আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

¤....স্বস্পর্শী রৌদ্র বালিকা....¤

আমার কোনো গন্তব্য নেই । পরিব্রাজকদের কখনো গন্তব্য থাকার কথা না... . মেস থেকে বের হয়েই মনে হচ্ছিলো কি যেনো একটা নিইনি । কি নিইনি সেটা মনে আসছেনা । অথচ মনে না আসা পর্যন্ত মনের খচখচানি কমবে না । আমার উচিত ওটাকে ভুলে যাওয়া ।

কিন্তু পারছিনা । তবে বের তো হয়েই গেছি । অবশ্য পরিব্রাজকদের কখনোই তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ই থাকেনা যে সেটা না নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে... . . এখনকার মতে গন্তব্য ঠিক করেছি কারো বাসায় হুট করে হাজির হবো । রাত হয়েছে । ক্ষুধার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে ।

পাশের কোনো বাসায় মাংস ভুনার সুগন্ধ পাচ্ছি । কিন্তু ঠিক কোন বাড়ী থেকে আসছে সেটা বুঝতে পারছিনা । আমার পরিচিত বেশ কিছু মানুষ আছে । যাদের কাছে গেলেই আজকের খাওয়ার আশাটা পূর্ণ হবে । সেই হিসেবেই আমার এখনকার গন্তব্য সোয়াইব মিয়ার বাড়ী ।

. : সোয়াইব মিয়া বাসায় আছো নাকি ? - কে ? : কেউনা । আমি পরি । সোয়াইব হুড়মুর করে বাইরে আসলো । অবাক করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । : কি ব্যপার সোয়াইব মিয়া ? অসময়ে এসে পড়লাম নাকি ?আর তুমি এমন খালি গায়ে আছো কেনো ? আর একটু হলে তো তোমার লুঙ্গিও খুলে পড়বে ।

সোয়াইব অপ্রস্তুত হয়ে লুঙ্গি ঠিক করতে লেগে গেলো । আর বললো, - আসেন পরি ভাই ভেতরে আসেন । আমি কথনোই ভাবিনাই যে আপনি আমার এখানে আসবেন । : হুম । আমিও জানতামনা যে আসবো ।

হটাত্ চলে এলাম । চলো ভেতরে চলো । - চলেন পরি ভাই । সোয়াইবের সাথে আমার পরিচয় খুব আকস্মিক । সোয়াইব একটা গার্মেন্টস এ চাকরি করতো বছর দুয়েক আগে ।

সংসারে তখন তার কেউ ছিলোনা । তাই বেতনের টাকাটা পুরোটা কখনোই সে তুলতোনা । মাস চলার মতো কিছু তুলতো । বাকিটা রেখে দিতো । তারপর একসময় সোয়াইব চাকরী ছেড়ে সেই জমানো টাকাটা তুলে ব্যবসা করার জন্যে টাকাটা চাইলো ।

কিন্তু সেই গার্মেন্টস ম্যানেজার আজ কাল করে টাকাটা আর দিচ্ছিলোনা । এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন পরে সোয়াইব আর সেই ম্যানেজার রাস্তায় যখন কথা কাটাকাটি করছিলো তখন আমি ঐ পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম । কি হয়েছে বলতেই সোয়াইব আমাকে সব খুলে বললো । আমি এগিয়ে গিয়ে ম্যানেজারের কলার চেপে ধরে শুধু বললাম, 'এই ব্যাটা, যদি নিজের ভালো চাস তো টাকাটা দিয়ে দে এখন ই । নইলে বেওরিশ লাশ হিসেবে তোর লাশটা মেডিকেল কলেজে পাঠাবো ।

' ম্যানেজার থতমত খেয়ে বললো, 'কে আপনি ভাই ?' আমি সাথে সাথেই বললাম, 'আমারে চিনস না তুই ? আমি এম. পি নূরুল হকের সবচেয়ে ছোট ভাই' । ব্যাস । সাথে সাথেই কাজ হয়ে গেলো । সেদিন খুব জোর করেছিলো সোয়াইব ওর বাড়ীতে খাবার জন্য । আমি আসব বলে আর আসিনি ।

শুধু বাড়ীটা চিনে রেখে গিয়েছিলাম । প্রায় দেড় বছর পর আজ আমার আসার সময় হয়েছে । তাই আসলাম । . - এতোদিন কোথায় ছিলেন পরি ভাই ? : এখানেই ছিলাম । - অ ।

