আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নব উদ্যামে জাগো বাংলাদেশ(বিষয়ঃআমাদের জাতীয় সংগীত)

...............................................................................................................................................................। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোন প্রকার মন্তব্য আমার মানায় না। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কোন ভালো মন্তব্য করিনা যদি কম হয়ে যায় আর খারাপ কোন মন্তব্য করার দুঃসাহস আমার নেই। আমি তার কাছে কেবলি অতি ক্ষুদ্র এক মানুষ। আমি নিজেও কবি গুরুর একজন অনেক বড় ভক্ত।

নিজের কর্মের মাধ্যমেই তিনি সকলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার প্রতিভার বিশালতা। যার বড় প্রমান হল তার সাহিত্যে নোবেল অর্জন। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃরির এমন কোন অঙ্গন নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের ছায়া পড়ে নি কিংবা নেই। তিনি একইসাথে আমাদের এবং ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। আমাদের এত সুন্দর একটি জাতীয় সংগীত উপহার দেয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

যে জাতীয় সংগীত শুনলে আমাদের শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে যায়। হৃদয় আবেগে আপ্লুত হয়। মনের মধ্যে দেশপ্রেমের গভীর সঞ্চার হয়,নিজেকে নতুনরুপে ফিরে পাওয়া যায়। আজ চল্লিশ বছর ধরে যে আবেগকে ,ভালবাসাকে আকড়ে ধরে আমরা শপথ নিয়ে আসছি এতদিন পর কেন জানি সে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি আত্নতৃপ্তির ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। কেন জানি মনে হচ্ছে এর ভিতর থেকে বের হয়ে নতুন শপথের মালা গাথা আজ আমাদের জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে।

আমি আমাদের জাতীয়সঙ্গীতের অবমাননা করছিনা। এটি অনেক সুন্দর এবং তাৎপর্যপূর্নও বটে……। । কবি গুরুর জন্ম কলিকাতায়। যার পুনারাবৃত্তি ঘটেছে কাজী নজরুল ইসলামের বেলায় ও।

যদিও নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। কবি গুরু জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন কলকাতায়-ই। বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন,থেকেছেন এ বাংলার স্বাদ গ্রহন করেছেন এবং মুগ্ধ হয়ে রচনাও করেছেন বেশ। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত তার মধ্যে একটি। আমাদের মত কলকাতায় ও বাংলা ভাষার ব্যবহার হয়।

এবং আমাদের মত তারাও তাদের অঞ্চল কে বাংলা নামে চেনে। কবি গুরু কলকাতায় জন্মগ্রহন করে সে বাংলাকে আকড়ে ধরে সে বাংলা ভাষায়-ই তিনি বিশ্বসম্মান লাভ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ভিতকে আরো সমৃদ্ধশালী করেছেন। তিনি আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে লিখেছেন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। যদিও লেখাটি বাংলাদেশে অবস্থান কালে এবং তার রুপে মুগ্ধ হয়ে লেখা বলে ধরে নেয়া।

তথাপি এটিকে আমাদের একার ধরে নেয়া বাঞ্চনীয় নয়। কারন কবি দু বাংলার রুপই অবলোকন করেছেন এবং স্বভাবতই যার বেশির ভাগই কলকাতার দখলে। সুতরাং বাংলা নিয়ে কবির এ অভিব্যক্তি,মমত্ববোধ,ভালোবাসা দু বাংলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে ধরে নেয়া যায়। যার স্পষ্টতাও পরে ধরা পড়ে। কবি পরবর্তী লাইনে লিখেছেন-‘চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রানে বাজায় বাশি’।

কলিকাতা এবং বাংলাদেশ দু জায়গার মধ্যে যতই পরিবেশ,সংস্কৃতি আর ভাষার মিল থাকুক সবচেয়ে বড় অমিল হচ্ছে আমরা আলাদা দেশ। তিনি যেহেতু দু দেশেই থেকেছেন,তাই দু দেশের জলে বাতাসে তিনি মিশে আছেন। যতই দেশ ঘুরিনা কেন,যতই মমতায় জড়াইনা কেন,জন্মভুমির টান কখনো ভোলার নয়। সূদুর চীন দেশে ও যদি আমি এসি বদ্ধ ঘরে অত্যাধুনিক বিছানায় অনেকদিন ঘুমাই তবুও ক্লান্ত দেহে,ঘামে ভেজা শরীরে আমার মায়ের হাতে বোনা শীতল পাটির উপরে শুয়ে আমি যে ঘুম দিব সে ঘুমের প্রশান্তি নিসন্দেহে অনেক বেশি। যে ঘুমে আমি ভুলে যাব সবকিছু।

