আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Genre- হরর, ক্রাইম।

বিকট ইদানিং আমার ছেলের সাথে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে একটা করে হরর ফিল্ম দেখা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার ছেলের বয়স এখন তেরো। হলিউডি হররগুলো অবশ্য বেশিরভাগই 'R' রেটিংয়ের। সেক্স-ভায়োলেন্স দিয়ে ভরা। সেক্সের দৃশ্যগুলো টেনে দেই।

ভায়োলেন্স বেশ আয়েশ করে দেখি। প্রথম যেদিন সে আব্দার ধরলো "বাবা ভূতের ছবি দেখবো!" সেদিন আমি সচেতন অভিভাবকের মতই ওর বয়স, শিশু মনস্তত্বের সাথে সহিংসতার সংঘাত প্রভৃতি বিশদভাবে চিন্তা করে একটা বি গ্রেডের হিন্দি মুভি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ওটা সে পছন্দ করে নি। আমি নিজেও বেশিক্ষণ দেখতে পারি নি। ও ঘুমে ঢলে পড়ার পরে বিছানায় দিয়ে এসে ডিভিডি প্লেয়ার বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

তখন তার বয়স ছিলো এগারো। মাঝখানে দুই বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। ওর মা মারা গেছে দুর্ঘটনায়। কত করে বলেছিলাম পিছলা ছাদে বেশি ধারে যেও না! শোনেনি। শোনে নি আমার কথা।

আর আমার ছেলেটা, যে অন স্ক্রিন বিভৎস দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত, বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, ওর মায়ের রক্তাক্ত লাশটা দেখে শোক প্রকাশ করবে কী, নিমিষেই অজ্ঞান! তারপর অনেকদিন সে স্বাভাবিক আচরণ করে নি। মাতৃশোক, নাকি চোখের সামনে চরমতম ভায়োলেন্স ভিকটিম দেখা, কোনটা তার ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিলো জানি না। তবে সে একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলো। তারপর একদিন সে আবার আবদার করে উঠলো "বাবা, হরর মুভি দেখবো"। আমি তাকে যেকোন কিছু দেয়ার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম।

গত কিছুদিন তাকে খেলনা, রঙপেন্সিল, কমিকস, আরো কত কিছু সেধেছি, যেন তার মন ভালো হয়। কিন্তু সে মৌন অসম্মতিতে সবকিছু নাকচ করে দিতো। সাইকোলোজিস্টের কাছে নেবার আগে আমি তাকে সময় দিতে চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। শেষতক হাল ছেড়ে দিয়ে যখন মেডিকেল ট্রিটমেন্ট দেয়াটাই একমাত্র সমাধান মনে হচ্ছিলো, তখনই সে কথা বলে উঠলো। সেদিন রাতে একটা ফ্রেঞ্চ হরর দেখলাম।

নাম Inside. মুভিটা দারুণ ছিলো। আ রিয়াল ক্রিপি ওয়ান। সেদিনের পর থেকে হরর মুভি দেখাটা আমাদের রুটিন হয়ে গেলো। তবে ভালো ভালো সব হরর মুভি দেখা শেষ হয়ে গেছে। বি গ্রেডের স্ল্যাশার দেখতে ভালো লাগে না।

মুভিস্টোরে গেলে আগে ওদের সেলসম্যান একগাল হাসি নিয়ে এগিয়ে আসতো, ইদানিং দেখেও না দেখার ভান করে। কী করবে! ওদের স্টক শেষ! আমি আর আমার ছেলে মিলে সব দেখে ফেলেছি। আজ রাতে কোন মুভি দেখা হবে না। মুভিস্টোরে যাওয়া হয় নি। আর একথাটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন, ছেলেকে আমি হরর এ্যাডিক্ট করে ফেলছি কী না।

এক রাত মুভি না দেখলে কিছু হবে না। এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। মুভি দেখা ছাড়াও অনেক কাজ আছে। এই আসক্তি দূর করা জরুরী। "আনো নি?" "নাহ আজকে মুভি না দেখে আমরা অন্য কিছু করি কেমন?" "যেমন?" "আসো টিভিতে মজার কোন প্রোগ্রাম দেখি" "না।

