আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

█████ প্রাগৈতিহাসিক অভিশাপ █████ - এটা কোন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী না


সিলেট এ জৈন্তাপুরে যখন এই রহস্য মানব কে পাওয়া যায় তখন এই মানব এর শরীর ছিল একদম এই রকম। কোন উপায়ে এই মানুষ টাকে মমি করে রেখে দেয়া হয়েছে সেটা আমরা এখন ও গবেষনা করছি। তবে আমার কিছু হাইপোথিসিস আছে। আমি মনে করি এই মানুষ টা যখন এই অঞ্চলে বাস করত সেই সময় কাল টাকে আমরা ধরে নিচ্ছি আজ থেকে প্রায় ১০০০০ বছর । সেই সময় এই অঞ্চলে এই মানুষ রা বেশ শিক্ষিত ছিল বলেই মনে করছি আমি।

কারন এই মানুষ টার সাথে আছে বেশ ভাল মত ব্যবহৃত তীর ও ধনুক। এই খানে আমরা দেখতে পাচ্ছি সেই তীর আর ধনুক"- বলেই ওয়াইড স্ক্রিনে সুইচ চেপে আগের ছবিটা পেছনে পাঠিয়ে নতুন ছবি সবাইকে দেখানো হল। সবাই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। কারো কারো মুখ উজ্জ্বল- কারো মুখ খানিকটা চিন্তিত। কেউ কেউ কলম দিয়ে টুকে নিচ্ছেন পয়েন্ট গুলো।

খানিকটা থেমে আবার বলা শুরু করলেন ডঃ হালদার- " এই খানে দেখেন এই যে নিচের দিকে ধনুক টা দেখেন সবাই। এই ধনুক এর যে খানে বাম হাতে ধরে তীর চালানো হয় সেখানে একটা তামার পাত লাগানো। আধুনিক এই মানুষ টার নাম ও খোদাই করা আছে এই তামার পাতে। এই যে দেখুন ইলেকট্রিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা গেছে এখানে একটা অক্ষর জাতীয় কিছু খোদাই করা আছে। যেটা দেখতে ইংরেজি 'ভি' অক্ষর এর মত।

কিন্তু "ভি" সাদৃশ এই অক্ষর এর আগে পরে যে চিহ্ন গুলো আছে সেগুলো অনেকটা প্রাগৈতিহাসিক ইন্দো-এশিয়ান চিহ্ন গুলোর মত। এই চিহ্ন গুলো দেখে মনে হয় এই লোক কোন ভাবে তার দল বল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে আসে এই অঞ্চলে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এই লোক এই অঞ্চলেই বসবাস করতে থাকে। এরকারন এই লোকের শরীর ফূটো করে একটা এন্ডোস্কপি করে জানা গেছে এই লোক শেষ যে খাবার খেয়েছিল সেটা ছিল এক ধরনের রুটি। সেই রুটি খেয়েছিল বসন্ত কালের দিকে।

কারন সেই রুটির সাথে সাথে আমরা কিছু ফুলের কুড়ি ও পরাগ রেণু পেয়েছি বিচ্ছিন্ন ভাবে। বসন্ত কালে এখন যেমন ফুলে ফুলে এই উপমহাদেশ সুশোভিত হয়ে ওঠে তেমন আজ থেকে হাজার বছর আগে ও এমন ই থাকত। ফুল থেকে পরাগায়নের জন্য ফুলের কিছু পরাগ রেণু বাতাসে ভেসে ও আসে। হয়ত কোন ভাবে এই লোকের খাবারের তালিকার মাঝে বাতাসে ভেসে চলে এসেছে । এই লাশ তাকে পাওয়া গেছে জৈন্তাপুরের এক প্রাচীন গুহায়।

সেখানে এই লোকের তীর ধনুক ও পাওয়া গেছে। প্রথমে আমরা কিভাবে এই লোকের মৃত্যু হয়েছে সেটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মাংস কেটে পরীক্ষা করলাম। কিন্তু শরীরে কোন বিষাক্ত পদার্থের অস্তিত্ব পেলাম না। মস্তিষ্ক স্কান করে কোন ফল হল না।

সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানী ঝাঊ আমার সাথে এক মত ছিলেন না। আমি এখন বিজ্ঞানী ঝাঊকে উনার বক্তব্য শুরু করার জন্য আবেদন জানাবো"- বলে একটা খালি চেয়ারে বসে পড়লেন ডঃ হালদার। চারদিকে পিনপতন নিরবতা। এরমাঝেই খুক করে কেশে বিজ্ঞানী ঝাঊ চিনচিনে গলায় বলা শুরু করলেন- " আমি আসলে মনে করি এই লোক কোন এক ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছেন।

উনার পিঠের নিচের দিকে আমি দুটো ছোট্ট ফুটো খুঁজে পেয়েছি। এই ফুটো দুটো কে আমাদের এই লোকের সাথেই পাওয়া তীর পরীক্ষা করে তীরের ফুটো র সাথে এই ক্ষত মিলিয়ে আমি প্রমান করেছি এই লোক প্রথমে কোন এক আক্রমন কারী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে যে ছবি দেখতে পাচ্ছি সেখানে দেখবেন যে আমরা পাঁচ টা তীর পেয়েছি মমিটার সাথে। এই মমি টা র সাথে আরেকটি তীর ও পাওয়া গেছে যেটা র মাথা ভাঙ্গা। এবং সেটার ভাঙ্গা অংশ আমরা মমিটার দেশ স্কান করে পাওয়া বুলেটের মত অংশ মিলিয়ে আমরা পেয়েছি।

আমার হাইপোথিসিস অনুসারে এই লোক কোন এক অজানা কারনে একদল মানুষ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে সে কয়েকটা তীর বিদ্ধ হয়। তার মাঝে একটি তীর তার শরীর ভীষণ ভাবে ভেদ করে এবং সে রক্তপাতে মারা যায়। " " কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয় " ঝাঊ এর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলা শুরু করলেন বিজ্ঞানী হাইসাম আমান। হাইসাম আমান বিখ্যাত জীব রসায়ন বিদ।

বাংলাদেশ থেকে নোবেল প্রাপ্ত দ্বিতীয় বাঙ্গালী তিনি। যদি ও তিনি থাকেন মিসরে। সেখানে ই তিনি গবেষনা করেছিলেন মমি বানানোর উপায় নিয়ে। এই মমিটিকে পাওয়ার পর উনাকে আনা হয় এই গবেষনায়। সেখানে বিজ্ঞানী ঝাঊ এর বন্ধু হিসেবে আসলে ও ঝাউ এর সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

তাই আজ সেমিনারে ১২০ জন বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী দের সামনে ঝাল ঝাড়তে তিনি ছাড়লেন না। তিনি শুরু করলেন- "আমাদের মহামান্য বিজ্ঞানী ভুলে যাচ্ছেন আমরা এই লোকটির কার্বন টেষ্ট করিয়ে পেয়েছি এই লোক মারা গেছে প্রায় ১০০০০ বছর আগে। কিন্তু কার্বন টেষ্টে এই লোকের মমির যে আস্তরণ পাওয়া গেছে সেই মমির বয়স মাত্র ৯০০০ বছর পুরোনো। তারমানে কোন এক অজানা উপায়ে একে মমি করে রেখেছিল একে যারা মেরেছিল। কিন্তু আমি একে পরীক্ষা করে কোন মমির পুরাতন আস্তরণ পাইনি।

তাহলে আপনারা অবাক হতে পারেন এই মমি কিভাবে হল?? ১০০০ বছর কিভাবে এই লাশ টিকে থাকল?? আপনাদের জানতে হবে এই মমি বানানোর ব্যাপারটা মানুষ আয়ত্ত করে আজ থেক ও প্রায় ২৫০০০ বছর আগে। তখন মানুষ অনেক ভাবে মানুষের দেহ পচনের হাত থেকে বাচানোর চেষ্টা করতে থাকে। আজ থেকে বছর খানেক আগে অস্ট্রেলিয়ায় একটা মৌমাছি পাওয়া যায় ১০ লক্ষ বছর আগের। একে বারেই অক্ষত সেই মৌমাছি টি ও মমি হিসেবে রেজিন পরিবেষ্টিত ছিল। রেজিন বা কাঠের কষ যে এক বিশেষ পচন নিরোধক এটা সেই আমলের মানুষ আবিষ্কার করেছিল।

