আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাকাচৌর বিরুদ্ধে সরাসরি ৫২৪ হত্যার অভিযোগ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্তমান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহসহ ৫২৪ জনের সরাসরি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সাকার বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়নি। তবে ৬ নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের সহায়তার অভিযোগও আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা, টর্চার, অগ্নিসংযোগ, গুম, অপহরণসহ অন্য অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। অনেকে এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

হিন্দু নাগরিকদের হত্যার সময় মুসলমানরা যখন কাঁদছে তখন সাকা তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল মালাউন মলো, তোমরা শোক করছো কেন? তার বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরী বলে দিয়েছেন, মালাউনদেরকে আস্ত রাখলে চলবে না। এরপর যা হবার তাই হয়েছে। শুধু হিন্দুদের হত্যা করেই ৰান্ত হয়নি, আওয়ামী লীগসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরও হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর অনেককে গণকবর দেয়া হয়েছে আবার অনেকের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সাকার বিরুদ্ধে প্রসিকিউটর যে ২৫টি অভিযোগ ফরমাল চার্জ আকারে দাখিল করে এগুলো তারই অংশবিশেষ।

তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউটর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের রাউজানে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সেখানে ৬টি গণহত্যা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। তার নির্দেশ ও সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডগুলো একাত্তরের ১৩ এপ্রিলে একই দিনে সংঘটিত হয়।

সেদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যনত্ম মোট ১২ ঘণ্টায় এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। ১৩ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে সাড়ে টার মধ্যে মধ্য হিরার হিন্দুপাড়ায় প্রথম হত্যাকা- চালানো হয। সেখানে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্য গহিরার বিশ্বাসপাড়ায় ৩ জনকে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করা হয়।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জগৎমল্লপাড়ায় গুলি করে ৩২ জনকে হত্যা করা হয়। ১টার দিকে সুলতানপুরের বণিকপাড়ায় হামলা চালিয়ে ৪ জনকে মারা হয়। একই দিন উনসত্তরপাড়ায় সাকার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ৭০ জন নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে সাকার বাহিনী। সাকা ও তার বাহিনী এপ্রিল থেকে শুরু করে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ড চালায়। এছাড়া সাকার নেতৃত্বে শিকারপুর গ্রামের ৩ শতাধিক লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

এখানে ৬ জনকে শনাক্ত করা যায়। পরবর্তীতে জগৎমল্লপাড়ায় আরও ৩ জন, ঘাসিয়া মাঝিরপাড়ে ৬ জনকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাকার অনুগত বাহিনী ৬ জনকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওদের মেরে ফেলা হয়। ১৪ এপ্রিল রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সতীশ পালিতের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুন করে সাকার বাহিনী।

এরপর একই গ্রামের আরও ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে সাকার নির্দেশে। সাকা নিজে অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে প্রার্থনারত অবস্থায় গুলি করে হত্যা করেন। একটি গুলি চোখের নিচে, একটি গুলি হাতে এবং অপরটি বুকে লাগে। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি সাকার হত্যাকাণ্ড। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল কুন্ডেশ্বরী ভবনে অধ্যৰ নূতন চন্দ্র সিংহ নিহত হলেন।

ঐদিন গহীরা হাই স্কুলের ছাদে কামান বসিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা সকাল থেকে চতুর্দিকে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। তার কোন একটি গোলা কুন্ডেশ্বরী ভবনে এসে আঘাত করে। নূতন চন্দ্র সিংহ সকলকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে কুন্ডেশ্বরী মন্দিরকে অাঁকড়ে পড়ে রইলেন। সেনারা এলো দুটি জীপে।

একটা জীপের ভিতর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। অধ্যৰ সৈন্যদের সংবর্ধনা জানালেন। তিনি তাদের বুঝিয়ে দিলেন_ আমি এই কাজ করেছি আর এই কাজ করতে চাই। সৈন্যরা সন্তুষ্ট হয়ে চলে গেল। কিন্তু সাকা তাদের ফিরিয়ে আনলেন।

