আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুফাস্সিরগণের মাযহাব, আহলে হাদীস ভাইদের প্রতি দাওয়াত ও প্রশ্ন

ইংরেজদের আগমনের আগে এই উপমহাদেশে ধর্মীয় বিভেদ ছিল না ইতিহাস সাক্ষ্য ইংরেজদের আসার আগে এই উপমহাদেশে কোন বাদশা ছিল না যে মাযহাবের বিরোধিতা করত। কোন ধর্মীয় কোন্দল ছিল না। টিপু সুলতান রহঃ, মোঘল সম্রাজ্যের সকল মোঘল বাদশা, শাহজাহান, ঘুরি, জাহাঙ্গীর, বাদশা যফরসহ সকলেই হানাফী মাযহাবী ছিল। আকবর সে নতুন ধর্ম উদ্ভাবন করার অপচেষ্টা করেছিল, সেও মাযহাবের ইমামদের বিরোধিতা করেনি। কাউকে গালি দেয়নি।

এ উপমহাদেশে যত মুসলিম হাকিম বংশীয়, যত গোলাম বংশীয় আর যত ঘুরি বংশীয়, আর যত খিলজী বংশীয়, সাদাত বংশীয়, তুঘলোক বংশীয়, আর সুরী অথবা মোগল বংশীয় বাদশা ছিল, সবাই ছিলেন সুন্নী হানাফী। এই দেশে ইসলাম, কুরআন-হাদিস আনয়নের ভাগ্য কেবল হানাফীদেরই ললাটেই আছে। সুতরাং নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানও একথা স্বীকার করে লিখেন যে, “যখন থেকে ইসলাম এ এলাকায় আসে, তখন থেকে হিন্দুস্তানের মুসলমানদের সার্বিক অবস্থা হল এই যে, যেহেতো অধিকাংশ লোক বাদশার মত-পথ এবং মাযহাবের অনুসরণকেই পছন্দ করে, একারণেই সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত তারা হানাফী মাযহাবেই প্রতিষ্ঠিত। আর এখানে এই মাযহাবের আলেম এবং ফারেগীনরাই বিচারক আর মুফতী ও হাকিম হয়ে থাকে”। (তরজুমানে ওহাবিয়্যাহ-১০) ৫৮৯ হিজরীতে সুলতান মুয়িজুদ্দীন সাম ঘুরী আসলেন।

আর দিল্লী পর্যন্ত পদানত করেন। সে সময় থেকে নিয়ে ১২৭৩ হিজরী পর্যন্ত আপনারা এই দেশের ইতিহাস পড়ে দেখুন। মাহমুদ গজনবী রহ. থেকে নিয়ে আওরঙ্গজেব পর্যন্ত, এমনকি সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ বেরলবী রহ. পর্যন্ত কোন গায়রে হানাফী গাজী, বিজেতা অথবা মুজাহিদ পাওয়া যাবেনা। কাশ্মীরের ব্যাপারে ঐতিহাসিক ফেরেস্তা লিখেন - “আমি দেখেছি এই দেশের সবাই ছিলেন হানাফী মাযহাবপন্থী”। (তারীখে ফেরেস্তা-৩৩৭) আর এর পূর্বে রাশেদী এর বরাতে তিনি লিখেন - “হযরত শায়েখ আব্দুল হক সাহেব মুহাদ্দেসে দেহলবী রহ. বলেন - ”اهل الروم وما وراء النهر والهند كلهم حنفيون،ط” অর্থাৎ মা ওরাউন নাহার এবং হিন্দের সবাই ছিলেন হানাফী”।

(তাহসীলুত তায়াররুফ-৪৬) আর হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহ. বলেন - “আহলে ইসলামের বড় অংশ ইমাম আবু হানীফা রহ. এর অনুসারী ছিল”। (মাকতুবাত-২/৫৫) শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহ. বলেন - “ সকল শহরের আর সকল দেশের বাদশা ছিল হানাফী। আর কাযী, অধিকাংশ শিক্ষক ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষ ছিল হানাফী” (কালিমাতে তায়্যিবাত-১৭৭) এছাড়াও তিনি লিখেন যে, অধিকাংশ দেশ এবং প্রায় শহরেই আবু হানীফা রহ. এর মাযহাব অনুসারী ছিল। (তাফহীমাতে ইলাহিয়া-১/২১২) আহলে হাদীস, ভ্রান্ত মতবাদী একটি ফিরক্বা ইংরেজদের আসার আগে এরকম কোন দল ছিল না যারা ফুক্বাহায়ে কিরামকে গালি দিত। ফুক্বাহাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখত।

ফিক্বহ সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করে পথভ্রষ্ট করেছে। মাযহাব বিরুদ্ধবাদী কেউ ছিলনা। এমন কেউ ছিল না যারা বলত কোন মুজতাহিদের দরকার নাই। কারো বুঝানোর দরকার নাই। কোন শিক্ষকের দরকার নাই।

