প্রায় দুই বছর আগে ইরানের নির্বাচনের পর থেকে শুরু হওয়া মধ্যপ্রাচ্যের বিক্ষোভে তিউনিশিয়া ও মিশরে একনায়কদের পতন হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লিবিয়ার স্বৈরশাসক মুয়াম্মর গাদ্দাফি নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে আরব বিশ্বের আরেক একনায়কের অবসান ঘটল। হঠাত্ করেই কেন আরব বিশ্বের জনগণ গণতন্ত্রপ্রেমী হয়ে উঠল? যুগ যুগ ধরে যারা শাসকের গুণকীর্তন করেছে, সেই শাসকের বিরুদ্ধেই কেন অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল? কীভাবে এতটা সাহসী হল এসব সাধারণ মানুষ। বলা হচ্ছে এর পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ)। যারা অর্থ, অস্ত্র ও বুদ্ধি দিয়ে এসব দেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বেলে দিয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান অবজারভারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব বিশ্বের এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, সশস্ত্র হামলা মূলত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র অনুপ্রেরণায়। শুধু এই তিন দেশে নয় জর্দান, মরক্কো, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, বাহরাইন ও সিরিয়াতেও বিক্ষোভের পেছনে ছিল সিআইএ।
১১ সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর অনেক মুসলিম দেশ সিআইএ’র গোপন যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, ইয়েমেন, মিশর, লিবিয়া, পাকিস্তান ও আরো কয়েকটি পারস্য উপসাগরীয় কূলের দেশ ছিলো অন্যতম। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ বারবারই বলেছেন, তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন না।
বরং সিআইএ’র গোপন কৌশল দিয়ে দিয়ে এসব দেশে মার্কিন নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন তিনি। সিআইএ’র এজেন্টরা এখন প্রায় সকল ইসলামি দেশে বিচরণ করছে। বিভিন্ন কৌশলে তারা এসব দেশে মনস্তাত্ত্ব্বিক যুদ্ধ বাস্তবায়ন করছে।
এসব দেশে তাদের গড়ে তোলা বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে সিআইএ’র এজেন্টরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মিথ্যা প্রচারণা, রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মতাবলম্বী, জাতিগত বিভক্তি, সহিংসতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
এসব অস্ত্রের ব্যবহার দেশ ভেদে ভিন্ন হয়। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গুপ্তহত্যা এবং নিরীহ মানুষদের হত্যা করা এই এজেন্সির বড় লক্ষ্য।
এ প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমা হামলায় অভিযুক্ত রামজি ইউসুফের কথা স্মরণ করা যেতে পারে, যিনি সিআইএ ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এসব কর্মকান্ডের বিষয়ে অবগত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে মার্কিন আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা কসাই, তোমরা মিথ্যাবাদী, তোমরা বিশ্বাসঘাতক। তোমরা গণমাধ্যমের সামনে সন্ত্রাস দমনের কথা বল, আর পেছনের দরজা দিয়ে সন্ত্রাসবাদে সহায়তা কর’।
ইরাকে আগ্রাসনের আগে দেশটিতে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এমন গুজব সিআইএ রটিয়েছিলো। যদিও তার সত্যতা মিলেনি।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওয়াশিংটনের সমর্থন মিশর, তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার জনপ্রিয় বিক্ষোভের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এমনকি দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ সিরিয়া ও বাহরাইনের গণবিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আরব বিশ্বে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা পরিবর্তন এনেছেন।
আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বলছেন।
গত ২ মার্চ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট সালেহ সিআইএ এবং ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ভূমিকার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আরব বিশ্বকে অস্থিতিশীল করার জন্য হোয়াইট হাউস তেল আবিবে (ইসরাইলের রাজধানী) একটি অপারেশনস রুম পরিচালনা করছে। এছাড়া সানায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিরোধীরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করে চলেছে।
সম্প্রতি উইকিলিকসের ফাঁস করা এক গোপন তার বার্তায় বলা হয়েছে, সিরিয়া ও অন্যান্য আরব দেশগুলোতে বিক্ষোভ সংগঠিত করছে সিআইএ।
যাহোক ওবামার প্রদর্শিত কৌশলে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফি, তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলী এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারককে ক্ষমতা থেকে অপসারণে সিআইএ সফল হয়েছে। যদিও বহু বছর ধরে এসব একনায়কের গদি দীর্ঘস্থায়ী হবার পেছনে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া কিছু কিছু তথ্যে-উপাত্তে দেখা যায়, সোমালিয়া ও ইয়েমেনে অবস্থানরত আল কায়েদাকে দমনের ভান করে ওবামা প্রশাসন হর্ন অব আফ্রিকা এবং আরব উপত্যকায় সিআইএ’র জন্য একটি গোপন ড্রোন ঘাঁটি গড়তে চাইছে।
তবে এ মুহূর্তে যে প্রশ্নটি সবার সামনে আসছে তা হল এ অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ কী? বলা হচ্ছে, ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। আর বড় বিষয় হল, তারা আরব বিশ্বের তেলক্ষেত্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে।
যদিও এসব দেশের আন্দোলনের আগুনে সিআইএ’র ঘি ঢালার কারণে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বে অসন্তোষও বাড়ছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর কায়রোতে ইসরাইলি দূতাবাসে হামলার ঘটনা এর বড় উদাহরণ হতে পারে
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।