জয় বাংলা ..... শেখর দাশগুপ্ত : গত ৫মে হেফাজতে ইসলামের তান্ডব, সমাবেশ শেষে শাপলা চত্বর দখল এবং গভীর রাতে তাদের হটিয়ে মতিঝিল হেফাজতহীন করার ঘটনায় প্রাণহাণির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নিজস্ব বক্তব্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বলছে, মোট ৮ লাশ পাওয়া যায় যার সবগুলোই শাপলা চত্বর দখলের আগেকার। শাপলা চত্বর নিয়ন্ত্রনে নিতে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। আর বিএনপি বা ১৮ দল বলছে নিহত হয়েছে ২/৩ হাজার। ময়মনসিংহ গীতিকায় পড়েছিলাম,“লক্ষ লক্ষ সৈন্য মরে হাজারে হাজার, গনিয়া বাছিয়া দেখি ছাব্বিশ হাজার”।
যদি কয়েক হাজার নিহত হয়ে থাকে তবে তারা কোন এলাকার বা কে কে কিংবা কি তাদের পরিচয় তা বলতে হবে বিএনপিকে। নইলে যা ইচ্ছে একটা সংখ্যা বলা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে বলা কিভাবে সম্ভব, তা অন্ততঃ তাদের বলতে হবে। অনেকে বলছেন, ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি নেতারা আবোল তাবোল বকছেন।
মতিঝিল উপাখ্যান নিয়ে আটক হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী পুলিশকে বলেছেন, “অন্যদের কুপরামর্শেই ডুবেছি আমরা, তাদের কথা শুনেই সমাবেশের অবস্থান দীর্ঘায়িত হয়। অথচ সংগঠনের আমির আল্লামা শফি সন্ধ্যার আগেই সমাবেশ শেষ করতে চেয়েছিলেন।
”
সেদিন দিনভর মূল সমাবেশ মতিঝিলে হলেও দূপুর থেকে প্রেসক্লাব এলাকায় জামায়াতের হামলা ও ৬জন গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সহিংস ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ বার আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, পুলিশ বহনকারী বাসে আক্রমন ও তার হেলপার সিদ্দিককে হত্যা করে হেফাজত নামধারী উগ্রপন্থীরা, সিপিবি অফিস মুক্তি ভবনে হামলা-অগ্নিসংযোগ,র্যাংগস ভবনে আগুন,বায়তুল মোকাররম এলাকায় সোনার মার্কেটে অগ্নিসংযোগ,বায়তুল মোকাররম-পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতের ৯১টি দোকানের মালামাল পুড়িয়ে দেয় হেফাজত নামধারী সন্ত্রাসীরা। যার মধ্যে ফুটপাতের কোরআন শরিফের দোকানও ছিল। রাস্তায় গাছপালা কেটে, গাড়ীতে ও স্থাপনায় আগুন দেয় সন্ত্রাসী হেফাজতীরা।
সেদিন পুলিশ জানায়, মোট ৮টি মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
যার মধ্যে পুলিশের গাড়ীর হেলপার সিদ্দিকের লাশও রয়েছে। অন্যদিকে, ১৮ দলের পক্ষ থেকে২/৩ হাজার হেফাজতীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এবিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, শাপলা চত্বরে অপারেশন ফ্ল্যাশ আউটে মৃতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা সমাবেশস্থল থেকে সাতটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এছাড়া আমাদের এক সহকর্মীকে হেফাজতিরা কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, অভিযানের সময় পূর্ব ও দক্ষিণ অংশ খোলা রাখি, যাতে হেফাজতিরা বেরিয়ে যেতে পারে।
কমিশনার বলেন, এখন আমরা অগ্রসর (অ্যাডভান্সড) সময়ে বসবাস করি। এই যুগ মৃতদেহ গুম করা অসম্ভব বিষয়, এটা স্পষ্ট। মিথ্যা কথা ছড়ানো হচ্ছে। কম্পিউটারে ফটোশপ করে আমাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে।
এই তালিকা আপনারা (বিরোধী দল) কোথায় পেলেন? যদি দুই-তিন হাজার লোক মারা যায়, তাহলে তাদের আত্মীয়স্বজনরা কোথায়? আপনাদের কাছে তালিকা থাকলে আমাদের দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই সংকটকালে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আপনারা এর মূল্যায়ন করুন।