টিভি সাক্স!" হরর ছবি বেশি দেখার প্রভাবে কী অবলীলায় ইংরেজি স্ল্যাং বলে বেড়ায় আজকাল! তবে ওকে এজন্যে দোষারোপ না করে অন্য প্রক্রিয়ায় এগুতে হবে ধীরে ধীরে। এই অল্প বয়সেই ওর মধ্যে উদ্দাম ভায়োলেন্সের বীজ রোপিত করে দিয়েছি কী না কে জানে! এখন থেকে ওকে আরো বেশি সময় দিতে হবে। গল্প করতে হবে। বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। "আচ্ছা, টিভি বাদ।

আজকে রাতে আসো গল্প করে কাটাই। কালকে তো স্কুল বন্ধ! রাত জাগতে পারো, সমস্যা নেই। " "ঠিক আছে!" মনে হল নিতান্তই অনিচ্ছায় সম্মতি জানালো। রাতের খাবার শেষে আমরা বিছানায় শুলাম একসাথে। "বাবা, আজকে কি তুমি আমার সাথে শোবে?" "তুমি কী তাই চাও?" "আমি তো অনেককিছুই চাই, আমার চাওয়াতে কী এসে যায়!" আহা! ওর মধ্যে এত অভিমান জমা ছিলো তা তো জানতাম না! ওর কোন চাওয়াই তো অপূর্ণ রাখি না।

তারপরেও কেন এমন বলছে? "তুমি তো কিছু চাওই না। খালি এক হরর মুভি দেখার আব্দার। এখন থেকে অন্যকিছুও চাইবে ঠিক আছে? তুমি চাইলে তো আমার ভালোই লাগবে। " আমি ওর রেশম নরম চুলগুলোতে সস্নেহে হাত বুলিয়ে দিই। কিন্তু ও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না।

"ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?" "কেন ভয় পাচ্ছো? হাহাহাহাহাহাহাহাহা!" ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, কিন্তু ওর এ ধরণের প্রশ্ন আর হঠাৎ হাসিতে কিছুটা চমকে উঠলাম। "হরর মুভিগুলো তোমার মাথা খেয়েছে। নাহ, এখন থেকে ঐসব দেখা সম্পূর্ণ বন্ধ" "কাম অন বাবা! ইউ কান্ট টেক আ প্র্যাকটিকাল জোক? ইউ আর আ ফাকিং কান্ট!" মেজাজ চড়ে গেল আমার। প্র্যাকটিকাল জোক করছে ভালো কথা, কিন্তু বাবার সাথে এ কিরকম শব্দ ব্যবহার করছে! হ্যাঁ, এটা ঠিক যে হরর মুভিগুলোতে এরকম শব্দ প্রচুর থাকে, আমরা একসাথে দেখিও সেসব। তার মানে এই না যে... "স্যরি বাবা।

আর বলবো না। বাট হোয়াই ইউ ডিডন'ট সে স্যরি টু হার?" "আমি কাকে স্যরি বলবো!" "দ্যাট ওয়াজ জাস্ট সাম র‌্যান্ডম টকিং। তোমার যদি কাউকে স্যরি বলার থাকে তো বলবে, নাহলে না!" "তোমার কথাবার্তা হেঁয়ালির মত শোনাচ্ছে" "আমাদের সময়টা কিন্তু ভালো কাটছে, তাই না? স্কুল নিয়ে কথা বলার চেয়ে এসবই ভালো!" "তুমি ভারি অদ্ভুত হয়ে গেছো। " "মা মারা যাবার পর থেকে?" "হয়তো বা। কিন্তু সেসব কথা থাক" "আচ্ছা থাকুক।

জলি আন্টি কেমন আছে?" আমার গলা বেয়ে চিকন ঘামের ধারা বইতে লাগলো। এ ছেলে নির্ঘাৎ কিছু জানে। এত করে গোপন করার চেষ্টা করি, কিন্তু এসব কথা কি আর চাপা থাকে? জলির সাথে আমার প্রণয় সম্পর্কিত ব্যাপার জানলেও অবশ্য কিছু এসে যায় না। নির্বান্ধব পুরুষ আর কতদিন একা থাকবে? জীবনটা তো আর হরর মুভি না! রোমান্টিকতারও দরকার আছে। "অনেক রাত হয়ে গেছে।

