আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে মিউচুয়াল হোসনেআরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন

অবশেষে পদত্যাগ করলেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম অবশেষে পদত্যাগ করলেন আন্দোলনের মুখে ছুটিতে চলে যাওয়া রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম। বুধবার দুপুরে কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসক মহিবুল হকের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগপত্রে হোসনে আরা বেগম ব্যক্তিগত কারণের কথা উল্লেখ করলেও জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক পরিমল জয়ধরের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তাতে অধ্যক্ষের পদে ফিরে আসার মতো অবস্থা তার আর নেই। আসতে চাইলেই আবার আন্দোলনে চলে যাবেন ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। গতকাল সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোসনে আরা বেগম।

আক্ষেপ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার শিক্ষকতা ও অধ্যক্ষের জীবনে অর্জন অনেক। আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করেছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যা ঘটেছে তাতে অধ্যক্ষ হিসেবে আমার অবস্থান ছিল পরিষ্কার। এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ছাত্রীরা কখানোই চান না যে এখানে বাইরে থেকে কেউ অধ্যক্ষ হয়ে আসুক। এই ইস্যুতে তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ।

কারণ তারা মনে করেন, বাইরে থেকে কেউ আসলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না। হোসনে আরা লম্পট পরিমলের পক্ষ নিয়েছেন। তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ধর্ষণ মামলার আসামি হোসনে আরাকে গ্রেফতার না করে চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী বলেই তাকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়া হয়নি।

উল্টো তাকে বাঁচাতে এবং ভিকারুননিসার প্রিন্সিপাল পদে আবার বসানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। হোসনে আরা বেগমের পদত্যাগপত্র হাতে পাওয়ার কথা উল্লেখ করে গভর্নিংবডির সভাপতি ও ঢাকা জেলা প্রশাসক মহিবুল হক জানিয়েছেন, হ্যাঁ, অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তা গ্রহণও করা হয়েছে। এর আগে নানা ঘটনা আর নাটকীয়তার পর গত ১৪ জুলাই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিন মাসের ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম। হোসনে আরার যত কথা : গ্রেস নম্বর পেয়ে এসএসসি ‘পাস’ করেছিলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের সাবেক হয়ে যাওয়া অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে হোসনে আরার প্রতিষ্ঠানের নাম আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা; পাসের সাল ১৯৬৫।

আর এমন ফলাফল নিয়ে হোসনে আরা একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দিয়েছেন সাংবাদিক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নিরীক্ষা ও পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিংবডির সদস্য ও সভাপতিদের কাছে। হোসনে আরা কখনও দাবি করেছেন এসএসসি পরীক্ষার সময় তার ডান হাতে ব্যথা ছিল বলে বাম হাতে লিখতে হয়েছে। তাই ফল অতো খারাপ হয়েছিল। আবার এও দাবি করেছেন যে, বাম হাতে লেখার জন্য শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন। ‘কখনও ডান হাতে আবার কখনও বাম হাতে লিখেছি’—তিনি বলেন।

তবে ১৯৬৫ সালে ওই একই স্কুল থেকে ভালো ফল নিয়ে এসএসসি পাস করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই বছর ইংরেজি ও গণিতে ব্যাপকসংখ্যক পরীক্ষার্থী ফেল করেছিল, তাই যারা ১ অথবা ২টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল তাদেরকে গ্রেস নম্বর দেয়া হয়। তাদেরকে কোনো বিভাগ না দিয়ে শুধু ‘পাস’ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর সহপাঠী পয়িচয়ে ১৯৯৯ সালে যখন আজিমপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন, তখন থেকেই প্রশ্ন ওঠে—নিজ শিক্ষাজীবনে এমন টেনেটুনে পাস করে হোসনে আরা কিভাবে ছাত্রীদের ১ম বিভাগ বা জিপিএ-৫ পেতে ভূমিকা রাখবেন? অনেকের অভিযোগ, সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে শুধু একজনের বান্ধবী পরিচয়ে ওই কলেজের বারোটা বাজিয়ে দেন হোসনে আরা। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভিকারুননিসায় যোগ দিলে তার এমন টেনেটুনে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। হোসনে আরা বিভিন্ন সময় সাংবাদিক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন এসএসসি ও এইচএসসিতে তার খারাপ ফলাফলের কথা।

এইচএসসিতে তার ফলাফল কী তা জানাননি, তবে বলেছেন ‘অতো’ ভালো নয়। হোসনে আরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, ‘আমার সাফল্যে যারা ঈর্ষান্বিত তারা বলেন আমার নাকি সকল পাবলিক পরীক্ষায়ই তৃতীয় বিভাগ। এটা কিন্তু ঠিক না। আমি ফ্রাঙ্কলি বলি, আমি এসএসসি বা এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ পাবার মতো ছাত্রী নই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কিন্তু ১ম শ্রেণী পেয়েছি।

তাতে কিন্তু গড়ে আমার সবগুলোতে ২য় বিভাগ হলো’। বাম হাতে লেখার জন্য বোর্ডের অনুমতি বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের প্রবীণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডান হাত বা বাম হাত দিয়ে পরীক্ষা দিতে বোর্ডের আলাদা করে কোনো অনুমতি লাগে না। হোসনে আরার সহপাঠী ও সরকারি চাকরি থেকে ২ বছর আগে অবসরে গেছেন, এমন একজন জানান, পড়াশোনায় বরাবরই খারাপ হোসনে আরা এইচএসসিতেও ভালো ফল করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় ভালো ফলাফল বাগিয়ে নেন। আর সেটা নিয়েও সে সময়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল ক্যাম্পাসে।

১৯৯৯ সালে তত্কালীন সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ইচ্ছায় আজিমপুর গার্লস স্কুলে অধ্যক্ষের চাকরি পান হোসনে আরা। আবার ওই সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই হোসনে আরা উদগ্রীব হন ভিকারুননিসায় চুক্তিভিত্তিক অধ্যক্ষের চাকরি বাগাতে, কারণ সে সময় তার নিয়মিত চাকরির বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল। যোগদানের সময়ই বিতর্ক সৃষ্টি হয় হোসনে আরা তো ভিকারুননিসার কেউ নন। তাকে দিয়ে তো এত বড় ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান চালানো যাবে না। আজিমপুরে ১০ বছরের চাকরি জীবনে আটবার তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন।

কখনও দুর্নীতি দমন কমিশনের, কখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। জানা যায়, হোসনে আরা ২২ বছর রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে চাকরি করেছেন। সম্প্রতি এর নাম বদল হয়েছে। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে ওখানে যোগদান করেন আর স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয় আগস্ট থেকে। ৩ হাজার চাকরি প্রার্থী ছিল।

তার মধ্যে ১৪ জনকে বাছাই করা হয়। তদবির শুরু সেখান থেকেই। কেজি শ্রেণীতে ক্লাস নিতেন এই হোসনে আরা। এখানে যোগদানের আগে প্রায় দেড় বছর তিনি তেজগাঁও ডিগ্রি কলেজে চাকরি করেছেন। এর পর টানা ২২ বছর ওখানে চাকরি করে ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

লিংক: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।