আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা?

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। মূল : ডঃ মুহাম্মদ তিজানী আল সামাভী অনুবাদ : ইরশাদ আহম্মেদ আগের লেখার লিঙ্কঃ Click This Link Click This Link Click This Link Click This Link সমাজের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন করা শাসক দলটি তাদের প্রতিপক্ষ হযরত আলীর দলকে দূর্বল বানানোর লক্ষ্যে সমাজে তাদের মান-মর্যাদাকে বিলীন করার ধারা চালু করলো। হযরত আবু বকর ও উমর সর্বপ্রথম এই কাজটি করলেন যে, লোকজনকে রাসুল (সা.)-এর নিকটাত্মীয়দের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদান করতে নিষেধ করে দিলেন। সুতরাং পবিত্র বংশধারার সরদার ও নেতা নবী (সা.)-এর চাচাতো ভাইকে যে ফজিলাত আল্লাহ প্রদান করেছিলেন, সাহাবাগণও তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন, আর মুনাফিকদের কথা কিই বা বলা হবে, তারা তো সুযোগের অপেক্ষাই করছিল। নবী (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে একা হযরত ফাতেমা যাহরা-ই তাঁর স্মৃতি ছিলেন।

যাঁকে স্বয়ং নবী (সা.) উম্মে আবীহা (পিতার মাতা) এবং সমগ্র বিশ্বের নারীদের সমরাঞ্জী বলেছিলেন। সুতরাং সকল মুসলমান হযরত ফাতেমাকে সম্মান করতেন। আবার এ জন্যও মুসলমানগণ তাঁর ইজ্জত করতেন, কারণ স্বয়ং রাসুল (সা.) তাঁকে সম্মান করতেন এবং তাঁর হাদীস সমূহের দৃষ্টিকোণ থেকেও যা রাসুল (সা.) হযরত ফাতেমার ফজিলাত ও পবিত্রতা সম্পর্কে বলেছিলেন। কিন্তু হযরত আবু বকর ও উমর মানুষের অন্তর থেকে এই সম্মান ও মর্যাদাকে বের করে ছুড়ে ফেলেদিলেন। এখন উমর ইবনে খাত্তাব নিবিঘেœ আগুন ও কাঠ নিয়ে হযরত ফাতেমার গৃহে পৌছে গেলেন এবং শপথ করে বললেন, “আবু বকরের বায়াত যদি না কর তাহলে আমি এই গৃহটিকে গৃহবাসীসহ জ্বালিয়ে দিব”।

হযরত আলী, আব্বাস এবং জোবায়ের হযরত ফাতেমার গৃহে অবস্থান করছিলেন কথাটা জেনেই হযরত আবু বকর, উমর ইবনে খাত্তাবকে হযরত ফাতিমার গৃহে আবস্থানকারীদেরকে বের করে আনার হুকুম দিয়ে পাঠালেন আর বললেন, “তারা যদি আসতে অস্বীকার করে তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করবে”। হযরত উমর হুকুমটি শোনামাত্র আগুন নিয়ে হযরত ফাতেমার গৃহে উপস্থিত হলেন, যেন গৃহটিকে গৃহবাসীসহ জ্বালিয়ে দেন। হযরত ফাতেমা যাহরা দরজার পিছনে এসে বললেন, “হে খাত্তাবের পুত্র তুমি কি আমার গৃহে আগুন ধরাতে এসেছ”? হযরত উমর উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, অন্যথায় তোমরাও তাই কর যা উম্মত করেছে (অর্থাৎ আবু বকরের বায়াত করে নাও)” [দ্র. আল-আকদুল ফরীদ, -ইবনুল মুব্দারবা, খন্ড-৪]। যখন হযরত ফাতেমা যাহরা, যিনি হলেন সমগ্র বিশ্ব নারীদের স¤্র্রাঞ্জী, যেমনটি আহলে সুন্নাতের সহীহ গ্রন্থগুলোতে লিপিবদ্ধ আছে এবং তাঁর সন্তানদ্বয় ইমাম হাসান ও হুসাইন হলেন বেহেশতী যুবকদের সরদার, তারা নবীর বংশধরদেরকেও তুচ্ছ ও নীচ বলে ধারণা করতো। এমন কি মানুষের সম্মুখে উমর ইবনে খাত্তাব কসম খেয়ে বললেন, “এরা যদি আবু বকরের বায়াত অস্বীকার করে তাহলে আমি তাদেরকে এই গৃহের সাথে পুড়িয়ে দিব”।

উক্ত ঘটনার পর মানুষের অন্তরে এই সম্মান্বিত ব্যক্তিবর্গের (হযরত ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন) প্রতি আর কোন শ্রদ্ধাই রইল না এবং তারা হযরত আলীর মর্যাদাকেও বুঝতে অপারগ ছিল। আবার লোকগুলি তো পূর্ব থেকেই হযরত আলীর প্রতি বিদ্বেষী ছিলই। উপরন্তু তিনি আবার বিরোধী পক্ষের সরদারও ছিলেন। আবার তাঁর কাছে দুনিয়ার মালামালের মধ্যে এমন কোন জিনিষও ছিল না যা দ্বারা মানুষ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হত। বুখারী তার সহীহ্তে বর্ণনা করেছেন যে, “হযরত ফাতেমা হযরত আবু বকরের নিকট নিজের পিতা রাসুল (সা.)-এর সেই ‘মীরাস’ দাবী করলেন যা আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে মদীনা, ফিদাক এবং খায়বারের ‘খুমস’ হিসাবে দান করেছিলেন।

