আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উত্তরার অদ্ভুত একটি বাড়ি!

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল বেশ কয়েক বছর আগে উত্তরায় পুরনো ধাঁচের একটি দালানের ২য় তলায় বিশাল একটা ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতাম। ফ্ল্যাটটি আক্ষরিক অর্থেই বিশাল ছিল। বড় বড় রুম; প্রত্যেকটি রুমের সাথে আবার লাগোয়া রুমটির সমান একটা করে বারান্দা! আর বাসাটাকে ঘিরে ছিল নানারকমের গাছপালা। আমের দিনে বড় বড় আম দখিনা হাওয়ায় ডালে দোল খেয়ে এসে জানালা দিয়ে রীতিমত ঘরের খবর নিয়ে যেত। খুবই চমৎকার! কিন্তু আকারের তুলনায় বাসাটার ভাড়া ছিল আশ্চর্য রকম কম।

কেন ছিল, তা অবশ্য বুঝতে বেশি দিন লাগেনি। বাড়ির মালিক বুড়বুড়ি ছিল ভয়ংকর ছোটলোক প্রকৃতির। কেমন ছোটলোক সেই ফিরিস্তি না দিয়ে শুধু এটুকু বলতে পারি যে ঐ বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে একজন করে অভুক্ত দারোয়ান আর পাঁচ দিন অন্তর অন্তর একজন করে ক্ষুব্ধ ও অভাবী ড্রাইভার বদলি হত। এত বড় বাড়ি কিন্তু কাজের মেয়েদের জন্য বাথরুমের ব্যবস্থা ছিল বাড়ির বাইরে। বাড়িওয়ালা বুড়ি যে মুরগি গুলো পালত, সেই মুরগি গুলোও তারে দেখতে পারত না।

তাই খোঁয়াড়ে যথেষ্ট আরাম আয়াসের ব্যবস্থা (দারোয়ানের থাকার ব্যবস্থার চেয়েও ভাল) থাকা স্বত্বেও মুরগি গুলো থাকত গাছে! আমি জীবনে এমন আজব দৃশ্য দেখি নাই। বাড়িওয়ালী কত ডাকাডাকি করত মুরগি গুলোরে! কিন্তু কে শুনত কার ডাক? বাড়ির সামনে ছিল একটা বড় আম গাছ; সেটার ডালে ডালে মুরগি গুলো বাড়িওয়ালীর ডাক অগ্রাহ্য করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নিজেরাই ডাকাডাকি করত! যাহোক, আমি আবার রুমের সাথে রুম সাইজের বারান্দা পেয়ে কাঁটাবন থেকে বড়সড় একটা খাঁচা কিনে নিয়ে এসে পাখি পালা শুরু করে দিলাম। অনেক দিনের শখ। তো, সব কিছু চলছিল ঠিকঠাক কিন্তু হঠাৎ এক মাঝরাতে খাঁচার ভেতর পাখি গুলোর প্রবল হুটোপুটিতে ঘুম ভেঙে গেল আমার। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

আমি বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখি, খাঁচাটার অবয়বের পাশে একজোড়া হলদে সতর্ক জ্বলজ্বলে চোখ আমার দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে! কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাই করে আমার পাশ দিয়ে পালিয়ে গেল চোখ জোড়া। ভয়ংকর চমকে যাওয়া আমি নিজেকে যখন সামলে নিলাম, বুঝতে পারলাম ওটা একটা কালো বেড়াল ছিল। আলো জ্বালিয়ে দেখি ধরে খেতে চেয়ে খোঁচাখুঁচি করে খাঁচার ভেতরে থাকা আমার একটা পাখিকে গুরুতর আহত করেছে হারামজাদা হুলো! আমার পাখিটার ছোট্ট শরীরটা রক্তাক্ত! সে বেঁচে গিয়েছিল সেই যাত্রায়। যাহোক, আমাদের ঘরের কাজে সাহায্য করত যে মেয়েটি, যার নাম লীলা, ঘটনার পরের দিন সকালে আমি তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমার ঘরে আমি যেন কোনও বিড়াল দেখতে না পাই। লীলা বলল “ভাইয়া চিন্তা কইরেন না।

আমি ব্যাপারটা দেখতেছি। “ তো ঘটনার কিছু দিন পরের কথা। দেখি লীলার মুখ হাসি হাসি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার লীলা?” উত্তরে লীলা যেটা জানালো, শুনে আমি হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। সে বলল, আমি যখন অফিসে ছিলাম তখন বেড়ালটা নাকি আবার এসেছিল আমার পাখি খেতে।

আর লীলা হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে তার বসার যে পিঁড়িটা ছিল, সেটা ছুড়ে মেরেছিল বিড়ালটার গায়ে। লেগেছিল কিনা লীলা নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু আজ সে খবর পেয়েছে যে বাড়িওয়ালার একটা পোষা বেড়াল সকালে মারা গেছে। হাঁসির দমকে লীলা কাহিনী শেষ করতে পারে না! আর আমি পুরা স্তম্ভিত! বিকেলে নিচে গিয়ে দেখি আম গাছের নিচে সেই বিড়ালের কবরে এপিটাফ ঝুলিয়েছে বাড়িওয়ালা। সেখানে লেখা, “এখানে শুয়ে আছে আমাদের আদরের কিটি।

“ গাছের ডালে বসে থাকা বাড়িওয়ালার মুরগি গুলো আমার দিকে কেমন মাথা কাত করে কেমন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। ঐ বাসাও ছেড়ে দিয়েছি, পাখিও আর পালি না। লীলাকেও আর পিড়ি ছুড়ে কোনও বাড়ীওয়ালার বিড়াল মারতে হয় না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।