আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিসেম্বর মাস এটাই ভাবার সময় - প্রতিটি বিজয় দিবসই আমাদের সামনে এই প্রশ্ন রেখে যায়।

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা ডিসেম্বর মাস এটাই ভাবার সময় গভীর দৃষ্টিতে হাতের তালিকাটির দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। মনোযোগ দিয়ে দেখে যাচ্ছেন প্রতিটি নাম। হঠাৎ একটি নামের উপর তাঁর চোখ আটকে গেল। চোখে রাজ্যের সংশয় নিয়ে তিনি তাকালেন সামনে বসে থাকা তালিকা পেশকারীর দিকে। সিরিয়ার ‘হিম্স’ প্রদেশ থেকে আসা প্রতিনিধি দলকে খলীফা নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের প্রদেশের সবচে’ গরীব লোকগুলোর নামের তালিকা তৈরী করে দিতে।

খলীফা সাধ্যমত তাদের অভাব পূরণের চেষ্টা করবেন। মনোযোগ দিয়ে সে তালিকাতেই তিনি চোখ বুলাচ্ছিলেন। কিন্তু তালিকার একটি নাম তাঁর মনে সংশয়ের ঝড় তোলে। নামটি হল ‘সাঈদ বিন আমের’! “কে এই সাঈদ বিন আমের”? চোখের সংশয় কন্ঠে নিয়ে খলীফা জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা উত্তর দিলেন “ইনি আমাদের গভর্নর! আমাদের সর্দার!’’ খলীফার সংশয় এবার প্রচন্ড বিস্ময়ে পরিণত হল।

বললেন, ‘‘তোমাদের গভর্নরও কি দরিদ্র?’’ ‘‘জ্বী, আমীরুল মুমিনীন!” বিনীত কণ্ঠে বললেন তাঁরা। “আল্লাহর কসম, কখনো তো দিনের পর দিন তাঁর ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে না। ” খলীফার চোখ ভিজে এল। অশ্র“ আটকে রাখার কোনো চেষ্টাই করলেন না তিনি। সাঈদকে গভর্ণর বানিয়ে তিনিই পাঠিয়েছিলেন।

তখন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা জারী করে দেবার প্রস্তাব দিলে প্রয়োজনাতিরিক্ত’ হয়ে যাবে বলে সাঈদ সবিনয়ে তা প্রত্যাখান করেছিলেন! আজ প্রদেশের সবচে দরিদ্রদের তালিকায় তার নাম দেখতে পেয়ে খলীফা নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। অশ্র“ধারায় তাঁর দাঁড়ি সিক্ত হয়ে উঠলো। “এই থলেটি নাও। সাঈদ বিন আমেরকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে বলবে, ‘খাত্তাবের বেটা উমর এই সামান্য হাদিয়া আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য পেশ করেছে। ’ এই বলে তিনি একহাজার স্বর্ণমুদ্রার একটি থলে প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দিলেন।

হিমসে পৌঁছে তাঁরা গভর্ণরের বাড়ীতে এলেন। থলেটি তাঁর হাতে দিয়ে খলীফার সালাম ও সংবাদ বললেন। তাঁরা চলে যাবার পর গভর্ণর থলেটি খুলেই পাথরের মত জমে গেলেন। ভয়ার্তস্বরে ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়তে পড়তে থলেটিকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দিলেন। পর্দার ওপাশে কর্মব্যস্ত তাঁর স্ত্রী চমকে উঠে বললেন,“কী হলো! কী হলো! আমীরুল মুমিনীন কি ইন্তেকাল করেছেন!?” “না, না, তার চে’ও ভয়াবহ ব্যাপার।

” “তাহলে কি মুজাহিদদের কোথাও পরাজয় ঘটেছে?” “না, বরং আরো মারাত্মক!” “তাহলে কী হলো?” গভর্ণর করুণ কণ্ঠে বললেন, “আমার আখিরাতকে ধ্বংস করার জন্য দুনিয়া আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে আর ফিতনা আমার ঘরে এসে হাজির হয়েছে!” স্ত্রী আসল ঘটনা এখনও জানেন না, তাই পর্দার আড়াল থেকেই বললেন, “নিজে বেঁচে থাকুন, ফিত্না দূরে সরিয়ে দিন। ” তারপর গভর্ণর সব স্বর্ণমুদ্রা ভাগ করে হিম্সের দরিদ্র মুসলমানদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন। মহাসমারোহে এখন ডিসেম্বর মাস। ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে উদযাপিত হবে বিজয় দিবস। সেইসাথে আমাদের বিজয় প্রাপ্তির চার দশক বছর পূর্ণ হবে।

