আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোন গো দখিনা হাওয়া

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান শোন গো দখিনা হাওয়া কিঙ্কর আহ্সান দৃশ্য ১ সব কিছু চুকেবুকে গেল...সবকিছু...তারপর? এমন প্রশ্ন করা হলে আজকাল জবাব আসে-তারপর আর কি,আবার প্রেম,নির্জনতা খোজা,অভিমান এবং যখনই মেয়েটি বিয়ের কথা বলে তখনই তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। সত্যি বলছি ছেলেরা বড্ড খারাপ হয়। বড্ড খারাপ।

দৃশ্য দুই প্রেমের প্রথম দিনেই মেয়েটি কাগজ কলম নিয়ে বসে যায়। হাতে কয় বছর আছে,বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করবে কবে থেকে,কোন ছেলেটিকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো যাবে এসব হাজারো চিন্তার পর যে কোন একজনের দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয় হাত এবং হাত ধরাধরির পরে যখন ভালো কোনো চিকিৎসক অথবা প্রকৈাশলীকে বর হিসেবে বেছে নেওয়া হয় তখন আগের ছেলেটিকে বলা হয় লম্পট। ‘ওরে বোকা পাঠা চিনি আমি তোরে চিনি...জীবন নিয়ে খেলেছিস আমার তুই যে ছিনিমিনি। ’ এমন কথা বলার পর মেয়েটি নিরাপদে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করিতে থাকে। সত্যি বলছি মেয়েরা বড্ড খারাপ হয়।

বড্ড খারাপ। বয়ান জন্মের পর থেকেই একা থাকার অভ্যেস আমার। অসামাজিক বলে সুনাম রয়েছে পরিচিত মহলে। এক জীবনে তাই হলোনা কোনো বন্ধু। মোটা চশমা চোখে লাগিয়ে গল্পের বই পড়তে পড়তেই অর্থহীন করলাম জীবনের বসন্তগুলো।

ভালোবাসা হলোনা কাউকে। ডাক ছেড়ে বলা হলোনা,‘ ভালোবাসি তোকে। বড় বেশি ভালোবাসি। ’ সময় শুধু কাটল স্বপ্নে স্বপ্নে অন্যদের প্রেয়সীর সাথে। কোনদিন অমিতের লাবন্য এসে পাড়িয়ে দিতো ঘুম,কোনোদিন বনলতা সেন বিলি কেটে দিতো চুলে আর কোনো কোনো দিন গল্পের দেবযানী,রমা,পার্বতীরা এসে বলত,‘ ওগো রাত জেগোনা আর।

রাত জেগে বই পড়লে কালি পড়বে চোখের নিচে। তাতে যে কষ্ট হবে আমার। ভারী কষ্ট। ’ মন্দ কাটতো না সময়। তবে মাঝে মাঝে নিজেকে চরিত্রহীন মনে হতো।

মনে হতো ছলনা করছি আমি। সবার সাথে। সবার। মিছে বলবোনা খুব অল্প বয়স থেকেই সংসারের স্বপ্ন আমার। বউ নয়,সন্তান ক্ষুধা অকালপক্ক এই আমার মাঝে প্রবল।

ছোট্ট একটা পরীর মতন মেয়ে হবে। ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে ঘুরে বেড়াবে ঘরময়। দুষ্টটাকে থামানোর জন্যে মা ছুটবে তার পেছন পেছন আর আমি শুধু দেখব। শুধুই দেখব। কোনো কাজ করবোনা।

করবো না চাকরি বাকরি। মা আর মেয়ের কান্ড দেখেই কেটে যাবে সময়গুলো। দারুনভাবে। চিঠির প্রতি দুর্বলতা কিছুতেই কাটেনা। যে রক্তমাংসের নারী আমার সময়গুলো নিয়ন্ত্রন করবে,নিয়ন্ত্রন করবে অত্যাচারী রানীর মতন একচেটিয়াভাবে আমার মন তার জন্যে আমি চিঠি লিখব।

নিয়ম করে রোজ সোনালী খামে বন্দী দুটো চিঠি পাবে সে। অফসেট পেপারে লাল নীল হরেক রঙ এ লেখা থাকবে সে চিঠিগুলো। আমার পাগলামীতে কখনও কখনও সে রেগে গিয়ে বলবে,‘ এ যুগে কেউ চিঠি দেয় বোকা? ক্যান যে তুই এমন,ক্যান যে...। ” আহারে সেই রাগে কতই না ভালোবাসা থাকবে। কতই যে।

তার চুলে মুখ লুকিয়ে সেদিন আমি কাঁদব। অনেক কান্না। সকলের পছন্দ একরকম নয়। কারও প্রেয়সী বসন্ত ঋতুর মতন। চঞ্চল।

