মানুষ আর মানুষের তামশা দেখি,দুটোই আমার প্রিয় ! আমার নাম বকুল । ক্লাস টু'য়ে পড়ি । আমার পাশে বসে পা দোলাতে দোলাতে কথাগুলো যে বলছিল তার নাম বকুল । বকুলের সামনের পাটিতে দু'ইটা দাত নাই । উপরের সারির ঠিক মাঝেরটা আর নিচের সারির ঠিক মাঝেরটার বাম পাশের টা ।
দাঁত আর ফাঁকের মাঝে একটা ক্রস গুণ অবস্থা।
বকুল এমন ভাবে বসছে যে আমাকে মনে হয় অনেক দিন ধরে চিনে । তার হাতে ছোট একটা বালতি - গোলাপ ভর্তি । আমাকে সে খুব করে বলছে , একটা ফুল নিতে । ধানমন্ডি লেকের আমি যে পাশটাতে বসে আছি বকুলরা তার ঠিক উল্টোপাশে থাকে ।
তারা তিন বোন আর একটা ভাই । ভাই সবার ছোট । সে মেজ । তার বড় বোন এক রং মিস্ত্রির সাথে প্রেম করে ভাগছে । তার কথামত ।
তার বাবা রিকশার মিস্ত্রি ।
বকুল মনে হয় গল্পের মেজাজে আছে । নিজ থেকেই আমার সাথে কথা বলছে -
আমার ছোটো বইনের নাম রেখা । ওয় দেখতে সুন্দরতো তায় বাপে ওর নাম রাখছে - 'রেখা '। হিন্দি বইয়ের নাইকার নামে নাম ।
আমি বললাম, তুমি হিন্দি বই দেখো ?
দেহি না আবার । সালমান খানের বই আমার ভাল লাগে ।
সালমান খানের কোন বই ভাল লাগে ?
নাম বলতে পারল না । দু'পা দুলিয়ে শুধু হাসছে। গোলাপের বালতিটা কোলের উপর রাখছে ।
যেন আমি বোকার মত কোন প্রশ্ন করেছি ।
লেকটা আজকে বেশ কিছুটা ফাঁকা । লোকজন বেশ কম । আমি বসেছি রবীন্দ্রসরোবর থেকে একটু দুরে । লোহার পুলটা কাছাকাছি ।
আমার ঐপারে এক গাছের গুড়ি'র ভিতর একটা মেয়ে আর একটা ছেলে ঘনিষ্টভাবে বসে আছে । এদিক থেকে দেখলে মনে হয়- মেয়েটা ছেলেটার গলায় ঝুলে আছে । আসলে মেয়েটা ছেলেটার কোলে বসে আছে ।
বকুলকে বললাম - ঐ ভাইয়ার কাছে গিয়ে একটা ফুল বিক্রি করে আসো । ওরা কিনতে পারে ।
তুমি যাও - দেখি ওদের কাছে ফুল বেঁচতে পারো কিনা? তাইলে আমি তোমার কাছ থেকে একটা ফুল কিনবো । আমার কথা কিছু বলবা না । বলা মাত্রই বকুল তার গোলাপের বালতি নিয়ে দৌড় ।
বাদাম মামার কাছে থেকে পাঁচ টাকার বাদাম কিনলাম। বাদাম চিবুতে চিবুতে আমি চারপাশ দেখতে লাগলাম ।
একটু পর দেখি বকুল ঐপারে ঐজুটির সামনে গিয়ে ওদেরকে ফুল সাঁধতেছে। ছেলেটা মনে হয় রাজি হচ্ছে না । বকুল ফুল হাতে নিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে । ওরা বকুলের দিকে না তাকিয়ে, আবার ঝোলাঝুলি শুরু করে দিল ।
একটু পরে মনে হয় বকুল আবার সাদাসাধির পরিমাণ বাড়িয়ে দিল ।
আমি এইপাড় থেকে ওদের কথাবার্তা শুনছি না । হায় হায় --বকুল একটু পড়ে আমার দিকে আঙুল তুলে কি যেন দেখাচ্ছে । আমি ওকে যা করতে না করেছিলাম, ও মনে হয় তাই করে ফেলছে । একটু পড়ে মেয়েটা দেখি গলাটা একটা বাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমিও এই পাড় থেকে হাঁসির জবাব দিলাম ।
ছেলেটা পকেট থেকে মানিবাগ বের করছে ।
বকুল আমার পাশে এসে আবার আগের মতই পা দুলিয়ে বসে পড়ল । তাকে খুব খুশি দেখাচ্ছে । মাঝে একবার শুধু আমার দিকে তাকাল । আর নতুন একটা দশ টাকার নোট বের করে দিল ।
একটু পর বলল- দু'ই টা ফুল নিছে । দশটাকা দিছে । আফা আগেই নিতে চাইছিল । হেই সময় ভাইয়া একটা ধমক দিছিল ।
আমি বললাম- এইবার নিল কেন? তুমি কি কইছিলা - আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে ?
কইলাম, ভাইয়া একটা ফুল নেন।
হেয় ধমক দিতে আছিল । পরে আফারে কইছি, আফা আপনে একটা ফুল নেন । আপনে একটা ফুল নিলে ঐপারের ঐ ভাইয়াটা দু'ইটা ফুল কিনবে- কইছে ।
আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম । রুপা আমাকে ৪ টার সময় দেখা করতে বলছে ।
পৌণে পাঁচটা বাজে । তারমানে আজও আসতে পারবে না । নিশ্চয় ওর ভুড়িয়াল বাপ আজ অফিসে যায় নাই ।
আমি পকেট বকুলকে বললাম ভাল দেখে চার গোলাপ দিতে । আমি তাকে বিষ টাকা দিলাম ।
আর হাতের গোলাপ তাকেই দিয়ে বললাম- বকুল আমার বন্ধু আজ মনে হয় আসবে না । গোলাপ গুলো তোমার কাছেই থাক। পরে আর একদিন আসলে নিয়ে নিব ।
বকুল বলল- বন্ধু না আফা ? বলেই আবার পা দোলাতে লাগল । আর মুচকি মুচকি হাসছে ।
মনে হয় সে সব জানে, আর আমি তার কাছে ধরা পড়ে গেছি ।
আমি এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাটা শুরু করলাম । একটা টিয়াপাখি তখন- ' জাহাজবাড়ী'র দিকে উড়ে গেল । ধানমন্ডি লেকে টিয়াপাখি আজই প্রথম দেখলাম ।
টিয়াপাখি টাও আমার মত আজ একা ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।