সভাপতি- বিক্রমপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, সম্পাদক ঢেউ, সভাপতি- জাতীয় সাহিত্য পরিষদ মুন্সীগঞ্জ শাখা পর্ব ১০
হাবিরের সাথে কলেজে দেখা হয় শাহজাদীর। হাবিব ভাই আপনাকেই খোঁজছিলাম। কি ব্যাপার? হাবিব জানতে চায়। শাহজাদী বলে, আমি একটি কবিতা লিখেছি একটু দেখে দিবেন। রাতে কবিতার খাতা খুলে দেখে, একটি প্রেমের কবিতা।
কাকে নিয়ে লেখা আমাকে না তো। সেদিনের কথা ভাবে যেদিন শাহজাদী তাকে নায়ক বলেছিল। হাবিব একটু কেঁপে উঠে। কাঁপা কাঁপা অবস্থাতেই কবিতাটি বুক পকেটে রাখে। একটি চিঠি লিখতে বসে।
কয়েকবার ছিড়ে একপাতার একটি চিঠি শেষ করে। পরদিন কলেজে দেখা হলে কবিতাসহ চিঠিটি দেয় শাহজাদীকে। শাহজাদী মুখে বলে, আমি কিন্তু আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখিনি। আপনি আবার কিছু ভেবে বসেননি তো। হাবিব ভরকে যায়।
শাহজাদী মুচকি হেসে চলে যায়, বোরকার আড়ালে থাকায় হাবিবের তা চোখে পড়ে না তাই বিভ্রান্তি দূর হয় না।
পরদিন শাহজাদী হাবীবকে বলে, আমি বুঝেছি আপনি আমাকে ভালবাসেন। আমার গন্তব্য ঠিক করেছি আপনার দিকেই। কিন্তু ইসলামী বিধানে আপনার প্রতি আমার এই টান গুনাহ। এই গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে বিয়ে করতে চাই এবং আজই।
হাবিব পুরোপুরিই ভরকে যায়। কি বলছ। কিভাবে সম্ভব? আমিতো কিছু উপার্জন করি না।
শাহজাদী জানায় আপনাকে একদিন সময় দিলাম। কাল আমি প্রস্তুত হয়ে আসব।
কালই সবকিছুর ফয়সালা করতে চাই।
হাবিব তার দুজন এমন বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে যাদের বাড়ি এই এলাকায় নয়। ওরা শুনেই অস্থির হয়ে যায়। পারলে বিয়ে তখনই দিয়ে দেয়। হাবিবকে ভাবার সময় ওরাও দিতে চায় না।
হাবিব নিজেই নিশ্চিত নয় যে শাহজাদী আগামী কাল বিয়ের জন্যই আসবে। ওর ভাবতে হয়, আসাদ শুনলে কি ভাববে?
বিকেলে আসাদের খোঁজ করলে, জানতে পারে আসাদ ঢাকা চলে গেছে।
শাহজাদী পরদিন এসেই বলে, বিয়েতে দুটি শর্ত আছে। হাবিব বলে, শর্ত দুটি আমি বলি, প্রথমটি আগামী ২ বছর কাউকে বিয়ের কথা প্রকাশ করা যাবে না এবং দ্বিতীয়টি কোন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না।
শাহজাদী বলে, চলবে।
তাহলে চলুন। ওদের বিয়ে হয়ে যায়।
হাবিব বিষয়টি বুঝে উঠতে না পারলেও শাহজাদীর মধ্যে অনেক প্রতিক্রিয়া হয়। তার বুক ফেটে যেতে চায়। তার ঘনিষ্ট বান্ধবী নয়নাকে খুলে বলে বিয়ের কথা।
নয়না বাসে করে যেতে যেতে আলাপ করে তার বান্ধবী শিখার সাথে। সেই বাসে করে যাচ্ছিল শাহজাদীদের এক আত্মীয়। সে গিয়ে বাড়িতে জানালে হইচই পড়ে যায়। যে বিয়ের কথা দুই বছরে জানার কথা নয় সেটি তিন দিনের মাথাতেই জানাজানি হয়ে যায়। শাহজাদী বুঝতে পারে জানাজানি হয়ে গেছে।
কিন্তু কেউ ওকে কিছু বলে না। বাড়িতে আরেকটি ঝামেলা হয়েছে। মেঝো ভাইর বড় ছেলে নিহাল মাদ্রাসা থেকে ফিওে এসেছে, তার ভয়ংকর কোন রোগ হয়েছে। কি হয়েছে শাহজাদী জানে না। ভাবী কাঁদছে।
ফলে শাহজাদীর উপর আক্রমন শুরু হয়নি।
এমন একটি অস্থির সময়ে বাড়িতে ঢুকে সালমা। দরজা খুলে দেয় বাড়ির মেঝো ছেলে ওবায়েদ উল্লাহ। খুলে দেখেন প্যান্ট-সার্ট পরিহিতা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি সালাম দেয়, আসসালামু আলাই কুম
সালামের পরিবর্তে মাথা নাড়ে ওবায়েদ উল্লাহ।
কে তুমি কাকে চাও?