আমার ধারনা মতে এই লোক কে রেজিন দিয়ে মমি করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোন ভাবে মাটির নিচ থেকে ঊঠে আসে গলিত লাভা। সেই লাভাতে গলে যায় মমি। তারপর আবার মমি হয়ে যায় গরম লাভার মাঝে। এর পর হাজার বছর পর আমরা একে খুঁজে পাই।

কিন্তু আরেকটা ব্যাপার আমার মনে রাখতে হবে- যে কাদের মমি করা হত? যে সব মানুষ খুব বড় রাজা তাদের মমি করে রাখা হত। কিনবা খুব বড় মাপের রাজা। এখানে আমরা এই লোকটার তীরের উপর যে লেখাটা আমি দেখতে পাই সেটাকে মিসরীয় লেখার সাথে মিলিয়ে আমি পাই একটা ভবিষ্যৎ বানী- আমার ঘুম যেন কেউ ভাঙ্গাতে না আসে " এটাকে আমরা একটা সাবধান বানী কিনবা অভিশাপ বানী ও বলতে পারি। আমার ধারনার সপক্ষে আমার যুক্তির সাথে আমার পরীক্ষার রিপোর্ট আমি আপনাদের দেখাচ্ছি "- বলে একটা ফাইল বের করতে যেতেই বিজ্ঞানী ঝাঊ হটাত করে ঊঠে হাইসাম কে আঘাত করে বসলেন। সবাই অবাক হয়ে গেল ঝাউ এর হটাত আক্রমণ দেখে।

হাইসাম ও ছাড়বার পাত্র নয়। লেগে গেল দুইজনের মাঝে হাতাহাতি। কয়েকজন ছুটে গেল দুইজন কে ছাড়াতে। দুই বৃদ্ধ মারা মারি এমন ভাবে শুরু করল যে কয়েকজন ছিটকে পড়ল এদিক সেদিক। দুইজন বৃদ্ধ বিজ্ঞানী চিৎকার করে চলেছেন আর দুইজন দুইজনের কলার চেপে ধরে মারতে চেষ্টা করছেন।

এমন সময় হটাত করে কেঁপে ঊঠল সবকিছু। মারামারি যারা থামাতে চেয়েছিলেন তারা হটাত করে থেমে গেলেন। খানিক টা নড়ার পর থেমে গিয়ে আবার কেঁপে উঠল সব কিছু। অবাক হয়ে গেল হল ভর্তি ১২০ জন বিজ্ঞানী এবং সব সাংবাদিক। সভাই হতবিহবল।

চোখ বড় বড় করে বিজ্ঞানী হাইসাম ফায়ার ডোর এর উদ্দেশ্যে দৌড় দিলেন। কিন্তু ডঃ হালদার চিৎকার করে জানালেন "ওদিকে যাবেন না হাইসাম ভাই - আমরা মাটির নিচে আছি। মাটির ৩০ ফুট গভীরে। " সেমিনার রুম টা মাটির নিচে করা হয়েছিল শুধু মাত্র সিকিউরিটির কারনে। বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী দের আসা উপলক্ষে জঙ্গি আক্রমণ হতে পারে ভেবে সবাই এখানেই সেমিনার করতে রাজি হয়েছিলেন।

কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হতে শুরু করেছে। এখান থেকে লিফট ছাড়া বের হবার কোন পথ খোলা নেই। এমন সময় আসতে আসতে পুড়ো বিল্ডিং টা দুলতে শুরু করল ভয়ানক ভাবে। এমন ভাবে দুলতে শুরু করল যে মাটিতে ফাটল দেখা গেল। উপর থেকে ফলস সিলিং ভেঙ্গে পড়তে লাগল।

তাতে আঘাত পেয়ে তৎক্ষণাৎ মারা গেলেন দুই তিন জন। সবাই চিৎকার করে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করতে লাগলেন শুধু মাত্র বিজ্ঞনী ঝাঊ দাঁড়িয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলেন- " অভিশপ্ত - এই মমি অভিশপ্ত " কিন্তু উনার কথা শোনার মত পরিস্থিতি কারো ছিলনা। কারন তখন মাটর নিচ থেকে ফেটে বের হতে শুরু করেছে গরম লাভা। ধীরে ধীরে বিশ্বের তাবৎ জ্ঞানী মানুষ গুলো তলিয়ে যেতে শুরু করল লাভার ভেতর। হারিয়ে গেল সেই মমি কৃত লাশ টা ও যেটা দেখতে ছুটে এসেছিল পৃথিবীর মানুষেরা।

