১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন¯্রােতে গা ভাসিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জবাসী। সেই ¯্রােতে মানুষের কাতর কন্ঠভরা ফিসফিসানি ‘চুনকা ভাই এটা করেছেন, ওটা করেছেন’। নারায়ণগঞ্জের মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন। কিন্তু মানুষ কেন সেদিন দলবেঁধে রাস্তায় নেমে আলী আহম্মেদ চুনকার গুন গেয়েছেন? উত্তরটা চিরন্তন সত্য- তাদের প্রিয় ‘গন মানুষের নেতা’ চলে গেছেন অন্যলোকে। সেখান থেকে কারো ফেরার পথ জানা নেই।
লোকপ্রিয় ‘চুনকা ভাই’কে সেদিন মাসদাইর পৌর কবরস্থানে শুইয়ে এসে ‘গণমানুষের নেতা’ উপাধিটা যেন তুলে রাখলেন নারায়ণগঞ্জবাসী। ‘হয়তো’ অপেক্ষায় ছিলেন তারা আরেকজন ‘চুনকা ভাই’য়ের।
জোট সরকার ক্ষমতায়। ১৯৭৪র পর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ফের দুঃসময়। নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে ‘ক্ষমতাবান’ নেতা শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে স্বপরিবারে কানাডায় পালিয়েছেন।
২০০৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র (তখন ছিলো চেয়ারম্যান) প্রার্থী দিতে পারছিল না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ঠিক শেষ মুহুর্তে কাঙ্খিত ‘গণমানূষের নেতা’ এসে হাজির! মনোনয়নপত্র তোলার আগের দিন প্রাণের টানে স্বামী-সন্তান নিয়ে নিউজিল্যান্ড থেকে উড়ে আসলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি। এরপর তার ক্ষেত্রেও ঘটল- ‘তিনি আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ ঘটনা। চুনকার মেয়ে বিপুল ভোটে জিতে পৌরমেয়রের চেয়ারে বসলেন। গত আট বছরে রাজনীতির প্রতিকূল স্রোতেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাধারণ মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনলেন বাবার কীর্তি।
আর তাই যেন গত পরশু সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী করে নারায়ণগঞ্জবাসী দীর্ঘদিন তুলে রাখা ‘গণমানুষের নেতা’র মালা পড়িয়ে দিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভির গলায়। তিনি বনে গেলেন ‘গণমানুষের নেতা’। এ কারণেই তো তার জন্য গাটের পয়সা খরচ করতে দ্বিধা করেননি নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
দেশের প্রথম নারী সিটি করপোশেন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর কাল দৈনিক ডেসটিনিকে জানালেন তিনি, বাবা ১৯৭৪ সালে বাবা মারা গেছেন। তার হেটে যাওয়া পথ ধরেই হাটছি।
বাবা মারা যাওয়ার পর নাজিম উদ্দিন সাহেব পৌর চেয়ারম্যান হয়েছেন। এরপর প্রশাসকরা উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। সে সময় নেয়া কোন পরিকল্পনা বাকি নেই। আমি মনে করি তার পথেই আছি, ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি। ’
পৌরসভার প্রয়াত চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ চুনকার কীর্তি খুজতেই ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভির বাড়ির সামনের চা দোকানি মুকুল চান ফিরে গেলেন ২৬ বছর আগে।
চোখ গোল গোল করে সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে পঞ্চাশে পা দেয়া এই মানুষটি বললেন, চুনকা ভাই মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে ডায়মন্ড সিনেমা হলের (দুই নাম্বার রেলগেট) সামনে জনসভা করেছিলেন। লক্ষ মানুষের সেই জনসভায় স্বৈরাচার এরশাদকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলেন চুনকা ভাই। ’ ফিরিয়ে আনলেন তিনি- দেওভোগ আখড়ার মোড়ে বিহারী দোকানে শহরের লাশকাটা ঘরের ডোমকে পাশে বসিয়ে চা খাওয়ার দৃশ্য! প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হতো ধর্মীয় মাহফিল। আর প্রতি বছর ১০ মহরম ‘তবারক’ বিতরণ করা হতো। কন্ঠ যেন রুদ্ধ হয়ে আসছিল ত্রিকালদর্শী মুকুল চানের।
শেষে বললেন, ভাই, আমরা নিজের পয়সায় চুনকা ভাইয়ের ইলেকশন করছি। মাইয়াটা বাবার গুন পাইছে। মানুষ তার জন্য হাত তুইলা দোয়া করছে, পয়সা খরচ কইরা নির্বাচন করছে। ’ ‘গণমানুষের নেতা’ বলেই সেটা সম্ভব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।