চল্লিশ বছর! চাট্টিখানি কথা!! ভেবে দেখেছেন- কত সময়!? এর মাত্র দুই তৃতীয়াংশের কম সময়ে আরবের এক উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশান্ত পৃথিবীর অস্থির চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছিলেন। প্রথম যখন পবিত্র মক্কায় তিনি আবির্ভূত হন তখন তিনি ছিলেন একা। চারিদিকে কুফরের ভয়াবহ অন্ধকার ছিল। পৃথিবীর বুকে একটি প্রাণীও তাঁর সমর্থক ছিল না। গোটা পৃথিবীটাকে গিলতে থাকা কুফররূপী সেই অসত্য দানবের সাথে তাঁকে একাই লড়তে হয়েছিল।

অন্যায় ও অসত্যের সম্মিলিত পরাশক্তিও উঠে পড়ে লেগেছিল তাঁকে নিশ্চিহ্ন করতে। বনবাদাড় ভেঙে ছুটতে থাকা ক্ষ্যাপা হাতির মত গোটা দুনিয়াটাই ছুটে চলছিল জাহান্নামের সরলরেখায়। সেই পাগলা দানবের গতিমোড় ফিরিয়ে জান্নাতমুখী করার গুরুদায়িত্ব তাঁর কাঁধেই চেপেছিল। তিনি একা ছিলেন। লক্ষ্যে পৌছার পথে যত কষ্ট-অত্যাচার, অবজ্ঞা আর নির্যাতন, সবই হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছিলেন।

কিন্তু মাত্র তেইশ বছর পর যখন তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন, গোটা আরব উপদ্বীপ ছিল হিদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত । পাথুরে ভূমির যে’ রূক্ষ্ম মরুচারীদের মাঝে সভ্যতার ছিঁটেফোটাও ছিল না, তাঁরাই পৃথিবীর কোণায় কোণায় শান্তি-সভ্যতার জোয়ার বইয়ে দিচ্ছিলেন। কিছুদিন আগেও যেখানে মূর্তিরূপী শয়তানের অশ্লীল রাজত্ব ছিল, সেখানে ঘরে ঘরে বজ্রকন্ঠে এক আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ঘোষিত হচ্ছিল। সে ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র নজিরবিহীন সততা ও শান্তির বিপ্লব। এতবড় বিপ্লব মাত্র তেইশ বছরেই সংঘটিত হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আজ চল্লিশ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্বাধীনতা নিয়ে যখন আমাদের যাত্রা শুরু, তখন আমরা একা ছিলাম না, আমাদের সংখ্যা ছিল কয়েক কোটি। এই স্বাধীন রাষ্ট্রে শান্তি আর হিদায়াত এর সংবিধান অনুসরণ করা থেকে আমাদের বাঁধা দেওয়ার কেউ ছিল না। আমরা চাইলেই প্রতিটি পদে ইসলামের শিখানো সততা ও নিষ্ঠার শিক্ষা বাস্তবায়িত করতে পারতাম। আমরা নিজেদের সেই উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী বলে দাবী করি, যেই মহান রাসূলের ভালোবাসার আমরা দাবীদার, তিনি মাত্র তেইশ বছরেই অশান্ত পৃথিবীর চেহারা পাল্টে দিয়েছিলেন।

কিন্তু আমরা এই চল্লিশ বছরে কী করেছি? মাতৃভূমির রক্তচোষা একদল হর্তাকর্তার কুকীর্তির দফতর-ই কি আমাদের চল্লিশ বছরের ফসল? খলীফা ওমর, সাঈদ বিন আমের, এঁরা তো সামান্য নমুনা মাত্র, তেইশ বছরের সেই বিপ্লবে এক সাধারণ রাখাল বা ক্রীতদাস থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ সততা আরঅনুপম গুণাবলীর আদর্শ ছিল। আর আমরা কী করলাম ?! চল্লিশ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও জাতীয় পর্যায়ে সেই অনুপম নৈতিকতার কোনো আলামত আতশী কাঁচ দিয়েও কি খুঁজে পাওয়া যাবে? ভাবুন, ভাবতে থাকুন! ডিসেম্বর মাস এটাই ভাবার সময়! প্রতিটি বিজয় দিবসই আমাদের সামনে এই প্রশ্ন রেখে যায়। আহা, সেদিন তামাশা আর ফূর্তির স্রোতে হারিয়ে না গিয়ে এই প্রশ্ন যদি আমাদের মাঝে একটু চেতনার উন্মেষ ঘটাতে পারতো! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।