পেশায় নাবিক নেশায় যাযাবর দেশের বর্তমান সময় সবচেয়ে কোন জিনিসটা জরুরি ? আমার এক জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার বলল এঙ্গার ম্যানেজমেন্ট !! প্রথমে ভাবলাম নাইস জোকস । পরে চিন্তা করে দেখলাম , না ছেলেটা খারাপ বলেনি । আসলেই আমরা দিন দিন একটি রাগান্বিত পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি । সবাই কেমন যেন রেগে আছে !! সরকারি দল বিরোধি দলের উপর রেগে আছে তেমনি বিরোধি দল সরকারের উপর । মন্ত্রীরা রেগে আছে আমলাদের উপর ।
তাদের অভি্যোগ আমলারা ঠিক মত কথা শুনে না । সব চুরিচামারি আমলারা করে আর জেলে যায় মন্ত্রীরা (তত্বাবধায়ক সরকারের সময়)। আবার আমলারা বলে
আবার আমলারা বলে “ওরা মুর্খ । পলিসি মেকিং কি জানে না । প্লানিং কি বুঝে না ।
আমরা সব রেডি করে দেই । ওরা শুধু সই করে। আর টিভিতে/ দৈনিকে ওদের নাম যায়। যত্বসব !” আবার এমপিরা/দলের কর্মিরা মন্ত্রীদের উপর রাগ । এলাকায় যায় না,অফিসে দেখা দেয় না, তদ্বির শুনে না - আরো কত কি ।
আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনেও অনেক রাগ। সকালটা শুরুও হয় রাগ দিয়ে। টয়লেটে গেছেন পানি নাই , নাস্তা খেতে বসেছেন টেবিলে খবার নাই। কারনে গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলছে না। বাজারে গেছেন কিছু কিনতে পারছেন না।
কারন গতকাল যে সব্জি ২৫ টাকায় কিনেছেন আজ তা ৪০ টাকা !!কিন্তু দেখার কেউ নাই। মন্ত্রীরা বলেছেন “কম খেতে” এবং বাজারে কম যেতে। রিক্সা ওয়ালা ১৫ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা চাইছে। ট্যাক্সি’র কথা না হয় বাদ দিলাম। দিন দিন আমাবশ্যার চাদ হ্য় যাচ্ছে ।
দেখবেন অনেক সিএনজি আছে। কিন্তু তারা কোথায় যাবে নিজেরাই জানে না। উত্তরা যেতে চাইবেন বলবে না ওখান থেকে আসা ঝামেলা, মতিঝিল যেতে চাইবেন বলবে ঐদিকে তো অনেক জাম! গুলশান, বনানী,ধানমন্ডি, সব খানেই না যাওয়ার কাহিনী। মাঝে মধ্যে রাগ করে বলি , “যেখানে যাবে সেখানেই নিয়ে” ।
আমাদের রাগের কোন শেষ নাই।
আমাদের প্রধান দুই দলের রাগারাগীতে দেশের তক্ষন কঠিন অবস্থা । সবাই মিলে বলাবলি করছিল দুই নেত্রীকে একসাথে না বসালে আর নয়। ঠিক সেই সময় একজন সিনিয়ার রাজনিতিবিদ রাগ করে বলেছিল “ দুই মহিলার মিলনে কিছুই উদপাদন হয় না” আশ্চর্য তার এই কথায় কেউ রাগ করেনি।
অনেকেই বলে থাকেন রাগ একটি মানসিক রোগ । আবার কেউ বলেন হাসি,কান্না , হিংসার মত রাগও একটি ইমোশন।
তবে তার বহিপ্রকাশ হতে হবে সহনীয় । রাগের সময় শরীরে বিভিন্ন হরমন বের হয়। যার ফলে হার্টবিট বেরে যায়,ব্লাড প্রেশার বেরে যায়। রাগের কারনে আমাদের ভাল মন্দ জ্ঞান লোপ পায়। খুনাখুনি হতে শুরু করে অনেকে আত্নহত্যা পর্যন্ত করতে পারে।
অনেক সময় রাগের মাথায় একটি ভুল করে সারা জীবন পস্তাতে হয়। তাছাড়া সারাক্ষন রেগে থাকলে ব্লাড প্রেশার,হার্টের অসুখ,ডায়াবিটিস সহ অনেক রোগ হতে পারে। তাই রাগের উপর কন্ট্রল থাকা জরুরী।
কিন্তু আমাদের চারদিকে সবকিছুই রাগের অনুকুলে। তাই রাগ কন্ট্রলের কিছু উপায় নিজের মত করে চেস্টা করে দেখতে পারেন ।
ভিষন রেগে গেলে যদি দাড়িয়ে থাকেন তাহলে বসে পড়ুন , বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন। তবে আমাদের আশে পাশের যে অবস্থা তাতে সারা দিনই শুয়ে কাটাতে হবে !!