হযরত আবু বকর মীরাস দিতে অস্বীকার করে দিলেন বিধায় হযরত ফাতেমা হযরত আবু বকরের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েগেলেন এবং তার (আবু বকর) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত তার সাথে কথা-বার্তা বলেন নি। নবী (সা.)-এর পরে মাত্র ছয় মাস জীবিত ছিলেন। যখন ইন্তেকাল করলেন তখন তাঁর স্বামী হযরত আলী রাতের অন্ধকারে গোসল দিলেন, কাফন পরালেন এবং দাফন করে দিলেন আর হযরত আবু বকরকে এ বিষয়ে কিছুই জানালেন না। হযরত ফাতেমার জীবদ্দশাতে তো হযরত আলীর কিছু মান-সম্মান ছিল। কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের পর মানুষের চেহারা পরিবর্তন হয়েগেল, তখন হযরত আলী হযরত আবু বকরের সাথে সমঝোতা করে নিলেন।

তবে হ্যাঁ হযরত ফাতেমা যাহরার জীবদ্দশায় কোন সমঝোতা করেন নি”। [সহীহ আল বুখারী, খন্ড-৫, পৃ-৮২, বাব-খায়বার অভিযান এবং সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ]। বিরোধী দল হযরত আলীর প্রতি অর্থনৈতিক অবরোধ এবং আর্থিক অবস্থাকে তছনছ করে ফেলে আর সামাজিক ভাবে বায়কট (তথা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন) করে সফলকাম হয়েগেল। হযরত আলীর মর্যাদা মানুষের দৃষ্টি থেকে মুছে গেল। এখন আর কোন মান-সম্মান ছিল না।

বিশেষ করে হযরত ফাতেমা যাহরার ওফাতের পরে তো মানুষের চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং তিনি আবু বকরের সাথে সমঝোতা (আপোষ) করতে বাধ্য হয়েগেলেন, যেমনটি বুখারী ও মুসলিম উভয়েই রেওয়ায়েত করেছেন। বুখারীর বাক্য যে “মানুষের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল” দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসুল (সা.) এবং হযরত ফাতেমার ওফাতের পর হযরত আলীর সাথে মানুষের শত্রুতা কি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তিনি কতই না কঠিন অবস্থার সম্মুখীন ছিলেন। সম্ভবতঃ কিছু কিছু সাহাবা তো তাঁর প্রতি গাল-মন্দও করতেন এবং তাঁকে ঠাট্টা-মস্করাও করতেন। কেননা চেহারার উপর ঘৃনার চিহ্ন সেই ব্যক্তিকে দেখেই ফুটে ওঠে, যার প্রতি মানুষ সন্তুষ্ট থাকে না।

অত্র অধ্যায়ে আমি ধারাবাহিক ভাবে হযরত আলীর ইতিহাসকে যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে বয়ান করতে পারছি না, যদিও সেটি হচ্ছে তিক্ত বাস্তবতার প্রকাশ। সেই হযরত আলীকে মানুষ অবজ্ঞা করল যিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর সুন্নাতের পতাকাবাহী এবং রাসুল (সা.)-এর জ্ঞানের দরজা। আর তাঁর বিপক্ষীয় ‘ইজতেহাদী দল’ যারা নবী (সা.)-এর সুন্নাতকে অস্বীকার করতো তারা শাসণ ক্ষমতা পেয়েগেল এবং অধিকাংশ সাহাবা সেটিকেই সমর্থন করলেন। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্নতা আমি বর্ণনা করেছি যে, তারা প্রত্যাখ্যান এবং আর্থিক অবস্থাকে ভেঙে ফেলা এবং আত্মসৎ করে নেয়ার পর হযরত আলীকে ইসলামী সমাজ থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। যার কারণে সাধারণ মানুষ হযরত আলীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।

কিন্তু ক্ষমতাসীন দলটি সেটিকেও যথেষ্ট জ্ঞান করেনি বরং তাঁকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেও বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং তাঁকে হুকুমাতের সমস্ত বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখল। হুকুমতের কোন পদবী ও দায়ীত্ব তাকে দেয়নি, পক্ষান্তরে, তারা বনী উমাইয়ার সেই সমস্ত তোলাকা ও ফাসিক ব্যক্তিবর্গের মাঝে হুকুমতের পদ-পদবীগুলো বন্টন করে দিত, যারা রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল। সুতরাং হযরত আলীকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গন, হুকুমতের পদ-পদবী ও সকল বিষয়াবলী থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হল। পক্ষান্তরে, সেই যুগে কিছু কিছু সাহাবা ধন-সম্পদ জমা করে নিজেদের উঠোন ভরে নিয়েছিল এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের ভান্ডার তৈরী করে নিয়েছিলেন। অন্য দিকে হযরত আলী ইয়াহুদীর বাগানে পানি টানার কাজ করতেন এবং কঠিন পরিশ্রম করে দেহের ঘাম ঝরিয়ে রোজগার করতেন।