গোটা পৃথিবীর মুসলিম এলাকায় সাধারণ মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি কোন্দল সৃষ্টি করার জন্য পায়তারা করে যাচ্ছে এই কথিত আহলে হাদীস দলটি। মুসলমানদের ঘরে ঘরে, এলাকায় এলাকায়, মসজিদে মসজিদে গিয়ে বলছে - “ তোমরা মুহাম্মদী না হানাফী? ” তাদের অনেকেরই ভাষ্যমতে তাক্বলীদ করা নাজায়েয, কুফরী, শিরকি, বিদয়াত, গোমরাহী ও পথভ্রষ্টামি। তারা বলে থাকে, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল এর মাযহাব অনুসরণযোগ্য নয়। অথচ দুনিয়ার প্রায় সমস্ত বড় বড় মুফাসসিরীনে কেরাম আর মুহাদ্দিসগণ তাদের জীবনে কোন না কোন মাযহাব অনুসরণ করে এসেছেন যা তাদের জীবনী সম্বলিত কিতাবাদির অনেক জায়গায় স্পষ্টভাবে লিখা আছে। তাই আমি এখানে যুগ যুগান্তর ধরে যেসব মুহাদ্দিসীনরা জন্মগ্রহণ করেছেন, যাদের কিতাবের দলিল আহলে হাদীসরাও দিয়ে থাকে, উনাদের মধ্যে কে কোন মাযহাব অনুসরণ করেছেন, তার কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি যাতে আহলে হাদীসদের মুখোশ কিছুটা হলেও উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ।

মুফাসসিরীনে কেরামের মাযহাব ১। তাফ্‌সীরে আহকামুল কুরআন প্রণেতা আবু বকর জাস্‌সাস্‌ (রহঃ) (মৃঃ ৩৭০ হিঃ) ২। তাফ্‌সীরে বাহরুল উলূম প্রণেতা নাছর বিন মুহাম্মাদ সামারকান্দী (রহঃ) (মৃঃ ৩৭৫ হিঃ) ৩। তাফ্‌সীরে মাদারিকুত তান্‌যীল প্রণেতা আল্লামা আব্দুল্লাহ্‌ বিন আহমাদ নাসাফী (রহঃ) (মৃঃ ৭০১ হিঃ) ৪। তাফ্‌সীরে রুহুল মাআ’নী প্রণেতা আল্লামা আলূসী (রহঃ) (মৃঃ ১২৭০ হিঃ) ৫।

সউদী আরবের রাবেতা কর্তৃক রাজকীয়ভাবে প্রকাশিত ছাফ্‌ওয়াতুত্‌ তাফ্‌সীর ৬। আহকামুল কুরআন প্রণেতা কুম্মী (রহঃ) (মৃঃ ৩০৫ হিঃ), উসমানী (রহঃ) (মৃঃ ১৩৯৪ হিঃ) সহ বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ যেমনঃ তাফ্‌সীরে আহমাদী, মায্‌হারী, ইরশাদুল আক্বলুস্‌ সালীম, তাজুত্‌ তারাজিম ইত্যাদির প্রণেতাগণও সবাই হানাফী মায্‌হাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ৭। আল্‌ অসীত প্রণেতা ইমাম ওয়াহিদী (রহঃ) (মৃঃ ৪৬৮ হিঃ) ৮। মাআলিমুত্‌ তান্‌যীল প্রণেতা ইমাম বগবী (রহঃ) (মৃঃ ৫১৬ হিঃ) ৯।

মাফাতীহুল গাইব প্রণেতা ইমাম রাযী (রহঃ) (মৃঃ ৬০৪ হিঃ) ১০। তাফ্‌সীরে বায়যাবী প্রণেতা ক্বাযী বায়যাবী (রহঃ) (মৃঃ ৬৮৫ হিঃ) ১১। লুবাব প্রণেতা আল্লামা আলাউদ্দিন খাযেন (রহঃ) (মৃঃ ৭৪১ হিঃ) ১২। আল্‌ বাহরুল মুহীত প্রণেতা ইবনে হাইয়ান (রহঃ) (মৃঃ ৭৪৫ হিঃ) ১৩। তাফ্‌সীরুল কুরআনুল আযীম প্রণেতা ইবনে কাসীর (রহঃ) (মৃঃ ৭৭৪ হিঃ) ১৪।

দুররে মানসূর প্রণেতা ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) (মৃঃ ৯১১ হিঃ) প্রমুখ ইমামগণ শাফেয়ী মায্‌হাবের ছিলেন। ১৫। আহকামুল কুরআন প্রণেতা ইস্‌মাঈল বিন আয্‌দী (রহঃ) (মৃঃ ৩৫৩ হিঃ), ইবনে আরাবী (রহঃ) (মৃঃ ৫৪৩ হিঃ) ১৬। আল্‌ মুহাররারুল ওয়াজীয প্রণেতা আবু মুহাম্মদ আন্দুলুসী (রহঃ) (মৃঃ ৫৪৬ হিঃ) ১৭। আল্‌ জামিউল আহ্‌কাম প্রণেতা ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭১ হিঃ) প্রমুখ মালেকী মায্‌হাবের ছিলেন।