ঘুমাতে যাও এখন। " "কিছু কী এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছ বাবা?" মিটমিটিয়ে হাসছে সে। নাহ, আমি ভেবে দেখলাম, আমি কোন অপরাধ করছি না। ও যখন নিজেকে এতটাই স্মার্ট ভাবে আর অকপট হতে চায়, তবে তাই হোক! আমি আমার পূর্বে ভাবনাকৃত অংশটিই দ্বিধাহীনভাবে বলে ফেললাম। "দেখো, তোমার মায়ের কোন অমর্যাদা আমি করি নি কখনও, কিন্তু তার মানে এই না যে আমাকে সারাজীবন একা থাকতে হবে।

জীবনটা তো আর হরর মুভি না! রোমান্টিকতারও দরকার আছে। বড় হও বুঝবে" "গুড নাইট বাবা" "গুড নাইট!" ও আর কোন ঝামেলা করলো না দেখে আমি স্বস্তি পেলাম। পরের দিনটা খুব ব্যস্ত কাটলো। অফিসে কাজের চাপ ছিলো প্রচুর। জলির সাথেও দেখা করলাম অফিস শেষে।

"ববি আমাদের ব্যাপারটা জেনে গেছে" ওকে বললাম। "কীভাবে জানলো!" ওর ডাগর কালো চোখ জুড়ে বিস্ময়। "যেভাবেই হোক জেনেছে। তবে সেটা ব্যাপার না। ও ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে।

আর আমিও বুঝিয়েছি। " "কী বুঝিয়েছোওওও!" "এত ঢং করে কথা বল কেন? যা বুঝানোর বুঝিয়েছি। " "আচ্ছা তোমাদের ব্যাপার তোমরা বোঝো। আমি কে? কেউ না!" নাহ, জলির ওপর রাগ করে থাকা যায় না। আমি ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে ঠোঁট রাখলাম।

ও খলবলিয়ে হেসে উঠলো! আহা সুগন্ধী নারী! ববির মায়ের গায়ে সুগন্ধ ছিলো না। ছিলো শুধু বাসনপাতির গন্ধ। আর ডিমের গন্ধ, সাবানের গন্ধ। ভাবতে গিয়ে আমি চমকে উঠি। অর্বাচীনের মত আশেপাশে তাকাই ববি আছে কী না এই ভয়ে! ধুৎ খামোখাই ভাবছি এসব।

ববির মা যেদিন ছাদ থেকে পড়ে মারা গেলো, সেদিন আমাকে কিছুই করতে হয় নি। আমি তার সাথে ছিলামও না। তবে থাকার কথা ছিলো। প্ল্যানটা ওভাবেই সাজিয়েছিলাম। বর্ষার দিন।

পুরোনো হয়ে যাওয়া স্ত্রী। হাস্যোচ্ছল জলি। পিচ্ছিল ছাদ। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি যে আমাদের আসলেই কিছু করতে হয় নি। অসতর্ক মহিলা নিজের থেকেই পড়ে গিয়েছিলো! পড়ে থেৎলে গিয়েছিলো।

কী বিভৎস! রিয়্যাল হরর। জলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি মুভিস্টোরে গেলাম। আজকে সেলসম্যান একগাল হাসি নিয়ে আমার কাছে এলো। নতুন চালান এসেছে। আমি বেছেবুছে কয়েকটা নিলাম।

"আজ রাতে হরর মুভি না দেখে কালকের মত গল্প করে কাটালে কেমন হয় বাবা?" ববি জিজ্ঞাসা করলো। "কালকের মত" গল্প করার কোন ইচ্ছাই আমার ছিলো না। আমি ওকে প্রলুদ্ধ করি, "আজকের ছবিগুলো কিন্তু দারুণ। স্প্যানিশ মুভিটার নাম শোনো নি, Tesis? ওটা নিয়ে এসেছি। আরো দেখো, আমি ডিভিডির ব্যাগটা তার কাছে গছিয়ে দিই।