জ্ঞানের দরজা, উম্মতের প্রেমী এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতের পতাকাবাহী নিষ্ক্রীয়ভাবে ঘরেই বসে থাকলেন, তাকে জিজ্ঞাসা করনেওয়ালা কেউ ছিলনা। তবে হ্যাঁ হাতে গোনা সেই সকল সাহাবা অবশ্যই তাঁকে মুল্যায়ণ করতেন যারা তাঁরই অনুসারী ছিলেন কিন্তু তারা গরীব শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। আর যখন হযরত আলী তাঁর খেলাফতকালে মানুষকে কোরআন ও সুন্নাতের দিকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন, তখন উমর ইবনে খাত্তাবের ভক্তবৃন্দ চিৎকার দিয়ে উঠলো যে, “হায়! উমরের সুন্নাত”! এই সমস্ত কথা-বার্তা দ্বারা আমি এই ফলাফল বের করেছি যে, নবী (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে কেবল হযরত আলী ও তাঁর অনুসারীগণই সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তারাই সেটির প্রতি আমলও করতেন। তারা কখনোই সুন্নাতকে ছেড়ে দেন নি, পক্ষান্তরে অবশিষ্ট মানুষ হযরত আবু বকর, উমর, উসমান এবং আয়শাকে গ্রহণ করে নিয়েছিল এবং তাদের বিদআতকে বিদআতে হাসানার নাম দিত। [সহীহ বুখারী, খন্ড-২, পৃ-২৫২, বাবুত তারাবীহ এবং আল-ক্ববাজ, পৃ-৯৮]।

ইহা কেবল দাবীই নয় বরং ইহা হল সেই বাস্তবতা যার প্রতি সমস্ত মুসলমানের ইজমা আছে এবং আহলে সুন্নাতগণ তাদের সিহাহগুলিতে (সহীহ হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবগুলোতে) লিপিবদ্ধ করেছেন এবং প্রত্যেক সত্যসন্ধ্যানীই বিষয়গুলি অবগত আছেন। হযরত আলী কোরানের হেফাজত করতেন, উহার সমস্ত আহ্কাম জানতেন এবং সর্বাগ্রে তিনিই কোরআন একত্র জমা করেছিলেন, যেমনটি বুখারী লিপিবদ্ধ করেছেন। অথচ হযরত আবু বকর, উমর আর উসমানের কোরআনের সাথে কোন সম্পর্কই ছিলনা, আর না তারা এর আহ্কাম থেকে জ্ঞাত ছিলেন [হাদীসের গ্রন্থসমূহে ইহা খুবই বিখ্যাত যে হযরত উমর কালালার আহ্কাম জানতেন না, অনুরূপভাবে তায়াম্মুমের আহ্কাম থেকেও অজ্ঞ ছিলেন। আর এই কথাটি সকলেরই জানা আছে। দেখুন- বুখারী, খন্ড-১, পৃ-৯০]।

ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, হযরত উমর সত্তর বার “লাও লা আলীয়ুন লেহালাকা উমর” অর্থাৎ “আলী না থাকলে ওমর ধংস হয়ে যেত” কথাটি বলেছেন এবং আবু বকর বলতেন যে, “হে আবুল হাসান আমি সেই যুগে যেন বেঁচে না থাকি যে যুগে আপনি থাকবেন না”। কিন্তু হযরত উসমান সম্পর্কে যা কিছুই বলুক না কেন তাতে কোন দোষ নেই। সুন্নাতে নবী (সা.) এবং সত্যতা ও উদ্ভটতা (খামখেয়ালী) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নিকট হযরত উমর সাহাবাদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলেম এবং ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে গণ্য হয়ে থাকেন। অথচ তিনি সাহাবাদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলেম ছিলেন না, যেমন তার নিজেরই বয়ান করা রেওয়ায়েত দ্বারাই প্রমানিত। তিনি বলেন যে, “নবী (সা.) উমরকে তাঁর এঁটো পানি দিয়ে দিলেন এবং জ্ঞান বলে সেটির ব্যাখ্যা দিলেন”।

স্বয়ং হযরত উমরই বলেন যে, “নবী (সা.)-এর অনেক হাদীস আমার স্মরণ নেই”। আবার হাদীসের প্রতি তার কোন আকর্ষণও ছিল না, কেননা তিনি বাজারগুলিতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকেই ফুরসত পেতেন না। বুখারী তার সহীহ্র ‘বাবুল জেহাত’-এ কারোর বক্তব্য নকল করেছেন যে, “নবী (সা.)-এর আহ্কামসমূহ পরিস্কার ছিল কেননা সকলেই তো নবী (সা.)-এর সঙ্গেই থাকতেন এবং ইসলামী বিষয়াবলীকে অবলোকন করতেন”। একদা আবু মূসা হযরত উমরের কাছে যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন কিন্তু হযরত উমর ব্যস্ত ছিলেন সেজন্য তিনি ফেরৎ চলে এলেন। হযরত উমর বললেন, “আমি আব্দুল্লাহ ইবনে কায়েসের কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি, তাকে ডেকে নাও”।

যখন ডাকা হল তখন হযরত উমর জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি ফেরৎ চলে গেলে কেন”? আবু মূসা বললেন, “আমাদেরকে এমনটাই হুকুম দেয়া হয়েছে”। হযরত উমর বললেন, “নিজের এই দলিলের পক্ষে দলিল উপস্থাপন কর, অন্যথায় তোমাকে এর জন্য ভুগতে হবে”। আবু মূসা আনছারদের কাছে গেলেন। আনছারগণ বললেন, “আমাদের মধ্যেকার সবচাইতে কনিষ্ট ব্যক্তি এ কথার স্বাক্ষী দিবে”। সুতরাং আবু সাঈদ খুদরী দাঁড়ালেন এবং বললেন, “আমাদেরকে এমনটাই হুকুম দেয়া হয়েছে”।