-আমার বাবার নাম, সৈয়দ হরমুজ আলী, আপনাদের বাড়িতে ভাড়া থাকতো।
ওবায়েদ উল্লাহ দরজা ছেড়ে দাঁড়ায় না। সে ভাবে কি শুরু হলো বাড়িতে। ছেলের সমস্যা, শাহজাদীর উপদ্রুপ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হতেই উপস্থিত আরেক উপদ্রুপ। সালমা ওপক্ষের কোন সাড়া না পেয়ে আবারো বলেন, আমার নাম সালমা।
এবার জাপান থেকে পিএইচডি করে ফিরেছি। আপনাদের সাথে দেখা করতে এসেছি।
মেঝো ভাইয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় শাহজাদী। সে একটু পেছন থেকে শুনছিল। সে বলে, আরে সালমা আপু আসেন, ভিতরে আসেন।
সালমা ভিতরে ঢুকে। শাহজাদীর পড়ার ঘরে ঢুকে পড়ে। সালমা বলে, তুমি আমাকে চেন?
শাহজাদী বলে, আরে না, আপনার কথা শুনে বুঝলাম আপনি এ বাড়িতে এসেছেন, নাম সালমা। আমি মহা ঝামেলায় আছি। শুধু তাই নয়, বাড়ির সবারই ঘুম হারাম করে দিসি।
-কি করেছো?
-আসাদ ভাইয়ার বন্ধু হাবীব কে বিয়ে করে ফেলেছি, গোপনে। কিন্তু ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে। কেউ কিছু বলছে না। মনে হয় যে কোন সময় প্রলয়ংকরী কিছু ঘটে যাবে। আপনি আসাতে বড় বাঁচা বেচেছি।
-কিন্তু আমিতো চলে যাবো। এসেছি আসলে আসাদের খোঁজে। ও কোথায়?
-ছোট ভাইতো হলে থাকে। সে ওখানেই গেছে।
-আমিতো হলে গিয়েছিলাম, হলতো ছেড়ে দিছে।
-তাহলে এখানেই থাকেন, চলে আসবোনে। আপনি থাকলে একটু ভরসা পাব। ভয়ে আছি। ছোট ভাই থাকলেও কাজ হতো।
-তুমি তোমার স্বামীর কাছে যাও না কেন?
-আরে ওতো কিছু করে না।
এছাড়া ওর সাথে চুক্তি হয়েছে, আগামী দুই বছরে কেউ প্রকাশ করবো না। কিন্তু আমার ভুলে ফাঁস হয়ে গেছে।
-তাহলে তুমিও আমার সাথে চল। আমার বাসায় কোন অসুবিধা হবে না। পরে বাড়ির পরিবেশ ঠান্ডা হলে চলে আসলে।
আসাদ আমাদের বাসা চেনে।
-আমাকে কলেজে যেতে দিবে কিনা বুঝতে পারছি না। বাড়ির কেউ কথা বলছে না আমার সাথে। ঠিক আছে আপনি শ্রীনগর সরকারী কলেজে চলে যান। গেটে থাকবেন।
দেখি বের হতে পরি কিনা। আমি না গেলে আপনি বাসায় ফিরে আসবেন, আমার খুবই ভয় করছে।
রাতে সবাই বুঝতে পারে শাহজাদী পালিয়েছে। হরমুজ আলীর মেয়ে পরিচয় যে দিয়েছে, তাকে নিয়ে ওরা নিশ্চিত ও মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে। সালমা বোরকা পড়তো।
এখন জিন্স-প্যান্ট পড়বে কেন? হাবীবের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সন্ধ্যান পেল না। রাতে আসাদ ফিরে আসে বাসায়। বাবা নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে। কবে ঘুমের মধ্যে স্টোক করেছিল। আর সুস্থ্য হয়ে উঠেনি।
মা বাসায় নেই, শাহজাদী নেই, ভাবী নেই। ঘটনা কি?
