তাওহীদুল ইসলাম: ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে বারবার নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিন থেকেই চলে যাত্রী হয়রানি। লোকাল, সিটিং বাস সর্বত্র চলছে ভাড়া নিয়ে অরাজকতা। বিআরটিএর প্রস্তাবে সর্বনিু ভাড়া উল্লেখ না থাকার সুযোগে নৌমন্ত্রীর সুপারিশে এক টাকার বাসভাড়া হয়ে গেছে পাঁচ টাকা।
আর সিএনজি অটোরিকশার ক্ষেত্রে মিটারে চলার বাধ্যবাধকতা থাকলেও আগে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল। এখন আগের অবস্থান থেকে সরে এসে চালকরা ভাড়া আদায় করছেন তিন-চারগুণ হারে। অসহায় যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় বিআরটিএ। মাত্র দুজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট ব্যর্থ হলে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ১০ ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে চিঠি পাঠায় বিআরটিএ। কিন্তু তখন দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হওয়ায় দেখা দেয় ম্যাজিস্ট্রেট সংকট।
ফলে ভেস্তে যায় মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম। সেই সুযোগে বিনা বাধায় চলছে বাড়তি ভাড়া আদায়।
বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মশিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। সম্প্রতি ১৩ ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নতুন ম্যাজিস্ট্রেট পেলে অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান সফল হবে।
যাত্রীরা জানান, পরিবহন মালিকদের স্বার্থ বিবেচনা করে প্রণয়ন করা নতুন ভাড়ার হার মানছে না সংশ্লিষ্টরা। সরকার ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করলেও এরা বাড়িয়েছে ১০০ শতাংশ। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে গণপরিবহনে সর্বশেষ ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয় গত ১৩ মে থেকে। টানা একসপ্তাহ ধরে চলা যাত্রীভোগান্তি চরম আকার ধারণ করলে গত ১৯ মে বাস, মিনিবাস ও সিএনজি অটোরিকশার নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। অথচ এখনও কাগুজেই রয়ে গেছে ওই ভাড়ার প্রজ্ঞাপন।
নগরীতে বাস-মিনিবাস ছাড়া রয়েছে সিএনজি অটোরিকশা। ২০০৩ সালে এসব গাড়ি চালুর পর এ পর্যন্ত চারবার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গত জানুয়ারিতে একদফা ভাড়া ভাড়ানো হয়েছে। তখন দুই দফা সময় নিয়ে মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। গত ১৩ মে সিএনজির দাম বৃদ্ধির পর আবার বাড়ানো হয়েছে।
সরকার ভাড়া বাড়ানোর আগেই সিএনজিঅটোর চালক-মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। তবু মিটারে যেতে কোনওভাবেই রাজি নয় অটোরিকশা চালকরা। এছাড়া নগরীতে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ট্যাক্সিক্যাব। মিটারে না চললেও এসব ক্যাব আদায় করছে বাড়তি ভাড়া।
এদিকে বিআরটিএ ও আরটিসির তৈরি দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বাসমালিকরা।
সিটিং সার্ভিস হলে সর্বনিু ৭ টাকা আর লোকাল সার্ভিস হলে ৫ টাকা আদায় চলছে। সরকারি হিসাবে পল্লবী থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত দূরত্ব ২.১৭ কিলোমিটার। যেকোনো মিনিবাসে কেউ এই পর্যন্ত এলে মিরপুর ১২, সাড়ে এগার, ১১, ১০, কাজীপাড়া পর্যন্ত ভাড়া দেবেন ৫ টাকা অথচ আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। এছাড়া সিটিং সার্ভিসের নামে কিছু গাড়ি পল্লবী থেকে যাত্রাবাড়ি ২০ কিলোমিটারের ভাড়া নেয়া হচ্ছে। ওই বাসে শেওড়াপাড়া থেকে আগারগাঁও গেলেও নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা।
অথচ আইনে সিটিং সার্ভিস দেখিয়ে ভাড়া নেওয়ার বিধান নেই। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাসে প্রতিকিলোমিটার ভাড়া ১.৫৫ টাকা এবং মিনিবাসে ১.৪৫ টাকা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করলে গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করতে হবে। এছাড়া অপরাধের ধরণ অনুযায়ী শুধু জরিমানা নয়, মালিক-শ্রমিকদের শাস্তির আওতায় আনা গেলে বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দূর হবে।
বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জি) সাইফুল হক বলেন, রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি- আরটিসির হিসাবে ঢাকা মেট্রো অঞ্চলে ১৬০টি রুটের মধ্যে ১৪০টি বর্তমানে কার্যকর।
রুটভেদে ৮-১০টি স্টপেজ আবার কোথাও ১০-১২টি স্টপেজ রয়েছে। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তোফায়েল ইসলাম জানান, অভিযানের খবর জেনে বিকল্প পথে চলছে গাড়ি।
২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম সাড়ে আট টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছিল। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম সোয়া ৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। সরকার ঘোষিত নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচলকারী বাসের ভাড়া এক টাকা ৫৫ পয়সা এবং মিনিবাসের ভাড়া এক টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়েছে।
দূরপাল্লার গন্তব্যে চলাচলকারী বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি এক টাকা ১৫ পয়সা।
View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।