আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজকের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় আমার একটি রম্যরচনা ছাপা হয়েছে।

বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা জন্ম থেকেই রাজনীতির ব্যাপারে ব্যাপক সিরিয়াস। পথে-ঘাটে ক্ষেত-খামারে বাসে-লঞ্চে এমনকি উড়জাহাজে বসেও আমাদের বঙ্গসন্তানদের আলোচনা-সমালোচনার প্রধান টপিক্স থাকে রাজনীতি! জাতীয় রাজনীতির ডালপালা ছড়িয়ে গেছে সারা দেশ জুড়ে। এখন ব্যাবসা-ব্যানিজ্য সহ মিডিয়া গুলিও নানান রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে। সরকারী অফিসের পাশপাশি এখন বেসরকারি অফিসেও রাজনীতি ছড়িয়ে গেছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে একটি বেসরকারী অফিসে অফিসার পদে কাজ পেলাম।

বললাম আহা কি সুখ! কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিল ততই আহা থেকে উহুঃ শব্দ বেশি বের হতে লাগল। লক্ষ করলাম জাতীয় রাজনীতির মত এখানেও নানা দল নানা মত নানা পথ প্রচলিত। কেউ জিএম কেউ ইডি কেউ এমডি আবার কেউবা চেয়ারম্যান স্যার পন্থি! এছাড়াও কিছু শাখা দল রয়েছে। অফিসের কাজ-কর্ম করার চেয়ে বালতি ভর্তি তৈল নিয়ে ছোটাছুটিই যেন বেশি করছে। বড় স্যার কে মেজ স্যার তৈল দিচ্ছেন আর মেজ স্যারকে সেজ স্যার! উপর থেকে নিচ পযন্ত এভাবে তৈল দেওয়া অবিরাম চলছে।

সেই তৈল দু' এক ফোটা মেঝেতেও পড়ে যার উপর পা দিয়ে আমার মত নিরহ গোবেচারা টাইপের কর্মকতাদের ভিমরি খেয়ে পরা ছাড়া কান গত্যান্তর নেই। কাজ করার চেয়ে অন্যর দোষ-ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করাতেই সবার যত আনন্দ। অফিসের বারান্দায় সিড়ি কোঠায়ও চলে ফিস-ফাস! নতুণ কর্মীকে দলে ভেড়ানোর সকল প্রদ্ধতী প্রয়োগ করার পরও যখন আমাকে কোন দলে ভেড়ানো গেল না তখন দেখি দল মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে লেগে গেল। বস্তায় বস্তায় কাজ দিয়ে তারা আমাকে নিশ্বাস ছাড়ার মত সময়ও দিতে চাইল না। আর উঠতে বসতে নানা ভয় ভিতি হুমকি ধামকিতো আছেই! গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত আছে আমার অনভিজ্ঞতা।

আমার সকল কাজে তাদের মহাজোটিয় দৃষ্টি দিয়ে চিরুনি অভিযান চালায়। এতবেশি বেশি কাজ দেওয়া দেখে আমার যখন দিশাহারা অবস্থা তখন পাশে এসে দাড়ালেন আইটি অফিসার ইমরান ভাই। তিনি পিঠ চাপড়ে বললেন, এভাবে কলুর বলদ সেজে কোন লাভ নেই। আপনার ছয় মাসের প্রভেশন পিড়িয়টতো শেষ হয়েছে তাইনা? - হ্যা। ওনি ঠোটের কোনে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললেন এবার আপনি বল করবেন আর ওনারা ব্যাট করবে! - মানে কি? _ মানে হল ওনারা আজ থেকে আপনাকে যত কাজ দিবে আপনি তা হাসি মুখে গ্রহন করবন কিন্তু শেষ করবেন না।

আর আপনি আপনার জব ডিসক্রিপশনের একটা ফটো কপি আপনার ডেস্কের পাশে ঝুলিয়ে রাখবেন। আপনার নিজের কাজ শেষে বাকিটা ঝুলিয়ে রাখুন। বেশি তাগাদা দিলে ওনাদের জব ডিসক্রিবশন পড়ার অনুরোধ করতে পারেন। আশা করি এতেই মক্তি পাবেন। ।

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। যাবার সময় হ্যান্ডসেক কওে বললো শোনেন এতে কাজ না হলে আরো বুদ্ধি আছে! রহস্যভরা হাসি দিয়ে সে বিদায় নিল। আমি স্বস্তি পেলাম। পরদিন থেকে নতুণ ভাবে নেমে পড়লাম কাজে। এবং সাকসেস হলাম।

কিন্তু বছর শেষে দেখলাম ইমরান ভাই আর আমার ইনক্রিমেন্ট হয়েছে সবচেয়ে কম। তবে ইমরান ভাই বিচলীত না হয়ে হেসে বললেন সিসটেম জানা আছে! আপনি সাদা কাগজ নিয়ে আসুন। আমি ওনার ডেস্কে সাদা কাগজ নিয়ে যেতেই ওনি ওনার লেখা রিজাইন লেটার কপি করতে বললেন। আমি অনেক দিদ্ধা থাকা স্বতেও কপি করলাম। ওনি আমাকে নিয়ে এমডি স্যারের রুমে চলে গেল।

রিজাইন লেটার জমা দেওয়ার পর এমডি স্যার বিস্মিত হয়ে বললেন ঃ কি ব্যাপার আপনাদের কি হয়েছে? ইমরান ভাই হাসি মুখে বললো স্যার কিছু মনে করবেন না আমাদের অন্য একটা কোম্পানীতে চাকুরী হয়েছে। ঃ এখানে তোমাদের কি সম্যসা? ইমরান ভাই নরম স্বরে বললো স্যার যেই হারে ইনক্রিমেন্ট হয়েছে তাতে এখানে আমাদের মত কর্মি মৌমাছিদের ফিউচার দেখছিনা। স্যার মাথা নেড়ে বললেন ডেস্কে যাও মন দিয়ে কাজ কর। আমি দেখছি। পরদিন আমাদের বড় অংকের বেতন বাড়ল।

ইমরান ভাই হেসে বললো দলহিন সতন্ত পার্টিতে থেকেও ভাল থাকা যায়। এখন দেখছি অফিসে বেতনের পাশাপাশি সম্মানও বেশ বেড়েছে। :  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।