আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক সপ্তাহের গল্প

আমার ব্লগ আমি আমার ডায়েরীর মতো করে ব্যবহার করি। এখানে আমি একটা গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারি, অথবা আজকে কিসের তরকারী দিয়ে ভাত খেলাম, সেইটাও লিখতে পারি। । শনিবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে শব্দেরা থেমে যায়, আমি একা। - মানে কী? - যেখানে দেখার কেও নেই।

- কাব্যগিরি মারাইবা না! সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও। কই তুমি? - বাথরুমে। - বদের হাড্ডি! ফোন রাখো! তিন্নি ফোনটা রেখে দিল। বিরবির করে বললো, শয়তান কোথাকার! রবিবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে স্বাধীনতা মরে যায়। - মানে কী? - যেখানে সাহায্য করার কেও নেই।

অনেকের মাঝেও আমি একা। - কাব্যগিরি মারাইবা না! সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও। কই তুমি? - পরীক্ষার হলে। - বদের হাড্ডি কোথাকার! ফোন রাখো! তিন্নি রেগেমেগে কিছু একটা বলে। তিন্নির মা ধীর পায়ে তিন্নির রুমে ঢুকে।

কি হয়েছে জানতে চায়। তিন্নি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে, “দেখ না মা, তুহিন পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে ঢুকেছে। এখন যদি মোবাইলটা স্যারেরা দেখে ফেলে, কী কান্ডটাই না হবে। ” সোমবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে মানুষেরা কেঁদে বেড়ায়। - মানে কী? - যেখানে বিত্তবানের আধিপত্য।

- কাব্যগিরি মারাইবা না বলে দিলাম! সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও। কই তুমি? - থানায়। - বজ্জাত কোথাকার! ফোন রাখো! তিন্নি ধুপ করে ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর গাড়িটা নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। রাগী রাগী কন্ঠে ফোঁস ফোঁস করে বলে, “নিশ্চয়ই কিছু একটা করে ধরা পড়েছে! বাঁদর কোথাকার!” মঙ্গলবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে রুপের আসল রুপীরা ঘুরে বেড়ায়।

- মানে কী? - যেখানে অদ্ভূত মানুষেরা সুন্দর হয়ে যায়। - কাব্যগিরি মারাইবা না। সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও। কই তুমি? - মহিলা পার্লারে। - অ্যাহ! তিন্নি চোখ বড় বড় করে।

তিন্নির মাথায় একশ একটা দুশ্চিন্তা ঘোরাফেরা করে। তুহিন মেয়েদের পার্লারে কার সাথে গেছে! তবে কী... তিন্নি রেগেমেগে চিৎকার করে বলে, “অই বাঁদরের বাচ্চা! তুই কই!! হ্যালো হ্যালো হ্যালো!!!” বুধবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে জোনাকীরা কথা বলে। - মানে কী? - যেখানে নক্ষত্রেরা খেলা করে। - আজাইড়া কাব্যগিরি আমার একদম পছন্দ না। সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও।

কই তুমি? - বাসার সামনের রাস্তায়। - হায় হায়! বলো কী! এত রাতে বাইরে কেন? - দেরী করে ফেরার কারনে বাবা বাসায় ঢুকতে দেয়নি। - হিহিহি! একদম ঠিক কাজ করেছে আঙ্কেল। এখন তুমি তোমার জোনাকী আর নক্ষত্রদের সাথে রাত্রিযাপন করো। দেখ কেমন লাগে।

আমি ফোন রাখলাম। হিহিহি! বৃহস্পতিবার, - হ্যালো! কই তুমি? - যেখানে মানুষেরা পর্দাবন্দি হয়ে থাকে। - মানে কী? - যেখানে মানুষেরে দেখে, মানুষেরাই বিনোদিত হয়। - আজাইড়া কাব্যগিরি মারাইবা না। সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও।

কই তুমি? - সিনেমা হলে। - বলো কী! ইয়াহুউউউউ! আসতেছি! তিন্নি নাচতে নাচতে সিনেমা হলে চলে যায়। শুক্রবার, - হ্যালো! কই তুমি? - একটা পথে, যে পথের শেষ না ফেরার দেশে। - মানে কী? - যেখানে বেঁচে থাকে স্মৃতিরা। অথবা বেঁচে থাকে অক্ষত ব্যাথারা।

মরে যায় অনূভুতি, মরে যায় গান, মরে যায় ভালোবাসা, ভেজা কাক প্রান। । নিঃশেষ হয়ে যায় সোনালী স্মৃতিরা, নিঃশেষ হয়ে যায় অক্ষত ব্যাথারা, বেঁচে থাকে অনূভুতি, বেঁচে থাকে গান, বেঁচে থাকে ভালোবাসা, ভেজা কাক প্রান। । কল্পনাবৃত, জীবনটা হয়ে যায়।

। এলোমেলো এলোমেলো, সবকিছু রয়ে যায়। । - তোমার এই লুতুপুতু কবিতা আমি তোমারে গুলায়ে খাওয়াবো! সোজা-সাপ্টা উত্তর দাও। কই তুমি? - হসপিটালে।

তিন্নি ধাক্কা খেয়ে যায়। হসপিটালের বাইরে একটা কাঠের বেঞ্চিতে তিন্নি আর তুহিন বসে থাকে। তুহিনের মুখে চিরচেনা বিটলামি মার্কা হাসি। তিন্নি তুহিনের দিকে চেয়ে হুহু করে কেঁদে ফেলে। তুহিন সহজ করে বলে যায়, “আসলে এইরকম কিছু একটা ধরা পড়বে ভাবিনাই।

মাঝে মাঝে একটু-আধটু খারাপ লাগতো, মাথা ধরতো এই-ই যা। ধুচ্ছাই! জীবনটা বাদামের খোসা হয়ে গেল। ’’ তিন্নি কল্পনাও করতে পারেনা, এই পাগলটা যে ওকে ছেড়ে চলে যাবে। ডাক্তারের দেয়া রিপোর্টটা দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তুহিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

কেঁদে আর কূল পায়না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।