(ক্লাস টেনে উঠেছি। স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়র পাবলিক। ভাবই আলাদা। সারাক্ষণ ভাবের দুনিয়ায় থাকি। ঐ সময় ডাইরীতে লেখালেখিও করি ভাব নিয়ে।
তখন একটা ভাবের গল্প লিখতে গিয়ে এই অখাদ্যটা লিখেছিলাম। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই ভাবের ছড়াছড়ি। দেখি আজকে পুরনো এই লেখাটা দিয়ে ব্লগেও একটু ভাব ছড়িয়ে দেয়া যায় কি না। )
এপ্রিল, ১৯৯৫।
সংলাপগুলি ছিল এরকম,
-"কিন্তু, কিন্তু-"
--"কোন কিন্তু না।
"
-"আরে আরে-"
--"কোন আরে না। "
-"শোনো শোনো-"
--"কোন শোনো না। "
-"তোমাকে নিয়ে তো-"
--"কোন আমাকে নিয়ে না। "
-"ঠিকই বলেছ, তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া উচিৎ না। "
--"আরে! এক কথার আরেক মানে করিস কেন? তোকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে।
"
-"না গেলে?"
--"খবর আছে। "
-"জোর করে নিয়ে যাবে না কি?"
--"দেখতেই তো পাচ্ছিস। "
দৃশ্যটা ছিল এরকম,
একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক আলমারি থেকে ঝটপট কাপড় বের করে স্যুটকেসে রাখছেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে একজন তরুণ তাকে বাধা দেবার চেষ্টা করছে। দুজনেরই ঠোঁট নড়ছে।
কাহিনী-সংক্ষেপ ছিল এরকম,
মামার শখ হয়েছে সিলেট বেড়াবার। বোনের কাছে টাকা চাইতে গেলে 'বেলন-তাড়া' খেয়ে আসতে হয়েছে দুলাভাইয়ের কাছে, অর্থাৎ ভাগ্নের বাবার কাছে।
ধরি মামার নাম 'ম', ভাগ্নের নাম 'ভ' আর ভাগ্নের বাবার নাম 'দ'। 'ম', 'দ'-এর কাছে টাকা চাইতে এলে 'দ'-এর উত্তর,
-"তোমাকে টাকা দিতে যাব কার মরণের শোকে। 'ভ' হলে এক কথা, ওর পরীক্ষা শেষ।
এখন বেড়িয়ে আসতে পারে। "
কাজেই 'ম'-এর এখন প্রধান দায়িত্ব, পবিত্র কর্ম হচ্ছে 'ভ'-কে 'দ'-এর সামনে "সিলেট গমনপ্রার্থী" হিসেবে দাঁড় করানো। তিনি নিজে 'ভ'-এর বডিগার্ড হিসেবে যাবেন। 'ভ' রাজী নয়। কারণ 'ম'-এর সাথে বেড়াতে যাবার তিক্ত অভিজ্ঞতা তার আছে।
তা ছাড়া সিলেট ভ্রমণ তার হয়ে গেছে। ঐ স্থানে আবার যেতে ইচ্ছে করছে না। তার দার্শনিক থিওরী, "সুন্দর জিনিস একাধিকবার দেখিলে তাহার সৌন্দর্য্যের ঘাটতি ঘটে। একবার চক্ষে দেখ, অবশিষ্ট জীবন স্বপ্নযোগে দেখ। "
গল্পের শেষ সংলাপগুলি কী রকম হতে পারে? যদি এরকম হয়,
-"আগেই বলেছিলাম।
"
--"কী বলেছিলি?"
-"সুন্দরকে বার বার দেখতে নেই। "
--"আরে বাবা, এখনও কি দেখেছি নাকি?"
-"দেখতে চেয়েছ তো। "
--"কিন্তু, আমি তো আগে দেখিনি। "
-"বেশ তো তুমি, বিপদে পড়ে কেবল নিজের কথাই চিন্তা করছ, আমি যে একবার আগে দেখেছি, সে কথা ভুলেই বসে আছ। "
--"তোর মাথাটাই উল্টা হয়ে গেছে।
"
-"কী বললে?"
--"নইলে এমন উল্টা-পাল্টা কথা বলছিস কেন?"
-"কোন কথাটা উল্টা-পাল্টা বলেছি?"
--"তোর সামনে দেখছি এখন মুখ বন্ধ করে থাকতে হবে। "
-"তাই থাকো না কেন?"
--"এভাবে কথা বলছিস কেন? আমি কি তোর মুরুব্বি হই না?"
-"মোরব্বা হও মোরব্বা, পুংলিঙ্গ। "
--"তুই সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস। "
সংলাপ আরও ছিল। পুরোটা লিখতে গেলে কাগজ, সময় দুই-ই নষ্ট হবে।
তাই দাড়ি দিয়ে দিলাম। শেষ সংলাপগুলো ওরকম হলে শেষ দৃশ্যটা এরকম হওয়া উচিৎ,
একটি রেল লাইন। বগিগুলি ইঞ্জিনের পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, স্থির। যাত্রীরা এদিক সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে। একটি কাটা গাছে গুড়িতে বসে একজন তরুন বিরক্তমুখে গজগজ করছে।
পাশে একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে কিছু বলছেন। একটু পরে দুজনেই উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্বরে বাক-বিতন্ডা শুরু করলেন।
এভাবেই যদি দৃশ্যটি শেষ হয়, তাহলে কেমন যেন মন ভরে না। তারচে যদি শেষ দৃশ্যটা এরকম হয়,
একটি ঝরণা। পাহাড়ের কোন এক ফোকড় গলে বের হয়ে আসছে।
একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক ঝরণাটিকে বিভিন্ন পাশ থেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। প্রত্যেকবারই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন। তার কাছ দিয়েই একজন তরুণ ছুটোছুটি করছে আর চিৎকার করে কবিতা আবৃত্তি করছে। হঠাৎ ভদ্রলোকের দিকে ঘুরে সে অন্যরকম সুরে আবৃত্তি করে বলল, "সুন্দরকে বারংবার দেখ, প্রাণ ভরিয়া দেখ, সহস্রবার দেখিয়াও যদি মনের আশ না মিটিল, তবে বুঝিও তুমি প্রকৃত সুন্দরের দেখা পাইলে। "
না, তাহলেও হচ্ছে না।
গল্পটা কেমন যেন কেমন কেমনই রয়ে যাচ্ছে। তারচে খাতা বন্ধ করে কলম উঠিয়ে রেখে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে থাকাই ভালো। গুড নাইট।
ঘররররররর - ফুসসসসসসসসস............
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।