আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংরেজী শিক্ষা উপেক্ষিত বাংলাদেশ

ধোয়াশা জগৎ যারা বাংলা বা ইতিহাস বিভাগে পড়াশুনা করছেন ও করেছেন তারা বিষয়টাকে নেতিবাচক হিসাবে দেখলেও আমি একটি সত্য উপস্থাপন না করে পারছিনা । আর সে সত্যটি হল বাংলাদেশ ইংরেজী শিক্ষা ও চর্চায় অনেক বেশী পিছিয়ে আছে । অনেক বুদ্ধিজীবি ও কলামিষ্ট বলছেন আবার একটি ভাষা আন্দোলন দরকার । কিন্তু আমি বলছি ভালভাবে ইংরেজী শেখার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে সেভাবেই গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবী । আমরা বাংলাকে অনেক ভালবাসি ।

ভারতীয়রা ভারতকে ভালবাসে । যদিও আমরা বাঙ্গালী এবং বাংলাকে অনেক ভালবেসে জীবন দিয়েছি । কিন্তু ভরতীয়রা ভাষার জন্য জীবন না দিলেও তারা ভারতকে অনেক বেশী ভালবাসে যাদের তুলনায় আমাদের ভালবাসা নগন্যরই নামান্তর । ইতিহাস সাক্ষী গান্ধীজীর কথায় ভারতীয়রা বাইরের দেশের সকল পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছিল এবং নিজেদের পণ্যই শুধু ব্যবহার করত, তা যতই মানে খারাপ হউক না কেন । এটা ছিল স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি একধরনের গভীর ভালবাসা ও মমত্ববোধ ।

আজকের ভারতের এ অবস্থান শুধুমাত্র এই গভীর ভালবাসা ও মমত্ববোধের জন্যই । যারা ভারতের মুম্বাই, মাদ্রাজ অথবা নয়াদিল্লী গেছেন তারা হয়ত দেখে থাকবেন যে সেখানকার হোটেলের মেচিয়ার, দোকানদার, রিক্সাওয়ালা, অটোওয়ালা, মুচি পযর্ন্ত আপনার সাথে হরদম এবং অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় ইংরেজীতে কথা বলে যাবে । এর জন্য কি ভারত পিছিয়ে গেছে নাকি এগিয়ে গেছে ? আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলো বেশিরভাগ ভারতের । সেই চ্যানেলগুলোতে প্রতিনিয়ত ধারাবাহিক নাটক, প্রতিযোগীতা, সাক্ষাৎকার প্রদর্শন করা হয় । একটু লক্ষ করলেই বুঝা যায় তারা তাদের মিডিয়াগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন ।

এর জন্য কি ভারত পিছিয়ে গেছে ? নিজের দেশকে ভারতবাসী কতটা হৃদয় থেকে ভালবাসে আজ ভারতীয়রা সেটাই প্রমাণ করেছে । আমার মনে হয় ভালবাসা তকেই বলে যাকে ভালবাসা হয় সাথে সাথে তার উন্নতিও কামনা করা হয় । শুধু বাংলাভাষাকে ভালবাসলাম অথচ বাংলাদেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসলাম না এমন ভালবাসা দিয়ে শুধুমাত্র আবেগ প্রকাশ করলেও বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ । শুধুমাত্র বাংলাভাষাকে পুঁজি করে বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতা ছাড়া চলাচলের পথটা যে খুবই ক্ষীণ তা সহযেই অনুমেয় । অথচ আমরা যদি ইংরেজী ভাষাটাকে সেভাবে প্রাধান্য দেই তবে আমরা দেশকেও যেমন কিছু দিতে পারব ঠিক তেমনি দেশও অনেক এগিয়ে যাবে ।

ইংরেজী ভাষাকে পুঁজি করে আপনি বিশ্বের যে কোন দেশে অবাধে চলাচল করতে পারবেন হোচট খাবার সম্ভাবনাটা মোটামুটি অমূলক । এর কারনটা হল ইংরেজরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের উপনিবেশ স্থাপন করার সাথে সাথে তাদের ভাষাটাকেও প্রবলভাবে স্থাপন করেছিল । যেখান থেকে মুক্তির আর কোনই পথ নেই । মুক্তির চেষ্টা করাটাই আমাদের মত দেশের মানুষের জন্য পাগলামির নামান্তর । আজ আমরা স্বাধীন হলেও এখনও ভাষার গোলামী করতে হচ্ছে কারন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখন সেই ইংরেজী ভাষাটাই রপ্ত করে ফেলেছে খুবই সহজভাবে ।

তবে আমাদের মাঝে এই হীনমন্যতা কেন ? আমার মনে হয় এটা ভাষার গোলামী নয় বরং গৌরবের বিষয় যে, একজন মানুষ খুবই সহজভাবে ইংরেজী পড়তে পারেন, বলতে পারেন ও বুঝতে পারেন । যদি এটাকে ভাষার গোলামী বলেন তবে ভাষাবিদ শহিদুল্লাহকে কি বলা যায় ? এখন একটা ব্যতিক্রম ধর্মী আয় রোজগার নিয়ে কথা বলব । সেটা হল আউট সোর্সিং যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে বসে করতে হয় । বর্তমানে আমাদের দেশের অনেক ছেলেমেয়ে ঘরে বসে টাকা আয় করছে । অথাৎ ঘরে বসে বসে বিদেশের কাজ করতে হয় ।

