ইংরেজি না জানিলে আমাকে সবাই আনস্মার্ট ভাবিবে,কেউই আমাকে কোন কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ দিবেনা। তাই আমি টকটক করিয়া ইংরেজিতে কথা বলিব সে যে আমার জন্মজন্মান্তরের সাধ।
সেই জন্মের সময়ই আমি ভাবিলাম একটু ইংরেজিতে কাদিয়া সবাইকে চমকাইয়া দেই। কিন্তু কোন ধরণের ইংরেজি ব্যবহার করিব?এমেরিকান নাকি বৃটিশ?তাই মনে মনে একটু প্রাকটিস করিতেছিলাম। বিপত্তিটা ঠিক তখনই ঘটিল।
কি যে কি হইল মা কাদিতে শুরু করিলেন,আমার পাশে বসা ধাত্রীমা আমাকে উপড় করিয়া রীতিমত চাবকাইতে লাগিলেন,বাবা ডাক্তার ডাক্তার বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। বাড়ির বাকি সবাই জোরে জোরে আল্লাহ নাম জপিতে শুরু করিল। ইহাদের ভাবসাব দেখিয়া আমি ভয় পাইয়া গেলাম। ফলশ্রুতিতে সব ভুলিয়া আমিও বাংলাতেই চিতকার জুড়িয়া দিলাম। আর তাই আমার ভাগ্যের গেড়োটা যে সেই প্রথমদিনেই লাগিল তার জট আজও খোলার সৌভাগ্য আমার হইয়া ওঠেনাই।
গ্রামে বসত করিবার জন্যেই হোক বা অন্য কোন কারণেই হোক ক্লাশ ফাইভ অবধি "আই ইট রাইস" আর "আই রিড ইন ক্লাশ ফাইভ"এর বেশি ইংরেজি বচন আমার হৃদয়হরণ করিতে পারেনাই। যদিও আমার মনের পাচতলায় যে চিলেকোঠাটা ছিল সেখান হইতে কে যেন রোজ আওয়াজ দিত একদিন তুমি আবিশ্যিক ইংরেজিতে স্বপ্ন দেখিতে পারিবে।
প্রাইমেরির পর গ্রাম ছাড়িয়া শহরে যেদিন ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হইলাম সেদিন ঢোক গিলিয়া পরমও বিস্ময়ের সহিত লক্ষ্য করিলাম এই শহরে টিকিতে হইলে আমাকে সন্মানিত গরুবাবাজীর জীবন বৃত্তান্তও ইংরেজিতে জানিতে হইবে। [/sb]আমার হৃদয়মন্দিরে সেতারের ঝংকার শত রাগে ধ্বনিত হইল এই ভাবিয়া যে আমার সামনে স্বপ্নপুরণের অবারিত দ্বার। মাঝে শুধু কয়েক কদমের ব্যবধান।
যদিও সেদিন "উই হ্যাভ এ কাউ,ইট হ্যাজ ফোর লেগস,টু আইস"এর বেশি একটা লাইনও উদগীরণ করিতে পারিনাই।
এরই মধ্যে পদ্মার শত শত গ্যালন পানি মেঘনার সাথে মিশিয়া বঙ্গোপসাগরে পতিত হইল। সেই সাথে কতবার যে সূর্য উঠিল আর ডুবিল লক্ষ্য করিনাই। তবে একদিন লক্ষ্য করিলাম "এপ্লিকেশন", "এসে", আর "গ্রামার" সমুহের সূত্র মুখস্ত করিতে করিতেই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে আসিয়া হাজির হইয়াছি। কিন্তু ইংরেজিতে স্বপ্ন সেত আর দেখা দেয়না।
মাঝে মধ্যে কেবল রবিঠাকুর আসিয়া ঘুমের মধ্যে আমায় ভেংচি কাটিয়া যায়। । বড্ড অভিমান হইল,কেবলই মনে হতে লাগিল কেন আমাকে কেউ হাত ধরিয়া স্বপ্ন দেখিবার রাস্তাখানা বাতাইয়া দিলনা?কেন আমাকে ঘাড় ধরিয়া সকলই কেবল মুখস্ত করাইল?মুখস্ত বিদ্যা দিয়া খাতায় ট্রানস্লেশন করা যায় উদারচিত্তে স্বপ্নত দেখা যায়না।
মনে মনে দমিয়া না যাইবার শপথ করিলাম। তাই এমএস সারিয়া আবার নির্লজ্জের মত ইংরেজি ভাষা শেখানোর এক নামকরা প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সপিয়া দিলাম।
তাহারা নাকি ভাতের মত মুঠা পাকাইয়া ইংরেজি খাওয়াইয়া দেয়। তারপর ঢেকুর তুলিলেই ব্যস। অনর্গল ইংরেজি বহিতে থাকে ঝর্নাধারার মত বাধাহীনভাবে। আহ!!!!এবার আমার স্বপ্ন দেখা ঠেকায় কে?তাই নিরুপায় হইয়া যখন তাদের দ্বারস্থ হইলাম তখন দেখিলাম "ক্যাট"এর বদলে"খ্যাট" আর "পেন" এর বদলে "ফেন" উচ্চারন করিতে যাইয়া আমার পিতৃ মাতৃ প্রদত্ত সাকুল্য ইংরেজি জ্ঞানটুকুও আজ হারাইতে বসিয়াছি।
এমনি ভয়ংকর যখন আমার অবস্থা তখন একদিন টিভিতে দেখিলাম আমাদের এক মন্ত্রীমহোদয় উইকলিক্স প্রদত্ত দূর্নাম খন্ডাইতে বাংলা আঞ্চলিক সুরে ইংরেজিতে ভাষন দিচ্ছেন,"আই এম এ(?) অনেস্ট ম্যান"কি জানি কি মনে করিয়া খুবই চুপিসারে,খুবই দীর্ঘ একটা শ্বাস আমার অন্তর ভেদিয়া বাহির হইয়া গেল।
তবে আমি আজও হাল ছাড়িনা স্বপ্ন আমাকে দেখিতেই হইবে। অর্ধেক জীবনে পারিনাই তাতে কি হইয়াছে,বাকি অর্ধেক জীবনত এখনও হাতে পড়িয়া রহিয়াছে। তাই ইংরেজিতে সর্বক্ষণ ঝগড়া করিতে পারে এমন একজন পার্টনার খুজিতেছি। যাহার সংস্পর্শে আসিয়া নিজেকে কিছুটা হইলেও যেন আপগ্রেড করিতে পারি। যাহাতে অন্তত দুনিয়ায় না হোক মরণের পরে হইলেও মুনকার নকীরের সাথে মোকাবিলা করিতে যেন কোন দোভাষীর প্রয়োজন না লাগে।
(আমি খুব দুঃখিত মা, ইংরেজির জন্যে আমার এই হাপিত্যেশ দেখে তোমার নিশ্চয় খুব কষ্ট হচ্ছে, তাইনা মা?কিন্তু কি করব বলো?শুদ্ধ বাংলায় কথা বলিতে পারিলেও ইংরেজিতে সুন্দর করিয়া হাসিতে পারিনা বলে তোমার সন্তানেরা আমায় আজও একটা চাকরি দিলনা। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।