"আচ্ছা দেখবো। তার আগে আসো কিছুক্ষণ গল্প করি" "ওকে!" আমি নিমরাজি হলাম। কালকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হরর মুভি ঝেঁটিয়ে বিদায় করব ওর মাথা থেকে। অথচ আজকেই আমি ওর অস্বস্তিকর, বুদ্ধিদীপ্ত, হেঁয়ালীপূর্ণ আচরণের থেকে রেহাই পেতে ডিভিডি কিনে আনলাম কতগুলো, এখন আবার দেখার জন্যে সাধছি! "কথা খুঁজে পাচ্ছো না বাবা? আচ্ছা লেটস লিসেন সামথিং ফানি! আমি না একটা পুরোনো দিনের বাংলা গানের প্যারোডি করেছি। শুনবে?" যাক! প্যারোডি তাও ভালো।

আমি সাগ্রহে বলি, "হ্যাঁ শুনবো, বল বল!" "এই পিছলা ছাদে একলা হাঁটা বড়ই অসচেতন কবে ঠেলা দিবা আমি হারাবো যে নিয়ন্ত্রণ!" হি হ্যাজ স্টার্টেড প্লেয়িং হিজ ডার্টি গেইম এগেইন! "স্টপ ইট! ফর ফাকস সেইক!" "কী হয়েছে বাবা? এটা জাস্ট একটা প্যারোডি ছিলো। নাথিং এলস! আর কাল তুমি আমার স্ল্যাং ইউজ করাতে আহত হয়েছিলে, যদিও তা বলনি, কিন্তু আমি খুব বুঝতে পেরেছিলাম। আজ তুমিই সেটা করছ? হোয়াটজ রং বাবা?" তার কন্ঠে নিখাঁদ বিস্ময়। "ওহ, তুমি তো কাঁপছো রীতিমত। স্যরি বাবা।

প্যারোডি'টার নিম্নমান হয়তো তোমাকে আহত করেছে। নাও এক গ্লাস পানি খেয়ে নাও" এক গ্লাস পানি আমার সত্যিই খুব দরকার ছিলো। আমি আসলেই কাঁপছি। গলা শুকিয়ে কাঠ! "খেয়ে নাও বাবা, এরপর আমরা মুভি শো শুরু করব" "আজকে বাদ দাও। আমার শরীর ভালো লাগছে না" "ওকে বাবা।

সি ইউ টুমরো। গুডনাইট!" পরেরদিন কোনকিছুতেই আমার মন বসছিলো না। খুব অস্থির লাগছিলো। অফিসের মধ্যেই সন্তর্পণে বাথরুমে গিয়ে জলিকে ফোন করে চাপা গলায় বললাম, "জলি, ও আরো বেশি কিছু জানে!" "কে কী জানে!" এই গাধী মহিলাকে কোনকিছু একবার বললে বুঝবে না। ইচ্ছা করছিলো চিৎকার করে গালাগাল করি।

কিন্তু নিজেকে শান্ত রাখলাম প্রাণপন প্রচেষ্টায়। "ববি। ববি ওর মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারটা জানে" "ও মা! তা কেন জানবে না? ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলো। এটাতো সবাই জানে। " "আমাদের প্ল্যান..." "চুপপপপ! গাধার মত কথা বল না।

প্ল্যান অনুযায়ী কিছু হয় নি। যা হবার এমনিতেই হয়েছে। এখন সবকিছু ভজঘট করে দিও না!" আমি ফোন রেখে দিলাম। জলির কন্ঠের শীতলতা আমাকে জমিয়ে দিচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে এই অফিস, টেলিফোন, রাস্তাঘাট সবই হরর উপাদান! নাহ আর কোন হরর ছবি না।

আজকে মুভিস্টোরে যাব না। কোন হরর ছবি কিনবো না। আর ববি মাতবরি করতে গেলে দেবো এক চড়। "আনো নি আজকে?" "না" "হাহা! তা অবশ্য এনে কী করবে! জীবনটাই তো একটা হরর সিনেমা তাই না?" "শাট আপ!" "স্যরি বাবা, আমি ফিলোসফি চোদায় ফেলছি। উপস! এই দেখো আবারও স্ল্যাং ইউজ করলাম।

