আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চার কিশোরকে পেটালেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা

আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার একটা খবর পরে মনটা ভিশন খারাপ হয়ে গেল। ঘটনা ঘটেছে বারিধারা ডি ও এইচ এস, ঢাকার অন্যতম অভিজাত, ভদ্রলোক-পাড়া। তিন জন কিশোর পার্কে উল্টো পথে হাঁটার কারণে তাদের ধরে এনে বেঁধে রেখে মারধর করেছেন কয়েকজন মুরুব্বি, যাঁরা কিনা আবার অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং বারিধারা ডি ও এইচ এস পরিষদের কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী ছেলেদের একজনের ভাষ্যমতে, তাদের কে মারতে মারতে মেরে ফেলার কথা বলেছিলেন একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। সে সময় ছেলেটির আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যার ঘটনাটি মনে পড়ে যায়।

পত্রিকার লিঙ্ক টা এখানে click here পত্রিকার বিবরণের সাথে হয়তো প্রকৃত ঘটনার কিছু অমিল হবে, কিন্তু আমার প্রশ্ন কয়েকজন শিক্ষিত মুরুব্বি শ্রেনীর লোক আরেকজনের ছেলের গায়ে হাত তোলার আগে কি একবারও চিন্তা করেছিলেন ছেলেগুলোর অভিভাভকের কথা? পরিবারের কাছে কেমন লাগবে ঘটনাটা শুনে যে তাদের পুত্রধন কে পিটিয়েছে (বা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে) কিছু লোক ? একবারও কি ভেবে দেখেছিলেন তাঁদের সামান্য দায়িত্বহীনতার কারণে কতবড় দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারত? ভাগ্য ভালো আমাদের কর্তব্যপরায়ণ পুলিশগণ মাত্র ৩০ মিনিটে ঘটনাস্থলে হাজির হতে পেরেছিলেন। ছেলেগুলোর অভিভাভক ঘটনাস্থলে সময় মত উপস্থিত হতে পারায় মিথ্যা মামলার হাত থেকে বেঁচে যায় ছেলেগুলো। যাই হোক, গতকাল আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার না করে পারছিনা.... নিউমার্কেট-এ গিয়েছি আমার স্ত্রীর জন্যে আমশক্ত কিনতে, তাড়াহুড়া করছিলাম, কাজ শেষ করে নামাজ এ যাব বলে। আমশক্ত কিনে, গাড়ি বের করার জন্য হ্যান্ড ব্রেক টা নামালাম, (আমার গাড়ি অটো গিয়ার নয়), গাড়িটা সামান্য নড়ে উঠলো, পেছনে এক ভদ্রমহিলা তার স্বামী সহ হেঁটে যাচ্ছিলেন, তার গায়ে ধাক্কা লাগলো। আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ধাক্কাটা খুব সামান্যই লেগেছে, মহিলা ভয় পেয়ে গালমন্দ করছেন, এটাই স্বাভাবিক, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে মানুষের মূল্যবান জীবন গেছে অনেক।

মহিলা চিত্কার করে বললেন, কিরে বেটা দেখিস না? আমি গাড়ির ভেতর থেকে সর্রী বললাম, হাত জোর করে দেখিয়ে। কিন্তু উনার স্বামী ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে আমার পাশের জানায় এসে বললেন কিরে বেটা চোখ নাই তোর? আমি বললাম সর্রী ভাই তাড়াহুড়া করছিলাম, খেয়াল করতে পারি নাই। উনি বললেন কিসের সর্রী এখন একটা থাপ্পর দেই তোকে? আমি বেশ চেষ্টা করে রাগ সামলালাম, বয়স্ক ভদ্রলোক, দাড়ি ওয়ালা আমি আবার বললাম সর্রী ভাই আসলেই খেয়াল করি নাই সর্রী। উনি নাছোড় বান্দা, আবার বললেন রাখ তোর সর্রী, তুই খেয়াল করলি না কেন গাড়ির ড্রাইভার হয়েছিস চোখ কানা নিয়ে? আমি বুঝলাম উনি আমাকে ড্রাইভার মনে করছেন। আমি তাকে বুঝানোর জন্যে ঠান্ডা হয়ে বললাম আপনি তুই তুকারী করছেন কেন? আবারও বললাম আই এম রিয়ালি সর্রী।

উনি তারপর বললেন, তোমরা ড্রাইভার, সকালে ঘুম থেকে উঠে গালি গালাজ না খেলে মন ভরে না। আমি বুঝলাম এই লোকের সাথে অনর্থক তর্ক করে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। একবার ভাবলাম গাড়ি থেকে নেমে ভদ্রলোকের কলার ধরে কষে একটা চড় মারলে কেমন হয়। কিন্তু শান্ত থেকে চুপ চাপ গাড়ি বের করে রওনা দিলাম। পার্কিং চার্জ নেবার জন্যে একটা ছেলে রিসিট নিয়ে দাড়ালো, রিসিট দিয়ে বলল, আপনি উনাকে কিছু বললেন না কেন এভাবে ব্যবহার করলো? আমি হাসলাম।

আজকের পত্রিকার ঘটনাটা যদি গতকালের পত্রিকায় থাকত, তাহলে হয়তো আসলেই সেই ভদ্রলোকের গালে চড় টা বসিয়েই দিতাম। আমাদের সমাজে আশে-পাশের মানুষের আচরণে আমরা ক্ষুদ্ধ হই, চিন্তা করি কি দেশ আমাদের, কেন এই বর্বরতা, কেউ কি নাই সিভিলাইজেশান শেখাবার? যখন দেখি সম্মানিত মুরুব্বিয়ানদের এই অধপতন তখন সত্যিই অবাক হই, ভাবি তরুণ প্রজন্ম বা যুবসমাজ কে যারা তিরস্কার করেন, তারা নিজেদের কি আয়নায় দেখার প্রয়োজন মনে করেছেন কখনো? আমার ছেলে বা মেয়ে কে যদি আরেকজন কারণে বা অকারণে গায়ে হাত তোলেন আমার কেমন লাগবে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।