আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সে আছে নীরবে...................

ভালো লাগে স্বপ্নের মায়াজাল বুনতে দক্ষিণের জানালা দিয়ে শিরশির করে বাতাস ঢুকছে। আরেকটা দিনের শুরু হলো। কিছুক্ষণ আগে মা পাশের টেবিলে খবরের কাগজটা রেখে ব্যস্ত পায়ে চলে গেল। আমি জেগেই ছিলাম। তবুও মাকে দেখে চোখ বন্ধ করে নেই।

মা ও এখন চেষ্টা করে আমি উঠার আগে এই কাজটা করে ফেলতে। এখন আর কেউ বিনা প্রয়োজনে আমার মুখোমুখি হতে চায়না। মাঝে মাঝে ভাবি, কেন যে আমার জন্য সকালটা আসে ! রাতেই থমকে যেতো সময়টা তাহলে ভালোই হতো। অজান্তে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিছানা থেকে উঠি। এই রুম থেকে বের হলেই কিছু প্রশ্নভরা চোখ আমার দিকে তাকিয়ে ঠাকে।

খুব অসস্ত্বি লাগে তখন। অথচ বের না হলেও যে আমার চলেনা। এই রুম থেকে যে আমি পুরো আকাশটা দেখতে পাই না। হেয়ালী করে একদিন সে বলেছিলো, "তমা, আমি যদি কখনো কোন কারণে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকি, তুমি রোজ সময় করে ঐ নীল আকাশটা প্রাণ ভরে দেখো। আমি আকাশ হয়ে তোমায় ছেয়ে থাকবো।

" আজ সে হেয়ালীপনায় আমার নিত্যাভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু ঐ প্রশ্ন ভরা চোখ গুলো আমাকে ভীষণ বিব্রত করে। সাতটা অনেক্ষণ আগে বেজে গেছে। এখন আর দেরি করা যায় না। গুটি গুটি পায়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যাই।

বাড়ির অন্যান্যরাও আসা শুরু করেছে। আমার চেয়ার টা টেনে বসে পড়ি। রুবি খালা তরকারী বেড়ে দিতে দিতে বলেন, জানিস তমা, মৃদুলার জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে বিদেশে থাকে। ওখানে ডাক্তারী করে।

মৃদুলাকে ওদের বেশ পছন্দ হয়েছে। ওরা চাইছে আসছে ফাল্গুনেই বিয়েটা হয়ে যাক। আমি বুঝতে পারি, সব কটা চোখ এখন আমাকে দেখছে। মাথা নোচু করে খাওয়ার ভঙ্গিতে বলি, ভালো সম্বন্ধ হলে বিয়ে দিয়ে দেন না। আমাকে বলার কি আছে।

খালা এবার হাসার চেষ্টা করে বলেন, শোন মেয়ের কথা, বড় মেয়ের বিয়ে না হলে কি আর ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারি। লোকে কি বলবে? আগের অবস্থা থেকেই বলি, ওসব এখন আর কেউ মানে না খালা। আপনি মৃদুলার বোয়ের ব্যবস্থা করেন। আমি বিয়ে করবো না। মা পাশ থেকে মুখে আচল চেপে সরে যায়।

বুঝি, এখন সে রান্না ঘরে গিয়ে দু-এক ফোটা চোখের পানি ফেলবে। আমি সবই বুঝি, কেন প্রতিদিন সকালে এসব কথা ওঠে। এমন নয় যে আমি এ সংসারের বোঝা হয়ে গেছে। আসলে ওরা ভাবে আমি ভিষণ কষ্টে আছি। কিন্তু কিভাবে বোঝায় তাদের আমার যে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়না।

আমি সুখেই আছি। বরং ওদের ঐ প্রশ্নভরা চোখগুলোই আমাকে কষ্ট দেয়। বিয়ে তো আর সব সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আর তাছাড়া বিয়ে হয়ে গেলে কি আমি একান্তে বসে কখনো তার কথা ভাবতে পারবো? এই তো বেশ আছি। রাতুল, আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।

তাহমিনার বোয়েতে তার সাথে আলাপ হয়। ও বরপক্ষ হয়ে এসেছিলো বি্যেতে। বেয়াইন হিসেবে একটু খুনসুটি চলেছিলো দু পক্ষ। তবে সেডিন কেবল ঐ আলাপ পর্যন্তই ছিলো। এরপর শহরের এখানে ওখানে আমাদের দেখা হতে থাকে।

এমন নয় যে আগে থেকেই ঠিক করে দুজন দেখা করি। কাকতালীয়ভাবেই দেখা হতে থাকে। এমনি হতে হতে সে আমাকে একদিন সরাসরি জিগ্ঞেস করে, তমা, তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? সেদিন থেকেই আমি শুধু তমা থেকে রাতুলের তমা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তার ভালোবাসার পবিত্রতার আবাশে জড়িয়ে গেলাম। এভাবে দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল।

আমরা দুজনই ধরে নিয়েছিলাম বিয়ে করে আজীবন পাশে থাকবো। বাধ সাধলেন রাতুলের মা। তিনি অসুস্থ অবস্থায় রাতুলকে তার পছন্দ করা মেয়ের সাথে বিয়ে দিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের কথা রাতুল ফেলতে পারে নি। আমি ও তাকে বাধা দেইনি।

মায়ের অবাধ্য হয়ে রাতুল যে আমার সাথে সুখী হবে না , আমি তা বুঝতে পেরেছিলাম। সেই বিদায়ের দিন প্রথম ও আমার হাত ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা নীরবে বসেছিলো। আমি কাদিনি সেদিন, শুধু হৃদয়ের চিনচিনে এক ব্যথা অনুভব করেছিলাম। আজ রাতুলের মা বেচে নেই। তিনি মারা যাওয়ার কয়েকদিন পরেই রাতুল এসেছিলো আমার কাছে।

আমাকে ফিরিয়ে নিতে। সেদিন ও আমি আমার সব অনুভূতিকে আড়াল করে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। পারিনি ঐ নিষ্পাপ মেয়েটির সুখের সংসারে অনাহূত পদক্ষেপ রাখতে। তার তো কোন দোষ ছিলো না ! আজ রাতুল আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। রাস্তায় হঠাৎ দেখা হলে ও আমার দিকে অপলক ভাবে চেয়ে থাকে।

তার সেই দৃষ্টির মাঝেও আমি ঐ একই প্রশ্ন দেখতে পাই। কিন্তু আমার যে কিছু করার নেই। আমার এই শূন্য্ হৃদয় নিয়ে আমি কারও সংসার ভরে দিতে পারবো না। থাক না, সবার তো সবকিছু হয়না। আমি জানি, রাতুল এখনো আমাকে নিয়ে ভাবে।

আমার এক জীবনের পাথ্য হিসেবে সেই ভাবনাটুকুই যথেষ্ট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।