হযরত উমর বললেন, “নবীর এই হুকুমটি আমার অজানা ছিল। তবে হ্যাঁ আমাকে কায়-কারবার ব্যস্ত রেখেছিল”। [সহীহ বুখারী, খন্ড-৮, পৃ-১৫৭, কিতাবুল এ’তেসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ; সহীহ মুসলিম, খন্ড-৬, পৃ-১৭৯, বাবুল ইস্তিজান মিন কিতাবুল আদাব]। তালীক (সাপেক্ষ) : এই কাহিনীতে কিছু কৌতুকপূর্ণ বিষয়াবলী আছে, যা বয়ান করাটা জরুরী। ইসলামের মধ্যে ‘অনুমতি প্রার্থনা’ করার ঘটনাটি অনেক বিখ্যাত।

নবী (সা.)-এর এই সুন্নাতকে সকল বিশেষ ও সাধারণ মানুষই জানে। কেননা মানুষ যখন রাসুল (সা.)-এর নিকট আসতো তখন প্রথমে অনুমতি প্রার্থনা করতো। আবার ইহা ইসলামী কৃষ্টি-কালচারেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১। এই ঘটনা দ্বারা এ কথাও বুঝে আসে যে, উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে দরওয়ান ও পাহারাদার থাকতো, যারা মানুষকে বিনা অনুমতিতে তার নিকট যেতে দিত না।

আবু মূসাও তিন বার অনুমতি চেয়েছিলেন, অনুমতি না পাওয়ায় তিনি ফেরৎ চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত উমরের বন্ধু-বান্ধব ও সহযোগী সকলেই বনু উমাইয়্যা ছিল, তারা তাকে নবী (সা.)-এর উপরে ফজিলাত (প্রাধান্য) দিতে চাইত। সেজন্য তারা এমন কথাও বলে দিল যে, তিনি (উমর) কোন রক্ষি বা বডিগার্ড ছাড়াই প্রকপাশ্যে রাস্তার উপরই ঘুমিয়ে পড়তেন। তারা আরো বলতো যে, তুমি ন্যায় বিচার করেছ বিধায় (এখানে) ঘুমিয়ে পড়লে। (উদ্দেশ্য এটাই যে যদি ন্যায় বিচার না করতে তাহলে প্রকাশ্যে রাস্তায় কি ঘুমাতে পারতে? যে কেউ হত্যা করে ফেলত)।

অর্থাৎ তারা এ কথাই বলতে চায় যে, হযরত উমর নবী (সা.)-এর চেয়েও বড় ন্যায়বিচারক ছিলেন, কেননা নবী (সা.)-এর কাছে রক্ষী ও দারওয়ান থাকত না অন্যথায় এ কথা কেমন করে বলা হল যে, “উমরের মৃত্যুর সাথে ন্যায় বিচারও মরে গেল”? ২। এই রেওয়ায়েত দ্বারা উমরের কঠিন রাগী ও বদ মেজাজী হওয়া এবং মুসলমানদের সাথে তার দূর্ব্যবহারের কথা আমরা বুঝতে পারি। আবু মূসা আশয়ারী সাহাবাদের মাঝে সবচাইতে বয়স্ক ছিলেন। অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে নবী (সা.)-এর হাদীস দিয়ে দলিল উপস্থাপন করেছেন। পক্ষান্তরে হযরত উমর বলেন যে, “আল্লাহর কসম তুমি যদি তোমার বক্তব্যের পক্ষে যদি কোন স্বাক্ষী উপস্থাপন না কর তাহলে আমি তোমাকে পিঠ ও পেটের ব্যাথায় ভোগাবো”।

[দ্র: সহীহ মুসলিম, খন্ড-৬, পৃ-১৭৯, কিতাবুল আদাব, বাবুল ইস্তিযান] আবু মূসার জন্য এর চাইতে বড় অপমান ও অসম্মান আর কি হবে যে তাকে মানুষের সম্মুখে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা হল এবং নবীর হাদীস শুনানোর জন্য তাকে কঠিন শাস্তি প্রদানের হুমকি দেয়া হল। অথচ হাদীসের সত্যতার প্রতি স্বাক্ষ্য মওজুদ ছিল। উবাই ইবনে কা’ব হযরত উমরকে বললেন যে, “রাসুলের সাহাবীদের জন্য কখনই আযাব হয়ে যেও না”। [পূর্ববর্তী সূত্র দ্রষ্টব্য] আমার তো অধিকাংশ বিষয়াবলীতে হযরত উমরের কঠোরতা ছাড়া নরম ও নেক কোন ব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয় না। কারণ তিনি আল্লাহর কিতাব এবং নবী (সা.)-এর সুন্নাতের বিরোধিতা করতেন আর রাগান্বিত হতেন ও ভয় দেখাতেন।

তার কঠোর মেজাজী অনেক সাহাবাকে সত্য লুকাতে বাধ্য করেছিল। যেমন ‘তায়াম্মুম’-এর বিষয়ে হযরত উমর, হযরত আম্মার ইয়াস্সারকে নবী (সা.)-এর সুন্নাত বয়ান করা থেকে নিষেধ করেছিলেন। আর হযরত উমর যখন বেশি হাম্বি-তাম্বি দেখালেন তখন হযরত আম্মার ইয়াস্সার বললেন, “তুমি যদি বল তাহলে আমি এই ঘটনা কাউকেই বলব না”। [সহীহ মুসলিম, খন্ড-১, পৃ-১৯৩, বাবুত তায়াম্মুম, সহীহ বুখারী বাবুত তায়াম্মুম]। এই বিষয়ে অগণিত স্বাক্ষ্য মওজুদ আছে যে, হযরত উমর হযরত আবু বকরের যুগেই সাহাবাদেরকে নবী (সা.)-এর হাদীস বয়ান করা থেকে নিষেধ করে দিয়েছিলেন এবং নিজের ১০ বছরের খেলাফত আমলে এ বিষয়ে কঠিনভাবে আমল করেছিলেন।

