নীল মানব
শিখ-মুসলিম দ্বন্দ্ব নয় এই ছবির চরিত্রগুলোর মধ্যে মুল বাঁধা হ্য়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাস।
১৯৯২ সালের বাবরি মসজি ভাঙ্গা, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই হামলা, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ, ২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলা, ২০০২ সালের গুজরাট রায়ট- সবগুলো ঘটানাই এই চলচ্চিত্রের কাহিনীতে নতুন বাঁক তৈরি করেছে।
হরিন্দর সিং আর আয়াত রসুলের এই কাহিনীর সূচনাটা একদমই সাধারন।
বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে পালিয়ে পাঞ্জাবে খালার কাছে আসে আয়াত। সেখানেই শুরু হয় এই দীর্ঘ যাত্রা।
হরিন্দর বা হ্যারির বোনের বিয়ের আয়োজনে ভাব বিনিময় এই দুইজনের। এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় হরিন্দর জানতে চায় বৃষ্টি শেষ হবার আগেই বলে দাও বেঁচে থাকব না মরে যাব? আয়াত জানায় কাল সকালে উওর মিলবে কিন্তু সেই সকাল আসে এক যুবকের দীর্ঘশ্বাস হয়ে।
একই সকালে সে হাতে পায় একটি চিঠি যা ৭ বছর পর স্কটল্যান্তে আবার দেখা করিয়ে দেয় এই অসমাপ্ত কাহিনীর কুশীলবদের।
কিন্তু ১৯৯৯ সালের কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান লড়াই বাঁধা হয়ে আসে স্কোয়ার্ডন লিডার হরিন্দরের সামনে। দেশের ডাকে ছুটে যায় কোন খবর না দিয়েই।
আর এই যুদ্ধে আহত হয়ে বাঁহাত অবশ হয়ে যায় হরিন্দরের। আয়াতের যোগাযোগের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। যে সম্ভাবনাটুকু ছিল তাও আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় হরিন্দরে এক সময়ের পাণিপার্থী নারী। সুস্থ হয়ে খোঁজ করে হরিন্দর জানতে পারে আয়াত এখন আমেরিকায়।
২০০১ সালের টুইন টাওয়ার হামলার পর মুসলমান আয়াত দেশে ফেরে।
সুইজারল্যান্ড হয়ে আসার সময় হরিন্দর তাকে দেখতে পায় চলন্ত ট্রেন থেকে। হাতের চিকিৎসার জন্য স্কটল্যান্ড যাচ্ছিল সে।
পরের স্টেশনে নেমে আবার ফিরে আসে আয়াতের খোঁজে। ট্রেন সে দেখা পায় আয়াতের।
কিন্তু আয়াত একা ছিল না!
হরিন্দরের ঘুমন্ত আয়াত আর তার কোলের শিশুটিরে না জাগিয়ে ফিরে আসে।
পরের বছর এক বিয়েতে যোগ দিতে গুজরাটে যায় হরিন্দর। শুরু হ্য় দাঙ্গা। সেই ভয়াবহ রাতে আয়াতকে রক্ষা করে হরিন্দর। তার প্রথম প্রশ্ন ছিল, তোমার বাচ্চা কোথায়? সে নিরাপদে আছে?
আয়তের উত্তর, আমার তো কোন বাচ্চা নেই!
তারপর বাকি কাহিনী….
ছবিটিতে অসাধারন কিছু দৃশ্যকল্প আছে। আছে সময়ের সাথে বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা।
যে দৃশ্যের জন্য অনাপত্তিপত্র পেতে এক সপ্তাহ পরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেটিকে এই ছবির একমাত্র দুর্বল দৃশ্য মনে হয়েছে। যুদ্ধ বিমান এফ-১৬’র দৃশ্যটির বাজেট কম ছিল একথা বলাই যায়। আর চূড়ান্ত পরিনতিতে ভারতীয় ছবির বলয় থেকে পরিচালক বেরিয়ে আসতে চাননি। তাই হরিন্দরের হাত ঠিক হবার দৃশ্যটির অবতারনা।
প্রায় তিন ঘন্টার এক কাহিনী কিছু সময় একটু ধীর মনে হতে পারে।
কিছু দৃশ্য মনে হ্য় প্রাণহীন। তবে পিতার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্রে সেরাটাই দিয়েছেন শহীদ।
সময়ের সাথে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে দুইটি প্রাণের হাহাকার মিলেমিশে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে ছবিটিকে যেটি একে সহজেই আলাদা করবে অন্যদের থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।