তাঁর বাবা বলে দিয়েছেন। এই মালাউনকে আসত্ম রাখলে চলবে না। এরপর যা হবার তাই হলো। নূতন চন্দ্র সিংহকে লৰ্য করে গুলি চালালেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সব শেষ।

এখানেই শেষ নয় সাকা যে ভয়ঙ্কর তার প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রসিকিউটরদের ২৫টি অভিযোগ থেকে। আনত্মর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২) ধারার যত অপরাধ আছে তার সবই তিনি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর অপতৎপরতার ৰেত্র ছিল চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রাম শহরের গুডসহিলের নিজ বাসভবনে সাকা তাঁর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহযোগিতায় স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করেন। তার বাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনই ছিল মূল টার্গেট।

গুডসহিলের বাসভবনে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পৰের মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। এমনকি মেয়েদের ধরে এনে পাকিসত্মানী সৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন তাদের মনোতুষ্টির জন্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামে যে সোয়া দু'ডজন অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো (১) ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল রাউজানে ৬টি গণহত্যা। মধ্যগহিরা, জগৎময়পাড়া ও ঊনসত্তর পাড়া। বর্তমান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের উপস্থিতিতে রাউজানের ঊনসত্তর পাড়ায় ৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এর মধ্যে চরন পাল, বাবুল মালীদের শনাক্ত করা গেছে। (২) কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ে সংখ্যালঘুদের হত্যা। সেখানে অধ্যৰ নূতন চন্দ্র সিংহ ছাড়াও হত্যা করা হয় ছাত্র দয়াল হরি বিশ্বাসকে। (৩) শিকারপুরের গণহত্যা : সাকার বাহিনী শিকারপুরে গণহত্যা চালিয়ে অর্ধশতাধিক লোককে হত্যা করে। (৪) গুডসহিল : মুক্তিযুদ্ধের সময় গুডসহিল টর্চার সেল হিসেবে সবার কাছে পরিছিত ছিল।

মুসলিম লীগের চরমপন্থীদের দ্বারা এ নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালিত হতো। এই নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালনার সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের প্রত্যৰভাবে জড়িত ছিলেন। শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বাধীনতার পৰের মানুষজনকে এখানে ধরে এনে লটকিয়ে পেটানো হতো। এ বাড়িতে প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারম্নককে হত্যা করা হয়। (৫) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তাঁর সহযোগীরা শেখ মোজাফ্ফর আহম্মেদ ও তার ভাই শেখ আলমগীরকে ১৭ এপ্রিল হাটহাজারী ক্যাম্পের কাছ থেকে ধরে নিয়ে যায়।

পরে তাদের হত্যা করা হয়। (৭) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর বাহিনী ডা. মোহাম্মদ সানাউলস্নাহর এক ছেলেসহ কয়েক শ' ছেলেকে ধরে এনে নির্যাতন করেছে। এছাড়া হাজারী লেনের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বাাড়িতে নিজামউদ্দিনসহ ৭ জনকে নির্যাতন করা হয়। (৮) ঘাসিমাঝি পাড়া : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাহিনী এখানে বেশ কয়েকজন মহিলাকে ধর্ষণ করে। প্রথমে ঐ সব মহিলাকে ধরে নিজেরা ধর্ষণ করে পরে আবার পাকিসত্মানী হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।

(৯) ঘাসি মাঝিপাড়ায় হত্যা : এখানে সাকার বাহিনী কয়েকজনকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে রয়েছে জানে আলম, নুরম্নল আলম, আয়েশা খাতুন ও আবুল কাশেম (১০) ঊনসত্তর পাড়ায় গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সাকা ও তার বাহিনী ঊনসত্তর পাড়ায় নৃশংসভাবে গণহত্যা চালায়। এখানে ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়। যার ফলে ঐ গ্রামের নাম হয়েছে ৬৯ পাড়া। এখানে যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে রয়েছে, চরন পাল, বাবুল মালী প্রমুখ।

