ছোটবেলার দীপাবলির কথা খুব মনে পড়ছে। কি অদ্ভুত ছিল সেই দিনগুলি। মনে পড়ে পাড়ার সব ছেলেমেয়েগুলার সেই অফুরন্ত আনন্দের কথা। সকাল থেকেই সন্ধ্যাবেলার প্রস্তুতি। কখন সন্ধ্যা আসবে ..... আতশবাজি, তারাবাতি, মোমবাতির আলোয় চারদিক ঝলমলে হয়ে উঠবে সেই অপেক্ষায় থাকতাম সবাই।
অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চা্য় না। যৌথ পরিবারের সুবাদে আমরা ছিলাম ৮ ভাই আর ৮ বোন। বিশাল ব্যাপার। হুলুস্তুল আর আনন্দেই কাটতো সারাটা বছর। আর কোনো উৎসবে তো বলাই বাহুল্য।
বিশাল বাহিনী আমাদের। তার সাথে আছে পাড়ার সব সমবয়সী, ছোট বড় সবাই। মনিপুরী পাড়ায় থাকার সুবাদে এই ধরনের উৎসব গুলো ছিলো আরো প্রানবন্ত। দোল যাত্রা আর ঝুলনের উৎসব হতো অ্ত্যন্ত আকর্ষনীয়।
একদম ছোটবেলায় বাবা সন্ধ্যাবেলার একটু আগেই বাসায় নিয়ে আসতো উৎসবের আয়োজন।
তখন এক ধরনের পটকা পাওয়া যেত এখন পাওয়া যায় কিনা জানি না। বাঁশের লাঠির আগায় রঙীন কাগজে মোড়া এক ধরনের পটকা। লাঠিতে ধরে মাটিতে অথবা দেয়ালে জোরে মারতে হতো। অনেক মজা ছিলো । বিশেষ করে একসাথে যখন অনেকগুলো পটকা নিয়ে আসতো বাবা ।
এককটার মাথা একেক ধরনের রঙীন কাগজে মোড়ানো। অদ্ভুত সুন্দর। মনে হলে শুধুই এখন আফসোস হয়। কেন যে দিন গুলোতে ফিরে যেতে পারি না। তো বাসায় পটকা আসার পরে শুরু হতো সব ভাইবোনদের মধ্যে ভাগাভাগি।
সেই সাথে তারাবাতি, আঁতশবাজিরও ভাগ হতো সমান ভাগে। বিকালে পুরো বাড়ির চারদিকে, ভেতরে , বাহিরে,সব জায়গাতেই মোমবাতি আর প্রদীপে তেল ঢেলে তাতে সলতে দিয়ে রাখার আয়োজনে নামতো সবাই। মা, বড়মা, কাকি, দিদিরা সেই সাথে আমরা সব পিচ্চিপাচ্চা। সন্ধ্যের সাথে সাথে পাড়ার সবাই একসাথে জ্বালিয়ে দিতো প্রদীপ। অসম্তব সুন্দর, চোখ ধাঁধানো ঝলমলে চারদিক ভরে উঠতো।
মনে হলেই আমার এখনো একধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হয়। সব চাইতে আকর্ষনীয় পর্যায় ছিলো তারাবাতি জ্বালানো। এই জিনিসটির প্রতি এখনো আমার অনেক দুর্বলতা। দাদারা তারাবাতি জ্বালিয়ে ছুড়ে মারতো গাছে। গাছের মগডালে তারাবাতি গুলো জ্বলতো জ্বলজ্বল।
মনে হতো আঁকাশের তারা বুঝি খসে পড়েছে আমাদের আমলকি গাছে। খুব ছোটবেলায় আমিও চেস্টা করতাম তারাবাতি/ ফুলঝুরি কে গাছে ছুড়ে মারার। কিন্তু আমার শক্তিতে তা কুলাতো না। ছুড়ে ফেলা তারাবাতি আবার মাটিতেই পতিত হতো ।
আরেকট বড় হওয়ার পরে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার থেকে নিজে গিয়ে ঐগুলা কেনার অনুমতি পেলাম।
তখন অবশ্য লাঠি পটকার দিন শেষ। মানে লাঠি-পটকা গুলো ছিলো একদম ছোটোদের জন্য। তখন কাগজের তৈরি ভেতরে বারুদ ভর্তি পটকা কিনতাম সিলেটের পুরো বন্দর বাজার ঘুরে ঘুরে। বাসার পাশেই বিশাল এক মাঠ ছিলো। ঐ খানেই আসতো সবাই।
কাগজের তৈরি বারুদ ভর্তি পটকা গুলা ফাটানোর অদ্ভুত এক কৌশল আবিস্কার করেছিলো একবার। টিনের তৈরি কৌটার ভেতরে পটকা গুলাতে আগুন ধরিয়ে রেখে দেওয়া হতো । তাতে শব্দটা অন্যরকম শোনা যেত। সেই দিন গুলার কথা মনে পড়লে নস্টালজিক হই।
সিলেটের চাঁদনী ঘাটে পাওয়া যেতো মাটির তৈরি প্রদীপ গুলো।
অসম্ভব রকমের স্বস্তা ছিলো তখন। এখনো পাওয়া যায় হয়তো বা। কৈশোরের প্রায় প্রতিটি দীপাবলিতেই আমি নিজে গিয়ে প্রদীপ কিনতাম বেঁছে বেঁছে।
দাদাদের তখন খুবই হিংসা করতাম ছোটোবেলার এইসময়টায়। কোথা থেকে যেন তারা অনেক সুন্দর পটকা নিয়ে আসতো।
আমাদের দিতো না। ঐগুলা চাইলে কতগুলা লাঠি পটকা আর তারা বাতি হাতে ধরিয়ে দিতো তাচ্ছিল্যের সাথে। একটু বড় হওয়ার পরে অবশ্য সেই শখ পুরন হয়েছিলো।
গত কালকেই গেল দীপাবলি। গতো ৭ বছর ধরে দীপাবলিতে বাড়ি যাই না, ভাইবোনদের সাথে ও সময় কাটানো হয় না।
। নানান কারনেই যাওয়া হয়না। খুবই অনুভব করি দিন গুলাকে। তবে হলে আসার পরে ঢাকাতেও বন্ধুদের সাথে এই দিনে ঘুরি। কালকেও ঘুরলাম।
মোমবাতি কিনলাম, তারাবাতি। সবাই মিলেই জ্বালিয়েছিলাম। ভালোই লেগেছে। কিন্ত বাসার কথা খুবই মনে পড়েছে। মনে পড়েছে ছোটো বেলার সেই দিনগুলির কথা।
চিৎকার চেচামেচি, আর আমাদের বাসার পাশের সেই বিশাল মাঠটিতে তারাবাতি হাতে ছুটেছুটির কথা।
সবাইকে দীপাবলির শুভেচ্ছা। আলোকে উদ্ভাসিত হোক সবার জীবন , মনের অন্ধকার দূর হোক। সবাই সুখে থাকবেন।
এই ছবিটা গতোবছর দীপাবলিতে তুলেছিলাম হলের রুমের বেলকোনিতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।