প্রথম আলোর বিনোদন পাতার শিরোনাম মোটামুটি চমকে দেওয়ার মতো। বাংলাদেশের ছায়াছবি ‘গহীনে শব্দ’ যুক্তরাষ্ট্রের উৎসবে চারটি পুরষ্কার জিতে নিয়েছে! চাট্টিখানি কথা নয়। এইবেলা আমাদের ছায়াছবির দৈন্য-দশা ঘুচল বলে। সংবাদের গা বেয়ে নীচে নামতে নামতে একের পর এক চমক উঠে আসতে থাকে। বিনোদন প্রতিবেদক পরিবেশিত সংবাদ জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার আরভিন শহরে অনুষ্ঠিত সাইলেন্ট রিভার চলচ্চিত্র উৎসবে গহীনে শব্দ তিনটি পুরষ্কার জিতে নিয়েছে।
ছবির পুরষ্কার তালিকা ছিল নিুরুপ: শ্রেষ্ঠ পরিচালক ( খালিদ মাহমুদ মিঠু), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা( মাসুম আজিজ)ও শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী( শিরোপা পূর্ণা)। বিস্ময়ের উপর বিস্ময়! বিস্ময় আর সুখবোধ নিয়েই ইন্টারনেট সার্চ ইন্জিন গুগলকে কাজে লাগাই। সাইলেন্ট রিভার চলচ্চিত্র উৎসবের খোঁজ মিলতে দেরি হয়না। এই উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের দণি ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন রচনার এই উৎসব। কে না জানে চলচ্চিত্র উৎসবের বয়স তাঁর মর্যাদা নির্ধারণের েেত্র এক মহা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কারের বাইরেও কান, ভেনিস, বার্লিন অবধি সব চলচ্চিত্র উৎসব নামিদামি হয়ে উঠেছে মূলত তাদের সুদীর্ঘ এতিহ্যের কারণেই। শুরুতেই মনটা খানিকটা দমে গেল। বিশ্বজুড়ে ছোট-বড় হাজারো চলচ্চিত্র উৎসবের ভীড়ে সদ্যপ্রসূত একটি চলচ্চিত্র উৎসবের মূল্য কিই বা হতে পারে। তবুও বাংলাদেশি ছবি বিজয় বলে কথা!
কিন্তু আরও বড় ধরনের হতাশা আমার জন্য অপো করছিল। ২০১১ সালের পুরো পুরষ্কারের তালিকাটি ডাউনলোড করার পর আতিপাতি করে খুঁজেও রিভার রেইন অ্যাওয়ার্ড বা সেরা পরিচালকের বিভাগে খালিদ মাহমুদ মিঠুর নামটি খুঁজে পাওয়া গেল না।
ফিচার ফিল্ম বা কাহিনীচিত্র বিভাগে প্রতিযোগিতা করেছে মোট ১০ টি ছবি। ২০১১ সালে মোট তিনজনকে দেওয়া হয়েছে সেরা পরিচালকের পুরষ্কার। ‘ইস্ট’ মানে প্রাচ্য অংশ থেকে সেরা পরিচালকের পুরষ্কার জিতেছেন ভারতের নীলা মাধব পান্ডা। ছবির নাম আই অ্যাম কালাম। ওয়েস্ট বা পশ্চিমের সেরা পরিচালক মাইকেল ম্যাকালাম( যুক্তরাষ্ট্র) এবং সেরা নারী পরিচালকের সম্মাননা জিতেছেন যুক্তরাজ্যের ডেবোরাহ হ্যাডফিল্ড।
উৎসবে অংশ নেওয়া ছবির তালিকা নাতিদীর্ঘ হলেও সাইলেন্ট রিভার চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মাননার তালিকা বেশ দীর্ঘ। (আমার গোনা যদি ঠিক থাকে তাহলে ৬৪ টি!)। তবে কয়েকটি বিভাগে কেউই পুরষ্কার পাননি। যাই হোক, দীর্ঘ তালিকা ঘেঁটে শেষে খালিদ মাহমুদ মিঠুর খোঁজ মেলে রিভার অ্যাডভেন্ট অ্যাওয়ার্ড বিভাগে। উৎসবে অংশ নেওয়া দশটি ছবির মধ্যে প্রথমবার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এমন দুই পরিচালককে দেওয়া হয়েছে এই পুরষ্কার।
তাঁদের মধ্যে আছেন খালিদ মাহমুদ মিঠু।