১৮। কিতাবুল জাওয়াহির প্রণেতা আবদুল ওয়াহিদ সিরাজী (রহঃ) (মৃঃ ৪৮৬ হিঃ) ১৯। যাদুল মাসীর প্রণেতা জামালুদ্দীন বাগদাদী (রহঃ) (মৃঃ ৫৯৭ হিঃ) ২০। আল্‌ লুবাব প্রণেতা আবু হাফ্‌স উমর (রহঃ) (মৃঃ ৮৮০ হিঃ) ২১। আল্‌ ইসতিগনা বিল কুরআন প্রণেতা ইবনে রজব (রহঃ) (মৃঃ ৭৯৫ হিঃ) প্রমুখ হাম্বলী মায্‌হাবের ছিলেন।

( দেখুনঃ এ সমস্ত কিতাবের প্রচ্ছদ; উপরন্তু বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় আত্‌তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরীন লিহুসাইন যাহাবী, আত্‌ তাবক্বাতুল মুফাসসিরীন ) হাদীস সংকলকগণের মায্‌হাবঃ ১। ইমাম বুখারী (রহঃ) কে অনেকে মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে ক) শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহঃ) “ আল-ইনসাফ ”, পৃষ্ঠা : ৬৭ খ) আল্লামা তাজউদ্দীন সুবকী, “তবক্বাতুশ্‌ শাফেয়ীয়ার”, পৃষ্ঠা : ২/২ গ) গাইরে মুক্বাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আবজাদুল উলুম”, পৃষ্ঠা : ৮১০ উনারা ইমাম বুখারী (রহঃ) কে শাফেয়ী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন। ২। ইমাম মুসলিম শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।

( গাইরে মুকাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আল হিত্তার”, পৃষ্ঠা : ১৮৬ ) ৩। আল্লামা আনওয়ার শাহ্‌ কাশ্মীরী (রহ) “ফয়জুল বারী” - এর ১/৫৮ পৃষ্ঠায় ইবনে তাইমিয়্যার উদ্বৃত্তি দিয়ে ইমাম নাসাঈ এবং আবু দাউদকে (রহঃ) হাম্বলী মাযহাব অবলম্বী বলেছেন। অনুরূপভাবে গাইরে মুকাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আবজাদুল উলুম”, ৮১০ পৃষ্ঠায় উভয়কে হাম্বলী বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল ক্বায়্যিম (রহঃ) (মৃঃ ৭৫১ হিঃ) সুদৃঢ়ভাবে ইমাম আবু দাউদকে হাম্বলী বলেছেন। ( ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীনঃ পৃঃ ১/২৩৬ ) ৪।

ইমাম তিরমিযী সম্বন্ধে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী “আল-ইনসাফের” ৭৯ পৃষ্ঠায় মুজতাহিদ তবে হাম্বলী মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট এবং এক পর্যায়ে হানাফী বলেও উল্লেখ করেছেন। ৫। ইমাম ইবনে মাজাহ্‌কে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী “ফয়জুল বারী”-এর ১/৫৮ পৃষ্ঠায় শাফেয়ী বলে উল্লেখ করেছেন। ৬। ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ) (মৃঃ ৩২১ হিঃ) তো হানাফী মায্‌হাবের ‘ ব্যারিস্টার ’ হিসেবেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।

৭। ইমাম ইসহাক বিন রাহ্‌ওয়াইকে ইমাম সুবকী (রহঃ) হাম্বলী আর ইমাম কাশ্মীরী (রহঃ) হানাফী বলেছেন। ( তাব্‌কাতঃ পৃঃ ১/২৩২; ফয়যুল বারীঃ পৃঃ ৫৮ ) হাদীস ব্যাখ্যাকারগণের মায্‌হাব ১। বুখারী শরীফের বিশেষ-বিশেষ ব্যাখ্যাগ্রন্থের প্রণেতা, যেমনঃ ক) “ ফাত্‌হুল বারী ” প্রণেতা ইবনে হাজার আসক্বালানী - শাফেয়ী খ) উমদাতুল ক্বারী প্রণেতা বদরুদ্দীন আইনী - হানাফী গ) ইরশাদুস্‌ সারী প্রণেতা শিহাবুদ্দীন ক্বাসতালানী - শাফেয়ী ঘ) ফয়জুল বারী প্রণেতা আনওয়ার শাহ্‌ কাশ্মীরী - হানাফী ঙ) লামিউদ দারারী প্রণেতা রশীদ আহমদ গাংগুহী - হানাফী । (রাহীমাহুমুল্লাহু তাআ’লা) ২।