আর সাহাবাগণ নবী (সা.)-এর যত হাদীস জমা করেছিলেন সেগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন উপরন্তু সেগুলি বয়ান করতেও নিষেধ করে দিয়েছিলেন। এ জন্য কিছু কিছু সাহাবাকে গৃহবন্দীও করে রেখেছিলেন। (এই বিষয়কে আমি ‘আহলে যিকির’-এ বিস্তারিতভাবে বয়ান করেছি। আগ্রহীদের জন্য উহা অধ্যয়ন করাই যথেষ্ট হবে)। হযরত উমরের খেলাফতের পূর্বে হযরত আবু বকর এবং তার খেলাফতের পরে হযরত উসমান হাদীসের প্রতি কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।

তাসত্বেও আমাদেরকে বলা হয় যে, সমস্ত খলিফা নবী (সা.)-এর সুন্নাতের প্রতি আমল করতেন, অথচ তাদের আমলে সাহাবাগণ নবী (সা.)-এর হাদীস বয়ানই করতে পারতেন না কারণ সেগুলিকে পুড়িয়ে দেয়া হত? ৩। এই রেওয়ায়েত দ্বারা এ কথাও বুঝে আসে যে, উমর ইবনে খাত্তাব বেশীরভাগ সময়ই নবী (সা.)-এর মজলিশে অনুপস্থিত থাকতেন এবং তিনি বাজারে ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নবী (সা.)-এর হাদীস শুনতে পারতেন না। সেজন্যই তিনি বেশীরভাগ হাদীসই জানতেন না অথচ সাহাবাদের মধ্যে প্রায় সকল বিশেষ ও সাধারণ সাহাবীই সেগুলি জানতেন এমনকি তাদের সন্তানগণও তা জানতো। সুতরাং হযরত আবু মূসাকে হযরত উমর যখন হুমকি দিলেন আর তিনি যখন আনছারদের নিকট গেলেন তখন তারা একথাই বললেন যে, “এই হাদীসকে আমাদের ছোট্ট বাচ্চাই উপস্থাপন করবে”। অতঃপর আবু সাঈদ খুদরী তার সঙ্গে গেলেন, যদিও তিনি সবার কনিষ্ট ছিলেন।

তিনি স্বাক্ষ্য দিলেন যে, “আমি নবী (সা.)-এর এই হাদীস শ্রবণ করেছি”। খেলাফতের মসনদে আরোহনকারী হযরত উমরের জন্য ইহা অপমানজনক ব্যাপার যে, তিনি নবী (সা.)-এর হাদীস থেকে অজ্ঞ ছিলেন। অথচ একজন বাচ্চা তা জানতো। আবার রাসুল (সা.)-এর এই হাদীসের উপর কেন আমল হল না, যেখানে তিনি বলেছেন, “যখন কাউকে কোন প্রজার বিষয়াবলীর দায় দায়ীত্ব প্রদান করা হয় এবং সে জানে যে এই জাতির মধ্যে তার চেয়েও অধিক জ্ঞানী কেউ আছে, তাহলে সে আল্লাহ ও রাসুল এবং মুমিনদের সাথে খেয়ানত করল”। আমার ধারণা তো এই যে, উমর ইবনে খাত্তাব নবী (সা.)-এর এমন হাদীসসমূহ শুনে ছিলেন এবং সেগুলিকে নবী (সা.)-এর জীবদ্দশাতেই অস্বীকার করেছিলেন।

কেননা সেগুলির প্রতি তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং সেগুলির মোকাবেলায় (বিপরীতে) নিজের ‘ইজতিহাদ’ শুরু করে দিয়েছিলেন। আমাদেরও উচিৎ আমরা যেন হযরত উমরের মূর্খতাকে তার মতই স্বীকার করে নেই। তিনি যখন কিছু কিছু সাহাবার সাথে বিতর্কে পরাজিত হয়ে যেতেন তখন বলতেন, “হে উমর! সমস্ত মানুষ তোমার চেয়ে অধিক জানে, এমনকি পর্দার অন্তরালে মহিলারাও তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখে”। কখনো বলতেন, “যদি আলী না হত তাহলে উমর হালাক হয়ে যেত”। আবার কখনো অজ্ঞতার কথা এমন ভাষায় বলতেন যে, “বাজারের কর্ম ব্যস্ততা আমাকে নবীর হাদীস থেকে বঞ্চিত রেখেছিল”।

