আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেন্টমার্টিনঃমমতাময়ী সাগরকন্যা

নিঃসঙ্গতা কি পছন্দ আপনার? অথবা এমন কি ইচ্ছে হয় প্রিয়জন বা বন্ধুদের নিয়ে নিরিবিলি, বিচ্ছিন্ন কোথাও বেড়াতে যেতে, যেখানে স্বাভাবিক জীবনের জটিলতা ও কোলাহল স্পর্শ করবে না? প্রশ্ন দুটির একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ হয়, তবে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ঘুরতে যেতে আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান। কক্সবাজার জেলার একটি উপজেলা টেকনাফ। এর অবস্থান দেশের সর্ব দক্ষিণ পূর্বে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন স্থলাভূমির শেষ প্রান্তে। এই টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব ৩৮ কিমি। নদী ও সাগর দুটোই ১৯ কিমি করে।

যাতায়াতের জন্য টেকনাফ থেকে সি-ট্র্যাক থাকে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়া বড় ট্রলার চলাচল করে সারা বছর ধরে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পৌছাতে সময় লাগবে ২-৪ ঘণ্টা। বৃটিশ ক্যাপ্টেন সেন্টমার্টিনের নামানুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। এর পূর্ব নাম ছিল নারকেল জিঞ্জিরা।

আয়তন ১২ বর্গ কিমি, যেখানে প্রায় ৮ হাজার লোকের বসবাস। জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা মৎস্য সম্পদ আহরণ। এছাড়া নারকেল ও সামুদ্রিক সম্পদ বিক্রি, পর্যটকদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমেও অনেকে জীবন কাটায়। অর্থাৎ, জীবন শুধু তাদের এই ছোট্ট দ্বীপকেন্দ্রিক। গত কয়েক বছরে এখানে পর্যটকদের যাতায়াত ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার পর্যটক যায় সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। থাকার জন্য প্রচুর হোটেল ও রিজোর্ট আছে। দ্বীপটিতে অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে ভ্যানগাড়ি ব্যবহৃত হয়। রিকশা সেখানে অপ্রচলিত। যাহোক, আসি এবার কীভাবে যাবেন সে ব্যাপারে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সায়দাবাদ থেকে দিনভর অনেকগুলো বাস আছে। তাদের একটিতে করে কক্সবাজার নেমে আবার টেকনাফের বাসে উঠতে হবে। টেকনাফ নেমে সি-ট্র্যাক থাকলে টিকেট কেটে উঠতে হবে আর তা না থাকলে ট্রলারই ভরসা। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সময়েই আপনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবেন আসতে পেরে। অসংখ্যা মাছ ধরার নৌকা, পাহাড়, সুদীর্ঘ ও সুবিশাল সাগরপাড় দেখা যাবে দুপাশে।

চারদিকের অপরূপ দৃশ্যাবলী চোখকে আঁকড়ে ধরে রাখে, এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরানো কঠিন। ভ্রমণের মাঝামাঝিতে আসবে মোহনা-যেখানে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর একসাথে মিশেছে। এ মিলনস্থলের মাহাত্ন্য না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে ভয়ও আছে এরপর পরই। ভয় না বলে অ্যাডভেঞ্চারাসও বলা যেতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে গিয়ে ঢেউয়ের চাপে লঞ্চ দুলতে থাকে –একবার এপাশ তো পরের বার ওপাশ। আর ট্রলার হলে তো কথাই নেই। এত বেশি দুলতে থাকে সেটি, যে জীবনভয়ে কট্টর নাস্তিকও সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে শুরু করবে। তবে সবশেষে যখন এসে নামবেন সেন্টমার্টিনে, দীর্ঘভ্রমণের ক্লান্তি বা ভয় কিছুই মনে থাকে না আর। দুপাশে সারি সারি জেলে নৌকা ও লঞ্চ দাঁড়িয়ে থাকে, আর দূর থেকে দেখা যায় সারি সারি নারকেল গাছ।