মুসলিম শরীফের বিশেষ-বিশেষ ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রণেতা, যেমনঃ ক) “ আল-মুফহিম ” প্রণেতা আব্দুল গাফের ফারেসী খ) “ আল মু’লিম ” প্রণেতা আবু আব্দুল্লাহ আল-মাযরী গ) ইকমালুল মু’লিম প্রণেতা ক্বাজী আয়ায ঘ) আল মিনহাজ প্রণেতা ইমাম নববী ঙ) ফাতহুল মুল্‌হিম প্রণেতা শিব্বির আহমাদ উসমানী প্রমুখ এবং নাসাঈ, আবু দাউদ, ত্বাহাবী, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের প্রবীণ ব্যাখ্যাকারগণ সবাই কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ ছিলেন। যা সর্বজন স্বীকৃত ও তাদের জীবনী গ্রন্থ সমূহে এবং অধিকাংশ কিতাবের প্রচ্ছদেই উল্লেখ রয়েছে। হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনীর লিখকবৃন্দের মাযহাব হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী সম্বলিত বিশেষ বিশেষ গ্রন্থ প্রণেতা, যেমনঃ ক) “ আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল ” প্রণেতা হাফেয আব্দুল গনী আল-মাক্বদাসী খ) এবং ৩৫ ভলিয়মে মুদ্রিত “ তাহযীবুল কামাল ” প্রণেতা হাফেয আবুল হাজ্জাজ আল মিযযী গ) ১২ ভলিয়মে মুদ্রিত “ ইকমালু তাহযীবিল কামাল ” প্রণেতা হাফেয আলাউদ্দীন মুগলতাঈ আল হানাফী ঘ) ২৫ ভলিউমে মুদ্রিত “ ছিয়ারু আলা’মিন নুবালা ” প্রণেতা হাফেয শামছুদ্দীন যাহাবী ঙ) ১২ ভলিউমে মুদ্রিত তারিখে বাগদাদ প্রণেতা খতীবে বাগদাদী চ) ৭০ ভলিউমে মুদ্রিত তারিখে দামেশক্ব প্রণেতা হাফেয ইবনে আসাকিরসহ তারাজীমের প্রায় পাঁচ শতেরও অধিক সমস্ত কিতাবেরই সংকলকগণ কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ বা অনুসারী ছিলেন। ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্‌হাবঃ ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ, হাদীসের জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজন স্বীকৃত ইমাম বিশেষত হাদীস যাচাই-বাছাই বা ইল্‌মুল্‌ জারহ্‌ অ-তা’দীলের অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্যাসাগর ইয়াহ্‌ইয়া ইবনে মঈন (রহঃ) অসীম জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি বল্গাহীন পথ পরিহার করে ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ করে চলতেন। এ সম্পর্কে তাঁর নিজের মত দেখুনঃ “ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য ক্বিরাআত হামযার ক্বিরাআত এবং গ্রহণযোগ্য ফিক্বহ ইমাম আবু হানিফার ফিক্বহ।

সকল মানুষকেও আমি এর উপর ঐক্যবদ্ধ পেয়েছি। ” ( তারিখে বাগদাদঃ পৃ – ১৩/৩৪৭ ) ইমাম ইবনে মঈন (রহঃ) এর মায্‌হাব সম্পর্কে ইমাম যাহাবী বর্ণনা করেনঃ “ ইয়াহইয়া ইবনে মঈন জারহ অ-তা’দীলের ইমাম এবং শীর্ষস্থানীয় হানাফীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ” -মা’রিফাতুল্‌ মুতাকাল্লাম ফীহিম…যাহাবীঃ পৃ – ৭, ছাপা, মিশর ১৩২৪ হিঃ ইবনে মঈনের প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম আহ্‌মাদ (রহঃ) বলেনঃ “ ইমাম ইবনে মঈন যে হাদীস সম্পর্কে জানেন না সেটি হাদীস নয়। ” বস্তুত ইমাম ইবনে মঈন হাদীসের বর্ণনাকারীর সত্যায়ন ও হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সত্যিই অতুলনীয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, অবশ্যই যাচাই-বাছাই করতঃ হাদীসের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ ও বিশুদ্ধ মায্‌হাব হিসেবেই তিনি হানাফী মায্‌হাবকে মনোনীত করেছেন।

অতএব, যারা বলে, হানাফী মায্‌হাব বিশুদ্ধ হাদীস পরিপন্থী, তাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহর ভয় নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। মুহাম্মদ ইব্‌নে আব্দুল ওহ্‌হাব নজ্‌দী (রহঃ) এর মায্‌হাবঃ লা-মায্‌হাবীরা দাবী করে থাকে যে, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব নজদীও লা-মায্‌হাবী ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন হাম্বলী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন এবং তিনি নিজেই স্বীয় মায্‌হাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। -দেখুনঃ আল-হাদিয়াতুস্‌ সুন্নাহঃ পৃ – ৯৯ সাথে সাথে চার মায্‌হাবের যে কোন একটির ত্বাকলীদ করা যাবে এবং এই চার মায্‌হাব ছাড়া অন্য কোন মায্‌হাবের অনুসরণ করা যাবে না বলেও তিনি মত প্রকাশ করেছেন। -তারীখু নাজ্‌দ-আলূসীঃ পৃ – ৫৪-৫৬; ছিয়ানাতুল্‌ ইনসানঃ পৃ – ৪৭১১ ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর মায্‌হাবঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) একজন যুগশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, আল্লামা ও বিখ্যাত কলম সৈনিক ছিলেন।

