আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Mitochondrial Eve কিংবা শাঁইজীর কাননের কামিনীরা

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ কুষ্ঠিয়ার আখড়াবাড়ির উঠোনে সাদা শাড়ি পরা বাউলানিরা দল বেঁধে গাইছেন লালনের এক নিগূঢ় তত্ত্বগান: মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা। নিগূঢ় বিচারে সত্য গেল তাই জানা। এ দুটি চরণে আমাদের অনেকেরই Mitochondrial Eve তত্ত্বটির কথা মনে পড়তে পারে।

সাম্প্রতিক জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি চিত্তাকর্ষক আবিস্কার এই Mitochondrial Eve তত্ত্বটি। প্রচন্ড আলোরণ তোলা এই তত্ত্বটি বলে যে: জীবিত সব মানুষের উদ্ভব একজন নারী থেকে হয়েছে । Mitochondrial Eve তত্ত্বটি সম্পর্কে মূলের কথাগুলি পাঠ করা যাক: In the field of human genetics, Mitochondrial Eve refers to the matrilineal "MRCA" (most recent common ancestor). In other words, she was the woman from whom all living humans today descend, on their mother's side, and through the mothers of those mothers and so on, back until all lines converge on one person. Because all mitochondrial DNA (mtDNA) is generally passed from mother to offspring without recombination, all mitochondrial DNA (mtDNA) in every living person is directly descended from hers by definition. Mitochondrial Eve is the female counterpart of Y-chromosomal Adam, the patrilineal most recent common ancestor, although they lived thousands of years apart. বর্তমান কালে বেঁচে থাকা মানুষের উৎসে একজন নারী -এমন তথ্য আমাদের বিস্মিত করে বৈ কী। তবে মধ্যপ্রাচ্যের প্রচলিত সৃষ্টিতত্ত্বের বিপরীতে সৃষ্টিকর্তা নারীর মাধ্যমে খোদ মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন- এমন একটি নারীকেন্দ্রিক ধারণা দীর্ঘকাল ধরে মাতৃতান্ত্রিক বাংলায় প্রচলিত রয়েছে। এবং এই ধারণাটি প্রায়শ মারেফাতি এবং বাউল গানের মাধ্যমে প্রচারিত হয় বৈ কী ।

যেমন মামুন নদীয়ার রচিত একটি গানে নারীকেন্দ্রিক বর্ণনা রয়েছে। গানের শুরুটা এরকম: শাঁইজীর ওই নয়নকোণে ফুলের কাননে কত না কামিনী ফোটে রে রসিক মোরা (মওলা?) কেলে ভ্রমরা গোপনে ফুলের মধু খাইল কিশোরী শাঁইজী, অর্থাৎ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা। তাঁরই কাননে (অর্থাৎ বাগানে) কামিনী (নারী) ফুটেছে । কেন? কারণ শাঁইজী নারীর মাধ্যমে মানবজাতি সৃষ্টি করবেন। রসিক মোরা (মওলা?) কেলে (খেলে) ভ্রমরা গোপনে ফুলের মধু খাইল কিশোরী রসিক মওলা অর্থাৎ শাঁইজী নিজেই ভ্রমররূপে নারীর ভিতরে সৃষ্টিবীজটি বপন করছেন।

এভাবে ‘গোপনে ফুলের মধু খাইল কিশোরী । ’ কিন্তু, গোপনে কেন? কেননা, সৃষ্টিমুহূর্তটি কেউই অবলোকন করেনি। আর এই কিশোরী কে? এই কিশোরী হল শাঁইজীর বাগানের নারী। আসলে এই পুরোটাই রূপক-যা তত্ত্বাকারে প্রকাশিত। লালন এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেছেন তাঁর একটি গানে: মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা।

নিগূঢ় বিচারে সত্য গেল তাই জানা। পুরুষ পরওয়ারদিগার অঙ্গে ছিল প্রকৃতি তার প্রকৃতি প্রকৃতি সংসার সৃষ্টি সবজনা। নিগম খবর নাহি জেনে কে বা সে মায়েরে চেনে। যাহার ভার দীন দুনিয়ার দিলেন রাব্বানা। ডিম্বু মধ্যে কেবা ছিল বের হয়ে কারে দেখিল লালন কয় সে ভেদ যে পেল ঘুচল দিন-কানা।

হয়তো এ সাদৃশ্য নিছকই কাকতালীয় ঘটনা। Mitochondrial Eve তত্ত্বটির সঙ্গে আদতে বাংলার নারীকেন্দ্রিক ভাবদর্শনের সঙ্গে সেভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। তবে In other words, she was the woman from whom all living humans today descend, on their mother's side, and through the mothers of those mothers and so on, back until all lines converge on one person... এই কথায় বাংলার বাউলসাধকগন বিস্মিত নাও হতে পারেন। কারণ তারা যেন জানতেন যে- বিজ্ঞান একদিন এমনই এক নারীবাদী প্রগাঢ় সত্য আবিস্কার করবেন ... কারণ বাংলার বাউলসাধকদের প্রাণপুরুষ ফকির লালন শাহ তো সে সত্য উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি দ্বিধাহীন চিত্তে গানের ভিতর দিয়ে প্রকাশ করেছেন: মায়েরে ভজিলে হয় তার বাপের ঠিকানা। নিগূঢ় বিচারে সত্য গেল তাই জানা।

কিন্তু গানের সত্য কি সত্য? হ্যাঁ। বাংলায় গানের সত্যই সত্য। কেননা, গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি/ তখন তারে চিনি আমি তখন তারে জানি ...(রবীন্দ্রনাথ) Mitochondrial Eve ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.