রাগ কমাতে হিউমার নাকি দারুন কাজে দেয়। কাজেই রেগে গেলে হাতের কাছে মজার এস এম স বা ইমেইল পড়ুন । অথবা জোকস শুনুন । “ আমাদের বর্তমান বানিজ্য মন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল বানিজ্য মন্ত্রী” এধরনের জোকস পড়া বা শুনা থেকে বিরত থাকুন ।
এতে হীতে বিপরিত হতে পারে।
মজার বই , সিনেমা , নাটক নাকি রাগ কমাতে সাহায্য করে। সেই হিসাবে আমাদের রাগ থাকা উচিত নয়। কারন বাংলা ছবির নাম শুনলেই নাকি হাসি পায়। আর ইদানিং যে নাটক হোচ্ছে তা সবাই জানেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন “রাগ হলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিন। এবং নিজেকে শান্ত থাকার জন্য মোটিভেট করু্ন” স্পেনে বুল ফাইটের সময়ে দেখেছি ভয়ংকর ষাড়েরা এভাবে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে রাগ কন্ট্রল করে।
যারা মেডিটেশন করেন তারা অটো সাজেশন ট্রাই করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রেগে গেলে “আহম খুল (I am cool) আহম খুল” অথবা “টেক ইট ইজি”, “স্টে কাম” বারবার বলুন। মেডিটেশন গুরুর কসম রাগ ঠিকই আপনার আয়ত্তে চলে আসবে।
তবে সাজেশনটা মনে মনে দেয়াই ভাল তা না হলে অন্যের রাগের কারন হতে পারেন!
ব্যায়াম রাগ কমানোর একটি ভাল উপায়। রাগের কারনে শরীরে একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা আপনার নার্ভকে উত্তেজিত করে। ব্যায়ামের ফলে অতিরিক্ত এনার্জি কমে যায় এবং মাসল টেনশন রিলিজ হয়ে শরীর-মন শান্ত হয়ে যায়।
সুখম্য় স্মৃতিচারন আপনার রাগ কমাতে পারে। রাগের সময় পুরান দিনের স্মৃতি রোমন্থন আমার পছন্দ।
আমার এক সহকর্মী রেগে গেলে ঘুমান। প্রায় প্রতিদিন তিনি ১১ ঘন্টার উপর ঘুমিয়ে কাটান। কার উপর যে উনার এত রাগ ?
রাগের মুহূর্তে মিউজিক নাকি ম্যাজিকের মত কাজ করে। একারনেই হয়ত আজকাল আইপড, এমপি থ্রির চাহিদা অনেক বেশি। অনেক আবার মোবাইলেও গান লোড করে থাকেন।
রাগ কমানোর জন্য সুন্দর একটা এনিম্যাশন গেম আছে। যার উপর আপনি রেগে আছেন তার নাম ইনপুট করুন। গেম স্টার্ট হলে দুটি মানুষের ফাইট হবে। একটি হলেন আপনি অপরটি যার নাম ইনপুট করেছেন। এবার ইচ্ছা মত কিল,ঘুষ,থাপ্পর এবং লাথি মারুন যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার মন শান্ত না হয়।
ধর্মভীরু কোন ব্লগার যদি আমার এই লেখাটা পড়ে রাগ করেন। তাহলে , চোখ বন্ধ করুন,বুকে হাত রাখুন এবং জোরে জোরে বলুন “অস্তাগফিরুল্লাহ” ইনশাল্লাহ আপনার রাগ কমে যাবে।
আমার যখন কোন কারনে রাগ হয় , তখন আমি ব্লগ পড়ি-রাগের মাত্রা বেড়ে গেলে ব্লগ লেখার চেস্টা করি-রাগ যখন চূড়ান্ত পর্যায় তখন আমি কমেন্ট করি!!
আমি এক্ষনই কমেন্টাইতে শুরু করবো!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।