বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে সারা দেশেই এই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল ও সুদূর প্রসারী প্রভাব নিয়ে আলোচনা আর জল্পনা কল্পনা ততোই ঘনীভূত হচ্ছে। এই নির্বাচনে মেয়র পদে তিন জন শক্তিশালী প্রার্থী লড়ছেন। জন সমর্থনের বিচারে তারা কেউ কারো চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। বিএনপি সমর্থিত একক প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের বিপরীতে আওয়ামী ঘরনার প্রায় সমান শক্তির দুই প্রার্থী শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াত আইভি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরও এখনও কাউকেই পরিষ্কার ফেভোরিট বলা যাচ্ছেনা। এই নির্বাচনের জয় পরাজয় যেমন হাজারো সমীকরণের উপর নির্ভর করছে, তেমনি নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং তার ফলাফলের উপরও নির্ভর করছে দেশের আগামী রাজনীতির অনেক সমীকরণ।
নাসিক নির্বাচনে যেই প্রার্থিই জয়লাভ করুননা কেন ফলাফলের সুদূর প্রসারী সুফল যে আওয়ামী লীগ ঘরে তুলছে তা এখন দ্বিধাহীন ভাবেই বলা যায়। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত অ্যাডভোকেট তৈমুর আলমের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করা এবং বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগের শামীম ওসমানের প্রতি সমর্থন ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এই সুফল ঘরে তোলা নিশ্চিত করেছে। যদি সরকার ও নির্বাচন কমিশন নাসিক নির্বাচনে স্বচ্ছ, সন্ত্রাসবিহীন এবং প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে তাহলে ফলাফল যা ই হোক না কেন শামীম ওসমানের প্রতি আনঅফিসিয়াল সমর্থনের সুফল তারা ভোগ করবে।
আওয়ামী ঘরনার দুই প্রার্থী থাকায় ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে তৈমুর আলম খন্দকারের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বেড়েছে। তিনি যদি জয় লাভ করেন তা বিএনপির জন্য হবে একটি মোরাল বুষ্ট।
ইতিপূর্বে চট্টগ্রামেও তারা জয়লাভ করেছে। কিন্তু সে বিজয়ের সুফলকে তারা জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিফলিত করতে পারেনি। তার একটি প্রধান কারণ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যুর প্রাধান্য। তা ছাড়া এই বিজয় জাতীয়তো দূরের কথা স্থানীয় প্রশাসনেও বিএনপিকে কোন সুবিধাজনক অবস্থানে নেবেনা। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ বলতে পারবে যে দলীয় সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠুও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তা ই প্রমানিত হলো এবং এ ধরনের নির্বাচনে যে বিরোধী দল বিজয়ী হতে পারে তা আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষেই সম্ভব।
তৈমুর আলম নির্বাচিত হলে তার কিংবা বিএনপির পক্ষে আগামী নির্বাচন গুলোতে ইভিএম এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। যা হবে আওয়ামী লীগের নৈতিক বিজয়। দলীয় নেতা কর্মী ও নিজেদের স্থায়ী ভোটারদের তারা বোঝাতে সুক্ষ্ম হবে যে তাদের দুই প্রার্থির সম্মিলিত ভোট বিনপি সমর্থিত প্রার্থীর চেয়ে বেশি, এটাই প্রমাণ করে যে তাদের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি। কারণ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী একজনই থাকবেন। তাছাড়া এই উদাহরণ ব্যাবহার করে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে গ্রুপিং এর বিরুদ্ধেও কার্যকর হুঁশিয়ারি উচচারণ করতে পারবেন।
সংসদ নির্বাচনের দুই বছরেরও অধিককাল আগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে এই নির্বাচনের ফলাফলের প্রত্যক্ষ প্রভাব সংসদ নির্বাচনে প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অনেক কম।
শামীম ওসমান যদি জয়ী হন তবে আওয়ামী লীগ সরাসরি তাদের বিজয় ঘোষণা করতে পারবে। ব্যাপক নেতিবাচক ইমেজ থাকার পরও যদি নিরপেক্ষ নির্বাচনে তিনি জয়ী হন তবে আওয়ামী লীগ দাবি করতে পারবে জনগণের রায় প্রমান করেছে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে যে সব নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েছে সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই। তদুপরি দলীয় সমর্থকদের ভোট দ্বিধা বিভক্ত হওয়ার পরও শামীমের বিজয় আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থনেরই প্রমান দেয়। এই বিজয়ে আওয়ামী লীগ আইভিসহ যারাই দলের ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদের সবার প্রতি সংকেত পাঠাতে পারবে যে দলের বিরুদ্ধাচরণ করলে জনগণ ও দলীয় কর্মীরা এভাবেই প্রত্যাখ্যান করবে।
শামীমের বিজয় বিএনপির জনপ্রিয়তা দাবির নৈতিক ভিতও দুর্বল করে দেবে।
সেলিনা হায়াত আইভি নির্বাচিত হলেই আওয়ামী লীগের সুদূর প্রসারী বিজয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
তিন জন হেভিওয়েট প্রার্থির মধ্যে তিনি অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের। তিনি একজন প্রখ্যাত ও জনপ্রিয় সাবেক আওয়ামি লীগ নেতার কন্যা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশ তাকে সমর্থন দিয়েছে।
তার বিজয়কে আর যা ই হোক বিরোধী দলের বিজয় বলার কোন অবকাশ নেই। কেন্দ্রীয় ভাবেও আওয়ামী লীগ তাকে নর্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়নি। সুতরাং তাকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থি বলারও সুযোগ নেই। তাকে বলা যেতে পারে বিকল্প প্রার্থি। আর এই বিকল্প প্রার্থিই যদি জয়লাভ করেন তাহলে আওয়ামি লীগ অনায়াসেই বলতে পারবে জনগন আওয়ামী লীগের পক্ষেই আছে।
আর এই প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসন যে কাজ করেছে তা বলা যাবেনা যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃতের আশির্বাদ পুষ্ট নন। সুতরাং আইভির বিজয় প্রমান করে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সামনে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা বিএনপির নেই। শোনা যায় শামীম ওসমান যদি আইভির পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতেন তাহলে তাকে প্রতিমন্ত্রী করার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। যেহেতু তিনি তখন সরে দাঁড়াননি তাই তাকে আর সেই প্রতিমন্ত্রীত্বও দিতে হবে না।
সকারি দল যদি শামীমের পরিবর্তে আইভির প্রতি সরাসরি সমর্থন দিত তাহলে তার বিজয় অনেকাংশেই সুনিশ্চত ছিল।
সেক্ষেত্রে নিশ্চত পরাজয়ের মুখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে হলেও তৈমুর আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারতেন। তখন আওয়ামী লীগের পক্ষে এই ত্রিমুখী সমীকরনের সমুদয় সুফল পাওয়া সম্ভব হতোনা। কারণ, বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় ভাবে আর তেমন গুরুত্ব বহন করতোনা এবং বিএনপির দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং ইভিএম ব্যাবহার বিরোধী অবস্থানকে আরো বেশি সংহত করত। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে একটি ক্যালকুলেটেড গ্যাম্বল খেলছে। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক এই এক্সপেরিমেন্টটি অলমোস্ট পারফেক্টই বলতে হবে।
তবে পুরোপুরি পারফেক্ট করতে গেলে সরকারকে একটি স্বচ্ছ এবং সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি ও প্রসাশনের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের হারানোর কিছু নেই। জয় করার জন্য আছে সারা দেশ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।