আর হযরত উমর যখন নবী (সা.)-এর হাদীসের প্রতি অবজ্ঞা প্রদশন করে বাজারের খেল-তামাশায় ব্যস্ত থাকতেন, তখন তো তিনি কোরআন থেকেও অজ্ঞ হবেন। বিধায় একদা তিনি বিখ্যাত হাফেজ উবাই ইবনে কা’ব-এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলেন এবং তার কেরায়াতকে অস্বীকার করে বসলেন আর বলতে লাগলেন যে, “আমি তো ইতিপূর্বে এমন তেলাওয়াত কারোর কাছে শুনিনি”। উবাই ইবনে কা’ব বললেন, “হে উমর আমি কোরানের প্রতি আগ্রহী ছিলাম, অথচ আপনি বাজারে ব্যস্ত থাকতেন”। [দ্র: তারিখে ইবনে আসাকির, খন্ড-২, পৃ-২২৮; অনুরূপভাবেই হাকিম তার মুস্তাদরাকে, আবু দাউদ তার সুনানে এবং ইবনে আসীর জামেউল উসুলে রেওয়ায়েত করেছেন] অতএব হযরত উমর ব্যবসা ও বাজারের খেল-তামাশায় ব্যস্ত থাকতেন আর এসমস্ত বিষয়াবলী সাহাবাদের মধ্যেকার বিশেষ ও সাধারণ সকলেই জানতেন। বিশেষ করে ঐ সকল ব্যক্তির কাছে এগুলো মোটেই অজানা ছিলনা যারা আল্লাহর কিতাব এবং রাসুল (সা.)-এর হাদীস জানতেন।

এ জন্য আমার আকীদা হচ্ছে যে, হযরত উমর এক মিশ্রিত মূর্খতার শিকার ছিলেন। কেননা যে সকল বিষয়াবলী মুসলমান বাচ্চাদের স্মরণ ছিল সেগুলিও তার স্মরণ ছিলনা। একটি বাচ্চা যা জানতো তিনি তা জানতেন না। অনরূপভাবে, একদিকে হলেন হযরত আলী যার বয়স তখনো ত্রিশ হয়নি, অথচ আল্লাহর কিতাব এবং রাসুল (সা.)-এর হাদীসের ক্ষেত্রে তাঁর রায় সঠিক প্রমানিত হত। তাঁর সম্পর্কে সাহাবাদের সম্মুখেই হযরত উমর বলেছিলেন, “যদি আলী না থাকতেন তাহলে উমর হালাক হয়ে যেত”।

একদা মসজিদের শেষকোণা থেকে একজন মহিলা সকল নামাজির সম্মুখে মিম্বরে উপবিষ্ট হযরত উমরের প্রতি মহিলাদের দেন-মোহর বিষয়ে আপত্তি তোলে। তিনি যখন জবাব খুজে পেলেন না তখন বলেন যে, “পরদার অন্তরালের মহিলারা আমার চেয়ে বেশি ফিক্হ শাত্রে জ্ঞান রাথে”। বাস্তবতা তো এই যে, হযরত উমর নিজের মূর্খতাকে ঢেকে রাখা এবং নিজের সিদ্ধান্তকে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করেছেন সেটিকে বিনয় ও শিষ্টতার নাম দেয়া যেতে পারেনা, যেমনটি আজ অনেক মানুষ বলে থাকেন। বরং তার দ্বারা যতটুকু সম্ভব হয়েছে তিনি নবী (সা.)-এর সুন্নাতকে মুছে ফেলেছেন এবং আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের বিপরীত নিজের ইজতিহাদ করেছেন। হযরত উমরের জীবনী লেখক এই কথা ভাল করেই জানেন যে, নবুয়াতের ঘোষণার পর এগারো বছর অথবা তার চেয়েও কম সময় পর্যন্ত তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন।

নিজের সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি এবং বনী উমাইয়ার মধ্যেকার আমার প্রতিবেশি জায়দ, একজন একজন করে নবীর নিকট যেতাম। একদিন জায়েদ আর একদিন আমি যেতাম এবং অহি ইত্যাদীর খবর নিয়ে আসতাম। অপর দিন জায়েদও গেলে সেই খবরই নিয়ে আসতেন”। [সহীহ বুখারী, খন্ড-১, পৃ-৩১, কিতাবুল ইল্ম বাবুত তানাদুত ফিল ইল্ম]। হযরত উমরের উক্ত বক্তব্য স্বয়ং বলে দিচ্ছে যে, তিনি রাসুল (সা.)-এর মসজিদ হতে দূরে কোথাও বসবাস করতেন।

সেজন্যই তিনি নিজের প্রাত্যহিক জীবনকে দুভাগে বিভক্ত করে নিয়েছিলেন। একদিন নিজে রাসুল (সা.)-কে দেখতে যেতেন এবং পরের দিন হযরত জায়েদ যেতেন। আবার কখনো এমনও হত যে দূরত্ব বেশি হবার কারণে হযরত উমর কষ্ট স্বীকার করতেন না এবং যেতেনও না। অথবা দূরত্ব হয়তো বেশী ছিলনা বরং হযরত উমর বাজারে ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আবার আমরা যখন আবু মূসা আশয়ারীর ঘটনায় যা পূর্বে বয়ান হয়েছে, হযরত উমরের এই বক্তব্যকে যুক্ত করে নেই যে “ব্যবসা-বানিজ্য আমাকে নবীর খেদমত থেকে সরিয়ে বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছিল”।