আধা-ঘন্টা পরে ভাবী ফিরে আসলে, জানতে পারে নিহাল হাসপাতালে। শাহজাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাবীবের সাথে গোপনে বিয়ে হয়েছে।
আসাদ প্রথমে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে, নিহালের গণরিয়া হয়েছে!! আসাদের সামনে ভেসে উঠে ওর নির্যাতনের কথা।
এতো বছর পরে আবারো সেই কাহিনী।
মেঝোভাই বলে, এটা কিভাবে সম্ভব? এতোটুকু ছেলের গণরিয়া হবে কেন?
আসাদের বাবা আসাদকে দিয়ে যে মনের আশা পূরণ করতে পারেন নি, তাই করতে চেয়েছিলেন নিহালকে দিয়ে। আসাদ ডাক্তারের কাছে গিয়ে জেনে আসে গণরিয়ার বৈশিষ্ট কি? তাতে বুঝে আসলে আসাদের সিফিলিস নয় গণরিয়াই হয়েছিল।
আসাদ বলে, গণরিয়া ছোঁয়াচে রোগ, অনেক ভাবেই হতে পারে। মাদ্রাসায় বহুমানুষ থাকে, কারো গণরিয়া হলে তার সংস্পর্শে এলেই গণরিয়া হতে পারে।
চিন্তার কিছু নেই, ভাল হয়ে যাবে। আপনি বাসায় যান। আমি থাকছি। ডাক্তার বাসায় নিতে বললে নিয়ে যাবো।
ওবায়েদ উল্লাহ বলে, তুমি শাহজাদীর খোঁজ করো।
হুরমুজ আলী চাচার মেয়ে সালমার পরিচয়ে এক মেয়ে এসেছিল। ওর সাথেই পালিয়েছে। এটা তোমার বন্ধু হাবিবের কারসাজিও হতে পারে। আমি এখানে থাকি।
আসাদ একটি ভাবনার মধ্যে পড়ে যায়।
ও ঢাকা গিয়ে হরগোবিন্দর কাছে গিয়েছিল। অসীমের নাম চার্জশীট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে ওই দিন অসীম হাসপাতালে ছিল তার প্রমাণ রয়েছে। ওর মধ্যে সিফিলিসের জীবাণূ ছিল। হরগোবিন্দ বলে, প্রকৃতপক্ষে ওর মধ্যে সিফিলিসের জীবাণু ছিল না।
এটা কারসাজি করে ওকে আগে ভর্তি দেখিয়ে, ওসি সাহেবকে নগদ খুশি করে মামলা থেকে বাদ দেয়ানো হয়েছে। অসীম এসব শুনতে চায় না। ও বুঝতে চায় অসীমের সিফিলিস ছিল না। তাহলে একই ডাক্তার ওকে বলে সিফিলিসের কথা। ও মির্ডফোর্ডে সিফিলিসের পরীক্ষা করায় নিজেই।
ফলাফল দেখে ও খুব খুশি হয়ে বাড়ি ফিরেছিল। কিন্তু নিহালের গণরিয়া ওর মনে সেই দ্বন্দ্বই ঢুকিয়ে দিল।
হাবিবের বাসায় গিয়ে হাবিবকে পেয়ে যায়। হাবিবের সাথে কথা বলে বুঝতে পারে, শাহজাদীর অন্তর্ধানের সাথে হাবিবের সম্পর্ক নেই। হাবিবও জানে না শাহজাদী কোথায় আছে? কিন্তু সালমা কেন আসবে? সালমার সাথে শাহজাদীই বা কেন চলে যাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।