ভালবাসা তার নতুন নতুন রঙে রাঙে প্রতিদিন। কত তার ঢং! কতই না অভিমান আর খুনসুটির পর আদর পাওয়ার চেষ্টা ! আবার কেউ বা চায় তার প্রেয়সী পাশে থেকে সবসময় আগলে রাখুক তাকে। বুঝুক তার শিশুমনটাকে। তার কান্না,তার হাসি,তার অযথা পাগলামীকে দুষ্ট ছেলে বলে প্রশয় দিক। ভালোবাসার আগে প্রেয়সীকে নিয়ে কতকিছু ভাবনা।

তারপরও এসব ভেবে ভালোবাসা হয়না। কখনই না। ভালোবাসা হয়ে যায়। লাগাম টেনে ধরা যায়না কখনও তার। পরিকল্পনা করে সবকিছু হলেও ভালোবাসা হয়না।

কখনই না। এক এক করে চোখের সামনে ছোট বড় অনেককেই ভালবাসতে দেখি। ভাঙা গড়ার খেলা চলতেই থাকে তাদের। দুদিনের কান্না তারপর ভুলে যাওয়া হয় সব। মনে প্রানে পুরনো মানুষ আমি।

পুরনো মনে কেউ আঘাত দিলে সেরে ওঠা যাবেনা আর। ভয় হয়। ভয়। হুট করে ভালবাসতে কাউকে সায় দেয়না মন। ভাল না বেসেই বিরহে বিরহে কেটে যায় সময়।

কষ্ট। কষ্ট। কষ্ট। সত্য বৈ মিথ্যে বলবো না ১. বরিশালের কালীবাড়ি রোডে পাশাপাশি দুটি বাড়িতে সমবয়সী দুটো ছেলেমেয়ের বাস। ছেলেটি একটু সহজ সরল।

খেলার সাথী মেয়েটি ছেলেটিকে তাই আগলে রাখে সবসময়। ইশকুলে থাকতেই এক দূর্ঘটনায় দুটো চোখই হারায় ছেলেটি। তারপর বন্ধ পড়াশোনা। শুধুই ঘরে বসে থাকা। মেয়েটি আসে প্রতিদিন।

ছেলেটিকে কাকাবাবু,ফেলুদা পড়ে শোনায়। ছেলেটি আবার চোখে দেখতে শুরু করে। মেয়েটি তার চোখ হয়। হয় পাশাপাশি চলতে থাকা ছায়া। তাসফিক নামের সেই ছোট্ট ছেলেটির বয়স এখন চব্বিশ।

পড়াশোনা করছে ইংরেজী ভাষা নিয়ে। ইমি নামের মেয়েটির পড়াশোনার বিষয় ইতিহাস। প্রতিদিন ছেলেটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে সে। পুরো ক্লাসে পাশে বসে থেকে টুকে নেয় শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কথাগুলো। নিজে নোট তৈরি করে।

ছেলেটির পাশে বসে থেকে পড়ে শোনায় সব। ছেলেটি মুখস্ত করে। তারপর পরীক্ষায় টাইপ করে পরীক্ষা দেয়। মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবাসে বলেনি কখনও তা। তবে মেয়েটি আমাকে বলেছে,কখনও কখনও ভালোবাসায় বলাটা অর্থহীন।

আমি বুঝতে পারি ওকে ছাড়া আমার কিছু নেই। কিছুই না। তাসফীক এই একই কথাগুলো বলেছে অন্যভাবে। ‘ আমি যখন এক একটি কঠিন পরীক্ষায় উতরে যাই তখন ও কাঁদে। চোখে আলো নেই বলে অশ্র“ দেখতে পারিনা।

তবে কান্নার শব্দ ঠিক ঠিকই ঠাওর করতে পারি। আমাকে ভালোবাসার কোনো কারন নেই ওর। তারপরও কেন যে বাসে বুঝিনা। ’ কথাগুলো বলার সময় তাসফিকের ভালোবাসা,আনন্দ,গর্বটা বোঝা যায় স্পষ্ট। তাসফিককে বলি,আপনাকে হিংসে করি খুব।

শুধুই আমিই নয়,আমার মতন ভালোবাসা না পাওয়া অনেক ছেলেই যে আপনাকে হিংসে করছে এ মুহূর্তে এতে সন্দেহ নেই কোনো। ২. মেয়েটি যখন নবম শ্রেনীতে পড়ে তখনই প্রতিদিন দুপুরে বেজে উঠত বাড়ির ফোনটি। ফোন ধরলেই ওপাশ থেকে কথা বলেনা কেউ। নিয়ম করে টানা এক বছর চলল এমন বিরক্তিকর কান্ড। মেয়েটি ফোন ধরে রিসিভারটি রেখে দিত পাশে।

