আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিরসখী হে, ভালবাসি তোরে...

তারে আমি ভালবাসি। সে চিরসখী আমার। শেকড়কে নিবিড় আলিঙ্গনে নিয়ে মাটি যেমন জন্ম দেয় মহীরূহ, সে তেমনি ভালবাসা উৎপন্ন মৃত্তিকা আমার। ঝর্ণাকে ভালোবেসে পাহাড় শৃঙ্গ নিরন্তন ঝরায় প্রপাত ধারা, তার ভালবাসার অন্তঃসলীলা আমার বুক জুড়ে সৃষ্টি করে আবেগের বহতা নির্ঝরণী। তার ভালবাসার বেদীমুলে সপেঁছি পুঞ্জিত প্রেমের সবটুকু উত্তাপ।

সয়েছি লোক-লাঞ্চনার রাশি রাশি যাতনা। ভুলেছি নিকটজনের রক্ত চক্ষুর ক্রুর চাহনি। কেঁদেছি তার বিচ্ছেদ বিরহে। কখনো বা তার ভালবাসার বাঁধভাঙ্গা প্লাবন- না পাওয়ার বেদনাকে ভাসিয়ে গেলে আমি কেঁদেছি। এ আমার সুখের কান্না।

আমার আনন্দ অশ্র“। তার ভালবাসার প্রতিদান চাইনি আমি কোনদিনই। তবুও সঙ্গোপনে সে আমাকে দিয়েছে আপনাকে উজাড় করে। আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। শিরা-উপশিরায় টের পাই তার প্রেমিকু স্পর্শ।

চলনে-বলনে, কথা-কাজে, মননে, মানসিকতায় তার নিরব উপস্থিতি কালে কালে দিয়েছে পূর্ণতার নিয়ামক। এক সময় নিঝুম রাতে একলা বসে ভাবি, আমাদের এ লেনদেনের ভালবাসাবাসিতে প্রাপ্তির দানে কে বেশি এগিয়ে। চোখ বুঁজে চোখের আলোয় যতনে খুলি হিসেবের খেরোখাতা। শরমে আমি চোখ তুলে তাকাতে পারিনা। নিজের মাঝে যতটুকু নিদ্রিত অহংকার, যতখানি নিরব উচ্ছাস, ভালবাসার বাড়ন্ত বাসনা, যত শুদ্ধ শুভ্রতা সব তার খেয়ালি দানের নিঃসীম মিছিল।

এতদিন পর শুধু মনে হয় এ ভালবাসা অসম। নিদারুন নিঃস্ব আমি। যা ছিলো সঞ্চিত সম্বল দিয়েছি তারে, সেও বড় স্বল্প। অথচ পেয়েছি যা এবং এখনও ক্রমশ তাতো বেহিসেবি। আমি এখন কী দিয়ে শোধাই দেনা? নিজেকে বড় ঋণ খেলাপি মনে হয়।

তবু হৃদয় বলে আকুলতায় ‘বড় ভালবাসি যে’। সেই ছোট্টবেলা থেকে একসাথে শুরু পথচলা। বড় আপার সাথে তার ছিলো জমজমাট ভাব। সেই সূত্রে তাকে খুব কাছ থেকে দেখে বুকে কেমন অজানা শিহরণ জাগে। তাকে ছুঁই, মেটে গন্ধ নিই, বিভিন্ন ভঙ্গি তার বহিরাবরণকে হৃদয়ে ফ্রেমবন্দি করি।

এক সময় জড়তা ভেঙ্গে তার ভেতরটা দেখার চেষ্টা করি। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা, কেমন যেন অচেনা লাগে। তবু দৃষ্টিতে নেশার ঘোর লাগে। সময়ে সময়ে তার নানা বরণ দেখে আমার ঘোর লাগা নেশাটা উথলে উঠে। আবার ডুবি তার অতলে।

জাগি- ফের ডুব দেই। তারপর? তারপর পৃথিবীর পথে পথে হন্যে হয়ে ছুটে চলা তারুণ্যের মিছিলে লিখে নিলাম নিজের নাম। কাননে কাননে পুষ্প পরাগে রেণু খুঁজতে হলাম প্রজাপতি। হংস হলাম জলে-স্থলে পাখি হয়ে ডানা মেললাম আকাশের নিলীমায়। ভালবাসার সেইতো শুরু।

সে আমার আয়না- যার চোখে চোখ রেখে নির্লজ্জভাবে বলা যায় ভালবাসার কথা। সে এমনই কারিগর, তার প্রবঞ্চনার আতুঁর ঘরে স্তুপকৃত স্বপ্নরা হঠাৎই সাহসী হয়ে উঠে। দুঃসাহসী হয়ে জীবন বাজির শিখিয়ে দেয় নানা ফন্দি। এখন আমার স্বপ্নেরা সব লাগাম ছাড়া। ইচ্ছে মতো ছুঁয়ে যাচ্ছে স্বপ্নচুড়া।