বাইরের দেশে নিজের দেশের একঝাক মানুষকে সাথী করে কিছুটা আনন্দে দেশীয় পরিবেশে যদি সে দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার খাই,তারপরও মায়ের হাতের রান্না করা ডাল আর আলুবর্তা দিয়ে ভাত খাওয়ার মত তৃপ্তি পাওয়া যাবেনা। বাইরের দেশের বিশুদ্ধ পানির ঢেউ তোলা নদীতে সাতার কাটার চেয়ে নিজের দেশের দুষিত পানিতে সাতার কাটার তৃপ্তি মনের মধ্যে চিরকাল থাকে। কবি গুরু বাংলাদেশের নদীতে নৌকা ভ্রমন করলে ও তার মন পড়ে ছিল ছেলেবেলার কলার ভেলায় ছড়ার আনন্দের মাঝে। এটা কবি অস্বীকার করলেও তার বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম তা স্বীকার করে। আমার জীবনের বেশির সময় ভাগ কাটল কলকাতায়,আমার বেড়ে উঠা কলকাতার জলে,মাটিতে,বাতাসে।

শত সাবান মাখা আর বিশুদ্ধ পানি দিয়ে গোসল সত্তেও আমার গায়ে কলিকাতার যে মাটির গন্ধ বাতাসের গন্ধ লেগে আছে তা কখনো মুছে যাওয়ার নয় আর কিছুদিনের জন্য গায়ে মাখা এপার বাংলার আকাশ বাতাস কখনই চিরদিন প্রানে বাশি বাজাতে পারেনা। সুতরাং এ লাইনটি ও এ পার বাংলার জন্য যথার্থ নয়। এ লাইনেও মিশে আছে দু বাংলার আকাশ বাতাস মাটি জল। কলকাতায় বাংলার প্রচলন অনেক আগ থেকে হলেও এই বাংলার প্রতি আমাদের অধিকারই সবচেয়ে বেশি। কারন এ ভাষা কে রক্ষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি,অনেক কিছু বিসর্জন দিয়েছি।

তাছাড়া তারা যতই বাংলা নিয়ে ঢোল বাজাকনা কেন তাদের মাতৃভাষা হচ্ছে হিন্দি। কিছুদিনের জন্য এপার বাংলায় বেড়াতে এসে তার প্রেমে পড়ে লেখাটি লিখলেও তাকে জাতীয় সঙ্গিত হিসেবে স্থান দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক আমি জানিনা। যেখানে দু বাংলা তথা দু দেশের মিশ্রনে একাকার। হয়ত তখন আমাদের শক্তিশালী কোন দেশীয় সঙ্গীত ছিলনা যেটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করা যেতে পারে। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের এপার বাংলার প্রতি ভক্তি নিয়ে সন্দেহের শেষ নেই।

বদন খানি মলিন হলে যদি নয়ন জলেই ভাসবেন তাহলে কেন বাঙ্গালিদের ধিক্কার দিয়ে বলে গেছেন,-‘হে বঙ্গ জননী রেখেছ বাঙ্গালি করে মানুষ করনি’। তার সাহিত্য নিয়ে আমরা বাংলা ভাষাভাষিরা গর্ব করতে পারি ঠিকই কিন্তু তার এ ভালোবাসাকে মুল্যায়ন করে বুকে আকড়ে ধরে বাংলা ভাষা সাহিত্য এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেওয়া যায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার শপথ নেয়া যায় না(কতটুকু সমীচীন আমার বোধগম্য নয়)। কবি গুরু ভারতের জাতীয় সঙ্গিতের রচয়িতাও বটে। তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতের প্রতি নিজের মমত্ববোধের গভীরতা। এখানেই কবি গুরুর দেশপ্রেমের স্পস্টতার প্রমান পাওয়া যায়।

অর্থাৎ তার প্রানে চিরদিন বাশি বাজাতে পারে কেবল বাংলা ভাষা, ওপার বাংলার আকাশ বাতাস মাটি জল ,হিন্দুস্তানের আকাশ বাতাস মাটি জল। বাংলাদেশের আকাশ বাতাস মাটি জল নয়। আমি দুটো জাতীয় সঙ্গিতের সাথে কোনরুপ ভিন্নতা বা তুলনা করতে যাবনা। তবে শিকড়ের টান কখনো ভোলার নয়। যত কিছুই বলিনা কেন,তার প্রতি কলকাতার মানুষের অধিকার বেশি।

এবং রবীন্দ্রনাথের ও এপার বাংলার চেয়ে অবশ্যই কলকাতার প্রতি মমতা কিংবা অধিকার বেশি। এতে কারোরই কোন হাত নেই। মাতৃভুমির প্রতি সবারই টান থাকে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাংলা সাহিত্যের প্রান। তিনি বাংলা সাহিত্যের ভিতকে অনেক দৃঢ় করেছেন।