বিল ওঠে উঠুক। বুঝুক মজা শয়তানটা। অবশেষে টানা এক বছর পর একদিন মুখ খুলল ওপাশের মানুষটি। দুর দুর সাইপ্রাসে কাজ করে সে। সেখান থেকেই করা হয় ফোন।

তারপর কথার বীজ রোপন করা হয়। সে বীজ থেকে চারা অতঃপর মস্ত বৃক্ষ। দুজন দুজনাকে না দেখেই হয় ভালোবাসা। এর মাঝেই দূর্ঘটনা। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মেয়েটি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

বাড়ির কাছেই মোহাম্মদপুর ক্যাম্পের বাজার। মাদক তাই অতি সহজলভ্য। লোকটি সাইপ্রাস থেকে ফোন দিলে কথা হয়না এখন আর। মেয়েটি এলামেলো বকে,গালিগালাজ করে। লোকটি সাইপ্রাস থেকে চলে আসে দ্রুত।

দেশে এসেই বিয়ে করে মেয়েটিকে। হুট করেই নেয়া হয় সন্তান। লোকটির ধারনা মেয়েটি মা হলে ঠিক হয়ে যাবে সব। কিন্তু হয়না। নেশার জন্যে যখন অর্থের প্রয়োজন হয় তখন নিজ সন্তানের গলা টিপে ধরতেও কার্পন্য করেনা এই মা।

রাশেদুল নামের লোকটির আর সাইপ্রাসে যাওয়া হয়নি। দেশেই ছোটখাট ব্যবসা করে। তার ভালোবাসার মানুষ,সহধর্মীনি এখন আছে গাজীপুরের একটি মাদকাসক্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রে। নিজের ছোট্ট মেয়েটির মা-বাবা সবকিছুই এখন রাশেদুল হক। স্ত্রীকে না দেখলে কষ্ট হয় এই লোকটির।

সারাক্ষন স্ত্রীকে নিয়েই ভাবনা তার। মেয়েকে নিয়ে মাঝে মাঝে যাওয়া হয় স্ত্রীর কাছে। মাদকের কথা ভুলে মা যখন আদর করে মেয়েকে,জড়িয়ে ধরে বুকে তখন রাশেদুল হকের চোখের কোলজুড়ে উপচে পড়ে জল। সে নোনা জল বড় কষ্টের। জানিনা,কেন জানি মনে হয় সব মেয়েই এমন ভালোবাসার কাঙাল।

রাশেদুল হক আপনার স্ত্রী বড় ভাগ্যবতী। বড়ই ভাগ্যবতী আপনাকে পেয়ে। সত্যি বলছি মেয়েরা বড্ড ভালো। বড্ড ভালো। সত্যি বলছি ছেলেরা বড্ড ভালো।

বড্ড ভালো। পরিশিষ্ট ভালোবাসা র্নিবুদ্ধিতার পরিচয়। যদি তাই’ই হয় তবে বোকামী করতে একটুও আপত্তি নেই আমার। ভালোবাসা মানেই এখন ভন্ডামী। বিশ্বাস করিনা আমি।

উপরের ঘটনাগুলো তো মিথ্যে নয়। একটুও নয়। ভালোবাসা মানেই অর্থের অপচয়। সেতো একটু হবেই। ছেলে এবং মেয়ে দুজনই ভাগাভাগি করার মানসিকতা নিয়ে থাকলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

আমি স্বপ্ন দেখি। বুক বাঁধি আশায়। ভালোবাসতেই হবে। পেতে হবে এমন কাউকে যে আমার পাশে বসে থেকে পুরোটা সকাল জুড়ে দেখবে রোদের শিশির দানা খুটে খাওয়ার দৃশ্য, মাছের ঘাই দেওয়া দেখতে দেখতে পার করবে মস্ত দুপুর, বিকেল কাটাবে উড়োজাহাজের লেজ নিয়ে দীর্ঘ গবেষনায় আর রাতের কথা নাইবা বললাম। ভালোবাসার ব্যাপারে আমি একটু স্বার্থপরই আছি।

জানি এসব শুনে কাছে ভীড়বে না আর কেউ। পাগলী ছাড়া এমন স্বার্থপর ভালোবাসায় রাজী কে’ই বা হবে! তবে আমি সেই পাগলীর অপেক্ষাতেই রইলাম। দেখবেন ঠিক ঠিক একদিন পাগলীকে পেয়ে পাগলের মত আমিও পথে ছুটতে ছুটতে আকাশ বাতাসকে জানিয়ে গাইতে পারবো,শোনো গো দখিনা হাওয়া প্রেম করেছি আমি...। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।