নিজেকে চেনার আছে অনেক বাকি...
আজ বিশ্ব শিশু দিবস।
আমাদের দেশে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ’ পালিত হয়। বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়,বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় এই সপ্তাহটি পালন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
আজ ৩ রা অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০১১ এর উদ্বোধন করবেন।
এবারের প্রতিপাদ্য-‘তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে জানবে শিশু জগৎটাকে’।
প্রতিপাদ্য বিষয়বস্তু দেখে আমার কেমন যেন হাসি পেল। অনেকটা বিদ্রুপের হাসি।
আমাদের দেশের শিশুদের মৌলিক চাহিদাগুলোই যেখানে আমরা পূরণ করতে ব্যর্থ,সেখানে এই চাওয়াটুকু আমার কাছে গরীবের ঘোড়া রোগের মত মনে হয়েছে। অনেকেই হয়তোবা আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে,সমাজের উঁচু স্তরে জন্ম নেয়া শিশুরাই কেবল এই সুযোগ পেতে পারে পরিপূর্ণভাবে।
হ্যাঁ,আমি আমার ছোট ভাই-বোনকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিখাচ্ছি,তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। কিন্তু আমাদের দেশের কজন শিশু সেই সুযোগ পাছে!হ্যাঁ,আমাদের সরকার চেষ্টা করছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে কোমলমতি শিশু কিশোরদের বৈশ্বিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের স্কুলেও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ভিশন-২০২১ সফল করার জন্য শিশুর অধিকারকে সমুন্নত রাখতে প্রধানমন্ত্রী সকলকে আহবান জানিয়েছেন।
কিন্তু গত বছর শিশু অধিকার সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের মধ্যে শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন। আমরা আজও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছি পৌঁছতে পারিনি। দুঃখ হয়-আমরা পরিকল্পনা করি,প্রকল্প হাতে নিই কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারি না। সময় চলে যায় আপন গতিতে। হয়তবা আমাদের সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার অভাব থাকে অথবা আন্তরিকতার অভাব থাকে।
আজ শিশু দিবসে ঘুরেফিরে কেবলই মনে পড়ছে ছোট্ট শিশু সোনাবরুর কথা। এমনতো হওয়ার কথা ছিল না। দু’বেলা দু’মুঠো খাওয়ার অধিকার যে শিশুর নিশ্চিত হয় নি,তাকে তথ্যের অধিকার দিয়ে কী লাভ!!
সোনাবরুর ভাই ফেরদৌস(১৩) তো অভাবের কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়ে পাওয়ার টিলার চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে নিজ গ্রামে। সেও তো শিশু!কিন্তু তার শিক্ষার অধিকার কি নিশ্চিত করতে পারলাম আমরা?বন্ধ করতে পারলাম কি শিশুশ্রম?
মিরসরাই ট্র্যাজেডিও ভুলতে পারছি না কিছুতেই।
শিশুদের কোন অধিকারটুকু আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি?চিকিৎসা!!হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যায় কী করুণ অবস্থা!গত আদমশুমারির চেয়ে এবারের আদমশুমারিতে শিশুমৃত্যুর হার বেশি পাওয়া গেছে।
না তাদের মানসিক বিকাশের জন্য আমরা খেলার মাঠটুকু দিতে পারছি!একটা শিশুর সুস্থ বিকাশ হবে কীভাবে!
আমরা আসলে বড়রা নিজেদের নিয়ে এতোই ব্যস্ত যে,শিশুদের নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায় আমাদের!আমার মনে হয় শিশুদের প্রতি আমাদের আরও বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। শিশুরা দেশের মূল্যবান সম্পদ। একদিন এরাই দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের উপযোগী পরিবেশ যদি আমরা করে দিতে পারি,তবে নিশ্চয়ই তারা অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
দেশের বাইরে সোমালিয়ান শিশুদের দিকে তাকালে কেমন যেন দলাপাকানো কান্না উঠে আসে গলার কাছে।
তখন আবার মনে হয় আমরা ভাল আছি,আমাদের শিশুরা ভাল আছে। অন্তত ওদের মত করুণাবস্থা তো নয়। স্রষ্টার কাছে চিত্ত কৃতজ্ঞ হয়।
সুকান্তের ‘ছাড়পত্র’ আমার প্রিয় একটা কবিতা। তাই জুড়ে দিলাম এখানে-
‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুম:
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিত্কারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের—
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস’॥
সুকান্তের মত যদি আমরা প্রত্যেকে অঙ্গীকার করি,তা রক্ষা করতে সচেষ্ট হই-তবে হয়তোবা সুদিন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকবে।
সবার কাছে একটা অনুরোধ-আপনাদের অনেকের অধীনেই হয়তো কিছু শিশু শ্রম দিয়ে যাছে,সেবা করছে আপনার। তাদের প্রতি একটু সদয় হোন। একটু সুদৃষ্টি দিন। আমার বিশ্বাস-এভাবেই ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে একদিন আমরা বড় কিছু অর্জন করতে পারব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।