৯ দিনে কখনো ৩০ দিনে প্রদক্ষিণ করে। তাই আরবিতে ৩১ বা ২৮ তারিখ হয় না।
মাসের হিসাব নির্ধারণ করার জন্য প্রথম চাঁদ দেখা বা খোঁজা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। কারণ ইসলামের অনেক বিষয় তারিখের সাথে সম্পৃক্ত।
যেমন, রোযা, ঈদ, কুরবানী, হজ্জের সব আহকাম, আশুরা ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ সাঃ . বলেছেন, "তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোযা ভাঙো (ঈদ করো)"
চাঁদ দেখলে এই দুআ পড়া সুন্নাত, " আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বী ওয়া রাব্বুনাল্লাহ " যদি কোনো দেশ বা অঞ্চলে শত শত বা ততোধিক ব্যক্তি চাঁদ দেখেন তাহলে তাঁদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আহকাম প্রবর্তিত হবে। যদি রোযার চাঁদ নূন্যতম একজন দেখেন যিনি দ্বীনদার তাঁর সাক্ষ্যমতে আহকাম শুরু হবে। ঈদের চাঁদ নূন্যতম দুইজন দেখতে হবে। এই অঞ্চল বা দেশ বর্ডার হিসেবে পৃথক হবে না।
বরং এক রাষ্ট্রপতি এবং এক প্রধান বিচারকের আওতাধীন এলাকাকে এক অঞ্চল বা দেশ ধরা হবে।
সারা বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে চাঁদ দেখা গেলে -তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে সারা বিশ্বের মানুষ রোযা রাখবে না। কারণ, এতে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, "চাঁদ —মানুষের সময় হিসেবের জন্য। " কিন্তু সূর্যের মতো চাঁদের সময়রেখা নেই যে তা অতিক্রম করলে তারিখ গণনা শুরু হবে।
আবার একটা অঞ্চলকে সময়রেখা নির্ধারণ করলেও সমস্যা শেষ হয়ে যায় না। বরং সমস্যা আরও বাড়ে— উদাহরণ: বাংলাদেশে যখন সন্ধ্যা আমেরিকায় তখন সকাল। মোটামুটি ১২ ঘন্টা পিছিয়ে। যদি আমাদের চাঁদ দেখার ওপর তারা রোযা শুরু করেন তাহলে রোযার অনেক আহকাম তাদের ছুটে যাবে। উল্লেখযোগ্য, সেদিনের তারাবী, সাহরী এবং রোযার নিয়্যাত যা ফরজ।
কারণ, আরবি তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে। ধরি, আমেরিকায় যখন ৩ তারিখ সকাল বাংলাদেশে তখন ৩ তারিখ সন্ধ্যা। বাংলাদেশে ৩ তারিখ সন্ধ্যা থেকে আরবি ১ তারিখ হবে এবং আমেরিকায় ২ তারিখ সন্ধ্যা থেকে আরবি ১ তারিখ হবে। কারণ, তারা ৩ তারিখ সকালে চাঁদের খবর পেয়েছেন এবং আরবিতে রাত আগে আসে। সেই হিসাবে বিগত রাত আরবি তাদের এক তারিখে গণ্য হবে।
এমন বলা যাবে না যে, রমজানের রোযার নিয়্যাত সাধারণভাবে মনে একপ্রকার ধারণা থাকলেই হবে। কারণ, এখানে দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যা নিয়্যাত হওয়ার উপযোগী নয়। আবার যদি আমেরিকার চাঁদ দেখার ওপর বাংলাদেশ নির্ভর করে তাহলেও অনেক সমস্যা আছে।
[যারা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ বা রোযা পালন করেন তাদের বলতে মনে চায়, আরবীরা যখন ফজর পড়েন তখন আমাদের এখানে রাত ২টা বাজে, আমাদের সময় ৯.৩০ মিনিটে যোহর, ১২.৩০ মিনিটে আসর, ৪টায় মাগরিব এবং ৬টায় ঈশারের নামাজ আদায় করেন। আপনারা কেনো এ বিষয়ে তাদের অনুসরণ করেন না? দুই নৌকায় পা দেয়া ঠিক না।
ঈদ তাদের সময়ে নামাজ আমাদের সময়ে এটা ভণ্ডামী ছাড়া কিছুই না। ]
অনেকে এই হাদীস দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে, 'বিশ্বের যেকোনো স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সবার জন্য তা মেনে নেয়া আবশ্যক' "একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের উপর গোপন থাকে। আমরা (পরের দিন) সাওম পালন করি। এমতবস্থায়, ঐ দিনের শেষ ভাগে একটি কাফেলা নবী সা. -এর কাছে এসে বিগতকাল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান করেন। তখন রসুল সা. আমাদের রোযা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন।
" আবু দাউদ) এটা প্রমানিত হল যে, নিজ অঞ্চলে চাঁদ না দেখেও, দূরবর্তী অঞ্চলে (কাফেলা প্রায় ২৪ ঘণ্টার রাস্তা পার হয়ে এসেছিল) চাঁদ দেখার সাক্ষের ভিত্তিতে, এমন কি দিনের শেষ ভাগে গিয়েও সিয়াম ভেঙ্গে ফেলেন, এমন কি রসুল সা. তাদের কাছে জানতে চান নি -তারা কতটা দূর থেকে এসেছে। কোন দেশ/অঞ্চল থেকে এসেছে। "
#কারণ রাসুলুল্লাহর সা. -এর জানা ছিল, একটি কাফেলার একদিনের পথ ১৬ মাইল। এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। তাই তিনি বুঝেছিলেন, কাফেলা মদিনার আশপাশের এলাকায় চাঁদ দেখেছে।
তাছাড়া মদিনা এবং আশপাশের এলাকা এক রাষ্ট্রপতির অধীনে ছিল। [খেয়াল করার বিষয়: রোযা রেখে দিনের বেলা ভাঙা যায় কিন্তু রোযা না রেখে দিনের বেলা রোযা রাখা যায় না। এবং রোযার শুরুতে সন্দেহের দিনে রোযা রাখা মাকরূহও বটে। ]
এর স্বপক্ষে বলা যায় মুয়ায ইবনে জাবাল রা. -এর ঘটনা। যিনি সাহাবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মুফতি ছিলেন এবং তাঁর ইজতিহাদের ওপর রাসুলুল্লাহ সা. দু'আ করেছেন।
তিনি ইয়ামানের শাষক ছিলেন। "কুফা নগর থেকে কেউ এসে বলল, আমরা চাঁদ দেখেছি এবং ইফতার করেছি। " হজরত মুয়ায রাঃ বলেন, তোমাদের চাঁদ দেখা আমাদের জন্য প্রযজ্য নয়।
ইমাম আবু হানিফা রা. যদিও প্রথমে সারা বিশ্বের যেকোনো জায়গার চাঁদ সবার জন্য প্রযোজ্য বলেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মাদ (রহঃ) . -এর মত "এক বিচারকের অধীন অঞ্চলে/দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তা সেই অঞ্চলে/দেশের মানুষের জন্য প্রযোজ্য" গ্রহণ করেছেন।
আল্লাহ ভালো জানেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।