এই কাজটা দুইভাবে করা যায় অন লাইনে অথবা অফ লাইনে । সব কাজ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পেতে হয় এবং করতে হয় । আর এই ওয়েব সাইটগুলোর ভাষা হচ্ছে ইংরেজী । যারা এই লাইনে কাজ করেন তাদের জন্য ইংরেজী ভাষা জানাটা খুবই জরুরী । যারা বিদেশে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন আর যারা দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই শুধু পার্থক্য এই যে কেউ সরাসরি আয় করছে আর কেউ ভার্চুয়ালি আয় করছে ।

লক্ষ একটাই বৈদেশিক মুদ্রা আয় । যেহেতু এটা কম্পিউটার বিষয়ক কাজ তাই ইংরেজী ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই । আবার অনেক সময় অন লাইনে থেকে বায়ারদের সাথে সরাসরি কথা বলতে হয় এবং এদেশ থেকে কাষ্টমার সার্ভিস প্রদান করতে হয়, যা ইংরেজী ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব নয় । এখন কথা হল কিভাবে এই ভাষার ত্বরিত অগ্রগতি সম্ভব । আমি কয়েকটি দেশের কথা জানি যারা অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সমকক্ষ না হলেও ইংরেজী শিক্ষায় আমাদের তুলনায় অনেক এগিয়ে যেমন নেপাল, ভূটান ।

এর মূল কারনটা কি ? কারনটা হল তাদের দেশের প্রাইমারী শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ধাপ পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থা ইংরেজী পদ্ধতিতে চলে । শিক্ষকরা পাঠ দেন ইংরেজীতে এবং লেখতেও হয় ইংরেজীতে । সকল বই ইংরেজী মিডিয়ামের শুধুমাত্র নিজেদের দেশীয় ভাষার একটা বই আছে । তারা গণিত, বিজ্ঞান, সমাজ, ধর্ম সবই পড়ে ইংরেজীতে । এবার যদি আমরা মালদ্বীপ এর দিকে নজর দেই সেখানকার আয়ের মূল উৎস পর্যটন শিল্প ও সামুদ্রিক সম্পদ ।

সে দেশে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য আর কোন ব্যবস্থা নেই, উচ্চ শিক্ষার জন্য তারা দেশের বাইরে যায় । মালদ্বীপের ছেলে বুড়ো সবাই আপনার সাথে অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলে যাবে অথচ তারা নিজেদের ভাষাতেও সুপন্ডিত । এর কারণ সেখানেও ইংরেজীর ব্যপক অনুশীলন । একই ব্যবস্থা শ্রীলংকা এবং কাশ্মীর এর ক্ষেত্রেও । আজকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে সরব্বোচ্চ রেজাল্ট করার পরও ইংরেজীতে অদক্ষ থেকে যাচ্ছে ।

না পারছে তারা সাবলীল ভাবে ইংরেজীতে কথা বলতে না পারছে বুঝতে । এর কারনটা কি? এর কারনটা হল বাংলা ভাষা বিষয়ক বুদ্ধিজীবিদের ইংরেজী ভাষার প্রতি একটা নেতিবাচক আলোচনা এবং আমাদের শিক্ষক ধেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পরযন্ত ইংরেজীর প্রতি একটা অহেতুক ভয় ও অনুশীলনের যথেষ্ট অভাব । এই করুন অবস্থা হতে কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদের বুদ্ধিজীবিদের এগিয়ে আসতে হবে । আমি বাংলা ভাষা বিষয়ক বুদ্ধিজীবিদের দিকে আলোকপাত করতে চাই যদিও আপনারা ইংরেজী সাহিত্যের ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন এবং স্ক্রিপ্ট লিখছেন তবে কেন আবার আপনারাই আপনাদের নিজেদের সন্তানদের ইংলিস মিডিয়ামে পড়াচ্ছেন এবং দেশের বাইরে পড়াশুনার জন্য পাঠাচ্ছেন । এটা কতখানি যুক্তিযুক্ত ও বৈধ তা আমরা বুঝিনা ।

আর যদি সেই সকল তথাকথিত দেশপ্রেমিক ও ভাষাপ্রেমিকদের মত ইংরেজীর প্রতি হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে না পারেন তবে এটা নিশ্চিত করুন আমাদের দেশের সকল প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ক পড়াশুনা এবং স্বাস্থ বিষয়ক পড়াশুনা যেন বাংলাতে হয়, যাতে সদ্য পাশ কৃত ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রছাত্রীদের হোচট খেতে খেতে খাবি খেতে না হয় । সেই সাথে আমাদের দেশের ইন্টারনেটর ওয়েব পেজ থেকে শুরু করে, অপারেটিং সিষ্টেম, সকল সফটওয়ার যেন বাংলা ভাষাতে হয় এবং একশত ভাগ নিশ্চিত করুন আমাদের দেশ থেকে কেউ অন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে যাবে না বা চিন্তা করবে না সে পরিমান কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ সৃষ্টি করুন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।