আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিঃ আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী

মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়| বেঁচে থাকলে বদলায়| কারণে অকারণে বদলায়........ আকাশের বিশালত্ব উপলব্ধি করে আমরা অবাক হই, কিন্তু মজার ব্যাপার হল- এই আকাশ হল সৌরজগতের একটা ক্ষুদ্র অংশ| আবার সৌরজগত হল গ্যালাক্সির একটা ক্ষুদ্র অংশ| এমন অনেকগুলো গ্যালাক্সি নিয়ে আমাদের মহাবিশ্ব গঠিত| আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করি তার নাম Milky Way Galaxy বা ছায়াপথ গ্যালাক্সি| আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সিটি হল- এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি(Andromeda­ Galaxy),আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী| আসুন,এই গ্যালাক্সি সম্পর্কে জানা যাক|. পৃথিবী থেকে ২.৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি হল এন্ড্রোমিডা| কিলোমিটার হিসেবে ২.৪*১০^৯ কিলোমিটার| মিল্কিওয়ের মত এটাও সর্পিলাকার বা Spiral আকৃতির গ্যালাক্সি| চাঁদহীন আকাশে খালিচোখে গ্যালাক্সিটির নিউক্লিয়াস তথা কেন্দ্রের অংশটুকু পৃথিবী থেকে দেখা যায়| সাধারণত এটি দেখতে চাঁদের মতই, কিন্তু ঝাপসা এবং চাঁদের তুলনায় ৫ গুন বড মনে হয়| গ্রীক পুরাণে বর্ণিত ইথিওপিয়ার রাণী এন্ড্রোমিডার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে| এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির অন্য নামগুলো হল,NGC-224 এবং M-31 | জ্যোতির্বিজ্ঞানী-চার্লস মেসিয়ারের নাম অনুসারে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে মেসিয়ার-৩১ নামেডাকা হয়| এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস কিছু ঘণীভূত পদার্থ দিয়ে তৈরি| কেন্দ্রটিকে ঘিরে রেখেছে গ্যাস, ধুলা এবং নক্ষত্র দিয়ে তৈরি একটি বায়বীয় বৃত্ত|. গ্যালাক্সিটিতে রয়েছে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ১×১০^১২ সংখ্যক নক্ষত্র, যা আমাদের ছায়াপথের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন| তবে তাইবলে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই যে এন্ড্রোমিডার আয়তন ও ভর ছায়াপথের চেয়ে বেশি| কারণ এন্ড্রোমিডায় ছায়াপথের চেয়ে কৃষ্ণ পদার্থের (black matter) পরিমাণ কম| এন্ড্রোমিডার সৌর ভর ৭.১×১০^১১,যা ছায়াপথের ৮০%| প্রতিটি গ্রহের যেমন উপগ্রহ থাকে, তেমনি গ্যালাক্সির থাকে উপ-গ্যালাক্সি বা স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি| এন্ড্রোমিডারও কিছু উপ-গ্যালাক্সি আছে| যেমন- M-30,M-33,M-110 ইত্যাদি| M-33 বা মেসিয়ার-৩৩ এর অপর নাম--ট্রায়াঙ্গুলাম উপ-গ্যালাক্সি| ধারণা করা হয় ট্রায়াঙ্গুলাম উপ-গ্যালাক্সি একসময় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্যালাক্সি ছিল| আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন বছর আগে এন্ড্রোমিডার সাথে এর সংঘর্ষ হয় এবং গ্যালাক্সিটির সিংহভাগ অপসৃত হয়| অর্থাৎ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরাধীন জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাকে| যাই হোক, মুসলমানদের জন্য একটা গৌরবের বিষয় হল-এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দাল রহমান আল-সুফী| ৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন, কিন্তু সেইসময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকায় তিনি `তার "Book of Fixed Stars" গ্রন্থে এর নাম দেন 'Small Cloud' বা 'ক্ষুদ্র মেঘ'| বিংশ শতাব্দীর গোডার দিকেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথেই মহাবিশ্বের পরিধি শেষ| তারা এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিকে তখন নীহারিকা হিসেবে ধরে নিয়েছিল| কিন্তু এডউইন হাবলের সম্প্রসারণ তত্ত্ব পাওয়ার পর মানুষ বুঝতে পারে যে ছায়াপথ মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র| এন্ড্রোমিডাকে মেসিয়ার-৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ার, ১৭৬৪ সালে| তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ সাইমন মারিয়াসকে| যদিও তার চেষ্টা সফল হয়নি, বিজ্ঞানীরা আব্দাল রহমান আল-সুফীকেই মেসিয়ার থার্টিওয়ান আবিস্কারের কৃতিত্ব দিয়েছিল| এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি সর্বপ্রথম তুলেছিলেন আইজ্যাক রবার্ট, ১৮৮৭ সালে| একটু আগেই বলেছি যে ট্রায়াঙ্গুলামের সাথে এন্ড্রোমিডার সংঘর্ষ হয়েছিল| বিভিন্ন গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা মহাজগতে খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা| এখন কি আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে এন্ড্রোমিডা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সাথে সংঘর্ষে জডাবে কিনা? উত্তরটা হল-হ্যা,অবশ্যই জডাবে| গ্রীক রাণীর নামে নাম, যুদ্ধ-বিগ্রহ তো ঐতিহ্যে মিশে আছে! এন্ড্রোমিডা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ছুটে আসছে আমাদের কতল করতে| তার গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০০-১৪০ কিঃমিঃ| এই গতিতে চলতে থাকলে সে ১.৯৬ থেকে ২.৭৪ বিলিয়নবছর সময় নেবে আমাদের কাছে এসে পৌঁছুতে(Space.com এর তথ্যানুসারে সময় লাগবে ৫ বিলিয়ন বছর)| প্রথম আঘাতটা হানবে উপ-গ্যালাক্সি ট্রায়াঙ্গুলাম| কি জানি, হয়ত এন্ড্রোমিডার জন্য পুষিয়ে রাখা ঝাল আমাদের উপর ঝাডবে| তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই| কারণ ৫ বিলিয়ন বছর পর সূর্য নিজেই একটা বিশাল দৈত্যাকার অগ্নিপিন্ডে পরিণত হয়ে সৌরজগতের গ্রহগুলোকে গিলে নেবে|*** *** *** তথ্যসূত্র- (1) ScienceBlog.com (2) PhysOrg.com (3) Space.com

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।