আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তিহাদ ভাবছে বাবা ফিরবে

“আপা, শাহীনা আমাকে ভাই ডেকেছে। তাকে না বাঁচিয়ে আমি ফিরব না। তুমি আমার জন্য দোয়া কোরো। ”
২৬ এপ্রিল রাত ১০টায় বড়বোন নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের সঙ্গে এই ছিল এজাজের শেষ কথা। মোবাইলে চার্জ না থাকায় বহু চেষ্টা করেও তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি স্বজনরা।

অপেক্ষায় আছেন মেয়ে তিহাদ। বাবা ফিরবে। মোটরসাইকেলে তাকে নিয়ে বেড়াবে।    
ভবন ধসের পঞ্চম দিনে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শাহীনা আক্তারকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন এজাজ। সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল এবং সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।


৫ মে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১২টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
৪ ভাই বোনের মধ্যে এজাজ ছিলেন ছোট। সেজবোন নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের সঙ্গেই তার ঘনিষ্ঠতা ছিল সবচেয়ে বেশি। মূলত সেজবোনের আদর-শাসনেই বেড়ে ওঠা।
নুরুন্নাহার বলেন, “ও খুব সাদাসিধাভাবে চলত।

সবসময় হাসিমুখে থাকত। যখন তাকে বকা দিতাম, তখনো সে হাসত। আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে যেত তার সাথে রাগ করে থাকা। ”
“ সে কখনো কাউকে ফিরিয়ে দিত না। ছোটেবেলা থেকেই যে কারো বিপদে সে সবার আগে এগিয়ে যেত।


১৯৭৮ সালে নোয়াখালীর হাতিয়ায় দাদারবাড়িতে জন্ম এজাজের। ঢাকায় স্থায়ী হন ১৯৮০ সাল থেকে। ফার্মগেটের ৭২ নং পূর্ব তেজতুরী বাজারে তাদের পৈতৃক বাসা। ১৯৯৩ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৫ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি।
এরপর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

সর্বশেষ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যম সারির কর্মকর্তা পদে কাজ করছিলেন।
নুরুন্নাহার বলেন, “উত্তরায় আমার বাসার যাবতীয় নকশা সে করেছিল। এছাড়া আমাদের অন্যান্যা আত্মীয়দের বাসার নকশাও তার করা। আর ২ মাস পর আমার উত্তরার বাসায় ওঠার কথা। শুধুমাত্র আমার কাছাকাছি থাকবে বলে সে উত্তরায় বাসা নিয়েছিল।


“গত ২৩ তারিখ বিকালে সে আমার বাসায় এসেছিল, দুই প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে। একটা মাংসের টুকরা আমরা ভাগাভাগি করে খেয়েছিলাম। এটাই ছিল আমাদের শেষ একসাথে খাওয়া। ”
২০০২ সালে এজাজ বিয়ে করেন তার খালাত বোন জাফরিন আক্তারকে। তিথি (৬) ও তিহাদ (৩) নামে দুটি সন্তানও রয়েছে এই দম্পতির।

সে শহীদ আনোয়ার স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
স্ত্রী জাফরিন বলেন, “তিহাদ এখনো জানে, বাবা ফিরে আসবে। কিন্তু তিথি কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে। গত কয়েকদিন সে একদমই চুপচাপ রয়েছে। বাচ্চারা তাদের বাবার জন্য পাগল ছিল।

প্রতিদিন বিকেলে এজাজ বাচ্চাদের নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরত। এটা তাদের খুব পছন্দ ছিল। ”  
বাচ্চাদের দিতে তাকিয়ে এতটুকু বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুই সন্তানের জননী, যার চোখেমুখে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট উদ্বেগ। কী করে তাদের বড় করবেন!
এজাজের স্মৃতিরক্ষা ও পরিবারের ভরনপোষণের জন্য সরকার এগিয়ে আসবে এমনটি মনে করেন বোন নুরুন্নাহার।
“আমার ভাই আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে গেছে, পৃথিবীতে মানুষের প্রতি ভালবাসার চেয়ে বড় কিছু নেই।

আশাকরি সরকার এগিয়ে আসবে, আমাদের শুধু এতটুকুই চাওয়া। ”

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.