১০০০০ বছর পর এক বৈজ্ঞানিক সেমিনার ডাকা হয়েছে বাংলাদেশ নামের ছোট্ট দেশটিতে। পানির লেভেল বেড়ে যাওয়ায় দেশটার অর্ধেক ডুবে গেছে। তাই দেশের অর্ধেক মানূষ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। দেশ টার অনেককিছু ধবংস হয়ে গেলে ও এখন ও কোন রকমে টিকে আছে রাজনৈতিক পরিবেশ । প্রায় ধবংস প্রাপ্ত দেশের প্রধান মন্ত্রি পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী দের ডাকিয়েছেন এক বিশেষ কারনে।

মাটি খুড়ে ১০০০০ বছর আগের একটা স্থাপনা পাওয়া গেছে। সেই স্থাপনা দেখতে ছুটে আসে বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী রা। আনা হয় মূল কম্পিউটার মাকারি কে। মাকারি হল সেই কম্পিউটার যা কাছে সংরক্ষিত আছে পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান। কিন্তু আজকে সবাই হারিয়ে যাওয়া সেই ১২০ জন বিজ্ঞানীর খোঁজে এসেছেন।

কোন এক অজানা কারনে সব বিজ্ঞানী মারা গিয়েছিলেন এই খানে। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতি হলেও মানুষ সেই হারিয়ে যাওয়া বিজ্ঞানী দের খুঁজে পাননি কারন পুরো বাংলাদেশ ধবংস স্তুপে পরিণত হয়েছিল সেই সময়। দেশের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়াতে মৃত মানুষ দের না খুঁজে জীবিত মানুষ দের বাঁচাতে এগিয়ে আসে পুরো পৃথিবী। জ্বলন্ত আগ্নেয় শিলার মাঝে ছিল বলে মানুষ প্রায় ভুলে যায় সেই ঘটনার কথা। আগ্নেয়গিরীর সেই জ্বালা মুখ মরে যাবার তিন হাজার বছর পর সেখান থেকে খুঁড়ে বের করা হয় সেই ল্যাবরেটরি।

সাথে প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় সেই মানূষ গুলো। বিজ্ঞানী মিন আর বিজ্ঞানী লিও কথা বলতে শুরু করে নিজেদের মাঝে- " দেখছ? ঐ যে একটা বিজ্ঞানী বিশাল বপু সদৃশ্য কেমন যেন চোখ খোলা রেখে মারা গেছেন মনে হচ্ছে। ঐ যে দেখেছ একজন পাতলা লোক কোন একটা কাচের জার কে ধরে রেখে ই মারা গেছেন। দেখি কি আছে সেই জারে"- বলেই লিও সেই জারের উপর থেকে লাভার ছাই সরিয়ে ফেলে খুঁজে পেল এক প্রাচীন মানুষের লাশ। চিৎকার করে উঠল দুই জন।

সাথে সাথে ছুটে আসলেন সব বিজ্ঞানী সেখানে। একজন সেই মানুষের সাথে থাকা প্রাগৈতিহাসিক কালের এক ধনুক হাতে নিয়ে নেড়ে চেরে দেখতে লাগল। এমন সময় সেই ধনুকের তামার পাতের একটা লেখা না বুঝতে পেরে ভাষা অনুবাদক যন্ত্র কে সেটা পড়তে দিল। ভাষা অনুবাদকের স্পিকার দিয়ে যে শব্দ ভেসে এল- তাতে সবাই ভয় পেয়ে গেল । ভাষা অনুবাদক অনুবাদ করে চলল- "আমার ঘুম যেন কেউ ভাঙ্গাতে না আসে " শুনে শ'খানেক বিজ্ঞানী খিল খিল করে হেসে দিল।

তারপর আবার কাজে মনযোগী হতে যাবে এমন সময় নড়ে ঊঠল পায়ের নিচের মাটি। আবার শুরু হল ভুমিকম্প....... ---সমাপ্ত----  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।