বেনজীর বলেন, আমরা এই অভিযানে ওয়াটার ক্যানাল, সাউন্ট গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড--সব নন-লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করেছি। ওয়ার্ল্ড ক্লাস লজিটিক্স ব্যবহার করেছি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল জিরো ক্যাজুয়াল্টি। আমরা এতে মোটামুটি সফল হয়েছি। অভিযানে ম্যাক্সিমাম কর্মকর্তা ব্যবহার করেছি, এটা কর্মকর্তা-বেজড অভিযান। আমরা সফলভাবে অভিযান শেষ করি। রাত ২টায় (৫ মে) অপারেশন শুরু করি, মাত্র ১০ মিনিটে ঈর্ষণীয় ক্ষিপ্রতায় শেষ করি।
তিনি জানান, অর্থনৈতিক দৈন্য, সামাজিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে সমাবেশে শিশু-কিশোরদের ভুল বুঝিয়ে শাপলা চত্বরের সমাবেশে নিয়ে আসা হয়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাতটি মৃতদেহ আমরা পাই। এর মধ্যে মঞ্চের নিচে চারটি লাশ কাফনে মোড়ানো ছিল। হেফাজতিরা আমাদের একজন পুলিশ সদস্যকেও খুন করে, তার অস্ত্র কেড়ে নিয়ে যায়। দুই-তিন হাজার মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা সত্য নয়।
দুটো টেলিভিশন সরাসরি এই অভিযান সম্প্রচার করেছে। উপস্থিত সাংবাদিকরা সব জানেন, তারা অভিযানের সময় ছিলেন। তারপরও অপপ্রচারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, এ সব ঘটনায় দায়ের করা মামলা ধরেই হেফাজত, জামায়াত, শিবির এবং ইন্ধন দাতা হিসেবে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরইমধ্যে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারকে ধরতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডস্থ তার বাসাসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রাজধানীতে তাণ্ডবের ঘটনায় তিন থানায় ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী গত সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ৯ দিনের রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
পুলিশের তালিকায় রয়েছেন: হেফাজত ইসলামের চট্রগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা মাইনুদ্দিন রুহি, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ উল¬াহ, হেফাজত ইসলামের চট্রগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আলম, হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমীর মহিবুল¬াহ বাবু, তাজুল ইসলাম, আবুল মালেক হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামবাদি, আসানুল ক্বারী ফজলুল করিম জিহাদী, মুফতি হারুন ইজাহার, ইলিয়াছ ওসমানী, নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ফয়জুল¬াহ, মাহফুজুল হক, আব্দুল কুদ্দুস, নুরুল ইসলাম, আবুল হাসনাত আমিনী, মোস্তফা আজাদ, মুফতি নুরুল আমীন, শাখাওয়াত হোসেন, জানায়েদ আল হাসিব, আতাউল¬াহ আমীন, গোলাম মহিউদ্দীন একরাম, শেখ লোকমান হোসেন, মুফতি শায়দুল ইসলাম, মোহাদ্দেস রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি শামসুল হক, মুফতি মনির হোসেন মুন্সি, নারায়ণগঞ্জের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, জামায়াতের এমপি হামিদূর রহমান আজাদ, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম মনজু, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু ও সরাফত আলী সপু।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামলার পর থেকে হেফাজত জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এরইমধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব বাবুনগরীকে পালানোর চেস্টার সময় আটক করা হয়। বাকি নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যে সব এলাকায় হেফাজত তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে সেই সব এলাকার পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডলও এমনটাই বলেছেন।
গতকাল বুধবার ডিএমপি কমিশনারের ব্রিফিং শেষে তিনি বলেন, যারা এ তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ লক্ষে পুলিশ এরইমধ্যে অভিযান চালাচ্ছে।
লেখক : সম্মানীত মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক, কলাম লেখক, ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।