আবার তার পরপরই উবাই ইবনে কাবের বক্তব্য যে, “আমি কোরআনের প্রতি আগ্রহী ছিলাম আর হে উমর তুমি বাজারে আগ্রহী ছিলে”, তখন এসমস্ত কথাবার্তা দিয়ে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে হযরত উমর, রাসুল (সা.)-এর সাথে বেশী সময় অতিবাহিত করেন নি। হযরত উমর অধিক সময় রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে অনুপস্থিত থাকতেন। এমন কি সেই সমস্ত মহান উপলক্ষ্য গুলোতেও অনুপস্থিত থাকতেন যেখানে সকল মুসলমান একত্রিত হতেন যেমন- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। কেননা হযরত উমর পরবর্তীতে সেই সমস্ত ব্যক্তিবর্গকে জিজ্ঞাসা করতেন যাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামাজ প্রতিষ্ঠা করা থেকে ব্যবসা-বানিজ্য দূরে সরিয়ে রাখতে পারত না। সুতরাং হযরত উমর জিজ্ঞাসা করতেন, “রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজে কি পাঠ করেছেন”।

মুসলিম তার সহীহ্র ‘কিতাবুল ঈদাইনে’ ওবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমর আবু ওয়াকাদুল লায়সাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, “রাসুল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে কি পাঠ করেছিলেন”। তিনি বললেন, “ক্বাফ ওয়াল কুরআনুম মাজিদ এবং ইক্বতারাবুস সায়াতু ওয়ান শাক্কুল ক্বামার” [সহীহ মুসলিম, খন্ড-৩, পৃ-৬১, কিতাবুস সালাত, বাব- মা ইয়াক্বরাউ বিহিস সালাতুল ঈদাইন]। স্বয়ং আবু ওয়াক্বদুল লায়সা হতে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেন, “আমাকে উমর জিজ্ঞাসা করলেন যে, ঈদের দিন রাসুল কি পাঠ করেছিলেন”। আমি বললাম, “ইক্বতারাবাতুস সায়াতু এবং ক্বাফ ওয়াল কোরআনুম মাজিদ” [সহীহ মুসলিম, খন্ড-৩৩, পৃ-৬১, কিতাবুস সালাত] ওবায়দুল্লাহ এবং ওয়াক্বাদুল লায়সার বক্তব্য দ্বারা ইহা প্রতিয়মান হয় যে, হযরত উমর জানতেন না যে, নবী (সা.) ঈদের নামাজে কোন সূরাটি পাঠ করেছিলেন। আবার উবাই ইবনে কা’ব এবং স্বয়ং হযরত উমরের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি কোরআন শ্রবণ করতেন না, বরং কায়-কারবারের জন্য বাজারে ব্যস্ত থাকতেন।

তা সত্বেও এমন সব ফতোয়া দিতেন যেগুলিকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ওলামাগণ হতভম্ব হয়ে আছেন। উদাহরণ স্বরূপ : কোন ‘মুজনাব’ (যার বীর্যস্খলণ হয়েছে) ব্যক্তি যদি পানি না পায় তাহলে সে যেন নামাজ ছেড়ে দেয়। অনুরূপভাবে তিনি ‘তায়াম্মুমের’ আহ্কাম থেকেও অজ্ঞ ছিলেন। অথচ কোরআন ও হাদীসে তায়াম্মুমের আহ্কাম বয়ান হয়েছে। তিনি ‘কালালার’ আহ্কাম থেকেও অজ্ঞ ছিলেন।

আর নাজানে তিনি এমন কত সব ক্রুটিযুক্ত ফয়সালা করেছেন। যদিও সেগুলি কোরআনে বয়ান হয়েগিয়েছিল আর হাদীসে সেগুলির বিস্তারিত বর্ণনা ছিল। কিন্তু হযরত উমর সেগুলিকে মৃত্যু পর্যন্ত বুঝতে পারেন নি। [বায়হাকী তার সুনানে রেওয়ায়েত করেছেন যে, হযরত উমর নবী (সা.)-এর নিকট ভাইয়ের উপস্থিতিতে দাদার মীরাস সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, “হে উমর তুমি এ বিষয় সম্পর্কে কেন জিজ্ঞাসা করছ।

এমন মনে হচ্ছে যেন তুমি ইহা জানার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করবে”। ইবনে মুসায়ব বলেন যে, হযরত উমর এ বিষয়টি নাজানা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন]। হযরত উমর যদি নিজের সীমারেখার মধ্যে থাকতেন এবং মাসয়ালা-মাসায়েলগুলোকে শেখার চেষ্টা করতেন তাহলে তা স্বয়ং তার পক্ষে এবং সমস্ত মুসলমানের পক্ষে ভাল হত। কিন্তু আমিত্ব তাকে পাপের মুখে ঠেলে দিল, আর তিনি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) কর্তৃক হারাম করা বিষয়াবলীকে হালাল ঘোষণা দিয়ে দিলেন। যেমন, মোতায়ে হজ্জ ও মোতায়ে নিসা এবং মোয়াল্লেফাতুল কুলুবের অংশ।

আবার যেসমস্ত বিষয়াবলীকে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) হারাম ঘোষণা দিয়েছিলেন সেগুলিকে তিনি হালাল ঘোষণা দিয়ে দিলেন। যেমন, তিন তালাককে জায়েজ করেদিলেন এবং মুসলমানদের পশ্চাতে গুপ্তচর নিয়োগ ইত্যাদী [দ্র: আল্লামা শরফুদ্দিন সাহেবের কিতাব ‘আন নস ওয়াল ইজতিহাদ’] সম্ভবত এ কারণেই হযরত উমর এবং তার বন্ধু হযরত আবু বকর প্রথম দিন থেকে রাসুল (সা.)-এর হাদীস বয়ান করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। সেগুলির সংকলন ও লেখনীকেও নিষেধ করতেন। এমন কি উভয়েই সাহাবা কর্তৃক জমাকৃত হাদীসগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। হাদীসগুলি পুড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের তিনটি লাভ ছিল।