অসংখ্য রচনাবলী, ফাত্‌ওয়া ও সমকালীন জিজ্জাসার জবাব তাঁ মহাজ্ঞানের উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করে। আরব বিশ্বে তিনি আজও শাইখুল ইসলাম হিসেবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর গুণগ্রাহী ভক্তবৃন্দদেরকে প্রতারণার মানসে তথাকথিত আহলে হাদীস বা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্‌হাবীরা দাবি করে থাকে যে, ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ ও লা-মায্‌হাবী ছিলেন। আর সকল গাইরে মুক্বাল্লিদরা ইবনে তাইমিয়্যার ত্বাকলীদ করে এবং তাঁরই মায্‌হাব অনুসরণ করে থাকে। তাদের এ দাবী যদি মানা হয়, তাহলে প্রমাণিত হয় যে, লা-মায্‌হাবীরা মায্‌হাব মানে না বা ত্বাকলীদ করে না বলে জনসাধারণকে কেবল ধোঁকাই দিয়ে যাচ্ছে।

অথচ তারা নিজেরাই ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার তাক্বলীদ করে এবং তাঁরই মায্‌হাব অনুসরণ করে চলেছে। বস্তুত ইবনে তাইমিয়্যা গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্‌হাবী ছিলেন মর্মে কেউ কোন তত্ত্ব আদৌ পেশ করতে পারবে না। বরং এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইবনে তাইমিয়্যা ও তাঁর একান্ত শিষ্য ইবনুল ক্বাইয়্যিম উভয়ই হাম্বলী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর রচিত ৩৭ খন্ডে সমাপ্ত অমর গ্রন্থ ‘মাজমুয়াতুল ফাত্‌ওয়া’ এরই সাক্ষ্য বহন করে। লা-মায্‌হাবীদের অন্যতম পুরোধা ছিদ্দীক হাসান খানও ইবনে তাইমিয়্যাকে হাম্বলী মায্‌হাবের বলেই উল্লেখ করেছেন।

-দেখুনঃ আল-জুন্নাহঃ পৃ – ৩৮ অন্যদিকে লা-মায্‌হাবীরা যতই বলুক তারা ইবনে তাইমিয়্যাকে অনুসরণ করে, প্রকৃতপক্ষে তাও ভুল। শুধু বিতর্কিত কয়েকটি বিষয় ব্যতীত অসংখ্য-অগণিত বিষয় এমন রয়েছে, যেগুলোতে ইবনে তাইমিয়্যার সঙ্গে গাইরে মুক্বাল্লিদদের কোন মিলে নেই। উদাহরণস্বরূপ শুধু একটি বিষয় তুলে ধরছিঃ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) তারাবীহ্‌র নামায বিশ রাকআত সুন্নাত বলে উল্লেখ করেছেন। -মাজমুয়ায়ে ফাত্‌ওয়াঃ খঃ ২৩, পৃ – ১১২ পক্ষান্তরে লা-মায্‌হাবী বা আহলে হাদীস নামধারী নতুন ফেরকাটি সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে আট রাক্‌আত তারাবীহর নতুন মতবাদ প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পবিত্র মক্কা-মদীনার ইমামগণের মাযহাবঃ প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত চার মায্‌হাবের অনুসারীগণ চার ইমামের পিছনে ভিন্ন-ভিন্নভাবে জামাআতে নামায আদায় করেছেন।

হানাফী মায্‌হাবের অনুসারীগণ হানাফী মায্‌হাবের ইমামের পেছনে, মালেকী মায্‌হাবের অনুসারীগণ মালেকী মায্‌হাবের ইমামের পেছনে, এভাবে অপর দুটি মায্‌হাবের অনুসারীগণও তাঁদের স্ব-স্ব মায্‌হাবের ইমামের পেছনে নামায আদায় করতেন। এ ধারা হারাম শরীফে চলে আসছে প্রায় এক হাজার বছর নাগাদ। কিন্তু ১২১৮ হিজরীর ৮ই মুহাররম বাদশা সাউদ ইবনে আব্দুল আযীয তাঁর সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন। তিনি তখন তথাকথিত সংস্কারের নামে যেসব কাজ করেন, তন্মধ্যে একটি হল, তিনি হারাম শরীফে সকল মুসল্লীকে একই ইমামের পিছনে একই সাথে জামাআতে নামায আদায়ের নির্দেশ জারী করেন। ( তারীখে মামলাকাঃ পৃ – ২৫ ) উল্লেখ্য যে, তদানীন্তনকালে সমগ্র বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন।

