আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । টানা ৯ ঘন্টার বাস জার্নি শেষে সাথে থাকা ৩ ব্যাগ সামলে গন্তব্যের পথে চলতে শুরু করলো মনজুর । যখন বাস থেকে নামলো তখন তার বাড়িতে ঝিঝি পোকার ডাক শোনার সময় । মেজাজের সাথে সাথে ঢাকার আবহাওয়াও গরম । দমবন্ধ করা এই আস্তাকুড়ের শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কিভাবে বসবাস করে বোধে আসেনা তার ।
ছিপছিপে শরীরের , লম্বা-চওড়া গঠনের মনজুরের নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে । সাথে ৩ ব্যাগের বোঝা নিয়ে কুলিয়ে পারছেনা । যাবার সময় এতোবার করে মাকে বলেছিলো তবুও শেষ রক্ষা হলোনা । জিনিসপত্র ভরে ব্যাগে দিয়ে বসে আছে । আরো বেশ কিছুটা পথ এ নিয়েই চলতে হবে মনজুরের ।
আশেপাশে কোন যানবাহনের দেখা পাচ্ছেনা । পাবে এমন আশাও করেনা । কিছু দূর থেকে হইহই শুনলেও তাতে মনোযোগ দিলোনা । ঢাকা শহর মানেই অফুরন্ত ক্যায়স । এখানে ক্যায়সে মন দিতে গেলেই সমূহ বিপদ মনজুর বিলক্ষণ জানে ।
তার এবারকার ঢাকা সফরের উদ্দেশ্য অন্যান্যবারের তুলনায় সম্পূর্ণই ভিন্ন । তার মতই ছিমছিমে , দুবলা-পাতলা এক রমণীর টানে সে ঢাকা ছুটে আসতো । মাস তিনেক হলো সেই পর্ব চুকে গেছে । বছর ছাব্বিশের এই মনজুর এখন নিজের জন্যে বাঁচতে শিখছে । সেই নিমিত্তেই তার এবারে ঢাকায় আসা ।
চাকরীর ইন্টারভিউটা দিয়ে দিয়েছে । সাথে ক্যাশ তেমন নেই বলে উপরি হিসাবে ফ্রেশ মাছ গছিয়ে দেবে । মনজুর ঝিঝি পোকার কথা ভাবে , আগামী দুই বছরের সম্ভাব্য চিত্রের কথা কল্পনা করে আন্দোলিত হয় । ছেলের জন্য তার হাইস্কুল মাস্টার বাপের জমি বেঁচে দেওয়ার কথা চিন্তা করে । মনজুর স্বার্থপর হয় , প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠছে মনজুর ।
আশেপাশের গাছের পাতাগুলোতে এক ফোঁটা বাতাসও নেই । একটা কুকুর চিৎকার করেই আবার থেমে গেলো । কঞ্চি হাতে বছর পাঁচেক এক বাচ্চাকে ছুটে যেতে দেখলো সে । বৃষ্টি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে । হাতে এতোগুলো ব্যাগ নিয়ে সামনের রাস্তা কিভাবে পার হবে চিন্তা করতে করতে পা পিছলে যাবার উপক্রম হয় মনজুরের ।
এদিকে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসতে থাকে ক্রমশ । মনজুর এখন ভিন্ন ঘোরে আছে । কাঙ্খিত ঠিকানায় পৌঁছাবার আগ পর্যন্ত তার সম্বিত ফিরে আসবেনা নিশ্চিত । মনজুর বড্ড আত্মকেন্দ্রিক হতে শিখছে , মনজুর পেছনে কখনো না তাকিয়ে চলার কথা কল্পনা করছে । বাবার জমি বেঁচে দেওয়ার কথা পুনরায় মাথায় আসতে আসতে দূর থেকে হইহই আওয়াজ আসে ।
মনজুর প্রথমবারের মত এবারেও তাতে কান দেয়না । বিপত্তিটা ঘটে যায় এখানেই । মনজুর বোঝেনি , মনজুরেরা বিপদের আভাস বোঝেনা । ট্রমার শুরু এখানেই ।
মিথ্যা খুনের মামলায় ফেঁসে যাওয়া মনজুর জেলে বসে থাকা অবস্থাতেই একদিন খবর পায় তার অভিমানী বাবা মানুষের গঞ্জনা সহ্য করতে করতে একদিন আর পেরে উঠেনি ।
মনজুরের আর আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠার সুযোগ হলোনা । আচ্ছা তার অসাধারণ রান্নার হাতের অধিকারী মা কি এখন আর মাছ রান্না করে ? রান্না করলে সেই মাছ কি বাবা মুখে দিতে পারতো ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।