এদের ধরে এনে একসঙ্গে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয। হত্যার পর লাশগুলো জড়ো করে গণকবর দেয়া হয়। (১১) জগৎমলস্নপাড়া হত্যাকান্ড : এখানে সাকা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে রয়েছে তেজেন্দ্র লাল নন্দী, সমীর কানত্মি চৌধুরী, কিরণ বিকাশ চৌধুরী প্রমুখ। (১২) শিকারপুর গ্রাম : এই গ্রামে হিন্দু মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।

নিহতদের মধ্যে রয়েছে নিকুঞ্জ শীল, ফয়েজ আহম্মেদ, আহামদ ছফা। তিন শ' জনকে হত্যা করলেও ৫২ জনকে শনাক্ত করা গেছে। (১৩) সুলতানপুর হত্যাকা- : রাউজানের সুলতানপুর, কুদুরখিল হিন্দুপাড়া, কর্তাদীঘিরপার এলাকায় সাকা ও তার বাহিনী জবাই ও গুলি করে অনেক মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে একাত্তরের ৫ মে সুলতানপুরে বিজয় কৃষ্ণ চৌধুরীসহ তিনজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়। দিঘিরপাড় এলাকার হানিফকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।

একই সঙ্গে সতীশ চন্দ্র পালিতকেও হত্যা করা হয়। হত্যা করে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। (১৪) বোয়ালখালী : বোয়ালখালীর এখলাস মিয়াকে হত্যা করা হয়। এর আগে তাকে অপহরণ করা হয়। (১৫) লুটপাট : ডাবুয়া গ্রামে মানিক ধরের বাড়িতে লুটপাট করার পর আগুন ধরিয়ে দেয়।

কৌশলগত কারণে অন্য অভিযোগগুলো দেয়া গেল না। তদনত্ম সংস্থা ফরমাল চার্জ প্রসিকিউটরের দেয়ার পর তা ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ট্রাাইবু্যনালে সাকার বিরম্নদ্ধে ২৫টি অভিযোগ সংবলিত ফরমাল চার্জ দাখিল করেন। ট্রাইবু্যনাল তা আমলেও নিয়েছে। জানা যায়, ৫৫ পৃষ্ঠার ঐ অভিযোগপত্রের ১ হাজার ২৭৫ পৃষ্ঠার প্রমাণ ও আনুষঙ্গিক নথিপত্র এবং ১৮টি সিডি জমা দেয়া হয়েছে।

এর আগে ৪ অক্টোবর তদনত্ম সংস্থা সাকা চৌধুরীর বিরম্নদ্ধে করা ১১৯ পৃষ্ঠার তদনত্ম প্রতিবেদন চীফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে আরও দেয়া হয়েছিল অডিও, ভিডিও এবং ৮ হাজার পৃষ্ঠার তথ্য উপাত্ত। ২ অক্টোবর তদনত্ম সংস্থার প্রধান আইজিপি মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরম্নদ্ধে এক বছর তিন মাসের তদনত্ম শেষে প্রতিবেদন তৈরি করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদনত্ম কমিশন। তার বিরম্নদ্ধে আনত্মর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২) ধারার সমসত্ম অপরাধ পাওয়া গেছে। তদনত্ম প্রতিবেদনে সাকার বিরম্নদ্ধে ৩২টি অভিযোাগ আনা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে, সাকার নির্দেশে মধ্য গহিরার ডা. মাখন লাল শর্মাসহ ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬৯ জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা হয়। জগতমলস্নগ্রামে ৩৫ জনকে হত্যাসহ চট্টগ্রামের গুগডহিলসকে টর্চার সেল হিসেবে বানিয়ে সেখানে শহর থেকে শিল্পী, সাহিত্যিক, ছাত্র যুবক, পুরম্নষ ও নারীদের ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করার মত (তিনটি ধারায়) ৩২টি ঘটনার অভিযোগ আনে তদনত্ম সংস্থা। তদনত্মকারী কর্মকর্তা সাকার বিরম্নদ্ধে ১৪৭ জন সাৰীর সাৰ্য গ্রহণ করেছেন। তার ভিত্তিতে তদনত্ম কর্মকর্তা ১১৯ পৃষ্ঠার তদনত্ম প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। দেড় বছর তদনত্ম শেষে ৮ হাজার পৃষ্টার তথ্য উপাত্তও দেয়া হয়েছে।