তৎকালে সমগ্র বিশ্বের শত কোটি মুসলমানের জামাআতে প্রায় অধিকাংশ মুসলমানই হানাফী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন। তাই সমগ্র বিশ্ব থেকে হারাম শরীফে আগত এবং সেখানকার স্থানীয় মুসলমানগণের বিশাল জামাআত হানাফী ইমামের পেছনেই সমবেত হতেন। সে সুদীর্ঘকাল যাবৎ হানাফীদেরই রাজত্ব চলে আসছিল। এমতাবস্থায় এ বিশাল জামাআতের অনুসারীগণ মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বলী মায্‌হাবের সংখ্যালঘু অনুসারীদেরকে ভিন্ন-ভিন্ন জামাআতে নামায আদায় করার সুযোগ দিয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুরা ক্ষমতায় এসে তাদের মায্‌হাবের ইমাম ব্যতীত অন্যদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারী করে সংকীর্ণমনার পরিচয় দিয়েছেন।

তবে আমরা অত্যন্ত গর্বের সাথে বলতে পারি যে, যখন চার ইমাম ছিল তখনও হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মায্‌হাবেরই ছিল। গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্‌হাবীদের কোন ইমাম ছিল না। আর যখন থেকে এক ইমামের ধারা চলছে তখনও কোন না কোন মায্‌হাবের অনুসারীই ইমাম হয়ে আসছেন। আজ পর্যন্ত গাইরে মুক্বাল্লিদ বা লা-মায্‌হাবীদের কোন ইমাম পবিত্র মক্কা-মদীনায় নিয়োগ হতে পারে নি। উল্লেখ্য যে, আব্বাসী যুগের প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনার সকল ইমাম ও বিচারক হানাফী ছিলেন।

অতঃপর প্রায় দু’শ বছর খাওয়ারিয্‌মী ও সালজুক্বীদের অধীনে চলে, তারাও রক্ষণশীল হানাফী ছিলেন। অতঃপর উসমানী ও তুর্কী খেলাফত প্রায় পাঁচশ বছর পর্যন্ত চলে। তারাও সবাই হানাফী ছিলেন। ( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার, মক্কী শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২ ) মোটকথা, ইসলামী ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে বারশ বছর পর্যন্ত পবিত্র মক্কা-মদীনায় ইমাম ও খতীবের সুমহান দায়িত্ব হানাফী ইমামগণই আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন এবং কাযী ও বিচারকের আসনেও তারাই ছিলেন। ( আল-খাইরাতুল হিসান-ইবনে হাজার মক্কী, শাফেয়ীঃ পৃ – ৭২; রদ্দুল মুহতারঃ পৃ – ১/৭৫ ) লা-মায্‌হাবীদের কোন ইমাম কখনো নিয়োগ হয়নি এবং বর্তমানেও সেখানের সকল ইমাম কোন না কোন মায্‌হাবের অনুসারী।

আজও তারা পবিত্র রমজানে মাসে বিশ রাক্‌আত তারাবীহ আদায় করেন। গাইরে মুক্বাল্লিদদের নবাবিষ্কৃত ও মনগড়া মতবাদ আট রাক্‌আত তারাবীহ ও অন্যান্য ভ্রান্ত প্ররোচনা থেকে তাঁরা আজও সংরক্ষিত। শাহ্‌ ওয়ালী উল্লাহ্‌ (রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ) এর মায্‌হাবঃ ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাহ্‌ সাহেব হানাফী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন। তাঁর নিজের লিখা কিতাবই এর সাক্ষ্য বহন করে। শাহ সাহেব ও তাঁর গোটা বংশ যে হানাফী ছিলেন এ মর্মে অনেক গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিমও স্বীকৃতি দিয়েছেন।

যেমনঃ ছিদ্দীক হাসান খান এর মত দেখুনঃ -ইতিহাফঃ পৃ – ২৯৭ -আল-হিত্তাঃ পৃ – ৭০ -তরজমানে ওহ্‌হাবিয়্যাহঃ পৃ – ১১ শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) (মৃঃ ১২৩৯ হিঃ) এর মায্‌হাবঃ তিনি ইংরেজবিরোধী ঐতিহাসিক আযাদী আন্দোলনের বিপ্লবী ঘোষক। শাহ্‌ ওয়ালী উল্লাহ্‌র জ্যেষ্ঠ পুত্র। পূর্বে তথ্য ও তত্ত্ব সহকারে উল্লেখ করেছি যে, শাহ্‌ ওয়ালী উল্লাহ (রহঃ) এর গোটা পরিবারই হানাফী ছিলেন। এছাড়া তিনি তার রচনাবলীতে তাক্বলীদ ও মায্‌হাবের প্রতি বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমনঃ -তাফ্‌সীরে আযীযীঃ সূরা মূলক আয়াত ১০ পৃ – ২৩ -ফাত্‌ওয়ায়ে আযীযিয়াঃ পৃ – ২/২৪ হযরত ইসমাঈল (রহঃ) (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ) এবং সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ) এর মায্‌হাবঃ বালাকোটের শহীদ হযরত ইসমাঈল (রহঃ) (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ) এবং সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ (রহঃ) (মৃঃ ১২৪৬ হিঃ) উভয়ই হানাফী মায্‌হাবের পাক্বা মুক্বাল্লিদ ছিলেন।

