স্বপ্ন আর বাস্তবতার রণভূমে নিজেকে খুজে ফিরি সারাক্ষণ। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম এক বন্ধুর ফোন পেয়ে। তার কথা শুনে তো বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার যোগার। যেখানে সাড়ে সাতটায় তার হলের সামনে থাকার কথা, সেখানে পৌনে আটটা বাজে, আর আমি এখনো ঘুম থেকেই উঠিনি। অথচ আটটার আগে লাইব্রেরিতে যেতে না পারলে বসার জায়গা পাবো না।
তাতে আবার একটা গ্রুপ একসাথে বসি বলে পরে গেলে খালি টেবিল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।
যাইহোক বিছানা থেকে নেমে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে লাইব্রেরিতে গেলাম। ভাগ্য ভালো যে আমার আগে আর সবাই এসেছিলো এবং আমার জন্যও জায়গা রেখেছিলো। খালি চেয়ার পেয়ে যে কি ভালো লাগলো তা লাইব্রেরিতে পড়তে গিয়ে চেয়ারের সংকটে যে পড়েছিলো সেই অনুভব করতে পারে।
কিছুক্ষণ পড়ার পর পেট নাড়া দিয়ে উঠল।
মনে হল সকালে তো নাস্তা না করেই চলে এসেছি। নিচে নেমে নাস্তা করে আসলাম। পড়তে পড়তে চোখে তন্দ্রা এসে গেলো। একটু ঘুমিয়ে নেব কি না ভাবতেছিলাম এমন সময় পেট আবার নাড়া দিয়ে উঠল। বুঝলাম এবার কিছু বের করে দিতে হবে।
আসার সময় তাড়াহুরা করার কারনে ভালোভাবে টয়লেট সারা হয়নি। টয়লেটের সামনে গিয়ে দেখি চারজনের লাইন। আমি পঞ্চম। একটু পরেই আমার পিছনে আরো একজন আসলো এবং আমি ঢোকার সময় পিছনে মোট ছয় জনকে রেখে ঢুকলাম। টয়লেটে ঢুকেই যে শান্তি লাগলো তা আর লিখে প্রকাশ করতে পারব না।
মনে পড়ে গেলো সেই কথা "ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখ", যার অর্থ এর আগে এত ভালো করে বুঝি নি। একদিকে চোখের তন্দ্রা, অন্যদিকে ত্যাগের সুখ। আহা কি যে ভালো লাগছিলো! আমি যেনো রঙ্গিন আকাশে উড়া শুরু করলাম। মনে হচ্ছিলো স্বর্গসুখ বুঝি এমনই হয়! এমন সময় কিসের যেনো শব্দ শুনলাম। কোথায় কে যেনো ধাক্কা দিচ্ছে।
বুঝলাম স্বর্গেও কিছু পাবলিক আছে যারা অন্যের সুখ সইতে পারে না। আসতে আসতে তাদের গোলমাল বাড়তে থাকলো। আমি সেসবে মন না দিয়ে মনে মনে তাদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে শুরু করলাম। হঠাৎ বিকট শব্দের সাথে সাথে বিকট একটি চিত্কার শুনলান, "কোন হালায় ভিতরে রে?" এবার আমি বুঝলাম, আমি টয়লেটে বসে আছি এবং বাইরে একটা লাইন আছে আমি যা করলাম তা করার জন্য। বাকি কাজ তাড়াতাড়ি সেরে বের হলাম।
একজন ঝাড়ির সুরে বলল এই মিয়া, "টয়লেটে বইসাই কি মঙ্গলগ্রহ ভ্রমণটা সেরে ফেললেন। " "ভাই ঘুম আসলে কি করব, বলেন?" এই কথা আসতে করে বলে তাড়াতাড়ি সরে পরলাম, পাছে কোনো ঝামেলা বাধে।