লাঞ্চ, ডিনার বা নাস্তা করতে পারেন যেখানে থাকবেন সেই হোটেল বা রিজোর্টে। এক্ষেত্রে খরচ বেশি পড়বে। এছাড়া বাজারে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে, খেতে পারেন সেখানেও। এখানকার বিশেষ খাবার হল সামুদ্রিক মাছ। সাগর থেকে মাছ ধরে এনে রান্না করা হয়।

সে মাছের স্বাদ মনে থাকবে দ্বীপ ছেড়ে আসার পর সারাজীবন। এছাড়া সেন্টমার্টিনের বড় বড় ডাব ও নারকেলের খ্যাতি তো এখন প্রায় দেশজুড়ে। আগেই বলেছি, এই দ্বীপের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব। সমুদ্রের স্রোত যেন পর্যটকদের মনোরঞ্জনেই দ্বীপের তীরে আছড়ে পড়ে। চারপাশে সাগরের বিশাল সব ঢেউ ও তাদের কলতানে প্রিয়মানুষদের চেহারা ভেসে আসে ক্রমাগত।

নিজেকে ভাসমান দ্বীপের ও বিশাল পৃথিবীর বুকে তুচ্ছ মনে হয়। কক্সবাজারের দীর্ঘতম সৈকত হয়ত আমরা দেখেছি, তবে সেখানে প্রকৃতির পরতে পরতে এত সুরব্যঞ্জনা নেই। নেই এখানকার মত সমুদ্রের প্রলয়ঙ্করী গর্জন ও মমতাময়ী চেহারাও। এছাড়া সেন্টমার্টিনের বড় বড় প্রবাল দ্বীপকে অন্য সবার চেয়ে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। টং দোকানে বসে চা-কফি খেতে খেতে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগেই পর্যটকদের সময় সবচে বেশি যায়।

এসব দোকান আবার দিন-রার ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। সময় কাটাতে সৈকতে ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্য যেকোন কিছু খেলতে পারেন। শামুক ও খুশিমত প্রবাল সংগ্রহেও অনেকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। যাওয়ার সময় সৈকতে পরার জন্য স্যান্ডেল ও থ্রি কোয়ার্টার বা হাফ-প্যান্ট নিয়ে যেতে পারেন। নিতে পারেন খাওয়ার স্যালাইন, যা গরমের মধ্যে শরীর থেকে নিঃসৃত পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে।

সেন্টমার্টিন থেকে অল্প একটু দূরেই ছেঁড়াদ্বীপ। সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে করে যেতে হয়। সেখানে কোন জনবসতি নেই। তা না থাকুক, ডাব ও নারকেন ঠিকই বিক্রি হয়। ট্রলার থেকে নামলে যা সবার আবশ্যক খাদ্য উপাদানে পরিণিত হয়।

ছেঁড়াদ্বীপ ঘুরতে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা চলে যাবে। হুমায়ূন আহমেদের জ্যোৎস্নাপ্রীতির কথা জানি আমরা সবাই। তাঁর বইয়ে জোছনার অপরূপ বর্ণনা অনেক সময় আদিখ্যেতা মনে হয় আমাদের কাছে। কিন্তু একবার যিনি সেন্টমার্টিনের জ্যোৎস্নারাত দেখেছেন তার কাছে এসব বর্ণনা কমই মনে হবে। দেশের আর কোথাও চাঁদ ও জ্যোৎস্না এভাবে আসে না।

সেন্টমার্টিনে বিদ্যুৎ সুবিধা নেই বলেই হয়ত চাঁদ নিজের আলো দিয়ে আলোকিত করে রাখে মায়াময়ী এই দ্বীপকে। অথবা কে জানে, হয়ত সে নিজেই তার আলো ফেলে উপভোগ করে অসাধারণ নৈসর্গিক সোন্দর্যমণ্ডিত এই প্রবাল দ্বীপকে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.