বাংলা সাহিত্যের শক্তি সামর্থ্যের পরিমান সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। বাংলা সাহিত্য তার কাছে আজীবন ঋনী। বাংলা সাহিত্যে আর কোন রবীন্দ্রনাথের উদয় হবেনা এটা মোটামূটি নিশ্চিত বলা যায়। আমরা তাকে আজীবন স্মরন রাখব। আমরা বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা করার জন্য লড়াই করেছি।

আর রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের ভিতকে মজবুত করার লড়াই করেছেন। যেকোন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সে দেশের অস্তিত্ব জড়িত। ভারত রবীন্দ্রনাথকে বুকে ধরে শপথ নিতে পারে আমরা পারিনা। তারা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গর্ব করে তিনি সে দেশের নাগরিক। আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গর্ব করি তিনি বাঙ্গালী।

তার অনেক স্মৃতি আমাদের দেশের মাটি বহন করছে। কিন্তু তিনি আমাদের দেশের নাগরিক নন। আমি আবারো বলছি আমরা রবীন্দ্রনাথকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিনা। এবং এটা কখনো সম্ভবও নয়। আমরা যতই বেহায়া জাতি হইনা কেন,আমাদের অনেক গুনীজন রয়েছেন।

আমরা বিশ্বের বুকে সাহসী জাতি হিসেবে নিজেদের বারবার প্রমান করেছি। আমরাও নোবেল পেতে পারি বিশ্বকে তা দেখিয়ে দিয়েছি। এভারেস্টের চূড়ায় পা দেওয়া আমাদের পক্ষেও সম্ভব আমরা তা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আমাদের রয়েছে অজস্র তরুন প্রতিভা যারা আগামীতে আমাদের জন্য নতুন সফলতা বয়ে আনবেন। সুতরাং কারো দাসত্ব করার সময় আমাদের এখন নেই।

আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে মাথা উচু করে দাড়াতে চাই। তাই আমাদের উচিত নিজের দেশ থেকে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করা। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের মত সাহিত্য ভান্ডার নিয়ে আবির্ভুত হওয়া কারোপক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমাদের ও অনেক খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিক রয়েছেন। যারা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর ইতমধ্যে রেখেছেন এবং রেখে চলেছেন।

তাদের রচিত কিংবা এখন আমাদের অনেক সমৃদ্ধশালী দেশাত্নবোধক সংগীত রয়েছে। আমাদের মত এত সমৃদ্ধশালী দেশাত্নবোধক সঙ্গীত আর কোন দেশে আছে বলে আমার জানা নেই। আমরা ইচ্ছে করলে এদের একটিকে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচন করতে পারি। যার একটি উদাহরন হতে পারে-‘একটি বাংলা দেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার’। –কিংবা ‘সূর্যদয়ে তুমি,সূর্যাস্তে তুমি,ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্মভুমি’।

এতশক্তিশালী এত উদ্দীপ্ত এত প্রানময় সঙ্গীত থাকতে কারো উপর আর আমাদের নির্ভর শীল হওয়া বোধহয় উচিত হবেনা। প্রত্যেকের নিজস্ব সত্তা বলে একটা কিছু থেকে থাকে। তাহলে আমাদের মনোবল হয়ত আরেকটু দৃঢ় হবে। নিজের দেশের উপর খানিকটা হলেও বেশি আত্নবিশ্বাস জাগবে। নিজেদের সামর্থ্যের কিছুটা প্রমান মিলবে বহির্বিশ্বে।

রবীন্দ্রনাথ তার জায়গা-ই থাকলেন। আমরা শুধু নিজেদের আরেকটু বেশি করে জানলাম। শপথ নেব আমাদের কালজয়ী গানে। ব্যাপারটা বিশিষ্টজনেরা কিভাবে নেবেন জানিনা। তবে চিন্তার খনিকটা সময় এর পেছনে ব্যয় করলে বোধহয় তেমন কোন অসুবিধে নেই।

রবীন্দ্রনাথকে আমরা কখনো ভুলতে পারিনা,ভুলবো ও না। কেননা আমার কানে রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন সুর হয়ে বাজে। প্রিয় অবসরের হাতে শোভা পায় ‘সঞ্চয়িতা’। আগের মতই আমরা রবীন্দ্র জন্ম মৃত্য বার্ষিকী পালন করবো। সুতরাং এতে আশাকরি রবীন্দ্রসত্তার অপমৃত্য হবেনা।

সে আশ্বাস বোধহয় রবীন্দ্র ভক্তরা পেতে পারেন। মোঃজাহিদুল হাসান রাশেদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।