আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতিকথক মন্ত্রীরা নীরব!

লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন- এটি বিনোদন মিডিয়ার চিরায়ত শব্দ। এসব শব্দ এখন দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নামী ও ‘হাইব্রিড’ রাজনীতিবিদদের অতি পরিচিত। টক শোতে যেতে যেতে তারা নিজেদের এসব শব্দের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত করে ফেলেছেন। ওদিকে বিভিন্ন নামসর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে প্রায় প্রতিদিনই প্রেস ক্লাব বা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সব সভায় উপস্থিত থাকেন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীন দলের নামী নেতারা।

শুক্র ও শনিবার বিশেষত এ ধরনের সভার আয়োজন করা হয় বেশি। সরকারি বন্ধের দিন থাকায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো গুরুত্ব দিয়ে তাদের সংবাদ প্রচার করে। আগে সারাদিন লাগামহীন বক্তব্য দিলেও পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এসব নেতা এখন নিশ্চুপ। তাদের এই নীরবতার কারণ নিয়েও ক্ষমতাসীন মহলে নানা বিশ্লেষণ চলছে। অতিকথকদের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ছে না।

অনেকটা যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন তারা। দলীয় সভানেত্রীর তোপের মুখে পড়েন এমন চিন্তায় তার কাছে যাওয়া থেকে আপাতত বিরত রয়েছেন অনেকে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত নানা ইস্যুতে সোচ্চার ছিলেন আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিমানমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সরকারের তিন উপদেষ্টা এবং দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তারা বিব্রতকারীদের তালিকার প্রথম দিকে রয়েছেন। অথচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর মন্ত্রী ইনু ছাড়া আর কারও ‘আওয়াজ’ নেই।

এসব মন্ত্রী ও দায়িত্বশীলদের মধ্যে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ভবন নড়াচড়া তত্ত্ব, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার, ড. ইউনূস ইস্যুতে নানা বেফাঁস মন্তব্য, ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ তত্ত্ব, কামরুল ইসলামের দেশে কিছু ঘটলেই বিরোধী দলকে দায়ী করার স্টাইল, মশিউর রহমানের পদত্যাগ নাটক, সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল তত্ত্ব এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারি বিষয়ক ঘটনাবলীতে উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছেরের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। ওদিকে অতিকথকরা কেউই এখন পাঁচ সিটিতে দলের বিপর্যয় কেন তা খোলাসা করছেন না। এমনকি আওয়াজ নেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ কিছু নেতার মুখেও। ওই নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিস্মিত আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাজ্য ও বেলারুশ সফররত প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। অবস্থা তখন এমন হয় যে, কি বলে কি ফেঁসে যান! তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের দুয়েক জন শীর্ষ নেতা আত্মসমালোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন।

যদিও তারা যেসব পরামর্শ দিচ্ছেন ওই সব তাদের এলাকায়ই খাটছে না। অনেকটা এরকম, নিজের ঘরে হাজারো সমস্যা পরের ঘর ঠিক করার ছবক। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে সরকারকে বিব্রতকারীদের নিজে থেকেই সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। নিজ দলের কয়েকজন নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জনগণের ভাষা বুঝুন, আপনাদের দায় সরকার নেবে না। একই দিন যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অর্থমন্ত্রীর অবাস্তব অবস্থান সময়মতো পদ্মার মূল সেতুর কাজ শুরু করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আমরা সময়মতো পদ্মার মূল সেতুর কাজ শুরু করতে পারিনি, সেটা তার অবাস্তব অবস্থানের কারণে। ওবায়দুল কাদের বলেন, অর্থমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই কিছু ‘সুইপিং রিমার্ক’ করেন, যা মানুষকে ‘হতাশ’ করে। আমাদের মতো ব্যক্তিদের অনেক ভেবেচিন্তে দায়িত্বশীল মন্তব্য করা উচিত। তবে এতদিন অতিকথকদের বিষয়ে সরকারের অন্দরমহলের খবর, দল ও সরকারকে বিব্রতকারী নেতা ও মন্ত্রীদের চিহ্নিত করছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড। যাদের প্রশ্নবোধক কীর্তিকলাপ আর অতিকথনে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে- এমন নেতা ও মন্ত্রীদের ছাঁটাই করা হবে- এখন এটাই জোর গুঞ্জন।

বলা হচ্ছে, এদের কারণেই সদ্য অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের ভরাডুবি হয়েছে। তাদের সম্পর্কে কিছুদিন আগ পর্যন্ত আলোচনা আড়ালে-আবডালে হলেও এখন প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে অনেকের সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফলে বিতর্কিত কারও জন্য অপেক্ষা করছে পদাবনতি, কাউকে দেয়া হবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি; আবার শেষ মুহূর্তে কারও মন্ত্রিত্ব খোয়া যেতে পারে। আবার পদে বহাল রেখে ক্ষমতা খর্ব করা হবে কারও কারও এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ এক দলীয় অতিকথকের উদ্দেশ্যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তুমি মিডিয়ায় কথা বলতে পছন্দ করো ভাল কথা, কিন্তু বুঝে শুনে কথা বলতে হবে। কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে বিরোধী শক্তিরা যেন সুযোগ না পেয়ে বসে। মানবজমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.