তদনত্মকারী কর্মকতা নুরম্নল ইসলাম দীর্ঘ সময় পরিশ্রম করে এই তদনত্ম প্রতিবেদন তৈরি করেন। ৩ অক্টোবর প্রতিবেদন ট্রাইবু্যনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে হসত্মানত্মর করা হয় ঐ প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে। পরবতর্ীতে ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউটর জিয়াদ-আল-মালুম ১১৯ পৃষ্ঠার তদনত্ম প্রতিবেদনসহ ৮ হাজার পৃষ্ঠার তথ্য উপাত্ত ট্রাইবু্যনালে নিয়ে যান। তা ট্রাইবু্যনালকে অবহিত করা হলে ট্রাইবু্যনাল ১৪ নবেম্বর ফরমাল চার্জ গঠনের নির্দেশ দেন। ঐ দিন ফরমাল চার্জ আবেদন আকারে ট্রাইবু্যনালে জমা দেয়া হলে ১৭ নবেম্বর ফরমাল চার্জ আমলে নেবে কি নেবে না তার ওপর দিন ধার্য করা হয়।

অবশেষে ১৭ নবেম্বর ট্রাইবু্যনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অভিযোগ আমলে নিয়েছে। প্রসিকিউটর সূত্রে জানা গেছে,্ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুটপাট, গণহত্যা, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণের কাজে সহায়তা করেছেন। তার নির্দেশেই চট্টগ্রামে হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। '৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। সে সময় সাকা হত্যা, লুটপাট, গণহত্যা, অগি্নসংযোগসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার প্রমাণ রয়েছে।

'বর্তমান সাকার বাসভবন গুডহিলস তখন টর্চার সেন্টার নামে পরিচিত ছিল। সেখানে ক্রমাগতভাবে শহরের মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দু লোকজন, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নারীদের এখানে ধরে এনে টর্চারের পর হত্যা করা হতো। শুধু তাই নয় তার নিজের এলাকা রাউজানের ডা. নূতন চন্দ্র সিংহসহ মধ্য গহিরার ডা. মাখন লাল শর্মাসহ, গহিরা বিশ্বাসপাড়া, জগৎমলস্নপাড়া, উনসত্তর পাড়াসহ পুরা হিন্দু অধু্যষিত এলাকা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার বিরম্নদ্ধে এসবের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। '৬৯ পাড়া- এইসব এলাকায় হিন্দু অধু্যষিত এলাকার হিন্দু লোকজন এবং মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন করেছে।

তাদের হত্যা করেছে। এর জন্য ঐ গ্রামের নাম হয়েছে ঊনসত্তর পাড়া। চট্টগ্রামে অগণিত বধ্যভূমির সৃষ্টি করেছে সাকা। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জগৎমলস্ন গ্রামে তার নির্দেশে ৩৫ জন হিন্দুকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিরম্নদ্ধে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে সহযেগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার এই অপতৎপরতার ৰেত্র ছিল চট্টগ্রাম জেলা। চট্টগ্রাম শহরের গুডসহিলের নিজ বাসভবনে সাকা তার পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরীর সহযোগিতায় আরও অনেক স্বাধীনতাবিরোধী লোককে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গুডসহিল টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ছিল।

২০১০ সালের ২৬ জুলাই সালাউদ্দিনের বিরম্নদ্ধে আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে মামলা হয়। তাকে গ্রেফতারের জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে তদন্ত সংস্থা। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি পুড়িয়ে যাত্রী হত্যার মামলায় এ সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগেও গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।