প্রথমত: হযরত আলী এবং আহলে বাইতগণের সেই সমস্ত ফাযায়েলকে মুছে ফেলা যা রাসুল (সা.) বয়ান করেছিলেন। দ্বিতীয়ত: রাসুল (সা.) কর্তৃক নির্দিষ্ট বিষয়াবলীর মধ্যে এমন কোন জিনিষ যেন না থেকে যায় যা তাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে যায় এবং আহ্কামের ব্যাপারে তাদের ইজতিহাদের বিপরীত অবস্থান নেয়। তৃতীয়ত: হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাসুল (সা.)-এর মাত্র কয়েকটি হাদীসই জানতেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তার মুসনাদে ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমর এই কথার প্রতি হতভম্ব ছিলেন যে, নামাজে যদি সন্দেহ হয়ে যায় তাহলে এ বিষয়ে হুকুম কি? তিনি ইবনে আব্বাসকে বললেন, “তুমি রাসুলুল্লাহ অথবা সাহাবাদের মধ্যে কারোর মুখে কি শুনেছ যে, নামাজে যদি কারোর সন্দেহ হয়ে যায় তখন সে কি করবে? [মুসনাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-১, পৃ-১৯০]। আল্লাহর কসম উমর ইবনে খাত্তাবের ঘটনা খুবই আজব প্রকৃতির।

তিনি তার নামাজও সঠিকভাবে পড়তে পারতেন না বরং সে বিষয়ে সাহাবাদের বাচ্চাদের কাছে প্রশ্ন করতেন। অথচ এটি এমন মাসয়ালা যা সাধারণ মুসলমান এমন কি একজন অক্ষরজ্ঞানহীন মূর্খ-ও জানতো। আবার তার চাইতেও আশ্চর্যজনক তো আহলে সুন্নাতগণের এই বক্তব্য যে, “হযরত উমর সাহাবাদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলিম ছিলেন”। সাহাবাদের মধ্যে সবচাইতে বড় আলিমের যদি এমন দশা হয় তাহলে আর কিই বা বলা হবে, বাস্তবতা জিজ্ঞাসা না করাই ভাল। তবে হ্যাঁ, কিছু আহ্কাম তার (উমরের) ইজতিহাদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিল।

তাও এ জন্য যে, সেগুলি দ্বারা খেলাফতের কোন খাতরা (ভয়) ছিলনা। যেমন, আবু মূসা কর্তৃক অনুমতি চাওয়ার ঘটনা অথবা উবাই ইবনে কা’ব কর্তৃক সেই ক্বেরায়াত দ্বারা প্রমাণ উপস্থাপন করা যা হযরত উমর জানতেন না। সুতরাং এখানে হযরত উমর গর্বের সাথে স্বীকার করে নিয়ে বলেন যে, “হ্যাঁ, আমি বাজারের কর্মে ব্যস্ত থাকতাম”। কিন্তু হযরত আলী বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বিশেষ করে দু’বার যেতাম। একবার সকালে একবার সন্ধ্যায়”।

এই সকাল ও সন্ধ্যার মজলিশটি হযরত আলীর জন্য বিশিষ্ট ছিল। ইহা ছাড়াও তিনি সকল মজলিশেই উপিস্থত থাকতেন। সাহাবাদের মধ্যে হযরত আলীই সবচাইতে অধিক সময় নবী (সা.)-এর নিকটে থাকতেন, তিনিই সবচাইতে বেশি তাঁর সাথে সম্পৃক্ত থাকতেন এবং জন্মের পর থেকেই তিনি রাসুল (সা.)-এর বিশেষ ¯েœহের পাত্র ছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে নিজের ক্রোড়ে লালন-পালন করেছেন। এমনকি যখন যৌবনকাল উপস্থিত হল তখন হযরত আলী তাঁর পিছনে পিছনে এমনভাবে হাটতেন ঠিক উষ্ট্রের দুগ্ধপায়ী বাচ্চা যেমন মায়ের অনুসরণ করে।

এমনকি অহি অবতরণের সময় হেরা গুহাতেও তিনিই নবী (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি দোলনাতেই রেসালতের দুগ্ধ পান করেছেন এবং নবী (সা.)-এর সুন্নাতের জ্ঞান লাভ করতে থাকেন। সুন্নাত ও রাসুল (সা.)-এর হাদীসের বিষয়ে তাঁর চেয়ে উত্তম আর কে আছে? তাঁর ব্যতীত আর কেউ কি এমন দাবী করতে পারে, ন্যায় বিচারকগণ বুলন? ইহা এই কথার সবচাইতে বড় দলিল যে, হযরত আলী এবং তাঁর শুভাকাঙ্খি, যারা তাঁকে অনুসরণ করেন, তারা হলেন নবী (সা.)-এর সুন্নাতের প্রতীক এবং সুন্নাতের উপর আমলকারী। কিন্তু তাদের ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রে নবীর সুন্নাতের সাথে দূরেরও কোন সম্পর্ক নেই, আর না সেটির হিদায়েত তাদের দিকে হয়। যতই তারা অজ্ঞতা ও তাকলীদের ভিত্তিতে নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ দাবি করুক না কেন।

এ বিষয়টি আমি ইনশা আল্লাহ বিস্তারিতভাবে পরবর্তীতে উপস্থাপন করব। “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্ল¬াহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্ল¬াহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল। ” [সূরা আহযাব, আয়াত : ৭০-৭১] / চলবে........................ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।