ঈদ এর তৃতীয় দিন সকালে একজন আমাকে কল দিয়েই গরগর করে বলতে লাগলো যে “উস্তাদ ওই ৪০০ বছরের পুরানো মূর্তি টা পাওয়া গেছে..আইজ-ই এটা বিক্রি করন লাগবো”। আমি বললাম “কে বলছেন আপনি”? উনি সাথে সাথে প্রশ্ন করলো যে “আপনি কি আতিক সাহেব না”? আমি বললাম “না আমি আতিক সাহেব না”। সাথে সাথে উনি ফোন টা কেটে দিল’.. এটা যে একটা ট্র্যাপ বুঝতে পারলাম। অফিসে বেশী কাজের চাপ নেই তাই ইচ্ছা করেই উনাকে কল ব্যাক করলাম। উনি পাকা খেলোয়াড় বুঝা গেল কারন, ১ম বার কল ধরল না, ২য় বার কল কেটে দিল এবং ৩য় বার ধরল।
আমি ও সেই রকম অভিনয় করলাম। আমি নিজেকে ঢাকার বিখ্যাত শাড়ি ব্যাবসায়ী আকবর বলে পরিচয় দিলাম..কথা প্রসঙ্গে জানা গেল এই ধুরন্দরের নাম ‘আবুল হোসেন’। যেভাবে আসা করেছিলাম, সে ঠিক ভাবেই সে আমাকে ট্র্যাপে ফেলাতে লাগলো। আমি নিজেই আমার অভিনয় প্রতিভা দেখে মুগ্ধ এবং সে আসলেই আমার ট্র্যাপে পড়েছে কারন ফাক্স করে ইতিমধ্যে আমাকে মূর্তির ছবি পাঠিয়েও দিয়েছে। আমি খুব এক্সসাইটেড।
মূর্তি টার দাম সে হাকাচ্ছে ১১ লাখ র আমি ৪ লাখের উপরে উঠছিই না। পুরাই সেই রকম স্মাগলিং টক। আলাপ করছিলাম আর ভাবছিলাম, অনেকদিন হল কোনও ধুরন্দররে ধুসা মাইর দেই নাই। ধরতে পারলে শিউর মেসি স্টাইল এ পিটুনি হবে।
সেদিন বিকালে সে আবার ফোন করে বলল যে তার মোবাইলের ক্রেডিট শেষ হয়ে গিয়েছে।
কিছু টাকা যেন আমি তাকে ফ্লেক্সি করি। আমি জানতাম যে এমনটিই হবে। তারপরেও আমি এগিয়ে গেলাম। ধরেই নিলাম যে এই টাকা জলে যাবে .. দেখি না বিষয় তা কত দূর আগায়! তাই কিছু টাকা ফ্লেক্সি করি। ফ্লেক্সি করার পর থেকে সে পুরো একদিন সে তার মোবাইল বন্ধ রাখে।
আমি মোটামোটই নিশ্চিত ছিলাম যে এ এক ছিস্কা ধুরন্দর তাই ফ্লেক্সির টাকা নিয়ে পালাইসে। যা পাইসে তাতেই লাভ তার।
আজ সকালে সে আবার অন্য নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করে বলে যে সে মূর্তি টা নিতে কুড়িগ্রাম এসেছে। তার পকেট কে জানি মেরে দিয়েছে তাই ঢাকা আসতে পারছে নাহ সুতরাং তার কিছু টাকা দরকার। সেই টাকা দিয়ে সে বাসের টিকেট কেটে, ঢাকা এসে মূর্তি তা আমাকে দেখাবে।
আমি বললাম যে কেমনে টাকা পাঠাবো? সে বলল যে GPO থেকে টাকা পাঠানো যায়। আপনি বনানী GPO যেয়ে আমার মোবাইল নাম্বার দেন আর নাম দেন, আমি টাকা পেয়ে যাব। তারপর আমি বনানী GPO তে খোঁজ নিয়ে জানলাম যে আসলেই এভাবে টাকা পাঠানো যায়। তখন ওদের কাছ থেকে কুড়িগ্রাম GPO এর নাম্বার নিলাম। ওখানে কল দিয়ে ওদের উদ্ধতন কর্মকর্তাকে পুরা নাটকের বিষয়বস্তু জানালাম।
সে বলল যে যেহেতু তারা regulatory body না তাই ওরা আবুল হোসেন কে আটকায় রাখতে পারব নাহ তবে যতক্ষণ না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আসে, তারা তাকে ছলে বলে বসায়ে রাখতে পারবে। তারপর আমি কল দিলাম রাজশাহী RAB এ … ওখান থেকে রংপুর RAB এ (RAB-5)। আমি খুব অবাক হলাম যখন দেখলাম যা ওরা খুব কো-অপারেটিভ। ওরা অতি উৎসাহ নিয়ে কুড়িগ্রাম গেল এবং আবুল হোসেন কে GPO থেকে টাকা উঠানোর লাইনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় ধরে ফেলল। আমি ওদের তড়িৎ কর্মা অ্যাকশান দেখে মুগ্ধ।
কোনও মামা চাচার পরিচয় ছাড়াই তারা এগিয়ে আসলো। খুব ভাল লাগলো। তারা ওকে ধরে পিটুনি দেয় এবং আবুল হোসেন সব ঘটনা খুলে বলে। তার আসল নাম দিলদার। বেটা আসলেই একটা দিলদার।
এখন কথা হল, RAB জিজ্ঞেস করছে ওর নামে মামলা টা কে করবে? RAB বাদী হয়ে মামলা করলে তা দুর্বল হয়ে যাবে। আমি বললাম যে আমি তো ঢাকায় কি ভাবে মামলা করবো? ওরা বলল তাহলে আমরা আরও কিছু হালকা পাতলা ইয়ে দিয়ে থানায় হ্যান্ড অভার করে দিবো যদিও থানা থেকে ওরা ২ দিন পরেই ছেড়ে দিবে যেহেতু কোনও মামলা হয়নি তাই। আমি চুপ করে বললাম ‘তাই করেন তাহলে’
উপসংহারঃ দেশের অধিকাংশ চোর বাটপার ঠিক এ কারনাই ছাড়া পেয়ে যায়। আমাদের মত আইলসা মানুষরা প্রথমে বেশী উৎসাহ ঠিকই দেখাই কিন্তু পড়ে যখন আসল নড়াচড়ার টাইম আসে তখন চুপ! একদম চুপ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।