আত্মদর্পনে তাকিয়ে দেখি আমি তো আমি নই। আমি তাহির। নসীম হিজাযীর শেষ প্রান্তরের তাহির। সেই প্রত্যয়ী ঋজুতার ছাপ চেহারায়। বুকের ভেতর অবিকল সেই আশাভঙ্গের ক্ষোভ।

আবার ভাবি আমি কি নতুন সালাহউদ্দিন? তেমন ক্ষিপ্রতার কজ্ঝটিকা টের পাই তন্ত্রীতে। আচমকা শপথের কাঠিন্যে শক্ত হয়ে চোয়াল। রক্তে জেগে উঠে কেমন যেন খুন পিয়াসী নিষ্ঠুরতা। কখনো অবলা সখী আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয় ক্লিওপেট্টার মুখোমুখি। সত্যি বলছি, আমি শংকা ভুলে ‘হার মাচিস’হয়ে যাই।

তখন এ্যান্টনি আর সিজারকে দেখে হিংসার শরীরটা আমার জ্বালা করে। আমার আছে অনেক অনেক পুঁথিগত বিদ্যা, ষড়যন্ত্র করার চিকন কুটমন্ত্রণা। তেজস্বী বাহু, চওড়া কাঁধ। তাই কিও¬পেট্টাকে পাবার অদম্য বাসনা আমার হতেই পারে। আমি তাকে .....।

একবার আফ্রিকার এক কালো মেয়ের অগাধ সৌন্দর্যের ঐশ্বর্য্যে ডুবেছিলাম। আমার সখী এমনভাবে তার রূপ মোহনীয়তা বয়ান করলো, মনে হলো রবি ঠাকুর এর জন্যই লিখেছিলেন ‘কৃষ্ণ কলি আমি তারে বলি ...’। মরিবো পুজোর ‘গডফাদার’মাইকেল কর্লিয়নিকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেখেছি এযে আমার কার্বন পিস। সেই নাক, সেই ঠোঁট, পরিচিত ভুরুর নিচে অন্তর্ভেদী চোখ দুটোতো আমার দৃষ্টিকেই অনুসরণ করে। নিজের ভেতর ধ্বংস চিনে মনে হয়েছে আমি চেংগিস।

সখীর আঁচল তলে বৈরাগ্যের নির্জনতা ভালবেসে মনে হয়েছে আমি হয়তো দুনিয়া ভোলা ইবরাহীম আদহাম হতে চাই। তার প্ররোচনায় হতে চেয়েছি তিতুর লেঠেল, হতে চেয়েছি বেহুলার লক্ষিন্দর,মাসুদ রানা, কখনো পথের লোক হিমু। বিন কাসিম হতে চেয়েছি বহুবার। সব ভুলে মনে হয় আমি কি বই চোরা মার্ক টোয়েন? ভেবেছি, সখীর ভালবাসার পাওনা শোধাতে আমি হবো শাহজাহান, তার জন্য গড়ে দেবো প্রেমসৌধ তাজমহল। সখী, এমনই তোর ভালবাসা, যা দিয়েছিস তার কিছুই যাবেনা ফেলা।

সবই চিরন্তন, সবই অক্ষয়। যখন ভাবি কোথায় কেউ নেই, বুকের চাপা অনল হাতড়ে দেখি তুই বড় আপনরে সখী। অনন্তকাল দুজন কেবল দুজনকে অনুভবের চোখ দিয়ে দেখেই গেলাম, বলা হলোনা কিছুই। ভালবাসার অদম্য কামনা সাজানো উচ্ছাসিত কথামালা কখনো শুনিনি আমরা। আর কেউ না জানুক আমরা দুজন জানি, ভাষা অরণ্যের নৈঃশব্দের মাঝে ও আমাদের হৃদয়ের কপাট খোলা শব্দ ভান্ডার ঠিকই চিনে নিয়েছে দুজনের মনের সিন্দুকে রাখা অভিধান।

আমাদের ভালবাসা তাই কখনো ফুরাবেনা। হে আমার অনন্ত যৌবনা সখী। পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিকের কাছে আমি আজ ঘোষণা করে যাবো তোর নাম। তারা তোর আমার ভালবাসা দেখে বলুক আমার বুকে তোর এত ভালবাসা তাদের কেন ঈর্ষা জাগে সখী। তোর নামে ওমর খৈয়ামের পংক্তিটা মনে পড়ে ‘মদ-রুটি ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার নীল চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে, শুধু একটি বই রয়ে যাবে অনন্ত সাধনা’।

সখী আমার বই। গ্রন্থ। পুস্তক। কিতাব। যে নামেই ডাকা হোক, তোকে ভালবাসবো আজীবন, আমরণ।

লশকর বাউজী ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.