আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নো হেডিং

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself. বন্ধুর কথা গতকাল আমার বন্ধু নওরীনের জন্য একটা ছড়া লিখেছিলাম ওর ফেইসবুক ওয়ালে। নওরীনের সাথে নিত্যবসবাস একটি রোগের। কোনওভাবেই সে-রোগের চিকিৎসা করা যাচ্ছেনা। ভীষণ মুস্কিল। দেখা করতে চাইলে দেখা করেনা, কথা বলতে চাইলে কথা বলেনা, বেড়াতে যেতে চাইলে সাথে যায়না।

রোগটির নাম দিয়েছি আমি “ভাল্লাগেনা”। সেটা নিয়েই ওর ফেইসবুকে আমি ছড়াটা পোস্ট করলাম। আমি, আমার ভাই শিমুল এবং বন্ধু শামা মিলে অগুনতি কমেন্ট করে ফেললাম সেই ছড়ার সূত্র ধরে। তবু নওরীনের কোনও সাড়াশব্দ নেই। ফোন করলাম ওকে গতকাল।

বললাম, চল্ দেখা করি। চেয়েছিলাম সন্ধ্যায় কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওর সাথে খানিকক্ষণ সময় কাটাবো। কিন্তু সে রাজি হলোনা কিছুতেই। হঠাৎ সাড়ে তিনটার দিকে কল করে জানালো ঠিক ৪টায় পিয্যা হাটে যেন আমি চলে যাই, সে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়েছে আজ, আমার সাথে দেখা করবে। খুশী হলাম, আবার মুস্কিলেও পড়লাম একটু।

কাজের দিনে চারটায় দেখা করা মোটামুটি অসম্ভব একটা ব্যাপার, তাও আবার প্ল্যান ছাড়া, একেবারেই হুট করে। একবার ভাবলাম ওকে ফোন করে না-করে দেই। দোটানায় পড়ে গেলাম। শেষে যা-থাকে কপালে, ভেবে বের হয়ে পড়লাম কাজ থেকে। রাস্তায় কুটীল জ্যাম, সিএনজিওয়ালারা পণ করেছে আমার সামনে দিয়ে খালি যাবেনা।

অগত্যা রিক্সা নিলাম। যাচ্ছি, পথ শেষ হয়না, আর দু’মিনিট পরপর আমার রোগী ফোন করছে ‘তুই কোথায়? লাত্থি খাবি, তাড়াতাড়ি আয়!’ যদি পাঙ্খা থাকতো তবে তো উড়েই চলে যেতাম, সেটা আমি ভাল্লাগেনা-রোগীকে ক্যাম্নে বুঝাই? মিনিট বিশেক তো লাগলোই আমার পৌঁছুতে পিযযা হাটে। জানি ঢাকার লোকরা অবাক হচ্ছেন ভেবে-এ কী এমন দেরী? ভাই চট্টগ্রামের জন্য এটা দেরী তো বটেই! পিযযা হাটের সিঁড়ি দিয়ে উঠছি আর রোগীকে ফোন করছি, যথারীতি উনি ফোন ধরেন না। মুড অফ। অসময়ে সব টেবিল খালি।

এক্কেবারে কর্ণারের একটা টেবিলে গালে হাত দিয়ে বসে আছে আমার প্রিয় বন্ধু নওরিন। টেবিলে, পিযযা, পাস্তা, গার্লিক ব্রেড, লেমোনেড নিয়ে। আমি কাছে যেতে জিজ্ঞেস করলো, তোর জন্য মাশরুম স্যুপ অর্ডার দেই? লাঞ্চ করেছি ঘন্টা আগে, বললাম খাবোনা। অবধারিতভাবে গালি খেলাম ‘শোন ন্যাকামি করিসনা। আমি খাওয়াবো, বল্ জলদি কী খাবি?’ একটা ঠান্ডা মোকা অর্ডার দিয়ে ওনাকে ঠান্ডা করলাম।

‘এবার বল্ তোর কী হয়েছে?’ জিজ্ঞেস করলাম। “জানিনা রে, আমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা!” কাচুমাচু করে নওরীন বলে বসলো। আমি আমার লেকচারের ঝুড়ি খুলে বসলাম। গালি খাচ্ছি, লেকচার দিয়েই যাচ্ছি। কফি খাচ্ছি, তামাশা করে যাচ্ছি।

খালি পিযযা হাটে আমরা দুজন মোটকী সমানে খেয়ে গেলাম আর গল্প করেই গেলাম। হাবিজাবি, এটা-সেটা, জীবনের গল্প, বাচ্চাদের গল্প। ছেলেবেলার গল্প, স্কুলের পড়ায় ফাঁকি-দেওয়ার গল্প, ফেলে আসা সুখ-দুঃখের গল্প। ভাল্লাগেনা রোগটাকে একেবারেই পাত্তা না-দিয়ে হা-হা করে আড্ডার মাঝে হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে খেয়াল করি অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। শীতকাল, দিন ছোট, মাগরীবের সময় হয়ে যায় ঝুপ করেই।

‘যাইরে’। “আরেকটু বস্না, গল্প করতে বেশ ভাল্লাগছে!” নওরীনকে তখন বললাম আমাদের বাসায় ডিনার করতে। সম্ভব না তার পক্ষে, বাচ্চার পড়া, রোজকার রান্না আরও কত-কী! আমার কথা ভাল্লাগেনা-রোগটি আমাকে কেন যেন আজও পাত্তা দিলোনা। জানিনা কেন আমার সবসময় ভাল্লাগে। মন খারাপ হয়, কারণ থাকলে, তার সাথে সাথে মন ভালো করা আরও এতকিছু থাকে যে, রোগের পাল্লায় পড়তে পারলামনা আজও।

একজন মাঝে মাঝে খুব জ্বালিয়ে মারে, মন খারাপ হয় ভীষণ, তার কথা ভাবলে। বাচ্চারা কেমন বড় হচ্ছে, ওদের সামনের দিনগূলো কেমন হবে, ভেবে টেনশন হয়। কিভাবে মরবো, ক’দিন বাঁচবো, সেটাও ভাবি বৈ কি। তবু ভাগ্য ভালো প্রতীক্ষা বলে কিছু একটা আছে। আমি আমার আশা, আমার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করি প্রতিটা দিন।

যা গিয়েছে তা নিয়ে শোক করতে চাইলে তো অনন্তকাল পার করে দেওয়া যায় এই “ভাল্লাগেনা” রোগটি নিয়ে। কিন্তু তাহলে তো আমার স্বপ্নগুলোতো মাঠেই মারা যাবে! স্বপ্ন দেখা তাই কোনওদিন শেষ হয়না। স্বপ্নপূরণ হয় না যে! স্বপ্ন দেখতে জানলে এই রোগ কোনও ব্যাপার? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।