-ফাত্‌ওয়ায়ে রশীদিয়াঃ পৃ – ১/১২২-১২৪; তাযকিরাতুর রশীদঃ পৃ – ২/২৭৪ -কাশফুল হিযাবঃ পৃ – ২৪; খাইরুত তাম্‌কীদঃ পৃ – ৫৩; তাইফা মানসুরাঃ পৃ – ২৪ লা-মায্‌হাবী আলিম ছিদ্দীক হাসান খানও তাঁকে হানাফী বলে উল্লেখ করেন। -আল-হিত্তাহ্‌ পৃ – ৭১ উল্লেখ্য যে, ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) এক পর্যায়ে নামাযে হাত উত্তোলন (রাফায়িল ইয়াদাইন) করতেন। তখন এ বিষয়ে একটি কিতাবও রচনা করেছিলেন। কিন্তু অগণিত বিশ্বস্ত তথ্যানুসারে, বিশেষ করে পাক-ভারতে আহ্‌লে হাদীসের প্রধান মুখপাত্র নযীর হুসাইনের উস্তাদ আব্দুল খালেকের বর্ণনামতে তিনি পরবর্তীতে হাত উঠানো প্রত্যাখান করেছেন। -তান্‌বীহুদ দাল্লীনঃ পৃ – ৮৬-৮৭ আর সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) তো ঐ আপোষহীন মুজাহিদ যিনি পাক-ভারতে আহ্‌লে হাদীসের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল খালেককে ১২৪৬ হিজরীতে কথিত আহ্‌লে হাদীসের মন্ত্র পড়ার কারণেই মুজাহিদ বাহিনী থেকে বহিষ্কার করেন।

-তান্‌বীহুদ দাল্লীনঃ পৃ – ৩ খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়ার মায্‌হাবঃ তিনি হানাফী মায্‌হাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি তাঁর নিজের কিতাব ‘রাহাতুল কুলুব’ এ তা উল্লেখ করেছেন। -হাদায়িক্বে-হানাফীয়্যাহঃ পৃ – ১০৪ ইমাম আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী (রহঃ) (মৃঃ ১৩০৪ হিঃ) এর মায্‌হাবঃ তিনি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস ও হানাফী মায্‌হাবের বিশিষ্ট ইমাম ছিলেন। হানাফী মায্‌হাব ও ইমাম আবু হানীফার উপর আরোপিত বিভিন্ন বিদ্বেষী অভিযোগের তিনি দাঁতভাঙ্গা উত্তর দিয়েছেন। -দেখুনঃ আবু রাফউ অত্তাক্‌মীলঃ পৃ – ৭০ ও ৩৭৪ মুজাদ্দিদে আল্‌ফেসানী (রহঃ) এর মায্‌হাবঃ হিজরী দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রসিদ্ধ মুজাদ্দিদ, শাইখ আহমাদ আল্‌ফে-সানী (রহঃ)ও হানাফী মায্‌হাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

-মাক্‌তুবাতে ইমাম রাব্বানী, ফার্সীঃ পৃ – ২/১০৭-১০৮, মাকতুব নং - ৫৫ চার মাযহাব এর যে কোন একটি মানা ওয়াজিব ১। মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধতম ও সর্বশ্রেণীতে গৃহীত ব্যাখ্যা ‘আল্‌ মিনহাজ’ প্রণেতা ইমাম নববী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ) ‘রাওযাতুত তালেবীন’ নামক গ্রন্থে লিখেনঃ “উলামাগণ বলেন, ইজ্‌তিহাদে মুতলাক ইমাম চতুষ্টয় পর্যন্ত খতম হয়ে গেছে। তাই তাঁরা ইমাম চতুষ্টয়ের কোন একজনের ‘তাক্বলীদ’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। ইমামুল হারামাইন জুয়াইনী (মক্কা-মদীনা শরীফের ইমাম সাহেব – রহঃ, মৃঃ ৪৭৮ হিঃ) মায্‌হাব চতুষ্টয়ের তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ‘ইজ্‌মা’ উল্লেখ করেছেন। ” ( নুরুল হিদায়া হতে সংকলিত, পৃ – ১০; দেখুনঃ ফয়যুল কাদীরঃ পৃ – ১/২১০; শরহুল মুহায্‌যাব, নববীঃ পৃ – ১/৯১, আদাবুল মুস্‌তাফতী অধ্যায় ) অন্যত্র তিনি লিখেনঃ “ যে কোন একটি মায্‌হাব বেছে নিয়ে একনিষ্ঠভাবে তা অনুসরণ করাই বর্তমানে অপরিহার্য।

