যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে নাকি একলা চলতে হয়।
এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী সল পার্লমুটার, ব্রায়ান স্মিট ও অ্যাডাম রিস। তাঁরা সবাই মার্কিনি। তবে ব্রায়ান স্মিট মার্কিন বংশোদ্ভূত হলেও এখন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। বহু দূরবর্তী সুপারনোভা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বিস্তারের ত্বরণসংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হলো।
বিজ্ঞানীরা টাইপ ১এ সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করে মহাবিশ্বের বিস্তারের ত্বরণ আবিষ্কার করেন। তাঁদের কাজের ক্ষেত্রটি হলো
জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান। তাঁরা বলেন, মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে কোনো বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার সরে যাওয়ার গতি তত বেশি। ১৯৯৮ সালে তাঁদের এ আবিষ্কারসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হয়। তাঁরা এও বলেন, মহাবিশ্ব কেবল বিস্তৃতই হচ্ছে না, এর বিস্তৃতির গতিও বাড়ছে।
সেবারই প্রথম পদার্থবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় বিস্তারের ত্বরণ বিষয়ে। এ ত্বরণ যদি অবিরত বাড়তে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের উষ্ণতা হ্রাস পাবে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমেই শীতল হতে থাকবে।
কিন্তু এ ত্বরণের চালিকাশক্তি কী বা কিসের মাধ্যমে এটা ঘটছে? আজ অবধি এ প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে বিজ্ঞানের জগতে আপাতত এটা কৃষ্ণ শক্তি (ডার্ক এনার্জি) নামে অভিহিত। কিন্তু এই কৃষ্ণ শক্তিটা কী? পুরস্কার ঘোষণার মুহূর্তে কৃষ্ণ শক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে রয়্যাল সুইডিশ সায়েন্স একাডেমীর প্রতিনিধি বলেন, 'এই কৃষ্ণ শক্তিই সম্ভবত পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে জটিল ধাঁধা।
আমরা শুধু এতটুকু জানি যে, এই কৃষ্ণ শক্তি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চার ভাগের তিন ভাগ। '
১৯৮৮ সালে সল পার্লমুটারের নেতৃত্বে একদল গবেষক প্রথম টাইপ ১এ সুপারনোভার ওপর গবেষণা শুরু করেন। তার ছয় বছর পর ১৯৯৪ সালে ব্রায়ান স্মিটের নেতৃত্বে শুরু হয় ভিন্ন একটি গবেষকদলের গবেষণা। স্মিটের গবেষকদলে পরে অ্যাডাম রিস যোগ দেন। গবেষকদল দুটি সর্বদাই নিয়োজিত ছিল আবিষ্কারের প্রতিযোগিতায়।
প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল, কে কতগুলো দূরবর্তী নতুন সুপারনোভার সন্ধান পেতে পারে। ১৯৯০-এর দশকের পর পৃথিবীতে এবং মহাশূন্যে স্থাপিত অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ, শক্তিশালী কমপিউটার ও সংবেদনশীল ইমেজ সেন্সরের সাহায্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের অনেক অজানা বিষয় জানতে সক্ষম হন।
সল পার্লমুটার ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি লরেন্স বারকেলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। ব্রায়ান স্মিট ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডক্টর অব ফিলোসফি; বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত। অ্যাডাম রিস ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যা ও পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক।
বিজয়ীদের নোবেল সনদ, স্বর্ণপদক এবং প্রায় ১৫ লাখ ডলার দেওয়া হবে। পুরস্কারের অর্থ এ তিনজন ভাগাভাগি করে নেবেন।
আবিষ্কারের গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়্যাল সুইডিশ নোবেল কমিটির ঘোষণায় বলা হয়, অর্থের অর্ধেক পাবেন সল পার্লমুটার ও ব্রায়ান স্মিট এবং বাকি অর্ধেক পাবেন অ্যাডাম রিস।
আজ ঘোষণা করা হবে রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম।
স্টাইনম্যানের নোবেল বহাল
সোমবার ব্রুস বয়েটলার, জুলস হফমান ও রালফ স্টাইনম্যানকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধে শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা সমপর্কে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য তাঁদের এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ঘোষণায় এও বলা হয়, পুরস্কারের অর্থের অর্ধেক পাবেন বয়েটলার ও হফমান আর বাকি অর্ধেক পাবেন স্টাইনম্যান।
ঘটনার এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু ঘাপলা বেঁধে গেল অন্য জায়গায়। পুরস্কার ঘোষণার কিছুক্ষণ পর নোবেল কমিটি জানতে পারে, রালফ স্টাইনম্যান আর ইহজগতে নেই। বিজ্ঞানী স্টাইনম্যান ৩০ সেপ্টেম্বর ৬৮ বছর বয়সে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ খবরে হতবিহ্বল নোবেল কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে জরুরি সভায় বসে।
উল্লেখ্য, নোবেল কমিটির আইনে 'একজন ব্যক্তি তিনি যত অসাধারণ কাজই করেন না কেন, নোবেল পুরস্কার পেতে হলে অবশ্যই তাঁকে এই ধরার বুকে জীবিত অবস্থায় থাকতে হবে। কোনো মৃতব্যক্তিকে নোবেল দেওয়া নোবেল আইনে বে-আইনি। ' এ পরিপ্রেক্ষিতে নোবেল কমিটি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, 'তারিখ ও সময় অনুযায়ী কমিটি যখন স্টাইনম্যানকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন এবং সে কারণে তাঁকে দেওয়া পুরস্কার নোবেল আইনে বে-আইনি নয়। একই সঙ্গে নোবেল কমিটি জানায়, স্টাইনম্যানের মৃত্যুর খবর তাদের জানা ছিল না। প্রয়াত স্টাইনম্যানের পক্ষে তাঁর নিকটাত্মীয়দের কেউ পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
সুত্রঃ- এইখানে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।