এবার গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে চেষ্টা করলাম। কিন্তু টেবিলের বাকিদের দেখলাম কানাকানি কি কি যেনো বলছে আর হাসছে। তাও আমার দিকে মিটি মিটি তাকিয়ে।
আমার একটু কষ্টই হলো হাসির কারণ উদ্ধার করতে।
যাইহোক এভাবে দুপুরের খাবারের সময় হলো। হলে আসলাম খাইতে (আমি আবার মেসে খাই কিনা)। যথারীতি বেসিনে থালা ধুচ্ছিলাম আর সকাল থেকে যা ঘটল তা ভাবতেছিলাম। থালায় লবণ ঘসছি আর ভাবছি।
আমার পাশের ট্যাবের ব্যক্তি চলে গেলো। আর একজন সেখানে আসতে গিয়ে আমার গায়ে একটু লাগলে সরি বলল। আমি এসবকে গুরুত্ব দিলাম না। আমি এখন চিন্তার জগতে। এমন সময় একজন কাকে যেনো বলল, "আজকের থালাগুলো কেন যেনো একটু বেশিই নোংরা।
" আর একজন বলল, "ভাবছি, বেসিনেই গোসলটা সেরে নেব। " আমি এবার নিজেকে আবিস্কার করলাম বেসিনের সামনে থালা পরিস্কারকারী এক ব্যক্তি হিসেবে, যে এখানে খাইতে এসেছে।
আবার লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছি। শরীরটা কেমন যেনো লাগছে। একটা রিক্সা ডাকলাম।
কিন্তু মনে পড়ল যে কয়টা টাকা ছিলো তা নাস্তা খেতেই শেষ। কি আর করা, রিক্সা নিয়ে প্রথমে টিএসসির এটিএম বুথে গেলাম টাকা তুলতে। ভাগ্য ভালো যে এখানে লাইন ধরতে হলো না। ঢুকেই অন্যরকম অনুভূতি শুরু হলো শরীরের মধ্যে। ক্লান্ত শরীর, এসির হাওয়া; একটি ঘুমন্ত আবেশ গ্রাস করলো পুরো শরীর ও মনে।
কিন্তু এবার আমি সিরিয়াস। টয়লেটে আর মেসে যা ঘটল এখানে আর তা ঘটতে দেব না। "ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়", আর আমার দুই দুই বার শিক্ষা হলো; তাও একই দিনে। এক দিনে হ্যাট্রিক করতে চাইনা। যাইহোক আমি আমার কাজ করা শুরু করলাম।
এটিএম কার্ড ঢুকিয়ে পাসওয়ার্ড টিপছিলাম, এমন সময় মনে হলো আমার প্রিয় কম্পিউটারটির কথা। আপসোস হলো, এখন যদি রুমে থাকতাম, তাহলে হয় মুভি দেখতাম না হলে গেইম খেলতাম। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলল এই মেশিনে গেইম আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখার। একে একে সব ফাংশনে যেতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও গেইম জাতীয় কিছু নেই।
অবশ্য টিপাটিপি করতেই আমার ভালো লাগছিলো। তাই চালিয়ে যেতে লাগলাম। এমন সময় কানে আসলো গার্ডকে কে যেনো বলছে, ভিতরে কেউ মরে আছে কি না, না কি বুথের সব টাকা তুলে নিয়ে যাবে। আর একজন বলছে, আমার ভাড়া দিলেই আমি চলে যাই; তারপর আপনি ভিতরে ঘুমান আর টাকা তোলেন আপনার ব্যাপার। আমি আর দেরি না করে বের হলাম।
বুঝলাম আজকে আর লাইব্রেরী গিয়ে কাজ নাই। আমি আপাতত এ গ্রহে নাই; এখন আমি মঙ্গলগ্রহ ভ্রমণে আছি (সেই ভাইয়ের কথাই ঠিক)। রিক্সাওয়ালাকে বললাম হলের দিকে যেতে।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।