” ২। গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌দের অন্যতম মান্যবর ইমাম, আরব বিশ্বের সর্বনন্দিত লিখক শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) (মৃঃ ৭২৮ হিঃ) লিখেছেনঃ “ মুসলিম উম্মাহর ‘ইজ্‌মা’ উপেক্ষা করে মায্‌হাব চতুষ্টয়ের বিপরীতে কোন মায্‌হাব রচনা বা গ্রহণ বৈধ হবে না। ” ( ফাত্‌ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ – ২/৪৪৬ ) ইচ্ছামত চার মায্‌হাবের যখন যেটি খুশি সেটি অনুসরণ করা সকল ইমামের ঐক্যমতে হারাম বা অবৈধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। (ফাত্‌ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ – ২/২৪১ ) ৩। প্রখ্যাত উসূলে হাদীস বিশারদ, ইবনি নুজাইম (রহঃ) (মৃঃ ৯৭০ হিঃ) লিখেনঃ “ যে ব্যক্তি ইমাম চতুষ্টয়ের বিপরীত মতামত পোষণ করবে সে মুসলিম উম্মাহর ‘ইজ্‌মা’ তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত-বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হবে।

” ( আল্‌-আশ্‌বাহ্‌ ওয়ান নাযাইরঃ পৃ – ১৩১ ) ৪। আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফাত্‌হুল মুবীন’ এ লিখেনঃ “ আমাদের যুগের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ বিন হাম্বল – এ চার ইমাম ব্যতীত অন্য কারও তাক্বলীদ (অনুসরণ) জায়িয নয়। ” ( ফাত্‌হুল মুবীনঃ পৃ – ১৯৬ ) ৫। আল্লামা শা’রানী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর বিখ্যাত কিতাব আল্‌-মিযানে লিখেনঃ “ নিজে পথভ্রষ্ট না হওয়া ও অপরকে পথভ্রষ্ট না করার জন্য নির্দিষ্ট মায্‌হাবের অনুসরণ জরুরী। ” ( ইনতেছারুল হক্ব হতে সংকলিতঃ পৃ – ১৫৩ ) ৬।

শাহ্‌ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) (মৃঃ ১১৭৬ হিঃ), লা-মায্‌হাবীদের কাছেও যিনি গ্রহণযোগ্য, তাঁর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগায় লিখেনঃ “ সু-বিন্যস্ত গ্রন্থবদ্ধ এ চার মায্‌হাবের উপর সকল ইমামগণের ‘ইজ্‌মা’ তথা ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাঃ পৃ – ১/১২৩ ) একটি হাদীসে আল্লাহর রসূল (সঃ) ইরশাদ করেনঃ “ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতকে কোন ধরণের ভ্রষ্টতায় ‘ইজ্‌মা’ বা ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আল্লাহর কুদরতী হাত মুসলমানদের জামাআতের উপর। যারা মুসলমানদের পথের বিপরীত রাস্তা গ্রহণ করবে তারা বিচিত্রভাবে দোযখে যাবে। ” ( তিরমিযীঃ পৃ – ৪/৪০৫, হাঃ ২১৬৭; মুস্তাদরাকে হাকিমঃ পৃ – ১/১১৬, হাঃ ৩৯৭ বুখারী ও মুসলিম শরীফসহ অসংখ্য হাদীসগ্রন্থে হযরত আব্বাস (রঃ) সহ ১৭ জন সাহাবী (রঃ) থেকে সমার্থবোধক শব্দে বর্ণিত।

) আহলে হাদীস ভাইদের প্রতি দাওয়াত ও প্রশ্ন আজকের যুগের আহলে হাদীসের কিছু ভাইদের সমালোচনা দেখলে মনে হয়, এত বড় বড় মুহাদ্দিসরা কেউই কোরআন হাদীস কিছুই বুঝতেন না, তারা ছিলেন কোরআন হাদীস বিষয়ে অজ্ঞ। আর তাদের অনেকেরই মতে তাক্বলীদ করা নাজায়েয, কুফরী, শিরকি, বিদয়াত, গোমরাহী ও পথভ্রষ্টামি। যদি তাই বলে আপনারা মনে করে থাকেন, তাহলে দয়া করে আপনারা এসব মুহাদ্দিসীনদের কোন কিতাব থেকে কোন দলিল দিবেন না, এসব মুহাদ্দিসীনদের কোন উক্তি আপনারা উল্লেখও করবেন না। আর আপনারা এমন কিতাব থেকে হাদীস বর্ণনা করুন যার লেখক আপনাদের মতই লা-মাযহাবী ছিলেন, আপনারা এমন তাফসীর গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেন যার লেখক আপনাদের মতই লা-মাযহাবী ছিলেন, আপনারা এমন রাবীর হাদীস উল্লেখ করুন যারা আপনাদের মতই লা-মাযহাবী ছিলেন, আপনারা জরাহ ওয়াত তাদীলের এমন সব কিতাব থেকে দলিল দেখান যার লেখক আপনাদের মতই লা-মাযহাবী ছিলেন। আপনারা কি পারবেন তা করতে ? প্রশ্ন রইল ।

দয়া করে আমাদের মত যারা মাযহাব অনুসরণ করে এসেছেন তাদের থেকে দলিল দিয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না। আর না হয়, আসুন, এসব যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসীন ও মুফাসসিরীনে কেরামের মত আমরাও মাযহাব মেনে চলি এবং আহলে হাদীস নামক ভ্রান্ত দলটি থেকে সরে আসি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।