আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Dave Eggers এবং আমিঃ দুইটি অনুগল্প

যে মুখ নিয়ত পালায়......। । মৃত্যুহীন মাছিটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ম্যাথিয়াস নামে একটি মাছি ছিল। বয়স্ক মাছি। সাধারনত মাছিরা বাঁচে মাত্র কয়েকদিন।

কিন্তু ম্যাথিয়াস ছিল ইমমরটাল মানে মৃত্যুহীন। প্রথমদিকে তার ভালই লাগত। এই পৃথিবী আলো বাতাস নীল আকাশ সব। কিন্তু আস্তে আস্তে পৃথিবীটাকে মনে হতে লাগল ধূষর মলিন। দেখতে দেখতে মায়থিয়াসের ১২৫০ জন বন্ধু মারা গেল।

আত্নীয় স্বজন সবাই তার চোখের সামনে একে একে মারা গেল। তার প্রিয় বন্ধু ফ্রান্সিসকো বান্ধবী জেন স্কুল শিক্ষক মিস্টার ট্রন সবাই মারা গেছে। ম্যাথিয়াস ষোল বছর ধরে হাজার হাজার মৃত্যু দেখে আসছে। কাছের এবং দূরের অনেকের। কিন্তু তার মৃত্যু নেই।

মাছিরা সাধারনত জন্মের পর অসংখ্য চোখ মেলে দেখে বিশাল পৃথিবী। চারদিকে খোলা। ইচ্ছেমত উড়াউড়ি ঘোরাঘোরি করে। জানালার কাঁচ থেকে সিলিঙে,রঙ করা দেয়াল থেকে মেঝেতে। মৃত্যুর কোন ধারনাই থাকে না তাদের মধ্যে।

তারা উড়তে থাকে। দেখতে থাকে। তারপর কোন একসময় চা বা কফির মগে, অরেঞ্জ জুস বা কোল্ড ড্রিংকসের গ্লাসে অথবা জলন্ত মোমবাতির আগুনে নতুন কিছু জানার প্রবল উৎসাহে ঝাঁপ দেয়। এবং হারিয়ে যায়। ষোল বছর ধরে ম্যাথিয়াস দেখে আসছে এসব।

হাজারবার এমন দৃশ্য ঘটেছে তার চোখের সামনে। দেখতে দেখতে সে এখন বিরক্ত। এখন প্রতিটি দিনকেই মনে হয় তার চেনা, প্রতিটি জিনিস এবং কাজকেও। সে বিরক্ত জীবনের প্রতি। নিঃশ্বাস নিতে নিতে বিরক্ত।

এত বছর ধরে বেঁচে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই সে সুযোগের খোঁজে আছে। যে কোন মুহুর্তে ঢুকে পড়বে আপনার নাক বা মুখের ছিদ্র দিয়ে। কারন এটাই তার মৃত্যুর একমাত্র উপায়। তাই এই ক্লান্ত শ্রান্ত জীবনের প্রতি বিরক্ত মাছিটার উপর দয়া করে হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে তাকে বাইরে ফেলে দিবেন না।

জীবন ধারনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে তাকে সাহায্য করুন। (এই গল্পটি আমেরিকান লেখক Dave Eggers এর The Immortal Fly Is Tired ছোট গল্পের এক ধরনের অনুবাদ। গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেখে ভাল লাগল এবং গল্প লেখতে ইচ্ছে হল তাই লেখা। অনুবাদক হিসেবে মনে হয় এটাই আমার প্রথম লেখা কোন গল্প। Dave Eggers এর আরো কয়েকটা গল্প অনেক ভাল লেগেছে।

) এক সেকেন্ডের জন্য সিলেটের সবাই প্রতিদিন ঘুমিয়ে যায় এক সেকেন্ডের জন্য সিলেট নগরীর সবাই ঘুমিয়ে যায়। সবাই। সকল শ্রেনী সকল পেশার সকল বয়সের মানুষ। এই সেকেন্ডেই ঘুমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রকৃতির সাম্যবাদ। এটা ঘটে রাত ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে কোন এক মুহূর্তে।

অবস্থাপন্ন ভদ্রসমাজ অবশ্যই প্রতিদিনের মত নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে থাকেন। কেউ হাত পা ছড়িয়ে, কেউ হাত মাথার নিচে দিয়ে। কেউ কেউ ঘুমান মুখ হা করে, কারো নিঃশ্বাসের সাথে গড় গড় শব্দ হয়। ফুটপাতের মধ্যে ঘুমান গৃহহীন বৃদ্ধ বৃদ্ধারা। নেশাগ্রস্ত হিরোইনখোর পাড়মাতাল, গাঞ্জাখোররাও ঝিমাতে ঝিমাতে এই সময়ে মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।

জিন্দাবাজার পয়েন্টের যাবতীয় ধুলোবালিতে বসবাসকারী কীট পতঙ্গ, নাইওরপুল পয়েন্টে গভীর রাত্রে সেজেগুজে বসে থাকা স্বস্তা দরের পতিতারা এবং তাদের খদ্দের ও দালাল রা, ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত হাজার দুয়েক যুবক যুবতী মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অথবা সোশিয়্যাল নেটয়ার্কিং সাইটগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে এই এক সেকেন্ডের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতের যানবাহনের যাত্রীরাও ঘুমায়, ঘুমায় হতভাগ্য চালক ও। বটেশ্বরের দিকে যে মাতালগুলো বড় বড় ট্রাক চালিয়ে রাস্তা কাপিঁয়ে আসে তারাও ঘুমায়। ঘুমায় ভুমিখেকো চোর বাটপার এবং দিনে সারা রাস্তা চষে বেড়ানো রিকশাওয়ালারা। ঘুমিয়ে যায় পুরো ক্যান্টনমেন্ট।

ঘুমায় নাইটগার্ডরাও, কাজে ফাঁকি দিয়ে তারা ঘুম যায়। ঘুমায় মেয়র, ছিনতাইকারী। ক্রীনব্রীজের নিচের পানিতে থাকা মাছ কীট পতঙ্গ অনুজীব সবাই ঘুমায়। নদীর পাড়ে দুপুর রোদে যেসব প্যাক কাদায় মোড়ানো শুওরগুলো দেখা যায়, সেগুলোও ঘুমায়। ঘুমায় চটপটিওয়ালা এবং তার চটপটির ডালের পানিতে ডুব সাতার কাটতে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো।

ঘুমায় হাসপাতালের রোগীরা, এম্বুল্যান্সের চালক। ঘুমায় কমিশনখোর ডাক্তার ও । ঘুমায় সবাই। সদ্য ভূমিষ্ট শিশুও। আদিকাল থেকে প্রতিদিন এই মুহূর্তে মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য সবাই ঘুমিয়ে যায়।

এক সেকেন্ডের জন্য ঘুমিয়ে যায় পুরো সিলেট শহর। এই এক সেকেন্ডে অন্যভূবনের বাতাস বয়, নগরীর সব রাস্তা দিয়ে,প্রতিটি অলি গলিতে, প্রতিটি ঘরে, ছাদে এবং সুরমা নদীর বুক ছুঁয়ে। Dave eggers এর For a second everyone in London sleeps অনুগল্প অনুকরনে এই গল্পটি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.