এখানে নারী পরিচালকের ঘরটি খালি আছে। মানে কেউই এই পুরষ্কারটি পাননি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগেও যথারীতি মাসুম আজিজের নাম নেই। তাঁর নাম আছে সবার শেষে রিভার ‘অ্যাডমায়রেশন’ ( বাংলাটা কি হবে প্রশংসাসূচক নাকি সান্তনা পুরষ্কার?) বিভাগে।
সেরা তিন শিশুশিল্পীর মধ্যে অবশ্য আছেন শিরোপা পূর্ণা। তাঁকে অভিনন্দন! পুরষ্কারের তালিকা ঘাঁটতে গিয়ে আরও একটি জিনিস আবিষ্কার করিÑ রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত মেহেরজান এই উৎসবে দুটো পুরষ্কার জিতেছে। অ্যাডমায়রেশন বিভাগে এটি পেয়েছে কাহিনীচিত্র বিভাগে সম্মাননা এবং জয়া ভাদুড়ি বচ্চন পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার। পুরো তালিকা যারা নিজেরাই দেখে নিতে চান তারা ভিজিট করুন:
পুরষ্কারের পুরো তালিকাটি এখান থেকে পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড করা যাবে।
এই পুরষ্কারপ্রাপ্তি উপলে আয়োজিত চ্যানেল আইয়ের সংবাদ সম্মেলনে বা বিনোদন প্রতিবেদক পরিবেশিত সংবাদে যে সু কারচুপির জায়গা সেটি নিশ্চয়ই এতনে আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
পুরষ্কার প্রাপ্তির পর খালিদ মাহমুদ মিঠু বলেছেনÑ তাঁর মতো করে সবাই নিজেদের জায়গা থেকে কাজ করলে সবাই বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে পারবেন!
কি দারুণ প্রহসন!
বাংলাদেশি ছবির আন্তর্জাতিক উৎসবে পুরষ্কার জেতার ঘটনা বিরল হলেও অভূতপূর্ব নয়। সূর্যদীঘল বাড়ি, মাটির ময়না, স্বপ্নডানায়-এর মতো ছবির কথা আমরা এেেত্র স্মরণ করতে পারি।
মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের বহু তরুণ প্রতিভাধর নির্মাতারা আছেন। খুব সীমিত সাধ্যের মধ্যেও অসাধারণ কিছু করে দেখানোর মতা নিশ্চয়ই তাঁদের আছে। তাঁদের ছবি একদিন নিশ্চয়ই কান, ভেনিস বা বার্লিন উৎসবের মতো সম্মানজনক উৎসবগুলোতে যাবে।
তাঁরা নিশ্চয়ই লোক দেখানো ‘সম্মাননা!’ বগলদাবা করার জন্য ভুঁইফোঁড় চলচ্চিত্র উৎসব খুঁজে বের করার চেয়ে শৈল্পিক গুণ সম্পন্ন ছবি তৈরিতে বেশি মনযোগী হবেন। আমরা বুক ফুলিয়ে বলার মতো একটি উপল সত্যিই খুঁজে পাব। সবশেষে অস্কার বা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস এবং গোল্ডেন গ্লোবের বাইরে বিশ্বের প্রথমসারির কিছু চলচ্চিত্র উৎসবের নাম আর চালু হওয়ার সন সংযুক্ত হলো:
ক্স কান চলচ্চিত্র উৎসব, ফ্রান্স ( ১৯৪৬)
ক্স বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, জার্মানি ( ১৯৫১)
ক্স ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব, ইতালি ( ১৯৩২)
ক্স লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসব, যুক্তরাজ্য ( ১৯৫৬)
ক্স এডিনবরা চলচ্চিত্র উৎসব, যুক্তরাজ্য( ১৯৪৭)
ক্স সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসব, যুক্তরাষ্ট্র ( ১৯৭৮)
ক্স টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, কানাডা( ১৯৭৬)
ক্স পুসান( বুসান) চলচ্চিত্র উৎসব, কোরিয়া( ১৯৯৬)
ক্স লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব, সুইজারল্যান্ড( ১৯৪৬)
ক্স নিউইয়র্ক চলচ্চিত্র উৎসব, যুক্তরাষ্ট্র ( ১৯৬৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।