আমি মনে মনে আপনাকে অনেক খুজেছি । পাইনি । আপনি থাকেন কোথায় সেটাও তো জানিনা । আপনার ভাবী তো এখনও আপনার কথা বলে । : হুম ।

- আজ কি কোথাও বেড়িয়েছিলেন নাকি পরি ভাই ? : হু । যাবো । প্রথমে তোমার এখানেই আসলাম । - খুব ভালো করেছেন । আমি খুব খুশি হয়েছি ।

কোথায় যাবেন ? : দু জন অতি পরিচিত মানুষের কাছে । তারপর সেখান থেকে আর একজনকে খুজতে । - অ । আরেকজন কে পরি ভাই ? : স্বস্পর্শী রোদ্র বালিকা । - এটা কি ? : তুমি বুঝবেনা ।

সোয়াইব আজ কিন্তু তোমার বাসায় খেতে এসেছি । গরু মাংস ভুনা সাথে খিচুরী । পাওয়া যাবে তো ? - অবশ্যই পাওয়া যাবে । ফ্রিজে মাংস আনাই আছে । চিকন চালও আছে ।

শুধু রান্না করতে হবে । : ঠিক আছে । তুমি ব্যবস্থা কর । আমি শুয়ে পড়লাম । খেয়েই বের হতে হবে ।

কাজ আছে । - এই রাতে আবার কি কাজ ? : আছে । খুব জরুরী কাজ । খুব জরুরী । ।

যাও তুমি রান্নার ব্যবস্থা করো । . সোয়াইবের মতো মানুষেরা খুব কৃতজ্ঞ হয় । কেউ এদের উপকার করলে এরা কখনো সেই উপকার ভোলেনা । এবং যখন যেভাবে পারে তার প্রতিদান দেয় । সেই সুযোগটাই আজ আমি নিয়েছি ।

. . খাওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়াটা উচিত হয়নাই । পেট ভারী ভারী লাগছে । সোয়াইব মিয়ার বাড়ীতে আর কিছুক্ষণ থেকে গেলে হতো । সোয়াইবের বউ অনেক করে বলছিলো থেকে যাবার জন্য । আমি থাকিনি ।

কারণ একটু বিশ্রাম নিতে গেলেই আলসেমি ধরে যাবে । তাহলে আর স্বস্পর্শী রৌদ্র বালিকাকে খোজা হবেনা । . . আমার পৃথিবীতে দুজন অতি পরিচিত মানুষ আছে । কেনো জানিনা এ দুটো মানুষ আমাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে । এদের তীব্র ভালোবাসা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব আমার জন্য ।

এ জন্যেই এদের কাছে আমি বার বার আসি । এখনকার গন্তব্য তাদের ই একজনের বাসায় । ওর নাম অনীশা । আমার বোন । বৃষ্টি পাগল একটা মেয়ে ।

বৃষ্টি হলেই ও ভিজবে । ওর ধারণা বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয় । যদি ভেজা না হয় তবে বৃষ্টিকে অপমান করা হয় । আমি বৃষ্টি পাগল নই । কিন্তু এই বৃষ্টি পাগল মেয়েটা যে কিভাবে আমার বোন হলো সেটাই রহস্য ।

. . আজ আর অতি পরিচিত কিছু জিনিস দেখছিনা । যেমন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোষ্ট । পাশের কিছু বাড়ী । আকাশের প্রায় পূর্ণ চাদ । কিছুই দেখছিনা ।

মাথা নিচু করে চুপচাপ হেটে যাচ্ছি গন্তব্যে । . সৃষ্টিকর্তা মনে হয় পৃথিবীটাকে অনেক যত্নের সাথে সৃষ্টি করেছিলেন । তারপর অযত্নে ফেলে রেখেছেন । আমরা মানুষেরা এর কিছু জায়গার যত্ন নিচ্ছি । সেসব জায়গাকে চোখে অদ্ভুত সুন্দর লাগে ।

এমন একটা জায়গায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছে । আমার চারপাশের মানুষগুলোর এই অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো দেখতে আর ভালোলাগেনা..... . . রাত এখনো খুব বেশি হয়নাই । প্রথম প্রহর শুরু হয়েছে বেশ কিছু আগে । স্বস্পর্শী রৌদ্র বালিকাকে খুজতে যাবার সময় এখনো আসেনি । অনীশাদের বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি...... . . . চলবে.... ।

। । । । ।

। । । । ।

। .। .। । ।

। .। .। .। ।

। । .। . ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.