আজকেও কী তোমার শরীর খারাপ করছে? ঘুমিয়ে যাবে? গল্প করবে না? কালকের ফিল্মগুলো কিন্তু দেখা বাকি এখনও!" আমি আর নিতে পারছিলাম না ওর তীর্যক বাক্যবান। সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। শরীর একদম ছেড়ে দিয়েছে। "বেশি হাঁসফাঁস লাগছে বাবা? জানালা খুলে দিই? উফ একদম বাতাস নেই। চল ছাদে যাই।

যাবা?" "এত রাতে ছাদে যায় কেউ?" "কেন তুমি ভয় পাচ্ছো?" "ভয় পাবো কেন!" ইটজ জাস্ট নট দ্যা প্রপার টাইম!" "তা অবশ্য ঠিক বলেছো বাবা। ছাদ তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। একদিন গেলেই হল। হরর মুভিও পালিয়ে যাচ্ছে না। একদিন দেখলেই হল।

সবকিছু কী সহজ, তাই না? নাকি আমরা সহজ বলে ভুল করি? যেমনটা তুমি করেছিলে। তুমি তো তেমনটাই ভেবেছিলে বাবা, তাই না?" "আমি কিচ্ছু করিনাই, কিচ্ছু না। বিলিভ মি!" "উপস! তুমি কিছু করেছিলে এমনটা কেন ভাবছো বলতো? আর বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রসঙ্গই বা কেন আসবে? যাও বাবা, শুয়ে পড়। " আমি ওর কাঁধে ভর করে বিছানায় যাই। "ঘুমোনোর আগে কিছু পড়বে বাবা? সামথিং রিলাক্সিং...একটু অপেক্ষা কর" সে আমাকে একটা পুরোনো ট্যাবলয়েড এনে দিলো।

যেগুলোর শিরোনামে বড় বড় করে খুন খারাপির কথা লেখা থাকে। আমি অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও শিরোনামে চোখ বুলোতে গিয়ে দেখলাম লাল রঙের হরফে লেখা- "ঢাকার সবুজবাগে পুত্রের হাতে নৃশংসভাবে পিতা নিহত" আমি ঝট করে ববি'র দিকে তাকালাম। "গুডনাইট, বাবা!" ও চলে গেলো। আমার মাথায় ঘুরতে লাগলো সবুজবাগ, ঢাকা, খুন। এলাকাটা মিলে গেছে।

বাবা-ছেলে একসাথে থাকতো এটাও মিলে গেছে। এমন কী বয়সেও অদ্ভুৎ সাদৃশ্য। ববি আমাকে কেন এটা দিলো? কী বাজে ভাবছি! স্রেফ কাকতালীয় ব্যাপার। যেমনটা ছিলো আমার আর জলির পরিকল্পনার সাথে ববির মা'র দুর্ঘটনাটা মিলে যাওয়া। এটাও কী মিলে যাবে! টেলিফোনটা ভাইব্রেট করছে, জলির ফোন।

ও কেন যেন কোন কারণ ছাড়াই ফোন করে হিহিহিহিহি করে হাসছে। ও কী বুঝতে পেরেছে? আমার দুর্দশা দেখে হাসছে? দরজায় কড়া নাড়ছে কে? ববি? কী চায়? কী চায় সে! কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারি আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন ঘটেছিলো। জলির ফোন আসে নি। ববিও দরজা ধাক্কায় নি। চারিদিকে সব ভয়ের উপাদান।

সব হরর এলিমেন্ট ঘিরে ধরেছে আমাকে। আমি জানি এখন থেকে ববির আর হরর মুভি দেখে রাত পার করতে হবে না। রিয়্যাল লাইফ হরর এর মজা পেয়ে গেছে ও... পরেরদিন সকালে বের হবার সময় আমাকে সে বলল, "এখন থেকে আমরা হরর মুভির বদলে ক্রাইম ড্রামা দেখবো, ওকে বাবা?"  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।